আমার কারাবাসের দ্বিতীয় দিনটি ছিল শুক্রবার। ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই। কারা ফটকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে যখন ফিরছিলাম তখন ঘড়িতে বেলা ১টা বেজে গেছে। কারাগারে কোনো জুমার নামাজ হয় না। অন্তত কাশিমপুরে হয় না অন্য কোথাও হলেও হতে পারে।
সংসদের অ্যাসেম্বলি হলে যেখানে আমি বসতাম সেখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকত। অনেকেই আমার ওখানে আসতেন আড্ডা দেওয়ার জন্য।
ফাঁকে নানা রকম রাজনৈতিক সুখ-দুঃখের গল্প-গুজব। ভিড় এত বেশি হতো যে, আমি মাঝে-মধ্যে ভয়ই পেয়ে যেতাম। কারণ মাননীয় স্পিকার, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বা সিনিয়র কোনো নেতা হয়তো মনে করতে পারেন, রনির ওখানে সব সময় এত ভিড় লেগে থাকে কেন। আসল ঘটনা হলো আমার আড্ডা বা গল্প বলার ধরন অনেকের পছন্দ হতো, তাই তারা আসতেন। অন্যদিকে আমরা বসতাম চার নম্বর লবিতে।
সেখানেও একই অবস্থা। আমি বসলেই অমনি কোথা থেকে যেন ৮-১০ জন চলে আসতেন। বুট-মুড়ি, পিয়াজুর সঙ্গে চা বা কফির আড্ডা চলত ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না হুইপ আ. স. ম ফিরোজ ভাইয়ের ধমক খেতাম। তিনি প্রায়ই তাড়া দিতেন ভেতরে যাওয়ার জন্য। সে অনেক কথা এবং অনেক কাহিনী।
রাজনীতির ভেতরে আরেক রাজনীতি। সব কথা বলাও যাবে না। কিংবা লেখাও যাবে না। কিন্তু গত সাড়ে চারটি বছর মনে হয়েছে, ওইসব লোকের সবাই আমার সুহৃদ। আমি তাদের অনেকের গ্রামের বাড়িও গেছি এবং আমাদের সম্পর্ক পারিবারিক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
আমি নিজে তাদের যেকোনো প্রয়োজনে কেবল সাড়াই দেওয়া নয়, বরং ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সব সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতাম। কিন্তু ছোট্ট একটি নামকাওয়াস্তের সমস্যায় পড়ার পর এ কি হলো! আমার পরিচিত ভুবন মুহূর্তের মধ্যে অচেনা হয়ে গেল। ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে দেখা হলে তারা আমার সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন? তাদের কি একটুও লজ্জা করবে না? এসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার কারা প্রকোষ্ঠের নির্দিষ্ট রুমে চলে এলাম।
আমার মনে হতে থাকল, তবে কী আমি আমার দলের বেওয়ারিশ এমপি। আমাদের সমাজে বেওয়ারিশ এবং লাওয়ারিশ শব্দ দুটি ব্যাপক পরিচিত।
আমি প্রথমে বেওয়ারিশ শব্দটি নিয়ে কিছু আলোচনার পর লাওয়ারিশ শব্দের ব্যাখ্যায় যাব।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে আমার অতীত পড়াশোনা এবং বোধবুদ্ধিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্দজীবনী পড়ার পর। আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই মারাত্দক দুর্দশায় পড়ছে কেবল দক্ষ, বিশ্বস্ত, সৎ ও শিক্ষিত কর্মীর অভাবে। সবচেয়ে বড় কথা বলা যায়, দলটি প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর একমাত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কোনো নেতা জনগণের মন-মানসে শ্রদ্ধার আসনে বসতে পারেননি।
সাম্প্রতিক সময়ে আমার মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা বড্ড গতানুগতিক পথে এগুচ্ছেন।
