আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৌষ সংক্রান্তি ঃ পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব

ঘুড়ি। পুরান ঢাকায় কবে, কখন, কোথায় প্রথম ঘুড়ি উৎসব শুরু হয়েছিল--তা ইতিহাস থেকে ভালোভাবে জানা যায় না। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭৪০ সালের দিকে নবাব নাজিম নওয়াজেস মোহাম্মদ খাঁন এর সময় থেকে ঢাকায় ‘ঘুড়ি উড়ানো’ উৎসব হিসাবে প্রচলিত হয় এবং নবাব পরিবাররা এ উৎসবের উৎসাহ দাতা ছিলেন। সেই সময় ঘুড়ি উড়ানো আনন্দ অভিজাত মহলে সীমাবদ্ধ ছিল--যা এখন সর্ব সাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। পুরান ঢাকার ঘুড়ি উৎসবের আনন্দ বরাবরের মত এ বছরও জাঁকজমকভাবে উৎযাপিত হয়েছে।

প্রজাপতি, পঙ্খিরাজ, চুড়িদার, গাহেলদার, কাউঠাদার, চোখদার, চাঁনদার, ঘর গুড্ডি, বাক্স গুড্ডি, কয়রা ঘুড্ডি ইত্যাদি নানা রকমের ঘুড়ি উড়ানো; প্লাকার্ড, ফেস্টুন প্রদর্শনী এবং সাজানো ঘোড়ার গাড়ীতে অলি-গলি ঘুড়ে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার মানুষের পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উৎযাপিত হয়েছে। মোড়ে-মোড়ে, বাড়ীর ছাদে-ছাদে, ক্লাব, সংঘ অথবা বন্ধুদের দল মিলে হাই ভলিয়মে গান বাজিয়ে নেচে-গেয়ে সারাদিন সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে। সনাতন হিন্দুরা বাসার কাছে খোলা জায়গায় পৌষ সংক্রান্তির পূজা করে গুচ্ছ কাঠের গুড়িতে আগুন জ্বালিয়ে। নানা রকমের শাড়ি, জড়িদার কাপড়-চোপড় পড়ে ছোট বড় সব বয়সের নারীরা আগুনের চারিদিকে পূজা সামগ্রী সাজিয়ে বসে ‘বুড়া-বুড়ির পূজা’ উদযাপন করে; পৌষ মাসকে বিদায় জানিয়ে মাঘ মাসকে গ্রহণ করে। পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি বাসার ছাদে বর্নাঢ্য ঘুড়ি উৎসব উৎযাপিত হয়েছে।

আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা প্রায় সব বয়সের মানুষেরা নানা রঙের সূতা মেজে, হরেক রকমের ঘুড়ি উড়িয়ে, বিচিত্র রকমের পিঠার আয়োজনে নাচ-গান-বাজনার মধ্য দিয়ে সারাদিন ব্যাপী পৌষ সংক্রান্তির ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে। সন্ধ্যার পরে পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি ছাদ থেকে নানা রকমের আলো বিচ্ছূরিত হতে থাকে। কান ফাটানো, চোখ ধাঁ ধাঁ করা বিচিত্র রকমের আতস বাজির খেলা আমাদেরকে বিস্মিত করে। আবার কেউ কেউ মুখের ভিতর কেরোসিন তেল নিয়ে সামনে মশাল রেখে মুখের তেল মশালের উপর ছুড়ে মারে; হঠাৎ করে আগুন জ্বলে ওঠে ঘন কুয়াশার অন্ধকারে। বন্ধুরা রাতের আঁধারে ঘুড়ির সূতার সাথে আলোকিত ফানুশ বেঁধে আকাশে উঁড়িয়ে দেয়; দুর থেকে দেখলে মনে হয়, আকাশে যেন ধুমকেতুর গুচ্ছ জ্বলছে--পৌষকে বিদায় দেবার এ যেন অন্য রকম পৌষ সংক্রান্তি উৎসব।

পৌষ সংক্রান্তির আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে হাজার হাজার ফটকা, আতসবাজীর আনন্দে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয়। অপচয় আর আনন্দ উৎযাপনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব প্রায় চারশত বছর ধরে এই পুরান ঢাকায় হয়ে আসছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।