মো. আলী আজগর। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ে হাতে খড়ি ২০০৯ সালে। লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে মাস্টার্স ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে শুধু চাকরির আশায় না ঘুরে নিজে কিছু করার বাসনায় শুরু করেছিলেন ঘরে বসে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে। শুরুতে তেমন সফলতা না পেলেও অদম্য ধৈর্য বর্তমানে তাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে এনে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সার ডটকম সাইটের ওয়েবসাইট, আইটি অ্যান্ড সফটওয়্যার ক্যাটাগরির ফেসবুক, টুইটার ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাব-ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে আছেন।
একই সঙ্গে সব ক্যাটাগরির মধ্যে তিনি প্রজেক্ট ও আয়ের পরিমাণের ওপর বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৬৪টি প্রজেক্ট সমাপ্ত করেছেন। ফ্রিল্যান্সার ডটকম সাইটের ৫টি ক্যাটাগরি যথাক্রমে—কোয়ালিটি অব ওয়ার্ক, কমিউনিকেশন, দক্ষতা, কাজের আহ্বান, পেশাগত দক্ষতার ওপর তার সফলতা শত ভাগ। ফ্রিল্যান্সার ডটকমে তার ইউজার নেম lancerboy1206। তাকে পাওয়া যাবে— http://www.freelancer.com/u/lancerboy1206.html লিংকে।
আমার দেশ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিভাগের পাঠকদের জন্য এ পেশায় আশা, সাফল্য লাভ, এ পেশার সমস্যা সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছেন তিনি। তার সাক্ষাত্কাটি এখানে তুলে ধরা হলো—
প্রশ্ন : আপনার ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের শুরুর দিকের কথা বলুন।
মো. আলী আজগর : ২০০৯ সালের শুরুর দিকে ভাবছিলাম চাকরির পাশাপাশি কিছু একটা করব। নেট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে কিছু না কিছু খুঁজে বের করা ছিল অনেকটা নেশার মতো। হঠাত্ই আবিষ্কার করলাম ফ্রিল্যান্সার ডটকম-সাইটকে।
সাইনআপ করে চেষ্টা চলল একটা প্রজেক্ট পাওয়ার আশায়। দীর্ঘ এক বছর চেষ্টার পর ২০১০ সালের শেষ দিকে পেয়ে গেলাম একটা প্রজেক্ট। বেশ সফলভাবেই শেষ করলাম প্রজেক্টটি। এরপর আর আমাকে পেছনে ফিরে যেতে হয়নি। একের পর এক প্রজেক্ট পেতেই থাকলাম।
কখন যে দুটি বছর পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারলাম না। বর্তমানে আমি ফ্রিল্যান্সার ডটকম সাইটের ৩ নম্বরে অবস্থান করছি। নিজের তথা দেশের আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছি—এটি আমার জন্য অবশ্যই গৌরবের বিষয়।
প্রশ্ন : ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে কি করতেন?
মো. আলী আজগর : প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে চাকরি অবস্থায়ই টুকটাক ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতাম। চাকরিতে মাত্র ২ হাজার টাকা ইনক্রিমেন্টের জন্য অনেক চেষ্টা করেও ফল না পাওয়ায় অবশেষে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এ পেশাকেই ভবিষ্যতে চলার পথ হিসেবে বেছে নিলাম।
অবশ্য পরিবারের অনেকেই চাকরি ছাড়তে নিষেধ করেছিলেন। আমি কারও কথা না শুনে চাকরি ছেড়ে দেই। অবশ্য শুরুটা খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। একটা মজার কথা না বলে পারছি না, ইন্টারনেট থেকে আয়ে আমার হাতে খড়ি ক্যাপচা টাইপিংয়ের মাধ্যমে। ১ হাজার শব্দ টাইপে ১ ডলার! এ থেকে মাসে আমার নেট বিলও উঠত না।
অবশ্য আজ বুঝতে পারছি ওটাই আমার সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। এ পেশার অবারিত ভবিষ্যত্ দেখতে পেয়েছিলাম ও নিজের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ছিল ওই সময়।
প্রশ্ন : সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে আয়—এ বিষয়টিকে বেছে নিলেন কেন?