তারা ষাটের দশকে যেসব কথা বলেছেন- প্রায় হুবহু এবং একই কথা বলছেন ২০১৩ সালে এসেও। একজন নেতার মুখ থেকে নতুন কোনো কথা বের হয় না। গত ৮/১০ বছর আগের যে কোনো একটি ভাষণের অডিও বা ভিডিও ক্লিফ চালানো হলেই নাকি নেতাদের নতুন করে সাক্ষাৎকার নিতে হয় না- এমন-সব ঠাট্টা-মশকারামূলক কথাবার্তা বলতে শুনেছি মিডিয়াকর্মীদের।
দলটির আরও একটি বড় সমস্যা হলো এর নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের স্পষ্ট ধারণা না থাকা। যেমন_ কথায় কথায় আওয়ামী লীগ বলে থাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা সম্পর্কে।
কিন্তু এ বিষয়গুলো যে আসলে কী এবং কিভাবে জনগণের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে স্থাপন করতে হবে, সে ব্যাপারে নেতাদের দক্ষতা আমার মনঃপুত হয়নি। ফলে দিন দিন দলটি আধুনিক মন-মানসিকতা সম্পন্ন নাগরিক, বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
আমার জীবনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নেহাতই একটি আকস্মিক ঘটনা। হয়তো আমার নিয়তি বা তকদিরই আমাকে এই পদে আসতে সাহায্য করেছে। আমি মাঝে-মধ্যে কল্পনা করতাম এমপি হওয়ার জন্য।
তৃণমূল পর্যায়ে বেশ কিছু দিন কাজও করেছিলাম। কিন্তু প্রচলিত রাজনীতির প্রথা অনুযায়ী প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির কয়েকটি অত্যাবশ্যক শর্ত থাকতে হবে। দুটি দলের প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্দীয়, কিংবা বহু বছর নিরলসভাবে দলের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দলীয় প্রধানের সুদৃষ্টি অর্জন করেছেন কিংবা বড় কোনো ব্যবসায়ী হিসেবে বহু বছর ধরে দলকে গোপনে বা প্রকাশ্যে সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি আরও নানা গোপন কর্মে সহযোগিতা করে আসছেন অথবা বহু বছর থেকে দলীয় আমলা হিসেবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পেঁৗছেছেন এবং অবসর নেওয়ার পর দলীয় প্রধানের সুদৃষ্টি অর্জন করছেন- এমন ব্যক্তি যদি আপনি হতে পারেন তবে বাংলার মানুষ আপনার কপালে এমপি নামক রাজ তিলকটি পরাতে বাধ্য হলেও হতে পারে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আমার ক্ষেত্রে কোনোটিই ঘটেনি। কিভাবে যে পেলাম একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন।
কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আমি বিষয়টি আল্লাহ প্রদত্ত অতি উত্তম নেয়ামত হিসেবে গ্রহণ করি। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্যকে ইবাদত মনে করে সেভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে থাকি। অন্যদিকে, দলের প্রতি আমার কর্তব্য এবং দেশের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি।
আমার পঠিত জ্ঞান আমাকে শিক্ষা দিচ্ছিল নির্ভয়ে সত্য কথা বলার জন্য। ইতিহাসের নায়ক বা মহানায়করা প্রায় সবাই নির্ভয়ে নিজের সম্পর্কে সত্য বলার চেষ্টা করেছেন এবং একই সঙ্গে চিন্তা-চেতনায় প্রবলভাবে সত্যকে ধারণ করেছেন।
কোনো কোনো সত্য কখনো যুগোপযোগী ছিল না। ফলে তারা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন কিন্তু সত্যচ্যুত হননি। অন্যদিকে, সবাই অন্যের সমালোচনা বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পূর্বে নিজ দল বা গোষ্ঠীর সমালোচনা করেছেন এবং নিজেরা পরিবর্তন হওয়ার চেষ্টা করেছেন সবার আগে।
