আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই কোরবানি কি সৃষ্টিকর্তা গ্রহণ করেন?

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

একটি লজিস্টিকস কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে ফিলিপাইনের এক সহকর্মীর কাছ থেকে সেদিন খুব কৌতূহলোদ্দীপক এক তথ্য জানতে পারলাম। তার এক ক্লায়েন্ট নাকি এক প্রকার বানর বিদেশে রপ্তানি করে যেগুলোকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারগুলোতে গিনিপিগের মত ব্যবহার করা হয়। গবেষণাগারগুলোতে প্রতিষেধক আবিষ্কার করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষানিরীক্ষা করতে বানরগুলোর শরীরে এইচআইভি সহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী ব্যাধির জীবাণু প্রবেশ করানো হয়। ফলে বানরগুলোর বেশির ভাগই এক পর্যায়ে মারা যায়। তাই বানরগুলো যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন যেন তাদের খাওয়াদাওয়া, আরাম-আয়েশে কোনরূপ কমতি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হয়।

আমদানি-রপ্তানি করার সময় পথিমধ্যেও তাদের জন্য সর্বোচ্চ বানরীয় স্বাচ্ছন্দ্যের আয়োজন রাখা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি অবস্থায় পরিবহন করা সম্পূর্ণ বেআইনি। বানরগুলোকে পরিবহন করার জন্য এমনকি লিমোসিন’এর (limousine) মত বিলাসবহুল গাড়ি পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। বিশেষভাবে লিমোসিন গাড়িটিকে বেছে নেওয়া হয়, কারণ গাড়িটিতে আরাম-আয়েশের যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে, আকারে দীর্ঘ, তাছাড়া এই বিশেষ যানটির চালক ও যাত্রীর আসনের মাঝখানে বিভাজক তুলে রাখা যায়; তাই গাড়িটির যাত্রী আসনে বানরগুলোকে ছেড়ে রাখা হলেও, তারা চালকের গাড়ি চালনায় কোনোপ্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। আমার সেই কলিগটি খুব গর্ব করে দাবী করছিল যে সে’ই নাকি লিমোজিন ভাড়া করে, তাতে ডায়াপার পরানো অবস্থায় বানরদের পরিবহন করার অভিনব পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছিল।

নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মানুষকে প্রাণীকুলের প্রতি কত নির্মমই না হতে হয়! বানর কিংবা গিনিপিগদের ওপর মারাত্মক সব পরীক্ষানিরীক্ষা যদি করা না হতো, তবে প্রাণঘাতী রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হতো না। তবু মানুষ তার নির্মমতাকে উপলব্ধি করে। এবং তাতেও যতটুকু সম্ভব মানবিকতা মেখে দেয়; যতটুকু সম্ভব কম নিষ্ঠুর হওয়ার চেষ্টা করে। সুস্বাদু খাবারদাবার, বিনোদনের সকল প্রকার ব্যবস্থা করে জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত সেই বানরদের সুখী রাখার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা মানুষের সেই অদ্ভুত মানবিক আচরণের একটি অসাধারণ উদাহরণ। সেখানে আমরা কোরবানির পশুদের সাথে যে রকম আচরণ করি, সেই নিষ্ঠুরতাকে কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না ! কোরবানি বিষয়ক ধর্মীয় নির্দেশাবলী স্পষ্ট বলে দেয় যে আহত; শারীরিক কিংবা মানসিক (পাগল) বৈকল্য আছে এমন পশুদের কোরবানি দেওয়া যায় না।

