আমার মাঝে আমি,নিজেকে বার বার খুজি । জয় হোক স্বপ্নের,সত্যি হোক জীবনের আশা । মানুষের মাঝে মানুষ,উড়ায় হৃদয়ের ফানুশ ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যার হাতে আমার প্রাণ। সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর।
আল্লাহ এই লেখায় আমার ইখলাসকে শুদ্ধ করে দিন। বিতাড়িতশয়তানের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের সবার উপলন্ধিতে বরকত দান করুন।
বারসিসার এই কাহিনী হয়ত অনেকেই শুনেছেন। বারসিসাছিল বনী ঈসরাইলের একজন সুখ্যাত উপাসক, ধর্মযাজক,‘আবিদ’। তার নিজেরমন্দির ছিল আর সেখানে সে একাগ্রভাবে নিজেকে উপাসনায় নিয়োগ করত।
বনী ঈসরাইলের তিনজনপুরুষ জিহাদে যেতে চাচ্ছিল, তাদের একমাত্র বোনকে কোথায় রেখে যাবে বুঝতে পারছিল না। তারা সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ‘কোথায় আমরা আমাদের বোনকে রেখে যেতে পারি? তাকে তোআমরা একা ফেলে যেতে পারিনা। কোথায় তাকে রেখে যাওয়া যায়?’ তখন তারা তাদেরকে বলল, ‘তাকেরেখে যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হবে তাকে ঐ উপাসকের কাছে রেখে যাওয়া, সেই-ই সবচেয়েধার্মিক ব্যক্তি, আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। তোমাদের বোনকে তার কাছে রেখে যাও, সে তারখেয়াল রাখবে’। তারা আবিদের নিকট গেল।
তাকে সব বর্ণনা করে বলল, ‘এই হল অবস্থা - আমরা জিহাদে যেতে চাই,আপনি কি কষ্ট করে আমাদের বোনকে দেখে রাখতে পারবেন?’ সে বলল, ‘আমি তোমাদের থেকে আল্লাহরকাছে আশ্রয় চাই। আমার কাছ থেকে চলে যাও’। তখন শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করল, ‘তুমিতাকে কার কাছে রেখে আসবে? তুমি যদি তার খেয়াল না রাখো তাহলে হয়ত কোন দুষ্ট লোক তারখেয়াল রাখবে, আর তারপর তো তুমি জানোই কী ঘটবে! তুমি কি করে এই ভাল কাজটা তোমার হাতছাড়াকরে দিতে পার?’
দেখুন ! শয়তান তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করছে! তোসে তাদেরকে আবার ডেকে এনে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তার খেয়াল রাখব, কিন্তু সে আমার সাথেআমার মন্দিরে থাকতে পারবে না, আমার আরেকটা বাড়ি আছে সে সেই ঘরে থাকবে’। সে মেয়েটিকেবলল, ‘তুমি ওখানে থাক, আমি আমার মন্দিরে থাকব’। তো মেয়েটাসেই বাড়িতে একটা ঘরে থাকত, আর সেই ধর্মযাজক তার জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে এসে তার নিজেরদরজার বাইরে রেখে দিত।
সে মেয়েটির বাড়িতে পর্যন্ত যেত না, নিজের দরজার বাইরেই খাবাররেখে দিত আর মেয়েটিকে ঘর থেকে বের হয়ে এসে খাবার নিয়ে যেতে হত; সে মেয়েটির দিতে তাকিয়েদেখতে পর্যন্ত ও চাইত না। তখন শয়তান আবার তার কাছে এসে বলল, ‘তুমি করছটা কি? তুমি কিজানো না মেয়েটা যখন তার ঘর থেকে বের হবে আর তোমার মন্দির পর্যন্ত আসবে লোকে তাকে দেখতেপাবে? তোমার উচিত তার দরজায় যেয়ে খাবারটা রেখে আসা। ’ সে বলল,‘হ্যাঁ, আসলেই’।
শয়তান কিন্তু তার সাথে সামনা-সামনি কথা বলছেনা,তাকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। ধর্মযাজক ‘আবিদ তাই এবার খাবার নিয়ে মেয়েটিরদরজা পর্যন্ত রেখে আসতে শুরু করল।