আমি যখন এসব চিন্তা করছিলাম ঠিক তখনই অযাচিতভাবে আমার জীবনে কিছু সমস্যা এসে যায়। এটা ছিল ২০০৯ সালের প্রথম দিকে।
অর্থাৎ এমপি নির্বাচিত হওয়ার ঠিক পর পরই। আমার নির্বাচনী এলাকায় দুই উপজেলায় আমি দু'জন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলাম। অথচ আমার মনোনীত প্রার্থীদের সম্পর্কে কোনো পূর্ব ধারণাই আমার ছিল না। বিষয়টি নিয়ে আমার উচিত ছিল সম্মানিত এলাকাবাসীর সঙ্গে একান্তে খোলামেলা আলোচনা করা এবং জেলা পর্যায়ে ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দলীয় নেতাদের পরামর্শ নেওয়া। কিন্তু তা না করে একক সিদ্ধান্ত নিয়ে মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
আমি জনগণকে আহ্বান জানালাম আমার মনোনীত প্রার্থীদ্বয়কে ভোট দেওয়ার জন্য। জনগণ আমাকে সম্মান করল। ফলে যা কোনোদিন হওয়ার নয়, তাই হলো। আমার মনোনীত দুজন প্রার্থীই জয়লাভ করল।
এটা প্রকৃতির নিয়ম বা নিয়তি কিনা জানি না- উভয় উপজেলা চেয়ারম্যানই মনে মনে ভাবতে শুরু করলেন তারা নিজ যোগ্যতা বলে নির্বাচিত হয়েছেন।
তারা মনে মনে আমাকে পরম শত্রু ভাবতে শুরু করল। কিন্তু আমি তা টের পেলাম না। স্থানীয় জনসমর্থন এবং সুনামের জন্য তারা আমার কোনো কাজে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করতে সাহসী হলো না। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ লোকদ্বয় যে রাজনীতির কূটকৌশল জানত সে ব্যাপারে আমি ছিলাম একেবারে নাবালক। তারা গোপনে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে শুরু করল ভয়ানক অপপ্রচার।
প্রথমে এসব অপপ্রচার স্থানীয় পর্যায়ে ছড়াল এবং এক সময় জাতীয় পত্রিকাগুলোর শিরোনাম হলো।
সাংবাদিকতায় আমার কিছু দিনের অভিজ্ঞতার দরুন আমি জানতাম, তিলকে তাল করা যায় কিন্তু তিলের অস্তিত্ব না থাকলে তাল করা যায় না। আমি ওসব অপ্রচার গায়ে না মেখে নিজের কাজে মনোযোগী হলাম। ঠিক তখনই আমার দৃষ্টিতে দলীয় একটি দুর্বলতা নজরে এলো। আমার মতো দলের এক নবীন সংসদ সদস্যকে নিয়ে ৪/৫টি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকে প্রায় একমাস ধরে নানা রকম সিরিজ রিপোর্ট বের হলো, যার সবগুলোই মিথ্যা এবং বাস্তবতা-বহিভর্ূত।
তা নিয়ে দলের কোনো নেতা আমাকে না করল কোনো প্রশ্ন- আর সাহায্য-সহযোগিতা তো দূরের কথা। আমার বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট কেবল ব্যক্তিগতভাবে আমার ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন করে না, বরং দলীয় ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করে। এতবড় দল অথচ একজন ব্যক্তি পেলাম না, যে কিনা বিষয়টি নিয়ে নূ্যনতম আগ্রহ দেখিয়ে আমাকে সাহায্য করবে অথবা শাসন করবে। আর তখন থেকেই মনে হলো- রাজনীতি বড় নির্মম, নিষ্ঠুর এবং এখানে চলার পথে কোনো সঙ্গী মেলে না।
আগেই বলেছি সময়টা ২০০৯ সালের প্রথম দিক।
আওয়ামী লীগ সরকারের তখন রমরমা অবস্থা। সবাই মহাব্যস্ত। প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা সীমাহীন। ডাকসাইটে নেতা বা প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও সচরাচর প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎলাভে ধন্য হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল সরকার রাজনৈতিকভাবে মারাত্দক কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