কোরবানির উদ্দেশে নির্বাচন করা পশুদের কষ্ট দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। এমনকি কোনও পশুকে কোরবানি দেবার জন্য একবার ভিন্ন করা হলে সেই পশু থেকে কোনোপ্রকার সুবিধে পর্যন্ত আদায় করা যায় না। সেখানে এদেশে ট্রাকের পেছনে দাঁড় করানো অবস্থায় আঁটসাঁট করে বেঁধে কোরবানির পশুদের যেভাবে এক শহর থেকে আরেক শহরে পরিবহন করা হয়, তা নির্মম। মাত্র কয়েকটি দিনের ব্যবধানে কোরবানি হয়ে যেতে হবে যে পশুগুলোকে, তাদের ট্রাকের পেছনে তীব্র জ্যামের কারণে পনের থেকে বিশ ঘণ্টা, কখনো বা তারও অধিক সময় ধরে একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়! একটিকে আরেকটির পাশে যেভাবে ঠেসে বেঁধে রাখা হয় তাতে করে দীর্ঘ সময় নিরীহ পশুগুলো মাথা পর্যন্ত এদিক-ওদিক ঘোরাতে পারে না; বসার কোনও সুযোগ তো নেই’ই! ট্রাকের পেছনের অংশের কাঠের বেষ্টনীটিকে গলার নিচে রেখে অস্বাচ্ছন্দ্যকর একটা অবস্থায় তাদের বোঝাই করা হয়। দীর্ঘ যাত্রায় তারা কিছু খেতে পায় না বললেই চলে।

কিছু কিছু ট্রাকে খরের ব্যবস্থা রাখা হলেও বৃষ্টি এলে সেগুলোও ভিজে একশেষ হয়। বেশীরভাগ ট্রাকের পেছনে কোনোপ্রকার ছাউনির ব্যবস্থা থাকে না। তাই দীর্ঘ পথ রোদে-বৃষ্টিতে বোবা পশুগুলো অসহনীয় কষ্ট করে! আমার জানা নেই ধর্ম কিভাবে বিষয়টিকে বিচার করে কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে অনুভব করি যে এ অন্যায়! যাকে মেরেই ফেলা হবে, তাকে কেন তার জীবনের শেষ কটা দিন এভাবে অত্যাচার করা? কিভাবে এদের কোরবানি দিয়ে পুণ্য লাভ করা সম্ভব? এই কোরবানি কি সৃষ্টিকর্তা গ্রহণ করেন? এটা সত্যি যে ব্যাপক চাহিদা পূরণে বাজারে পর্যাপ্ত গরুর সমাহার ঘটাতে হলে এভাবে ঠাসাঠাসি করে ট্রাকে ভরে গরু সরবরাহ করা ছাড়া গতি নেই। ট্রাকে গরুদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যথেষ্ট জায়গা রেখে পরিবহন করাটা হয়ত বাড়াবাড়ি। কিন্তু কেন এভাবে চিন্তা করা হবে না যে এই কোরবানি শুধু আনন্দ-ফুর্তি-ভোগ-ভোজের জন্য নয়।

এর একটা ধর্মীয় গুরুত্ব-ফজিলত আছে, নিয়মকানুন আছে। কেন সকল নিয়মকানুন, মানবিকতা মেনে গরু সরবরাহ করা নয়? তাতে যদি গরুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়, সরবরাহ কমে বাজারে গরুর সঙ্কট দেখা দেয় এবং ফলে কোরবানি দেওয়া সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় তবে হয়ত তাই হওয়া উচিৎ! নিরীহ পশুদের কষ্ট দিয়ে কেন এই মৎসবে ব্যাপক অংশগ্রহণ যদি সত্যি সত্যি পুণ্য লাভই হয়ে থাকে এর মূল উদ্দেশ্য? সাধ্য যখন বিবেচনায়, তখন তো আর ধর্মীয় দিক থেকেও কোনও বাধ্যবাধকতা থাকার কথা নয়! জবাই করে কোরবানি দেয়ার আগে, পশুগুলোর জীবনের শেষ কটা দিনের সুবিধের কথা চিন্তা করা কি বাড়াবাড়ি? ধর্ম রক্ষা হোক, ন্যুনতম মানবিকতাও! নাকি আসলে এর কোনটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়? http://www.notun-din.com/?p=8831

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।