একাত্তরে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং এসব অপরাধে উস্কানি ও সহযোগিতার ১৭টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে।
আসামি ও প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থপন শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।
ওইদিন জামিন বাতিল করে জিয়াউর রহমানের আমলের এই মন্ত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি হবে অষ্টম রায়। আলীম হচ্ছেন বিএনপির দ্বিতীয় নেতা, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
এর আগে সর্বশেষ ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ট্রাইব্যুনাল-১
২২ সেপ্টেম্বর আলীমের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করিনি। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বাকি সবগুলো অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী, আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি। ”
তিনি জানান, আলীমের বিরুদ্ধে তিনটি গণহত্যা, একটি আটক, একটি দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং ১২টি হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, আব্দুল আলীম যেহেতু একজন আইনজীবী ছিলেন এবং একজন শিক্ষিত-সচেতন নাগরিক হয়েও অপরাধ সংগঠনে সাহায্য করেছিলেন- সেহেতু ওইসব ঘটনার জন্য তাকে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবল’ হিসাবে ধরা যায়।
তবে আব্দুল আলীমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, “আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ভিত্তিহীন বাগাড়ম্বর। প্রসিকিউশন গৎবাধা কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধী সাজাতে চায়। ”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণে আলীম সাহেবের একদিনের শাস্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ”
গত বছরের ১১ জুন ৭ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।
এগুলোর মধ্যে ১৫টিতে বিভিন্ন ঘটনায় মোট ৫৮৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকি দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, আটক ও দেশান্তরে বাধ্য করার ঘটনায়।
হত্যার অভিযোগের ১৫টি ঘটনার মধ্যে তিনটি গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে, যাতে মোট ৪০৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের।
২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর চার দিন পর অশীতিপর এই ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা মুচলেকায় ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয়া হয়, যার মেয়াদ পরে বাড়ানো হয় কয়েক দফায়।
গত আড়াই বছর জামিনে মুক্ত আলীম আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বনানীতে তার ছেলের বাড়িতে অবস্থান করেন। ফয়সাল আলীম মোবাইল ফোনের কনটেন্ট প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান উইনটেলের মালিক।
২০১২ সালের ৯ জুলাই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ প্রসিকিউশনের মোট ৩৫ জন আলীমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।
অন্যদিকে আসামিপক্ষে তার ছেলে সাজ্জাদ ছাড়াও সাক্ষ্য দেন জয়পুরহাটের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও মো. মোজাফফর হোসেন।
১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলীম। ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জিয়াউর রহমানের সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রী এবং পরে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন আলীম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।