প্রশাসনিক ব্যাপারেও ভয়াবহ সব ভুল হচ্ছিল। আর দলীয় কার্যক্রম তো ছিলই না। আমার চিন্তা-চেতনা তখন সরকার ও দলকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছিল। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হওয়ার পর দলটির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না। কিন্তু কথাগুলো কারও সঙ্গে আলোচনারও সুযোগ পাচ্ছিলাম না।
সমবয়সী কয়েক বন্ধু সংসদ সদস্যের সঙ্গে মতবিনিময়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। তারা সবাই যার যার এলাকা, ব্যবসা, তদবির, দলীয় পদ লাভ, আগামীতে মনোনয়ন প্রাপ্তি এবং কেউ কেউ মন্ত্রী হওয়ার ঘোরে মহাব্যস্ত।
আমি উপযাচক হয়ে কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালালাম। তারা সবাই আমাকে একটি ঝামেলার বস্তু মনে করল। কেউ কেউ আমাকে নয়া অাঁতেল বা অকালপক্ব বলেও নিকটজনের কাছে মন্তব্য করল।
আমি শেষমেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য সাক্ষাতের চেষ্টা করলাম। একদিন, দুদিন এবং একাধিক দিন, কিন্তু সুযোগ মিলল না।
সম্মানিত পাঠক, অবশ্য এরই মধ্যে আমার প্রতি রাগও করে ফেলতে পারেন অযথা ঘ্যানর ঘ্যানর করার জন্য। কারণ, আপনারা এ প্রশ্ন ন্যায্যভাবেই রাখতে পারেন- কি এমন কথা, যা কিনা আপনি প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য এমনভাবে ছুটোছুটি করছিলেন এবং এর সঙ্গে জাতীয় ব্যাপার-স্যাপারই বা কি ছিল? আমি বলব অবশ্যই ছিল। আমি প্রথমত পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ অশনি সংকেত, ব্যাংকিং সেক্টরে স্ক্যান্ডাল হওয়ার অশনি সংকেত, শেয়ার মার্কেটের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের অশনি সংকেত এবং জনপ্রশাসন ও নিম্ন আদালতের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি নিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের আশঙ্কার কথা বলতে চেয়েছিলাম।
আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন এসব দুর্ঘটনার একটিও ঘটেনি।
২০০৯ সালের আগস্টের শেষে আমি টেলিভিশন টকশোর অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ পাই। বিশেষ করে চ্যানেল আইয়ের তৃতীয়মাত্রার জিল্লুর রহমান এবং কিছু দিন পর একুশে টিভির অঞ্জন রায় (বর্তমানে জি-টিভি) আমাকে এত সুযোগ দিতে থাকলেন যে, টকশোর বাজারে রীতিমতো আমার চাহিদা বেড়ে গেল। প্রায় সব টিভিতেই আমাকে নিয়মিত ডাকত। আমি আমার মনের মধ্যে উঁকি দেওয়া আশঙ্কাগুলোর কথা টিভি অনুষ্ঠানে বলতে শুরু করলাম।
ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং কর্তাব্যক্তিরা আমার ওপর মারাত্দক ক্ষেপে গেলেন। সংসদ লবিতে তারা আমাকে নিয়ে রীতিমতো ঠাট্টা-মশকারা করতেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ আরও কয়েকটি পত্রিকায় কলাম লেখা শুরু করলাম। তারা আরও ক্ষেপে গেলেন। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তারা বলতেন_ "নতুন পণ্ডিতের আমদানি হয়েছে! শালা টকশো মারাইয়া বেড়ায়! আবার ইদানীং নাকি লেখকও হয়েছে! নেত্রী এসব ঝামেলা মাঝে-মধ্যে কোথা থেকে আমদানি করেন।
মনে হয় বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট টেজেন্ট হবে হয়তোবা। '
