-আম্মু ওই গুলো কি?
*কোনগুলো?
-ওই যে ওই ছেলের হাতে গোলাপী রঙয়ের?
*ওইগুলো হাওয়াই মিঠাই। ওইগুলো পচা খাবার
হাওয়াই মিঠাই দেখতে সুন্দর, ছোট্ট মেয়ে ইশির এই নতুন জিনিস খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আম্মুর কথায় বুঝে গেছে এটা তাকে খেতে দেয়া হবে না। তাই মন খারাপ করে গাড়ির ভিতর বসে রইল ইশি। খাবার টা পচা না।
আসলে আম্মু টাই পচা। বাসায় গেলে ইশিকে জোর করে ঠিকই দুধ খাওয়াবে। দুধ ভাল খাবার। ইশির ভাল জিনিসের প্রতি আগ্রহ নেই। ইশির বন্ধু ফারিহা সেদিন কি যেন গুড়ো এনেছিল,পানিতে দিলেই পানি গোলাপী হয়ে যাচ্ছিল।
ফারিহার কাছ থেকে ওইগুলো নিয়ে দুধে মিশিয়ে দিতে হবে। তাহলে দুধও পচা খাবার হয়ে যাবে।
বিল্ডিং গুলোর ছুটে চলা খুব উপভোগ করছে ইশি। কিন্তু একটু পরেই বিল্ডিং গুলো দৌড় থামিয়ে দিল। এই জ্যাম একদম ভাললাগেনা ইশির।
সবকিছু কে থামিয়ে দেয়। তবে পথের নোংড়া ছেলেমেয়ে গুলো জ্যাম কে খুব ভালবাসে। ওরা হয়ত চায় সারাদিন জ্যাম লেগে থাকুক । কেউ ফুল, কেউ পেপার , কেউ অন্য কিছু নিয়ে এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়ির পাশে গিয়ে দাড়াচ্ছে সেগুলো বিক্রি করার জন্য । গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে জ্যাম উপভোগ করছে ইশি ।
"ওই ******, গাড়ি কি তোর বাপে কিইন্যা দিছে "
সামনে থেকে শব্দ টা ভেসে আসে । ৭-৮ বছর বয়সী একটা মেয়ে ফুল নিয়ে সামনের গাড়ির পাশে দাড়িয়ে ছিল । বড় লোকের গাড়িতে ফুলের টোকা লাগলে তা ময়লা হয়ে যায় । মেয়েটাকে দেখে ইশির মায়া হয় । নোংড়া ছেলেমেয়েদের দেখে মায়া হওয়া খারাপ কাজ ।
"আপা ফুল নিবেন? অনেক সুন্দর ফুল "
বাচ্চা মেয়েটা ইশিদের গাড়ির পাশে এসেছে । ২দিন আগে ইশি তাদের গোলাপ ফুল গাছের কাটায় হাত কেটে ফেলেছে । লাল রক্ত বেরিয়েছিল । ইশি রক্ত দেখলে ভয় পায় । হাত কাটার পর থেকে লাল রং আর লাল গোলাপের সাথে ইশির আড়ি ।
ইশি কেবলি বলতে যাচ্ছিল "না নিব না, গোলাপ ফুল পচা" কিন্তু তার আগেই ইশির আম্মু বলে দিল "না লাগবে না, যা"
ইশিদের গোলাপ গাছে এখন একটাও ফুল নেই । মেয়েটা চলে যাওয়ার পর ইশির মায়া বেড়ে গেল । ২টা গোলাপ কিনলে তেমন কিছুই হত না । জ্যাম কেটে গেছে , মেয়েটাও হারিয়ে গেছে ।
বাসায় ফিরে ইশি তার ড্রইং খাতায় গোলাপ ফুল আকার চেষ্টা করছে ।
কিন্তু কেন জানি এটা গোলাপের মত লাগছে না । রান্নাঘর থেকে আম্মুর উচু গলা ভেসে আসছে । কাজের মেয়েটা একটা গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে । আম্মু তার জন্য মেয়েটাকে খুব মারছে । সেদিন ইশিদের পোষা কুকুর তাদের একুরিয়াম ভেঙ্গে ফেলেছিল ।
আম্মু শুধু "না" বলে একটা চিতকার দিয়েছিল । ইশিদের কুকুর নোংড়া না । এই কাজের মেয়েটা নোংড়া ।
বড়রা সবসময় ভাল কাজ করে । ইশির আম্মু কাজের মেয়েটা কে মেরে ভাল কাজ করছে ।
ভাল কাজ ইশির ভাল লাগে না ।
-কাদিস না । দেখত আমার গোলাপ টা কেমন হয়েছে?
রান্না ঘরে গিয়ে ইশি কাজের মেয়েকে কথাগুলো বলে
*আফা গুলাপ তো রাঙ্গা অয় । আপ্নেরডা রাঙ্গা নাতো
-গুলাপ না, গোলাপ আর রাঙ্গা না , লাল, বুঝলি? আমার কাছে লাল রং নেই ।
*আমি লেহাপড়া জানিনা ।
গুলাপ কইলেও কিছু অইত না । আপ্নের মায়ের লাল লিফিস্টিক দিয়া রাঙ্গা কইরা দেন ।
মেয়েটা আবার রাঙ্গা বলেছে । ইশির রাগ হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছেনা ।
কারন মেয়েটা তাকে ভাল বুদ্ধি দিয়েছে। ইশির ক্ষমতা থাকলে পুরষ্কার স্বরুপ ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিত ।
টিফিন পিরিওডে ইশি দেখল গতকালের হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা ছেলেটা তাদের স্কুলের সামনে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
-তোমার এ খাবার গুলো ভাল না । এতে রং মেশানো ।
এগুলো খেলে অসুখ করবে । আমি খেতে চাই । কিন্তু রং দেয়া বলে খেতে পারিনা । রং বাদে আনতে পারোনা?
হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা ছেলের কাছে গিয়ে ইশি কথাগুলো বলে ।
*আইচ্ছা আফা, কাইলকের তে রং বাদে আনুম নি ।
ইশি এখন খুশি । কারন এখন সে প্রতিদিন টিফিনে হাওয়াই মিঠাই খেতে পারে । এগুলো রং করা না । তাই এগুলো দেখতেও সুন্দর না .
-তোমার নাম কি?
*বাচ্চু ।
হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা ছেলের নাম বাচ্চু ।
-ইয়াক! এটা কি নাম?
*নাম একটা হইলেই হইল । মাইনষে আমারে বিচ্ছু কইয়াও ডাকে ।
এদের নাম নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই । বিচ্ছু নাম টা ইশির কাছে খুব বিদ্ঘুটে লেগেছে । আচ্ছা ইশি নাম বিকৃত করলে কি হবে? ইশ, বিষ , ইস্যু, টিস্যু অনেক কিছুই ইশির মাথায় ঘুরপাক খায় ।
থাক, ইশির কোনো বিকৃত নাম লাগবে না ।
-তোমরা কয় ভাই বোন ?
*আমার ছোড একট বইন আছে । নাম রিতু ।
অসহ্য। বিচ্ছুটা সব কিছুকেই বিকৃত করে বলছে ।
তবে রিতু নাম টা ইশির পছন্দ হয়েছে ।
-ঈদের শপিং করেছ ?
*শপিংকি?
-মানে ঈদের জামাকাপড় কিনেছ ?
*হা হা হা , আমগো পেটই চলে না আবার ঈদ । বইনে একটা লাল ফরক চাইছিল । দিবার পারুম কিনা কেডায় জানে ।
ইশির খারাপ লাগছে ।
অনেকের যে ঈদই নেই এটা আজকেই প্রথম শুনছে । ইশি ধর্ম বইতে পড়েছে ঈদ মানে খুশি । তার মানে বাচ্চুর খুশি নেই ।
আজ ইশির আব্বু, আম্মু আর ইশি #শপিং করতে গেছে । বাচ্চু কিছু কিনতে পারেনি।
তাই বাচ্চুর জন্য কিছু কেনার ব্যবস্থা করতে হবে ।
-আব্বু প্লিজ বাচ্চু , বাচ্চুর বোন আর কাজের মেয়ের জন্য কিছু কেননা?
নিজেদের শপিং শেষে ইশির আব্বু কে কথা গুলো বলে ইশি ।
*বাচ্চু কে?
-আমাদের স্কুলে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে। ও ঈদে কিছু কিনতে পারেনি ।
*অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছ তুমি ।
ওরা খারাপ ছেলে । কে পোষাক কিনল বা না কিনল তা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না । ছোট আছ তাই পাকামো করবে না ।
ইশির বাবা লাখ টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য ঈদের বাজার করতে পারেন । হাজার হাজার টাকা হারিয়ে গেলে তিনি কিছুই মনে করবেন না ।
কিন্তু বাচ্চুদের জন্য ৫০০ টাকা খরচ করা তার ক্ষমতার বাইরে ।
ইশি খারাপ হওয়া শিখে গেছে । এখন চাইলেই সে খারাপ কাজ করতে পারবে । ইশির লাল ফ্রক নেই । তাই স্কুল ব্যাগের ভিতর একটা সাদা ফ্রক ঢুকিয়ে রেখেছে ।
রোজা শুরু হয়ে যাওয়ায় ইশিদের টিফিন পিরিওডেই ছুটি হয়ে যায় । ছুটির পর আম্মু থাকে। আম্মুর সামনে বাচ্চু কে ফ্রক দেয়া যাবেনা । ইশি ইচ্ছে করেই তার ক্লাসে পানির ফ্লাক্স রেখে এসেছে ।
-তুমি গাড়িতে বস ।
আমি তোমার ক্লাস থেকে ফ্লাক্স টা নিয়ে আসি ।
ইশির আম্মু চলে যাওয়ার পর ইশি জোর করে বাচ্চু কে ফ্রক টা দেয় ।
ইশির আম্মু ফিরে আসার পর একটা হাইজ্যাকার ইশির আম্মুর ব্যাগ টা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ।
ইশিরা কিছুদুর এগিয়ে যেয়ে একটা জটলা দেখতে পায় । বাচ্চু হাইজ্যাকার টার পিছু তাড়া করেছিল ।
একটা ট্রাক এসে বাচ্চু কে চাপা দিয়ে গেছে । "বেচে আছে " "মারা গেছে " "আহহারে " বিভিন্ন শব্দ ইশির কানে আসছে । কি আশ্চর্য্য! গরীবের রক্তও লাল ! এ রক্তের রং ইশির রক্তের মতই ।
*আম্মু ওকে আমাদের গাড়ীতে করে হসপিটালে নিয়ে চলো ।
-ইশি চলো ।
ও বেচে নেই হয়ত । আমার ব্যাগ টা আর পাবোনা ।
ইশি পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে । একটা সাদা ফ্রক রিতুর কাঙ্খিত লাল ফ্রকে পরিনত হচ্ছে ।
একটা সাদা ফ্রক খুব সহজেই লাল ফ্রক হয়ে যায় কিন্তু কতিপয় ধনীদের মন কখনো নরম হয়না ...............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।