জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন ও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে আজ বুধবার ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দুই দফায় হামলা চালিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সাধারণ শিক্ষক ফোরাম অভিযোগ করেছে, উপাচার্য দুজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। পাল্টা অভিযোগ করে উপাচার্য বলেছেন, কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা ছিল।
ওই সভা করতে বাধা দেওয়ার জন্য বেলা আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা সমবেত হতে থাকেন। বেলা সোয়া তিনটার দিকে দুই সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যকে নিয়ে পূর্বঘোষিত সিন্ডিকেট সভায় যোগ দিতে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন প্রশাসনিক ভবনে যান। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বাধা দিলে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ফখরুল ইসলাম ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জামাল উদ্দিনকে ধাক্কা দিয়ে উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের বাগবিতণ্ডা হয়।
বাগবিতণ্ডা চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের গালাগালি ও হুমকি দেন।
তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের সামনের চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দিকে কিছু চেয়ার ছুড়ে মারেন। তখন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা উত্তেজিত হয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করেন। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রশাসনিক ভবনে থেকে একটু দূরে গিয়ে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারী একজন শিক্ষকের দাবি, তাঁদের মারধরের জন্য প্রক্টর ছাত্রলীগ নিয়ে এসেছেন। ওই শিক্ষকদের এমন বক্তব্যে উত্তেজিত হয় ওঠেন প্রক্টর।
তখন মন্তব্যকারী শিক্ষক এবং প্রক্টরের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় শিক্ষকেরা গালাগাল শুরু করেন। একপর্যায়ে কে বা কারা ধাক্কা দিলে উপাচার্য পড়ে যান। উপস্থিত শিক্ষকেরা উপাচার্যকে টেনে তোলেন। এর কিছুক্ষণ পরই উপাচার্য প্রশাসনিক ভবন থেকে চলে যান।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিক্ষক ফখরুল ইসলাম ও শিক্ষক জামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্য তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এ সময় ফখরুল ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এর কিছুক্ষণ পর এক সংবাদ বিফ্রিংয়ের মাধ্যমে ফোরামের সদস্যসচিব মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, উপাচার্য দুজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছেন এবং ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে। তাই তাঁরা অতি দ্রুত উপাচার্য এবং প্রক্টর মুজিবুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করছেন।
এর কিছুক্ষণ পরই সহকারী প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে তিনি সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা একটি মৌন মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির জন্য শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসেছিলেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা চেয়ারগুলো ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষকের হাতাহাতি হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।
আহতদের মধ্যে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারের হাত কেটে যায়। পরে প্রক্টর ও অন্য শিক্ষকেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা দাবি করেন, চারজন শিক্ষক ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছেন। শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়া হবে বলেও জানান তাঁরা।
এ সময় ছাত্রলীগ একটি মিছিল বের করে।
তাদের একজন কর্মীও শিক্ষকদের সঙ্গে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে দাবি করে ছাত্রলীগ।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কে বা কারা ধাক্কা দিয়েছে, আমি জানি না। তবে শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। ’
প্রশাসন ছাত্রলীগকে ডেকে এনেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু চেয়ার ভাঙচুরের শব্দ পেয়েছি।
তবে আমি বা আমার প্রশাসন থেকে কেউ ছাত্রলীগকে ডেকে আনেনি। ’
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পাশাপাশি অবস্থান করছেন।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।