সংসদ লবি, সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কিছু চামচা নিয়মিত ঘুরে বেড়ায়। এরা না পারে এমন কোনো কাজ নেই। মন্ত্রীদের ইঙ্গিতে এসব লোক যার-তার কলার ধরে অপমান করতে পারে। এ ধরনের কিছু চামচা আমার পেছনে লাগল।
এরা অনেকে আমার সমবয়সী বা কম বয়সী ক্যাডার জাতীয় দলীয় কর্মী। এদের চোখ সব সময়ই লাল থাকে। অন্যকে ভয় দেখানোর জন্য এরা অভ্যাসবশত দুই হাত প্যান্টের দুই পকেটে ঢুকিয়ে বিশ্রী ভাষায় মুখ চালায়। এরা আমাকে দেখলেই বিভিন্ন অশালীন বিশেষণে ভূষিত করে ফোড়ন কাটত। আমি না শোনার ভান করে তাদের এড়িয়ে যেতাম।
যেসব যায়গায় এসব চামচা বেশি থাকত- সেসব এলাকায় যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু আমার প্রতিবাদ বন্ধ করলাম না। বরং বাড়িয়ে দিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করা। আমার আশা ছিল- এসব শুনে প্রধানমন্ত্রী হয়তো বকা দেওয়ার জন্য হলেও আমাকে ডেকে পাঠাবেন।
কিন্তু আমার সে আশাও পূর্ণ হলো না। আমার চোখের সামনে আমার আশঙ্কাগুলো ক্যান্সারের মতো বাড়তে থাকল এবং ভয় হলো, যে কোনো সময় ক্যান্সার সরকারের সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে সব সফলতার রক্ত শুষে নেবে।
২০১০ সালের শেষ দিকে আমার আশঙ্কাগুলো আস্তে আস্তে ফলতে শুরু করল। ঘটনার নায়করা এবার আমাকে ভয় পেতে শুরু করল। প্রথমে তারা আমাকে যেভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল করেছিল কিংবা পরে চামচা লেলিয়ে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেছিল, সেই পরিকল্পনা বাদ দিয়ে এবার তারা নয়া ওষুধ ব্যবহারের চেষ্টা করল।
কয়েকটি পত্রিকাকে আমার বিরুদ্ধে আবার লেলিয়ে দেওয়া হলো। ২০০৯ সালের প্রথম দিকে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনী এলাকার প্রতিপক্ষরা যেসব মিথ্যা সংবাদ ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিল সেসব চর্বিতচর্বণ দাড়িকমা বাদ না দিয়ে হুবহু ছাপানোর ব্যবস্থা করল পুনরায়।
২০১৩ সালে এসে আমার মাথা বলছিল, চুপ থাক। সরকারের শেষ সময়। বেশির ভাগ নীতি-নির্ধারণী ব্যক্তিরা অধৈর্য হয়ে পড়েছেন।
ফলে তারা আর আগের মতো তোমার সমালোচনা সহ্য করবেন না। আমি ঠিক মাথার পরামর্শ মতোই চলছিলাম। সরকারের সফল দিকগুলো সাধ্যমতো তুলে ধরার পাশাপাশি বিরোধী দলের সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার সমালোচনাকারীরা ভারি আশ্চর্য হয়ে পড়ল। তারা বলবলি শুরু করল, রনির হলোটা কি! সে তো সব সময় সরকারের পক্ষে বলছে।
সরকারি নীতি-নির্ধারণী মহলেও আমাকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হলো। কোনো কোনো সিনিয়র নেতা আমাকে দলীয় প্রচারকার্যে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করল। দলের প্রচার সেল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি মাদ্রাসা ছাত্র সমাবেশে আমাকে বক্তা হিসেবে মনোনীত করল। এরই মধ্যে শুরু হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আমি দল কর্তৃক বিশেষভাবে নির্দেশিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করলাম।
নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত। প্রথম যখন গাজীপুর গেলাম- তখন চারদিকে কেবল পরাজয়ের ধ্বনি শুনতে পেলাম। কিন্তু নির্বাচনের একেবারে শেষ দিনগুলোতে আমার মনে হতে থাকল হয়তো জিততেও পারি। কয়েকজন পুরনো ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে আমার আশাবাদের কথা ব্যক্ত করলাম। তারা আমার বুদ্ধি বিবেচনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলল- অন্য সবার মতো তুমিও দেখি হাইব্রিড আওয়ামী লীগার হয়ে গেছ।
সব কিছুতেই জয়ের স্বপ্ন দেখ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর আমার সেসব বড় ভাই টিটকারী শুরু করল- আমি মনে ভীষণ কষ্ট পেলাম। এবার আমার মাথা আবার অকেজো হয়ে হৃদয়ের ভাবাবেগ চাঙ্গা হয়ে গেল। ভাববেগের বশবর্তী হয়ে আমি ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস লিখলাম। যথা কোথায় আমাদের তেল, গম, ভুট্টা আর মরিচ কন্যারা? হে শ্বেতশুভ্র বেশধারী দাড়ি মোচ আর কেশধারী! তোমার এখন কি হবে? এবং গাজীপুরে পরাজয়ের নেপথ্য কারণ- ইত্যাদি শিরোনামে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ কয়েকটি শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল সেগলো গুরুত্ব দিয়ে ছাপাল। সবাই খুশি হলো; কিন্তু যারা ক্ষেপে গেল তারা সবাই সিন্ডিকেট করে আমার বিরুদ্ধে লাগল। ফলশ্রুতিতে কারাবাস এবং আরও কয়েকটি মিথ্যা মামলার খপ্পরে পড়া।
কাশিমপুর কারাগারের সবাই বলল, এসব মামলায় কিছুই হবে না। জজকোর্টে গেলেই জামিন হয়ে যাবে।
জেলে এলাম বৃহস্পতিবার। রবিবার অর্থাৎ ২৯ জুলাই জজকোর্টে জামিনের আবেদন জানানো হলো। ঢাকা সিএমএম কোর্টের ঐতিহ্য অনুযায়ী ওই দিনই জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেশবাসীকে আশ্চর্য করে আমার জামিন আবেদন গ্রহণ করা হলো এবং শুনানির তারিখ দেওয়া হলো ১৩ আগস্ট।
আমার জামিন নিয়ে টালবাহানার খবরে আসামিরা আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে চোখের পাতা এবং মুখের ভাষা নরম করতে শুরু করল।
তবুও জেলার বলল, সাবধানে থাকার জন্য এবং কোনোক্রমেই সেলের বাইরে না যাওয়ার জন্য। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে জেলারের উপদেশ মান্য করতে থাকলাম এবং অধীর আগ্রহে ১৩ তারিখের অপেক্ষায় থাকলাম। কারাগারের সবচেয়ে বড় শাস্তি নিঃসঙ্গতা। যদিও আমার নিঃসঙ্গতা ভালো লাগে কিন্তু এখানকার নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে বড় বেদনা হলো পদে পদে আপনার মনে হবে_ আপনি বন্দী এবং আপনাকে অপমান ও নির্যাতন করার জন্যই এখানে আনা হয়েছে। ফলে প্রথম কয়েকদিন সব বন্দীর মনই প্রচণ্ড খারাপ থাকে।
তারপর যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী দ্রুত নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
আমিও যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার। জামিনের তারিখের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ১২ আগস্ট পর্যন্ত পার করলাম। এর মধ্যে বেশ কিছু বন্দীর সঙ্গে আমার খাতির হয়ে গেছে। প্রতিটি সেলের মূল ফটক বন্ধ হয় ৬টার সময়।