এভাবে কিছুদিন চলল, এরপর শয়তান তাকে বলল, ‘মেয়েটাএখনও তার দরজা খুলছে আর বাইরে বের হয়ে আসছে প্লেট নেয়ার জন্য, কেউ তাকে দেখে ফেলতেপারে, তোমার উচিত প্লেটটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসা’। শয়তান কিনাতাকে বলছে আরো ভাল কাজ করতে! তাই সে খাবারের প্লেটটা ঘরে রাখা আরম্ভ করল, সেখানে রেখেইসে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসত। এভাবে আরো কিছুদিন পার হলো। আর ওদিকে জিহাদ চলতে থাকায় ভাইদেরফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। শয়তান আবারো তার কাছে আসল, বলল, ‘আচ্ছা, তুমি তাকে এভাবেএকা ছেড়ে দিবে, কেউ তো নেই যে তার দিকে একটু খেয়াল রাখবে, একটু কথা বলবে।
সে যেন জেলখানায়আবদ্ধ হয়ে আছে, কথা বলার কেউ নেই। তুমি কেন ওর দায়িত্ব নিচ্ছ না? ওর সাথে একটু সামাজিকতাবজায় রেখে তো চলতে পার, যেয়ে একটু কথা বলো যাতে করে তুমি তার খোঁজখবর রাখতে পারো। তানাহলে দেখা যাবে সে বাইরে যেয়ে কোন পরপুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে’। তাই সে মেয়েটিরসাথে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করল, মেয়েটা ঘরের মধ্য থেকেই কথা বলত; দুজনকেপ্রায় চিৎকার করে কথা বলতে হতো যেন তারা একজন অন্য জনকে শুনতে পায়।
শয়তান এবার তাকে বলল, ‘তুমি এরকম দূর থেকে একজনআরেকজনের উপর চিৎকার না করে কেন ব্যাপারটাকে নিজের জন্য আরেকটু সুবিধাজনক করে নিচ্ছনা? কেন তার সাথে একই ঘরে বসে কথা বলছ না?’ তো এবার সে মেয়েটার সাথে একই ঘরে বসে কিছুসময় ব্যয় করতে শুরু করল।
তারপর ধীরে ধীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসাথে কাটাতে লাগল,আর আস্তে আস্তে তারা পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসতে লাগল। এক সময় এমন হল যখন সেই আবিদ,ধর্মযাজক,উপাসক সেই মেয়ের সাথে যিনায় (ব্যাভিচার) লিপ্ত হল। ফলে মেয়েটা অন্তসত্ত্বাহয়ে পড়ল।
কাহিনী এখানেই শেষ নয়। মেয়েটি একটি সন্তানেরজন্ম দিল।
শয়তান ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল, ‘একি করেছ তুমি! তুমি কি জানো যখন ওর ভাইরাফিরে আসবে তখন কি হবে? তারা তোমাকে মেরে ফেলবে, এমনকি তুমি যদি এটাও বলো যে – “এটাআমার বাচ্চা না”,তারা তোমাকে বলবে যে “তোমার বাচ্চা না হলেও তুমি তার দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলে, তাইএটা এখন তোমারই দায়ভার। বাচ্চার বাবা কে আমরা তার পরোয়া করি না, তুমিই এর জন্য দায়ী”। সুতরাং এখনএকটাই উপায়, তুমি বাচ্চাটাকে মেরে তাকে পুঁতে ফেল’। বারসিসাবলল, ‘এটা কি গোপন থাকবে আমি তার ছেলেকে মেরে ফেলার পরে?’ শয়তান বলল, ‘তোমার কি মনেহয় ও এটাকে গোপনে রাখবে? তুমি যদি এরকম ভাব, তাহলে তুমি মস্ত বড় বোকা’। সে জিজ্ঞেসকরল, ‘তাহলে আমি কি করব?’।
শয়তান জবাব দিল, ‘তোমার ঐ মেয়েটাকেও মেরে ফেলা উচিত’। তাই সে মেয়েটাকেআর বাচ্চাকে মেরে ফেলল, এরপর দুজনকে একই ঘরের নিচে কবর দিয়ে দিল।
ভাইয়েরা একসময় ফিরে আসল, তারপর জানতে চাইল,‘আমাদের বোন কোথায়?’, সে উত্তরে বলল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সেঅসুস্থ হয়ে পড়ে এরপর মারা যায়, তাকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে’ এই বলে সেমনগড়া একটা কবর দেখিয়ে দিল তাদেরকে। তারা বলে উঠল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজি’উন’, তারা বোনেরজন্য দু’আকরল, আর নিজেদের বাসায় ফিরে গেল।
