মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ আগস্ট ঠাকুরগাঁওয়ে। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) সভাপতি ছিলেন। এরপর ভাসানী ন্যাপে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর থেকে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজে অর্থনীতিতে শিক্ষকতা শুরু। ১৯৭৮ সালে প্রেষণে উপপ্রধানমন্ত্রী এস এ বারি এটির একান্ত সচিব হন। ’৮২-এর মার্চে পুনরায় শিক্ষকতায় এবং পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির টিকিটে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচন করে অকৃতকার্য হন। ২০০১ সালে ঠাকুরগাঁও থেকে সংসদ সদস্য হয়ে তিনি কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। ২০১১ সালের মার্চে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। ৯ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর উত্তরার বাসভবনে প্রথম আলোর মুখোমুখি হন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। সংকট নিরসনে বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
প্রথম আলো আপনার বাড়ির নাম কুসুমিত অথচ আপনি কণ্টকিত রাজনীতির জাল বুনছেন। নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণায় দেশের মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন।
মির্জা ফখরুল কুসুম তো কণ্টকে আকীর্ণ থাকে। গোলাপের চারদিকে কাটা থাকে। আঘাত তখনই আসে যখন কুসুম উপড়ানোর চেষ্টা চলে।
আমাদের চেয়ারপারসন যেটা বলেছেন, সেটা দুঃখের সঙ্গে একান্ত বাধ্য হয়েই বলেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর থেকেই আমরা বলি এর ফল শুভ হবে না। বিগত কয়েক মাসে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিইনি।
প্রথম আলো এটা কতটা উদারতা আর কতটা অপারগতা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেকে বলেন বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয়নি।
মির্জা ফখরুল এটা আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের ভ্রান্ত ধারণা। আমরা ইতিবাচক ও সহযোগিতার রাজনীতি করতে চেয়েছি। তদুপরি আমরা সংঘাত এড়াতে সচেষ্ট। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে বলেছিলেন সংসদ বিলোপ করে দেওয়া হবে। ছোট মন্ত্রিসভা হবে।
ইচ্ছা করলে বিরোধী দলের লোকও আসতে পারে। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা হবে। কিন্তু দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক নন। নিজের কথা নিজেই বদলাচ্ছেন।
প্রথম আলো তার মানে এটা দিলে মানবেন?
মির্জা ফখরুল আমাদের কথাই ছিল নির্দলীয় সরকারের যেকোনো প্রস্তাব এলে তা খতিয়ে দেখব, অনমনীয় থাকব না।
আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা পথ বেরিয়ে আসবে। এখনো আমাদের নেত্রী সে কথাই বলে চলেছেন।
প্রথম আলো আপনার নেত্রী দুই মহাসচিবের বৈঠক চাইছেন। কিন্তু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো নেই। সেটা এই অর্থে যে আপনি কেন ভারপ্রাপ্তে ভারাক্রান্ত? বিএনপির একটি কোটারি গোষ্ঠী, বিশেষ করে যাঁরা তারেক রহমানের সমর্থক, তারাই কি এটা চাইছেন না।
মির্জা ফখরুল এটা অপপ্রচার। সম্পূর্ণরূপে ভ্রান্ত ধারণা। দলের কাউন্সিল হয়নি বলেই এটা হয়তো এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কিন্তু এটা তো সমস্যা নয়।
প্রথম আলো দুই মহাসচিবের মধ্যে পর্দার আড়ালে কী কথা হয়েছিল?
মির্জা ফখরুল আমি দেশে ছিলাম না।
পত্রিকায় দেখেছি একটা আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।
প্রথম আলো কিন্তু বিষয়টি আপনার না জানার কথা নয়। উদ্যোগটা কাদের দিক থেকে ছিল।
মির্জা ফখরুল সম্ভবত প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি দল থেকেই।
প্রথম আলো ড. গওহর রিজভীর বাসভবনে এক বা দুই দফা বৈঠক কি সত্যি হয়েছিল?