ফলে ৬টার পূর্ব পর্যন্ত এক সেলের বন্দীরা মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে অন্য সেলের বন্দীদের সঙ্গে খোশগল্প করতে পারে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, ১০/১৫ ফুট চওড়া একটি রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে দুদল লোক কথা বলছে। ১২ তারিখ বিকালে আমাদের সেলের বন্দীরা বিপরীত দিকের সেলের বন্দীদের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। এমন সময় ওই স্থান দিয়ে এক কারা কর্মকর্তা জানালেন যে, আপনার বিরুদ্ধে আপনার নির্বাচনী এলাকায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। কাজেই আগামীকাল আপনার জামিন হলেও বের হতে পারবেন না।
আমি তখন মনে মনে ধরে নিলাম, হয়তো আগামীকালের জামিনটি অগ্রাহ্য হবে।
যেমনটি ভাবছিলাম পরের দিন কোর্ট থেকে তেমন সিদ্ধান্তই পেলাম। অর্থাৎ জজকোর্টও আমার জামিন আবেদন গ্রাহ্য করেনি।
আমি যে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের বেওয়ারিশ এমপি হয়ে গেলাম এর মূল কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার অন্তর্দহন বেড়ে যাচ্ছিল। কারণ আমি এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোােন কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
এবার আমার মন্দ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। প্রথমত নির্বাচনী এলাকার প্রায় ৫০/৬০ জন পদ-পদবিধারী প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রথম থেকেই আমি বর্জন করে আসছি। দলীয় প্রধানের প্রতি অনুগত্য এবং অতিরিক্ত শ্রদ্ধা ও সমীহ দেখাতে গিয়ে আমি এ কাজ করেছি। ওই লোকগুলো ১/১১ সময় শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে রাজনীতি করার পক্ষে ছিল। ওই ৫০/৬০ জন লোক স্বাধীনতার পর থেকে বংশানুক্রমে নিজেদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা মনে করত।
বিভিন্ন সময় এই লোকগুলোর বেশির ভাগ অংশই এহেন জুলুম, নির্যাতন, অনিয়ম বা দুর্নীতি নেই যা তারা করেনি। ফলে সমাজে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী, বিত্তশালী এবং পদ-পদবির অধিকারী হলেও তাদের গণভিত্তি একেবারেই ছিল না। ফলে তাদের শত বিরোধিতা এবং বহুমুখী চক্রান্ত সত্ত্বেও আমি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, গত চার বছরে তারা প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল আর এ জন্য আমাকে থানায় একটি জিডি এন্ট্রি কিংবা সামাজিকভাবে ভয়ভীতি দেখানো দূরের কথা একটি মন্দবাক্য বা চোখ রাঙানিও দিতে হয়নি। আমি শুধু সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, ওই লোকগুলোকে আমি পছন্দ করি না।
আমার বিরুদ্ধবাদীরা বলেন যে, আমি নাকি দলীয় মন্ত্রী বা কতিপয় নেতার সমালোচনা করে থাকি প্রকাশ্যে! এটা নাকি অনুচিত। কারণ সমালোচনা করা উচিত দলীয় ফোরামে এবং একান্ত গোপনীয়ভাবে। এ বিষয়টি নিয়ে আমার কোনো মর্মবেদনা নেই। বরং মনে হয়, আমি সঠিক কাজটিই করেছি এবং আগামী দিনেও করব ইনশাল্লাহ।
কথা বলছিলাম বেওয়ারিশ এমপি প্রসঙ্গ নিয়ে।
গত সাড়ে চার বছরের এমপিকালীন আমার সঙ্গে সংসদের ভেতরে ও বাইরে দলের হাতেগোনা অল্প কয়েকজন বাদে বেশির ভাগ লোকের সঙ্গেই চমৎকার সম্পর্ক ছিল। তবে এ লোকগুলো কেন আমার সমসার সময়ে পাশে দাঁড়তে সাহস পেল না। আমার মনে হয়, কেবল প্রধানমন্ত্রীর ভয়ে তারা এগুতে সাহস পাননি। আর তাই যদি হয়, তবে আমাদের জন্য মহা বিপর্যয় সামনে অপেক্ষা করছে। বিপর্যয়ের দ্বিতীয় কারণ হলো- একটি তুচ্ছ, মিথ্যা ও সাজানো ঘটনায় দলীয় একজন সংসদ সদস্যের কারাবাস নৈতিকভাবে অন্য এমপিদের হতোদ্যম করে ফেলেছে, যদিও সাহস করে কেউ বলতে পারছি না।