রাতের বেলা, তিনজনের মাঝে এক ভাই একটা স্বপ্নদেখল, কে তার সেই স্বপ্নে এসেছিল? শয়তান, সে তাকে বলল, ‘তুমি বারসিসা কে বিশ্বাস করো?তুমি কি তাকে বিশ্বাস করো? সে মিথ্যা বলেছে।
সে তোমার বোনের সাথে ব্যাভিচার করেছে,তারপর তাকে আর তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আর এই কথার প্রমাণ হল সে তোমাদেরকে যেখানে সেকবর দেখিয়েছে তোমাদের বোন সেখানে নেই, আছে তার ঘরের পাথরের নিচে’। তার ঘুমভেঙ্গে গেল আর সে তার বাকি ভাইদেরকে স্বপ্নের কথা জানাল। তারা বলল, ‘আমরাও তো একই স্বপ্নইদেখেছি, তাহলে এটা নিশ্চয়ই সত্যি’। পরদিন তারা সেই মিথ্যা কবরটা খুড়ল কিন্তুকিছুই পেল না, এরপর তারা তাদের বোনের ঘরে যেয়ে মাটি সরাল তখন দেখতে পেল তার বোনের মৃতদেহসাথে একটা শিশু।
তারা যেয়ে বারসিসাকে ধরল, ‘মিথ্যুক! এইসব করেছ তুমি?’ তারা তাকে ধরেটেনে হিঁচড়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল। এমন সময় শয়তান আসল বারসিসার কাছে, এবারে কিন্তু সেমনের ওয়াসওয়াসা হিসেবে আসেনি, সে আসল মানুষের রূপ ধরে। তাকে বলল, ‘বারসিসা, তুমি কিজানো আমি কে? আমি শয়তান, আমিই সে, যে তোমাকে এতো ঝামেলার মধ্যে ফেলেছি। আর আমিই সেএকজন, যে তোমাকে এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারব। আমিই এসব ঘটনা ঘটিয়েছি আর আমারকাছেই আছে এসবের সমাধান।
এখন তোমার উপর নির্ভর করে, তুমি যদি মরতে চাও তো ঠিক আছে। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে রক্ষা করি, তাহলে আমি করতে পারি’। বারসিসাবলল, ‘দয়া করে আমাকে বাঁচাও’। শয়তান বলল, “আমাকে সিজদাহ করো’। বারসিসাশয়তানের প্রতি সিজদাহ করল।
কিন্তু শয়তান কি বলল? সে বলল, ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তোমারসাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল’এরপর সে তাকে আর কোনদিন দেখতে পেল না। বারসিসা শয়তানের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করল, আর এটাইছিল তার জীবনে করা শেষ কাজ, কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সুতরাং তার জীবনের শেষ কাজটা তাহলে ছিল- শয়তানকে সিজদাহ করা, সে ছিল সেই উপাসক যে কিনাছিল সরল পথের উপর, কিন্তু যেহেতু সে সেপথ থেকে বাঁক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিওখুব খুব ছোট্ট একটা বাঁক, প্রথমদিকে যেটাকে একেবারেই তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, একটু সুবিধারনামে, দ্বীনের মাসলাহার নামেই সে এগুলো করেছিল। সরলপথ থেকে তার বিচ্যুতির পরিমাপটাছিল একদমই নগণ্য কিন্তু দেখুন তার শেষ পরিণতি! নিজের ইচ্ছাকে অনুসরণ করার বিপত্তিটাএখানেই; আমরা আমাদের জ্ঞান, কুরআনের যতখানি জানি, আমাদের ইবাদত ইত্যাদি নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসীহয়ে যাই। সুবহান আল্লাহ! আমাদের তো সব সময় উচিত নিজেদের নিয়ে শঙ্কায় থাকা, আমরা কখনইঅতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হব না বরং আমাদের সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, আর এটাই হল আল্লাহ-ভীতি,এটাই সত্যিকার অর্থে ‘জ্ঞান’।
আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহরবান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে” (ফাতির ৩৫:২৮)।
আসুন এবার আমরা দেখি বারসিসার এই কাহিনী থেকেআমাদের জন্য কি কি রয়েছে।
১। ইমাম আওলাকি (রহঃ) তার hereafter সিরিজে মৃত্যুফিতনারকথা বলতে গিয়ে এই কাহিনী বর্ণনা করেন। খেয়াল করে দেখুন শয়তান বারসিসার সাথে কোন নীতিগ্রহণ করেছিল? যদি শয়তান বারসিসার কাছে এসে সরাসরি বলত, ‘আমাকে সিজদাহ করো’ বারসিসা কিকখনো তা করত? না, করত না।
শয়তান step by step ‘ধাপে ধাপে’ মানুষকে দীনথেকে বিমুখ করার নীতি গ্রহণ করেছিল। শয়তানেরকাজই হল এটা যে সে সারাজীবন আপনার আমার পেছনে লেগে থাকবে এবং তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যমানুষকে বিভ্রান্ত করা, ঈমান থেকে বিচ্যুত করে মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত করা। সুবাহানাল্লাহ বারসিসার করুণ পরিণতি থেকে আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারি! এখানে ইমামআহমেদের মৃত্যুর সময়টার কথা বলা যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমেদ বলেন, তার পিতাযখন অবচেতন পর্যায়ে পৌঁছে যান আর বলতে থাকেন, ‘লা বা’আদ, লা বা’আদ’ – ‘না এখনওনয়, না এখনও নয়’। একথা শুনে আবদুল্লাহ প্রচন্ড চিন্তিত বোধ করলেন! চিন্তা করে দেখুন, আপনি যদি আপনারবাবাকে তার মৃত্যুকালীন সময়ে বলতে শুনেন, ‘না এখনও না, না এখনও না’, আপনি কিভাবেএটাকে ব্যাখ্যা করবেন? এটার অর্থ কী বলে আপনার কাছে মনে হবে? ‘না এখনও না, আমি এখনওমরতে চাইনা’এমনই মনে হওয়ার কথা, তাইনা?
তো ইমাম আহমেদ জেগে উঠলে, আবদুল্লাহ উদ্বিগ্নহয়ে পিতাকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আমার পিতা, কেন আপনি বলছিলেন – “এখনও না, এখনও না” ?’ ইমাম আহমেদবললেন, “শয়তান আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, সে তার অঙ্গুলি কামড়ে বলছিল, “হে আহমেদ, তুমিতো আমার হাত ফসকে বের হয়ে গেলে, হে আহমেদ, তুমি তো আমার হাত ফসকে বের হয়ে গেলে” !’ তাই আমিতাকে বলছিলাম, ‘না, এখনও না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি মারা যাচ্ছি।
তোমার আর আমার যুদ্ধএখনও চলছে, যখন আমি মারা যাব, একমাত্র তখনই আমি তোমার হাত থেকে রক্ষা পাব। ”
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘এরকম হওয়ার কারণটাহলো এই যে, শয়তান বুঝতে পারে আপনার সাথে এটাই তার শেষ সুযোগ, যদি এবার আপনি তার হাতথেকে ছুটে যান তো আপনি চিরকালের জন্যই তার কাছ থেকে পার পেয়ে গেলেন। শেষ সময়ে আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে না পারার অর্থ সেআপনাকে আর ধরতে পারল না। এজন্যই শয়তান আপনার জীবনের শেষ সময়ের দিকে বিশেষ নজর দেয় আরআপনার বিরুদ্ধে তার কাজকে আরো জোরদার করে তুলে। ’ সুবাহানাল্লাহ!আল্লাহ আমাদের উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুণ যে শয়তান আমাদের পেছনে কি পরিমাণ পরিশ্রমকরে যাচ্ছে শুধু আমাদের পথভ্রষ্ট করে মৃত্যুমুখে পতিত করার জন্য।
আল্লাহ আমাদের উপররহম করুণ, আমীন।
