আসামি পক্ষের আপত্তির মধ্যেই বৃহস্পতিবার শুনানির শেষে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক এসএম মজিবুর রহমান।
গত ৩ অক্টোবর শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) কামাল উদ্দিন আহাম্মদ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার আবেদন জানান। তার ভিত্তিতেই আদালতের এই আদেশ হয়।
আদালত আগামী ২৩ অক্টোবর শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন। ওই দিন ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মোতাবেক আসামিদের পরীক্ষা (এগজামিন) করা হবে।
দুপুর পৌনে ১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে চার আসামির আইনজীবী ছয়টি আবেদন জমা দেয়।
এর মধ্যে মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী আগের দুই সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা আহাদুর রহমান ও একেএম মহিউদ্দিনের অসমাপ্ত জেরা শেষ করার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন জমা দেন।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষ গত ৩ অক্টোবর আদালতের দেয়া নির্দেশনা অনুসারে মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও সর্বশেষ সাক্ষী মনিরুজ্জামনের অসমাপ্ত জেরা শেষ করার আবেদন জানায়।
কিন্তু আসামিপক্ষ ওই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেরা করতে অসম্মতি জানালে এক পর্যায়ে আদালত সাক্ষীকে কাঠগড়া থেকে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে আবারও জেরা করার সুযোগ দিতে ১০ মিনিট পর সাক্ষীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়।
কিন্তু বারবার জিজ্ঞাস করার পরও আসামিপক্ষ জেরা করতে অসম্মতি জানালে আদালত সাক্ষীকে ‘ডিসচার্জ’ এবং সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্তের আদেশ দেন।
আদালত এক আদেশে আসামিপক্ষের আবেদন নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়, “আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে বিজ্ঞ কৌঁসুলিকে একাধিকবার অনুরোধ করার পরেও জেরা না করায় এ আসামির পক্ষে পরবর্তী জেরা বন্ধ করা হল। ”
বাবরের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন।
শুনানিকালে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে পৌনে ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত দীর্ঘ বাকবিতণ্ডা চলে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরী ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় করা দুটি মামলার একটিতে ৫৩তম ও অন্যটিতে ৫৬তম সাক্ষী।
বিতর্ক, হট্টগোল
শুনানির শুরুতে আদালতে আবেদন দাখিল করে বাবরের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব বলেন, মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রথম সাক্ষী আহাদুর রহমান এবং আরেক সাক্ষী এ কে এম মহিউদ্দিনের জেরা অসমাপ্ত রেখেছেন আদালত।
“প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ না করলে আসামিপক্ষ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই ওই দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ করতে তাদের পুনঃতলবের আবেদন করছি। ”
এর জবাবে পিপি কামাল উদ্দিন বলেন, “আজকের দিন নির্ধারিত ছিল মনিরুজ্জামানের জেরা শেষ করার জন্য।
সাক্ষী আহাদুর রহমান সাত কার্যদিবস আদালতে এসেছেন। পরে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে আনতে পারিনি।
“আমার নিশ্চিত ধারণা, আসামিপক্ষ তার না আসার ব্যবস্থা করেছে। মাত্র ২৮ জনের সাক্ষ্য নিতে দুই বছর লেগেছে। ”
কামাল উদ্দিন বলেন, “আহাদুর রহমান মাত্র ১৭ দিন মামলাটি তদন্ত করেন।
এই পিটিশন সময় ক্ষেপণের জন্য। আগে মনিরুজ্জামানের জেরা শেষ হোক। তারপর পিটিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হোক। ”
খন্দকার মাহবুব এতে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, “অসমাপ্ত দুই সাক্ষীর জেরা শেষ হলে বোঝা যাবে, মনিরুজ্জামানকে আর জেরার প্রয়োজন আছে কি না। তাই আগে পিটিশন বিষয়ে নিষ্পত্তি হোক।
”
এরপর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এ বিষয়ে তুমুল বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা একযোগে তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার দাবি জানান।
খন্দকার মাহবুব বলেন, “পিটিশনেরবিষয়ে আদেশ না পেলে এ মামলা নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। ”
তখন বিচারক বলেন, “পিটিশন জুডিশিয়াল নোটিসে রাখা হবে। আহাদুরকে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে না পারলে আসামিপক্ষ বেনিফিট পাবে।
এটা ইচ্ছাকৃত হট্টগোল। ”
হট্টগোলের এক পর্যায়ে কামাল উদ্দিন বলেন, “এখানে উপস্থিত অনেকেই এ মামলার আইনজীবী নন। শক্তিপ্রয়োগ করে তারা আদেশ চান। আমার সাক্ষীকে ছেড়ে দেয়া হোক। ”
শেষদিকে পিপি কামাল বলেন, “আমি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার দরখাস্ত দিয়েছি, তা শেষ করা হোক।
”
বারবার জিজ্ঞাস করার পরও আসামিপক্ষ মনিরুজ্জামানকে জেরা করতে রাজি না হওয়ায় আদালত সাক্ষীকে ডিসচার্জ করেন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ বলে আদেশ দেন।
শুনানির শেষ পর্যায়ে বাবরের পক্ষে এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সময় চেয়ে এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২৬ ধারা অনুসারে মামলাটি উচ্চ আদালতে বদলির আবেদন জানিয়ে আরও দুটি পিটিশন জমা দেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা সিইউএফএলের জেটিঘাটে ১০ ট্রাক পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করা হয়।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ৬ জুলাই এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন কর্ণফুলী থানার সেই সময়ের ওসি আহাদুর রহমান প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।
তখন অস্ত্র মামলায় ৩১ জন ও চোরাচালান মামলায় ২৮ জন সাক্ষ্য দেয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ১৪ অগাস্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাশফিকুর রহমান ৩১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর আলোচিত মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন হয়। আদালত সাতটি বিষয় উল্লেখ করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয়। এসময় সিআইডি ঢাকা জেলার এএসপি ইসমাইল হোসেনের ওপর তদন্তভার দেয়া হয়।
এ তদন্ত চলাকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি আদালতের আদেশে সিআইডির এএসপি মনিরুজ্জামান চৌধুরী পঞ্চম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
২০১১ সালের ২৯ জুন তিনি আলোচিত এই ঘটনায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুটি মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মোট ১১ জন নতুন আসামি অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এতে মামলায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।
২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর আবার এই মামলার আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।