সংসদীয় ব্যবস্থায় এমপি পদটি সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদগুলোর একটি। গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রতিনিধিত্ব করেন একজন সংসদ সদস্য। তিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন, জনগণের বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন, সব ধরনের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের ওপর তাকে মর্যাদা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর উপদেষ্টা করা হয় এই লক্ষ্যে যে, তিনি তার নির্বাচনী এলাকার সব মানুষের আশ্রয়দাতা হয়ে তাদের জুলুম-অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাবেন। আর সেই এমপি যদি তার নিজ এলাকায় চুরি ও ছিনতাই মামলার আসামি হয়ে কোনো কোর্টে জামিন না পেয়ে বেওয়ারিশ অবস্থায় কারাগারে থাকেন, তাহলে অন্য এমপিদের মনের অবস্থা কি হয়, তা বোঝার জন্য খুব বেশি পাণ্ডিত্যের দরকার হয় না। অন্য সময়ে বেওয়ারিশ হলে হয়তো আমার এতটা অন্তর্দ্বন্দ্ব হতো না।
সরকারের একদম শেষ সময়ে অনেক এমপিই নানারকম সমস্যায় রয়েছেন নিজ নিজ এলাকায়। আমার মতো তাদের এলাকার কোনো বিরুদ্ধপক্ষ প্রভাবশালী মন্ত্রী-নেতা বা আমলার প্ররোচনায় যদি তাদের বিরুদ্ধে গোটা কয়েক ছিনতাই মামলা দেওয়া শুরু করে তাহলে আর আগামীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন করতে হবে না। ক্ষমতার একককে ধ্বংস করে কখনো দশক সৃষ্টি করা যায় না।
এখন আমি লাওয়ারিশ সম্পর্কে কিছু কথা বলে এ প্রসঙ্গের ইতি টানব। আওয়ামী লীগের একে অপরকে প্রায়ই সমালোচনা করে হাইব্রিড নেতা, জীবনে রাজনীতি করেনি কিংবা বিএনপি-জামায়াতের গুপ্তচর বলে।
বিষয়টি অনেকটা এমন যে, একই মায়ের পেটের সন্তান দুই ভাই ঝগড়া করতে করতে একে অন্যজনের পিতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। লাওয়ারিশ মানে যার কোনো ওয়ারিশ বা মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ বস্তুটি আছে কিন্তু জন্মদাতা হিসেবে কেউ এর মালিকানা দাবি করছে না। মানব সন্তানের ক্ষেত্রে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় একে বলি জারজ সন্তান। সমাজে এরা খুবই ঘৃণিত এবং কেউ এদের সঙ্গে মিশে না।
দলের মধ্যে যদি এক নেতা অপর নেতার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বা অপ্রচারের মাধ্যমে কাউকে লাওয়ারিশ বানানোর চেষ্টা করেন, হবে অন্যকে ছোট করতে গিয়ে নিজেরাই ছোট হন। যারা এসব নেতাকে দলে আমদানি করেন বা দায়িত্বপূর্ণ পদে বহাল করেন লাওয়ারিশ শব্দটি তাদের সরাসরি আঘাত করে। ফলে দলের চেইন অব কমান্ড এক সময় ভেঙে পড়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে গ্রুপিং বা অন্তর্কলহ রয়েছে, তবে তারা একে অপরকে ওইভাবে ছোট করার চেষ্টা করে না, যেভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে হয়ে থাকে। আমি অবাক-বিস্ময়ে ভাবি, বাংলাদেশের রাজনীতির সব তারকাই এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন।
কিন্তু কি এমন অন্তর্নিহিত কারণ ছিল, যার কারণে তারা বিরোধী শিবিরে যোগ দিল, সেই বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যত তাড়াতাড়ি ভাববেন ততই দলটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।