২। খালি চোখে বারসিসার কাহিনী থেকে যে শিক্ষাটাআমাদের প্রথমে মনে আসে সেটা হল “নারী ফিতনা”। নারী ফিতনারপ্রকটতা বুঝতে হলে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে কেন রাসুল (সঃ) বলে গেছেন, “আমি আমার উম্মতেরজন্য নারীর চেয়ে অধিক বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না”। রাসুল (সঃ)বলেছেন, ‘যখন দুইজন নারী পুরুষ একাকী অবস্থান করে তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবেশয়তান অবস্থান করে”।
শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে(নারীদের প্রতি)”। [সূরা নিসাঃ ২৮] যখন এখানে নারীদের প্রতি দুর্বলতার কথা বলা হয়েছেএটা বলা হয় তখন নলেজেবল ভাই বোনেরাও অবাক হন! কিন্তু তাফসীরে নারীর প্রতি দুর্বলতারকথাই বলা হয়েছে। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহর রাহে যুদ্ধকরা থেকে যেসব বিষয় মানুষকে বিরত রেখেছে তার কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলেছেন, “মানবকূলকেমোহগ্রস্ত করেছে নারী...”। [সূরা আলে ইমরানঃ১৪]। সুবাহানাল্লাহ! আমরা যারা নিজেদের ইসলামপন্থী বলে পরিচয় দিই, ইসলামের খাতিরে ফেসবুক,ব্লগ কিংবা ভার্চুয়াল জগতে দাওয়া দিয়ে বেড়ায় খুবই দুঃখজনক সত্যি এই যে নারী ফিতনারএই হাদিস আর কুরানের আয়াতগুলো কখনো আমাদের মনে থাকেনা কিংবা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরাজানিই না! দেদারছে ছেলে মেয়ে মাখামাখি, হাসি তামাশা, রসালো কমেন্ট বিনিময় করেই যাচ্ছি।
আর ইনবক্সের কি অবস্থা আল্লাহই ভাল জানেন। আমি আমার দুই বছরের ভার্সিটি লাইফে কোন মেয়েরসাথে নিজ থেকে কথা বলতে গেছি এরকম কিছু আমার মনে নেই। সারাদিন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাফেরাকরা ক্লাসের জাহেল মেয়েগুলোও নিজ থেকে আমার সাথে কথা বলার সাহস করেনি। এখন সবার সামনেআমি এত সাধু কিন্তু একটু চিন্তা করেন তো কেমন লাগবে যদি দেখেন আমি একটা নন মাহরাম মেয়েকেচোখ মারছি, ভেংচি কাটছি, মুচকি হাসি- অট্ট হাসি দিচ্ছি কিংবা কাগজে করে একটা লাল রঙেরহার্টের চিহ্য একে দিলাম!! কি ভণ্ড মনে হবে না আমাকে? Exactly আমি একজন ভণ্ড বলে বিবেচিতহব। সুবাহানাল্লাহ এই ভণ্ডামিটাই কোন রাখ ঢাক না রেখে করে যাচ্ছে আমাদের মুসলিম ভাইবোনেরা যারা নাকি আবার দাওয়াও দেন।
আঙ্গুলের একটা খোঁচা দিলেই ফেসবুকের স্ট্যাটাসে,ছবিতে কমেন্ট চলে যাচ্ছে ভেংচি কাটা, চোখ মারা, অট্টহাসি, মুখ বাঁকানো ইমুশন! সুবাহানাল্লাহ!নেট জগত বলে কি নন মাহরাম আপনার জন্য মাহরাম হয়ে গেল dear muslims? নাকি নিজেকে সবফিতনা থেকে নিরাপধ ভাবেন? নাকি জান্নাতের টিকেটপকেটে নিয়ে ঘুরছেন? আল্লাহু আকবর! মৃত্যু খুব নিকটেই ভাই, খুব নিকটেই! নিজের ঈমান নিয়েসচেতন হন। এত এত ইসলামিক জ্ঞান, দাওয়া, ইবাদাত নিয়ে শেষ পর্যন্ত যেন বারসিসার মত করেমরতে না হয়! আল্লাহ রহম করুন।
৩। বারসিসার এই কাহিনী থেকে আরেকটা জিনিস লক্ষণীয়সেটা হল “good intention”। আমি তো ভালোর জন্যই কাজটা করছি এই সান্ত্বনা দিয়ে শয়তানআমাদের ফাঁদে ফেলে।
