আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ২"

আমার নিজের সম্পর্কে আমার ধারণা নেই :)

ওহহো, বলাই তো হয়নি দুই বান্ধবী দেখতে কে কেমন। তনু, লম্বা, ছিপছিপে গায়ের গড়ন। ফর্সা একটা গোলগাল মুখ, চোখ দুটো হরিণীর মত, কাজল কালো, একটা শান্ত দৃষ্টির মাঝে হঠাৎ হঠাৎ দুষ্টুমির ঝিলিক। মাথার ঘন কালো সোজা চুলগুলো পিঠে পড়েছে। দেখলেই মনে হবে একদম খাঁটি বাঙালী কিশোরী।

কথা বলে আস্তে আস্তে। ঠিক যেন রবি ঠাকুরের নায়িকা। আর মিতু শ্যাম বর্ণের , চেহারায় একটা কাটা কাটা ভাব, কপালের সামনে চুলগুলো কাটা থাকে সবসময়। মাথার চুলগুলো হালকা কোঁকড়া, কাঁধের একটু নিচে চুলগুলো অবাধ্য সাপের মত থাকে সারাদিন। চোখ দিয়েই হাজারো কথা বলতে পারে মিতু।

কথা বলার সময় ওর চোখের দিকে তাকালে মনে হবে যেন আপনিও ও যা বলছে তাই দেখছেন ওর চোখের মাঝে। একটু মোটু টাইপের গায়ের গড়ন ওর। কিন্তু ওর গতি আর সবার থেকে বেশি। কেউ ধরতেই পারে না যেন। নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে।

একটুও অন্যকিছু ভাবার সময় নেই। তনু নিয়ম করে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে বাসায় বসে পড়ে। আর মিতু ক্লাশ, কোচিং সব দাপিয়ে রাতে বাসায় এসে ঘুম দেয়। আর যেই দুয়েকদিন তনুর সাথে দেখা হয় না, সেইসব দিনে তনুকে ফোন ল্যাণ্ডলাইনে ফোন দিয়ে ইচ্ছামত বকে। আর সারাদিনের বর্ণনা দেয়।

কি কি করল, আজ রাস্তায় কোন ছেলে ওকে দেখে কি বলেছে, স্কুলের সামনে কোন মেয়ে কার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে এমন হাজারো কথা। মিতুর স্বভাব ছিলো বান্ধবীদের প্রেমের সমস্যার সমাধান দেওয়া। ঐ মেয়ে এক ছেলের প্রেমে পড়েছে, কিন্তু বলতে পারছে না, কি হবে?? মিতুর কাছে সবাই হাজির। মিতুও জ্ঞানী ভংগিতে সমাধান দিয়ে দিবে কিছু একটা। বান্ধবীরা মিলে ওর একটা নাম ও দিয়েছে।

মিস রোমান্টিক। ওর রোমান্টিসিজমের পাল্লায় পড়েনি এমন একটাও মেয়ে নেই ক্লাশে। সারাদিন উপন্যাস, গান, মুভির বুলি আউড়ে যায় কল্পলোকের এই নন্দিনী। তনু হাসে শুধু। প্রেমের ধারে কাছেও সে নেই।

তবে মিতুও কম যায় না। সারাটাদিন নিজের স্বপ্নের জগতে তনুকে টানতে থাকে। একটা রাজপু্ত্র আসবে, ঘোড়ায় চড়ে, চারপাশে তখন শুধুই গান বাজবে । সেই রাজপুত্রের হাত ধরে স্বপ্নের রাজ্যে চলে যাবে মিতু। মিতুর হাজারো এমন স্বপ্নের কথা সারাটাদিন শুনতে থাকে তনু।

এমনি করে কখন জানি মিতুর জগৎ টা তনুরও আপন লাগতে শুরু করে। শুরু হয় দুই বান্ধবীর একই স্বপ্নে বিভোর হওয়া দিনরাত্রি। দেখাই যাক না কতদূর এগোয় তারা এই রঙিন চশমা পরে!! ক্লাশ টেনে উঠে দুইজনই খুব খুশি। মনে হচ্ছে ওরা কত্ত বড় হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পড়েই স্কুল শেষ হয়ে যাবে।

মিতু রোজ কোচিং এ চোখে কাজল টেনে , কানে নিজের জামার সাথে ম্যাচিং টপ পড়ে সেজে আসে বড় হওয়ার চেষ্টায়। ও একদিন না সেজে আসলেই সবাই জিজ্ঞেস করে,"কি রে আজ তোর শরীর খারাপ?" কোচিং এর অন্য মেয়েদের মায়েরাও এখন এই কথাই জিজ্ঞেস করে। ব্যাপারটা এমন , মিতু মানেই যেন কাজলে কালো করা দুটি চোখ। আফতাব স্যারের সামনে পড়তে বসলেই তনুর কেমন জানি অস্বস্তি হয়। মাথা নিচু করলেই মনে হয় স্যার তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে।

আফতাব স্যার তনুকে বাসায় পড়াতে আসে। খুব ভালো ছাত্র , থাকে ওদের পাড়াতেই। ভদ্র ছেলে, মাথা নিচু করে পড়ায় যতক্ষণ তনু বুঝে। যখনই তনু মাথা নিচু করে তখনই ওর মনে হয় আফতাব স্যার ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তনু বরাবরই মাথায় কাপড় দিয়ে পড়তে যায় উনার সামনে।

তাও ওর মনে হয় কেন জানি স্যার ওকে একদৃষ্টিতে দেখে। ব্যাপারটা ভালো না খারাপ, তনু বুঝেনা। এমনিতে ওর স্যারকে ভালোই লাগে। ছোটোখাটো মানুষ, ফর্সা গায়ের রং, হাসিটা নিষ্পাপ, বাচ্চাদের মত। মিতুকে বলতে গিয়েও কেনো জানি স্যারের কথাটা বলতে পারেনা।

আজও তনু আফতাব স্যারের সামনে পড়তে বসেছে। আজ স্যারকে কেমন জানি অন্যমনস্ক লাগলো। কেমন জানি অস্হির একটা ভাব। বেশি পড়ালেন না আজকে উনি। ম্যাথ বইয়ে পড়া দাগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।

পড়া শেষ করে তনু ম্যাথ বই খুলল। খুলেই তনুর মাথায় বাজ পড়ল। বইয়ের ভাঁজে একটা চিঠি। স্যার ওকে চিঠি দিয়েছে। ওর বুকের ভিতর হার্ট টা যেন ভয়ানক গতিতে লাফিয়ে বের হয়ে যেতে চাইছে।

মাথা ঘুরাচ্ছে। ভয় লাগছে ওর, বিছানায় বসে পড়ল ও তাল সামলাতে না পেরে। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ওর। অনেক সাহস করে চিঠিটা খুললো ও। **পাঠক, রাতে লিখতে বসি তো তাই বেশি লিখতে চাইলেও লেখা হয় না।

ঘুম আস। তারউপর সকালবেলার ক্লাশের ধকল। তবে নিয়মিত লিখব কথা দিলাম। না লিখলে বুঝবেন নেটওয়ার্কের বাইরে। **


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।