আমি জন্মগত ভাবেই একজন উৎকৃষ্ট পাঠক । তবে একাকীত্ব কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট মানের লেখাও লিখি ।
১।
আরও একবার আমি মানুষ হয়ে মরব,
উত্থিত হতে নিষ্কলঙ্ক ফেরেশতাদের পাশে-
তবে তা থেকেও উন্নীত হতে হবে আমাকে, কারণ
ঈশ্বর ছাড়া সকলেই যে ধ্বংস হবে-
যেদিন আমার স্বর্গ পবিত্র আত্মার বলি দিব,
আমি হব তাই,
যা ছিল না কখনো কারো কল্পনা চিন্তায়-
আমার যেন বিলুপ্তি ঘটে, কারণ
অনস্তিত্ব ইন্দ্রিয়ে সুর তুলে আমি তাঁর কাছে ফিরবো-
=> তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী
২।
ওরা ছুরি ও
ধারালো অস্ত্র দিয়ে
দ্বিখন্ডিত করে কন্ঠনালি
ওরা উল্লাস দেখে
কীভাবে শরীর থেকে
বৃষ্টির মত রক্ত গড়ায় ।
ধারালো অস্ত্র নিয়ে
শরীরের চামড়া ছিলে নেয়
এবং দেখে ভিতরের মাংসপেশী ও হাড়গোড়
ওরা টুকরো টুকরো করে হাড়গোড়
খন্ডবিখন্ড করে ফেলে
বীভত্স উল্লাসে
এইসব হাড়গোড় শরীরে জড়িয়ে
জানান দেয় নিজেদের সাহসিকতা
স্মারক চিহ্ন করে
ঝুলিয়ে নেয় গলায়-
ওরা সেই সব মৃত মানুষের মাংস খায়
বর্বর অন্ধকার যুগে যেমনি মানুষখেকোরা
ভক্ষণ করেছে তাদের স্বজাতিকে-
=> (একজন শহীদের ময়নাতদন্ত, তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী)
৩।
যারা যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল,
যারা অপেক্ষায় আছে আজও একটি বিচারের-
একটি বিচার
যা শেষ করার জন্য
তারা
যুদ্ধের সেইসব নায়কেরা
ডাক দিয়ে যায়-
জাতির জন্য, জেগে ওঠার জন্য
ওই জাতির জন্য, যারা ধ্বংসের মধ্যেও
নতুন জীবনের ডাক দিয়ে যায়;
তুমি কি শুনতে পাও
সেই সব শহীদের কন্ঠস্বর ?
=> (ফিরো এসো বাংলাদেশ, তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী)
৪।
আমি প্রস্তর হয়ে মরলাম উদ্ভিদ হতে
উদ্ভিদ হয়ে মরি, তো উত্থিত প্রাণে-
মানুষ হয়ে উঠলাম পরে, যখন সত্য উদ্ভাসিত হলো
ভয় কিসের ? দ্বিধা কেন মৃত্যুতে ?
=> তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী
৫।
সকলেই চলে যাবে
মৃত্যুকে ভালবেসে-
সযত্নে আগলে রাখে হৃদয়ে
জীবন অথবা মৃত্যু-
তারা অস্ত্র কিনেছিল
মৃত্যুকে ভালবেসে-
খুন হল একজন,
জীবন অথবা মৃত্যু
সযত্নে আগলে রাখে হৃদয়ে-
হাতে তুলে নেয় রড়
হত্যাকে আয়ত্ত্বে আনতে;
তাদের সংকল্প ছিল
বিশ্বাসের নৈতিকতায়-
=> তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী
কবিতাগুলো ত্বকীর লেখা । তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী ।
কিছু বাংলাতে, কিছুবা ইংরেজিতে ।
ত্বকী, নায়ারণগন্জ্ঞের মেধাবী ছাত্র ত্বকী ।
না, মৃত্যুর পর হুট করেই হয়ে যাওয়া মেধাবী নয় । জন্ম থেকেই সেই মেধাবী ।
দশ বছর বয়সে কুরআন খতম দিয়েছিল ।
তখন থেকেই রমযান মাসে সবগুলো রোজা রাখত ।
গভীর রাত জেগে নিজে নিজে পড়াশুনা করত ।
পুরো শিক্ষাজীবনে স্কুল কিংবা স্কুলের বাইরে কখনো কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়তে হয়নি তাকে । এ লেভেল- পরীক্ষার আগে স্কুলের এক শিক্ষক ত্বকীকে চ্যালেন্জ করেছিলেন- তার কাছে কোচিং না করলে ত্বকী পরীক্ষায় ভাল করতে পারবে না ।
ত্বকী কোন কথা না বলে চ্যালেন্জটা গ্রহণ করেছিল এবং জিতেছিল ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রিতে পুরো বিশ্বে রেকর্ড মার্ক পেয়ে প্রথম হয়ে ।
শাহবাগ নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল ত্বকী । লিখেছিল-
"হৃদয়ে আজ নব বসন্তের গান,
পাখির ডাকের সাথে ধ্বনিত হচ্ছে শাহবাগের স্লোগান । "
সুফিবাদ নিয়েও যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠেছিল সে । ফকির লালন সাঁই কে নিয়ে একটা প্রবন্ধও লেখা শুরু করেছিল । প্রায়ই মেডিটেশনে বসত ।
সৃষ্টি, স্থিতি, সত্য-অসত্য, জগত্ ও মহাকাশ নিয়ে তার কৌতুহলের কমতি ছিল না । একনিবিষ্ট মনে তার সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াত ।
কারো সাতে পাঁচে না থাকা প্রচন্ড মেধাবী এই ছেলেটি খুন হয় ।
খুনী কে আমরা সবাই সেটা জানি ।
কিন্তু তারপরও এই মেধাবীর খুনীর বিচার হয়নি ।
ভবিষ্যতে হবে তারও নিশ্চয়তা নেই ।
আজ ত্বকীর জন্মদিন । যেদিনটিতে মা-বাবা, ছোটভাই, বন্ধুদের নিয়ে আনন্দে মেতে থাকার কথা, সেই দিনে আজ সে বহুদূরে, নিবৃত্তে একা কোথাও......
শুভ জন্মদিন ত্বকী ।
যেখানেই আছ, অনেক অনেক ভাল থেকো ।
তোমার খুনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস এখনো এই পৃথিবীর বাতাসকে দূষিত করে চলেছে ।
আমরা তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারিনি । পারলে আমাদের এই অক্ষমতাটুকু ক্ষমা করো ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।