একটু লক্ষ্য করলেই আমরাদেখব শয়তান বারবার বারসিসাকে মেয়েটির ভালোর জন্য ওয়াসওয়াসা দিয়েছে। তুমি এমন না করলেমেয়েটির এই হবে, তুমি তেমন না করলে মেয়েটির সেই হবে এই ওয়াসওয়াসা। এবং বারসিসা প্রতিবারসেই ফাঁদে পা দিয়েছে আর তার ফল সে পেয়েছে অবশেষে! এই বিষয়টা খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদেরলক্ষ্য করা উচিত। আমাদের মধ্যে একটা কমন tendency থাকে আমরা ইসলাম পালনের চেয়ে এক ধাক্কায়দাঈ হয়ে যেতে চাই। একটু আধটু জেনে মানুষজনকে ধুমাইয়া দাওয়া করে বেড়াই।
সেখানে শয়তানের এসব ওয়াসওয়াসা আর নারী ফিতনার বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে হারাম সম্পর্কেজড়িয়ে পড়ার। এক মেয়ে স্ট্যাটাস দিল, “ইশ! কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে!”। ছেলে গিয়ে সেখানেচান্দের ফজিলত বর্ণনা করে বিশাল দাওয়া প্রগ্রাম শুরু করে দিল! শয়তানের ওয়াসওয়াসা কি?“আমি তো দাওয়া দিচ্ছি”। মেয়ে স্ট্যাটাস দিল ‘আমার মন খুব খারাপ”। ছেলে গিয়েislamqa এর ফতোয়ায় কমেন্ট বক্স ভরিয়ে ফেলল, মন খারাপ হলে কি করতে হবে, হতাশ হওয়া চলবেনা, জীবনে আসলে এসব ঘটেই তারপরও মুসলিমদের এই করতে হবে সেই করতে হবে! বিশাল এক শায়খ(only for girls)!! মেয়ে তো মহা খুশি! ‘ভাইয়াআপনি এত কিছু জানেন, সব প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে পাওয়া যায়, আপনি একটা জিনিয়াস ব্লাব্লা ব্লা’।
এখন শয়তান এই আলাপ যে ইনবক্সে নিয়ে যায়নি তার গ্যারান্টি কি!! সুবাহানাল্লাহ! আমরাযেটা মাথায় রাখব দাওয়ার কিছু rules and regulations আছে। নিজে জানার এবং মানার বিষয়আছে। শয়তানের ফাঁদ নিয়ে উপলব্ধির বিষয় আছে। অনেক ভাই বোনদের আমি দেখেছি তাদের ফেসবুকপোষ্টের কমেন্ট অপশন পাবলিক থাকলেও সেখানে কোন নন মাহরাম কমেন্ট করেনা। কেন?? কেন তারাসেই সুযোগটা কখনো দেন না! আপনি একটা ফান পোস্ট দিলেন।
আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে নন মাহরামনা থাকলেও কমেন্ট অপশন পাবলিক থাকার কারনে নন মাহরামরা সেখানে ফান কমেন্ট করা শুরুকরল! জাহেলরা যে কায়দায় কথাবার্তা বলে অবিকল সেই কায়দায় লুতুপুতু আর ইমুশনের জোয়ার!এখানে শয়তানের সাথে আপনার বোঝাপড়া! সেই নন মাহরাম ছেলে কিংবা মেয়ে একবার কমেন্ট করবে,দুইবার কমেন্ট করবে কিন্তু যখন দেখবে আপনি তাতে কোন রেসপন্সই দিচ্ছেন না তখন সে বুঝেযাবে এবং কেটে পড়বে। কিন্তু আপনি যদি তার সমান তালে রেস্পন্স করা শুরু করেন তাহলে ঘটনাগড়াতে থাকবে এবং শয়তান আপনাদের নিয়ে খেলতে থাকবে। ফেসবুক দিয়ে উদাহরন দিলাম মাত্র এবারএটাকে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন ফলাফল এক ও অভিন্ন! আপনাকে মনে রাখতেহবে শয়তান স্বভাবতই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করবে তাই শয়তান যার দিকে আপনাকেআকৃষ্ট করছে তার দিকে “দাওয়ার” অজুহাত নিয়ে এগিয়ে যাবেন না! সবাইকেদাওয়া দেওয়ার জন্য আপনি responsible নয়। এটামনে করার কোন কারন নেই যে আপনি দাওয়া না নিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বরং সর্বনাশটা হবেআপনি শয়তানের ফাঁদে পা দিলে।
সর্বনাশ হবে আপনি ফিতনাই জড়িয়ে গেলে! শয়তানের হাতে নিজের প্রবৃত্তিকে সঁপে দেওয়ার আগেতাই খুব গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা উচিত। সামনে তো বারসিসার কাহিনী আছেই reminder হিসেবে!
