এ বছর উন্নয়নশীল দেশগুলো ৪১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী-আয় হিসেবে পাবে বলে প্রাক্কলন করেছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ প্রবাসী-আয় আসবে ভারতে। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুসারে এই পরিমাণ হলো সাত হাজার ১০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন, যেখানে ছয় হাজার কোটি ডলারের প্রবাসী-আয় আসবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুসারে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী-আয় আসবে।
প্রবাসী-আয়ের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
বিশ্বব্যাংকের ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ’ প্রতিবেদনে এসব প্রাক্কলন তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেন, ‘এই সর্বশেষ প্রাক্কলন প্রবাসী-আয়ের শক্তিমত্তারই প্রকাশ। তাজিকিস্তানের মতো দেশে জিডিপির অর্ধেকেই অবদান রাখছে প্রবাসী-আয়।
বাংলাদেশে প্রবাসী-আয় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছে। সাত হাজার ১০০ কোটি ডলারের বার্ষিক প্রবাসী-আয় নিয়ে ভারত এই তালিকার শীর্ষে আছে। ২০১২ সালে ভারত যে পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে, এটি তার মাত্র তিন গুণ কম। ’
কৌশিক বসু আরও বলেন, ‘যখন পুঁজির প্রবাহ দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ তাতে ভারসাম্য আনতে বড় ভূমিকা রাখে। আবার যখন কোনো দেশের বিহিত মুদ্রা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন আবার প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ বেড়ে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থিতিশীলতা আনয়নের কাজ করে।
’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, যে কয়টি দেশে প্রবাসী-আয় তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চেয়েও বেশি, তার মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। এই তালিকায় শীর্ষে আছে তাজিকিস্তান, যার প্রবাসী-আয় রিজার্ভের তুলনায় ১৩৯ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ১২১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রবাসী-আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রবাসী-আয় তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চেয়েও বেশি।
’
এতে আরও বলা হয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরস্পরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঘটেছে। আর তাই এটি সবচেয়ে বড় দক্ষিণ-দক্ষিণ অভিবাসন করিডরে রূপ নিয়েছে। ভারতে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি ও ছয় লাখ নেপালি অভিবাসী আছে।
তবে প্রবাসে কাজ নিয়ে যাওয়ার জন্য যেসব দেশের শ্রমিকদের অনেক বেশি ব্যয় করতে হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ। এই তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে স্বল্প দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ পেতে একজন বাংলাদেশিকে এক হাজার ৯৮৫ ডলার থেকে তিন হাজার ৮৭০ ডলার ব্যয় করতে হয়।
অথচ এই শ্রমিকের মাসিক গড় বেতন হয় ২০০ ডলার।
তার মানে হলো, স্বল্প দক্ষ একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের প্রায় ১৪ মাসের বেতন যা হয়, তা ব্যয় হয়ে যায় কাজ পাওয়ার জন্য। অন্যদিকে হংকংয়ে গৃহকর্মীর কাজ পেতে একজন ইন্দোনেশীয় শ্রমিককে তার পাঁচ মাসের বেতন আর উপসাগরীয় কোনো দেশে নির্মাণশ্রমিকের কাজ পেতে একজন নেপালিকে তার ছয় মাসের বেতন ব্যয় করতে হয়।
প্রতিবেদনে ভারতে এবার প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে রুপির বড় ধরনের দরপতনকে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির দর কমেছে ২০ শতাংশ।
ভারতে চলতি হিসাবের ঘাটতি যে চাপের মুখে পড়েছে, রুপির দরপতনে প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ বেড়ে তা অনেকটাই সহনীয় করে দেবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।