মো. আলী আজগর : প্রথমদিকে ফেসবুকে আমার একটি অ্যাকাউন্ট ছিল। আমি দেখলাম কারও সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমেই সব ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। এটাই আমাকে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও পরে এটাকে ব্যবহার করে মার্কেটিংয়ের কাজে উদ্বুদ্ধ করে।
২০১০ সালের দিকে আমি অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেমন—twitter.com, google+, tumbir.com, linkedin.com, pinterest.com, instagram.com, youtube.com, soundcloud.com, Search Engine Optimization (SEO) প্রভৃতির মাধ্যমে নিজেকে মার্কেটার হিসেবে সফলভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করি ও মাত্র দুই বছরের মাথায় যথেষ্ট সফলতা লাভ করি।
প্রশ্ন : আপনি মূলত কোন কোন কাজ করে থাকেন?
মো. আলী আজগর : ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের অজস্র সাইট আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এ সাইটের নিয়ম-কানুন ও কাজের পদ্ধতি আমার কাছে সহজ মনে হয়। এখানে আমি সাধারণত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ে কাজ করি।
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমার ক্লায়েন্টদের ব্যবসাকে প্রসারিত করার কাজসহ অন্যান্য কোম্পানির পণ্যসহ নানা প্রমোশনাল কাজ করে থাকি। আমি যখন কোনো প্রজেক্ট পাই, তখন বায়াররা তাদের সামাজিক যোগাযোগের সাইটের লিঙ্কটা আমাকে দিয়ে দেয়। আমি তখন সেই সাইটের পর্যালোচনা করে কী ধরনের মার্কেটিং করতে হবে বা ওই সাইটটি কি ধরনের মার্কেটিং-উপযোগী সেটি নির্ধারণ করে কাজ শুরু করি।
প্রশ্ন : যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে নতুন আসতে চায় তাদের জন্য কি পরামর্শ?
মো. আলী আজগর : ফ্রিল্যান্সিং সাইটে লাখ লাখ কাজ আছে। তাই এ পেশায় এলে কাজ ও অর্থের সংস্থান হবে, এটা ঠিক।
তবে ভালো মানের একজন হতে হলে যে স্কিলে কাজ করবেন তা ভালোভাবে শিখে বা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে হাত দিতে হবে। আর ইংরেজি ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে। তবেই সফল হওয়া যাবে। তাছাড়া কাজ নিয়ে কাজের মান ঠিক রাখা, সময়মত ডেলিভারি দেয়া খুবই জরুরি। বায়ারের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
দেশের নতুন ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি পরামর্শ—ধৈর্য ধরলে সফলতা আসবেই। এ পেশায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বড় বড় প্রতিষ্ঠান আজ বাংলাদেশকে তাদের পছন্দের তালিকায় স্থান দিচ্ছে। এটি একটি বড় অর্জন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ অর্জনটিকে ধরে রাখতে পারলে ও বাস্তবে পরিপূর্ণভাবে রূপ দিতে পারলে বাংলাদেশে আর কোনো বেকার সমস্যা থাকবে না।
তবে এক্ষেত্রে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বা আইটিতে মানব সম্পদের উন্নয়ন দরকার। ইন্টারনেটের মূল্য কমানোসহ কম্পিউটার পণ্যের সহজলভ্যতা, পেপ্যাল চালু ইত্যাদি এ মুহূর্তে খুবই জরুরি। এসব ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা রাখা জরুরি।
প্রশ্ন : এ পেশার চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
মো. আলী আজগর : ফ্রিল্যান্সিং নামটি যত সহজ মনে হয়, আসলে কাজের ক্ষেত্রে ততটা নয়। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা।
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়। যেমন—প্রজেক্টে বিড করা, কাজের মূল্য ও সময় নির্ধারণ করা, যোগাযোগ রক্ষা করা, কাজের মান ঠিক রেখে সঠিক সময় সঠিক কাজটি ডেলিভারি দেয়া, বায়ারকে সন্তুষ্ট করা—প্রতিটি ক্ষেত্রই একেকটা চ্যালেঞ্জ।
সাক্ষাত্কার : Click Here ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।