৪। সর্বশেষ একটা lesson আমরা বারসিসার কাহিনীথেকে নিতে পারি সেটা হল বৈরাগ্য বা একাকীত্বের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হয়ে। একটুচিন্তা করুন মেয়েটি যদি বারসিসার স্ত্রী হত, কিংবা বারসিসার যদি পরিবার থাকত তাহলেহয়ত শয়তান এত সুযোগ পেত না তাকে পথভ্রষ্ট করার। একটি কথা আমার খুব ভাল লাগে__ আপনিএকা থাকলে যা করেন সেটাই আপনার চরিত্র! একাকীত্ব শয়তানকে খুব বেশী সুযোগ করে দেয় তারপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার।
যে কারনে দ্বীনের পথে থাকতে চাওয়া ভাই বোনদের সবসময় একটা motivation এর মধ্যে থাকা উচিত। বারসিসার ক্ষেত্রেশয়তান এই সুযোগটা নিয়েছিল! তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়েছিল যা বারসিসা এড়িয়ে চলতে পারেনি। একাকিত্বেরসময়ের শয়তানী ওয়াসওয়াসা মানুষের তাক্বওয়ার লেভেলকেও নিচে নামিয়ে দেয় খুব সহজে। আল্লাহক্ষমা করুন আমাদের। আমাদের উপর রহম করুন।
শেষকথাঃ এই লেখাটা যেহেতু সবাই ফেসবুকেই পড়বেনতাই ফেসবুকের বিভিন্ন উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে বুঝার সুবিধার্থে! একটা বিষয় ইদানীংআমাকে খুব ভাবায় সেটা হল ইসলামের ব্যাপারটা আসলে পুরোটা উপলব্ধির! যে কারনে অনেক নলেজেবলভাই বোনকেও দেখবেন ইসলামের অনেক কিছু জানা সত্বেও আমল করার ব্যাপারে তারা উদাসীন। সেসবভাই বোনদের জন্য আমরা দোয়া করি যাদের অর্জিত জ্ঞান তাদের জীবনবোধের কোন পরিবর্তন করতেপারেনি। যারা কুরআন অধ্যয়ন করেছে, ইসলামের অনেক জ্ঞান অর্জন করেছে আর এই জ্ঞান জাহিরকরে বেড়িয়েছে কিন্তু নিজের জীবনে তার কোন reflection পড়েনি। আল্লাহর কাছে এমন ভণ্ডামিআর মুনাফেকি থেকে পানাহ চাই। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো শুধরেসত্যকে আঁকড়ে ধরার তৌফিক দান করুন। বারসিসার যে কাহিনীটা বর্ণনা করলাম এটা হয়ত অনেকেইজানেন। কিন্তু হয়ত এভাবে ভেবে দেখেননি। এখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাটুকু আমাদের দৈনন্দিনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশগুলোকে purify করার কাজে লাগতে পারে ইনশাআল্লাহ। ভুলকে মেনে নিয়েতার জন্য অনুতপ্ত হয় মানুষ আর ভুলের উপর অবিচল থেকে তার জন্য অজুহাত দেখায় শয়তান।
আমরাআশরাফুল মাখলুকাত আমরা আমাদের ভুলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ । এই লেখায় উপলব্ধি করার মত কিছু থাকলে আল্লাহ যেন আমাদেরকে তা উপলব্ধি করারতৌফিক দেন। যেন আমাদের পাপগুলো মুছে দেন। বিগতদিনের ভুলগুলো যেন আজকের দিনের শুদ্ধতার অনুপ্রেরণা হয় ইনশাআল্লাহ! ইসলামের শিক্ষাআর উপলব্ধি যেন আমাদের জান্নাতের পথের পথিক হতে সাহায্য করে।
শয়তান যেন দুর্ভাগা বারসিসারমত আমাদেরকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামের কঠিন আগুনে নিয়ে না যায়। সর্বাবস্থায় আল্লাহরসাহায্য চাই। আল্লাহ রহম করুন। আল্লাহ ক্ষমা করুন। ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম, আমীন।
[একজন মুসলিম ভাইয়ের থেকে সংগৃহীত]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।