Consistency is the last refuge of the unimaginative. –Oscar Wilde (ইহা হইল আমার কনসিসটিন্সি না থাকিবার একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত)
অবরুদ্ধ হবার তেরো দিনের মাথায় আর্নেস্টো চে গুয়েভারা (১৯২৮-১৯৬৭) বলিভিয়ান সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হন। হাত ও পা জোড়া করে বেঁধে লা হিগুয়েরা গ্রামটির একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ফেলে রাখা হয় চে’কে। পাশে মৃত পড়ে আছে দুই সহযোদ্ধা। হিগুয়েরা গ্রামের জঙ্গলে সংঘটিত হয় চে’গুয়েভারা ও তার দলের সাথে সর্বশেষ যুদ্ধটি। সিআইএ এজেন্ট ফেলিক্স রডরিগুয়েজ এবং বলিভিয়ান সেনাকর্মকর্তারা এবার তাকে আনুষ্ঠানিক জিজ্ঞাসাবাদেও কোন তথ্য বের করতে পারে নি চে’র জীবন কমরেডদের সম্পর্কে।
অতএব আর দেরি কেন! ফটোসাংবাদিককে দেখে এক পর্যায়ে ফেলিক্স তার রাইফেলটি চে’র কাঁধে রাখলো। ছবি তোলা হলো বন্দী চে’র। হয়তো জীবদ্দসার শেষ ছবি। চে’র মৃত্যুকে নিয়ে ইতোপূর্বে প্রচারিত সকল গুজবকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য বলিভিয়ান সরকার ঘটনাটিকে এভাবেই পরিকল্পনা করেছিলো।
“আপনি কি ভেবেছিলেন অমরই থেকে যাবেন?” এক সেনা কর্মকর্তার এরকম প্রশ্নের মুখে “না” বলে জবাব দিলেন চে।
“আমি ভাবছি বিপ্লবের অমরত্বের কথা। ”
কিছুক্ষণ পরই মারিও টেরান নামের এক সেনাকে সুযোগ দেওয়া হলো চে’কে গুলি করার জন্য। নির্দেশ ছিলো যেন মুখের নিচে অর্থাৎ গলায় গুলি করা হয়। কিন্তু টেরান সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারলেও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছিল। “আমি জানি, তুই আমাকে মারতে এসেছিস।
গুলি কর, কাপুরুষ! তুই তো শুধু একজন মানুষই মারবি। ” চে’কে হত্যা করার দায়িত্বটি স্বেচ্ছায়ই নিয়েছিলো টেরান, কিন্তু ভয় আর উত্তেজনায় লক্ষচ্যুত হলো টেরানের গুলি। গুলি পড়লো গিয়ে পায়ের গোড়ালিতে। তীব্র ব্যথায়ও কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না চে। নবম গুলিটি গিয়ে পড়লো চে’র গলায়।
ফুসফুসে রক্তক্ষরণ হলো। বিপ্লবী চে মারা গেলেন! দুপুর ১:১০টায় চে’কে মৃত বলে ঘোষণা করা হলো।
চে’র ঘাতক মারিও টেরান।
ওই দিন বিবিসি সংবাদে বলা হয়, গেরিলাদের সাথে বলিভিয়ান সেনাদের সম্মুখযুদ্ধে মার্ক্সিয় বিপ্লবী আর্নেস্টো চে গুয়েভারা নিহত হন। কিউবান প্রধানমন্ত্রী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ডানহাত চে গুয়েভারা গত ‘৬৫ সাল থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকেন।
ফলে তার সঠিক অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন রকমের তর্ক-বিতর্ক চলছিল। গত দু’বছরে তার মৃত্যু নিয়েও নানা সময়ে নানান সংবাদ প্রচারিত হয়ে আসছিল, কিন্তু কোন সংবাদই তা নিশ্চিত করতে পারে নি।
নিজের এপিটাফ নিজেই লেখেন চে’গুয়েভারা
স্বভাব বিপ্লবী চে নিজের মৃত্যুকে অবধারিতই জেনেছিলেন। মৃত্যুর মাস কয়েক আগে নিজেই নিজের সমাধিলিপি (এপিটাফ) লেখেন: “মৃত্যু যেখানে বিস্মিত করার কথা, সেখানে মৃত্যুতে স্বাগত জানাই। যেন সেটি সমরহুঙ্কার হয়ে সহযোদ্ধাকে অস্ত্রধারণে অনুপ্রাণিত হয়।
”
চে’গুয়েভারার মৃত্যু: ভিডিও ছবি ১
চে’গুয়েভারার মৃত্যু: ভিডিও ছবি ২
সামহোয়ারইন ব্লগে চে গুয়েভারাকে নিয়ে আছে অনেক লেখা। আমি তার কয়েকটি উল্লেখ করলাম:
•চে গুয়েভারা কে ছিলেন: ইরোর
•চে গুয়েভারা: আমি অমানুষ
•মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারা স্মরণে: সৈয়দা তাহমিনা বেগম সীমা
•ক্যাপসনসহ চে গুয়েভারার ১৫০ ছবি
•চে গুয়েভারাকে নিয়ে পোস্ট সংকলন: মেহেদী হাসান’’
•শতাব্দীর সবচেয়ে খ্যাতিমান বিপ্লবী চে’গুয়েভারা’র মৃত্যু শ্রদ্ধাঞ্জলি: কোবিদ
চে’কে নিয়ে আর কী বলবো। অনেক হয়েছে বলা - অনেক হয়েছে লেখা। বিপ্লব ছাড়া পরিবর্তন আসে না, অধিকার আদায়ই করে নিতে হয়। যুগে যুগে বিপ্লবীরা আসবে যাবে - কিন্তু বিপ্লব অমর।
মানুষের অধিকার ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অমর নায়ক চে’গুয়েভারার প্রতি লাল সালাম!
গ্রন্থপঞ্জি ও তথ্য সূত্র:
-দ্য ডেইলি স্টার
-বিবিসি
-সামহোয়ারইন ব্লগ
-ব্যক্তিগত অনুসন্ধান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।