মির্জা ফখরুল আমি তেমনটাই শুনেছি।
প্রথম আলো তাতে দুই মহাসচিবের বৈঠকের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছিল।
মির্জা ফখরুল সম্ভবত।
প্রথম আলো গত মে মাসে আপনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার ফলে সেটা হয়নি। অন্য কেউ গিয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুল তাই শুনেছি। দেখুন, এ মুহূর্তে এ নিয়ে কোনো অনুমাননির্ভরতার সুযোগ নেই।
প্রথম আলো আচ্ছা, ওই আলোচনা ভেঙে যাওয়ার জন্য শুধু আওয়ামী লীগই দায়ী?
মির্জা ফখরুল সম্পূর্ণভাবে। আমরা যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় আলোচনা চাই।
প্রথম আলো সংগ্রাম কমিটি সহিংস নাকি অহিংস হবে?
মির্জা ফখরুল অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক হবে।
প্রথম আলো শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচনে যাবেন না বলছেন। তাহলে কীভাবে সমঝোতা হবে। এটা কি এতটাই নির্দিষ্ট যে আপনি বলতে পারেন এটা পুরোপুরি সন্দেহাতীত সিদ্ধান্ত?
মির্জা ফখরুল এটা একদম সন্দেহাতীত। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না, যদি কোনো আওয়ামী লীগার সরকারপ্রধান হন। আর তিনি তো আবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
প্রথম আলো খালেদা জিয়া নির্দিষ্ট করে শুধু শেখ হাসিনার কথা বলেছেন। আপনি কি আরেকটু ব্যাপকতা দিয়ে আওয়ামী লীগের কেউ থাকতে পারবে না, এমনটাই বলছেন?
মির্জা ফখরুল আমাদের নেত্রী বলেছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী থাকবেন না এবং সরকারের চরিত্র হতে হবে দলনিরপেক্ষ।
প্রথম আলো এর আগে আপনিই কিন্তু লন্ডনি প্রস্তাবের কথা বলেছিলেন। একটু আশাবাদী হচ্ছিলাম আওয়ামী লীগের কাউকে রেখেও একটা সর্বদলীয় সমাধান হতে পারে। আপনার বক্তব্য একটু স্ববিরোধী হয়ে গেল কি না?
মির্জা ফখরুল না, হলো না।
কারণ, সেই সময়টা তাঁরা পার করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁরা যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে আর সেই জায়গা থাকছে না। বরং এখন আমরা যা বলছি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
প্রথম আলো আপনাদের কথায় মনে হয় নির্দলীয় সরকার হলেই হবে না, নতুন নির্বাচন কমিশনও লাগবে। আরও কোনো শর্ত?
মির্জা ফখরুল বর্তমান ইসি সক্ষম নয় মনে করি।
শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা উচিত।
প্রথম আলো শোনা যাচ্ছে শো অব ফোর্স হিসেবে তারা সেনাকে থানা সদরে রাখবে। এর বাইরে পাঠাবে না।
মির্জা ফখরুল আমরা এ বিষয়ে কিছু শুনিনি। সেনারা ভোটকেন্দ্রে কোনো দিনই ছিল না।
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ছিল। আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকতে হবে।
প্রথম আলো নতুন ধারার রাজনীতির কথা আগেও শুনেছি। কিন্তু প্রতিহিংসার রাজনীতি বিএনপি করেছে।
মির্জা ফখরুল আপনি দৃষ্টান্ত দেখান—
প্রথম আলো জন্মদিনে কেক কাটা এর অন্যতম।
এতে উষ্মা প্রকাশ করে মওদুদ আহমদও লিখেছেন।
মির্জা ফখরুল মওদুদ আহমদের বই দিয়ে বিএনপির রাজনীতিকে বোঝা যাবে না। একটি দলে বিভিন্ন ধরনের লোক থাকবেন, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের চিন্তা করবেন। কেক কাটা নিয়ে একটি অযথা ইস্যু সৃষ্টি করা হয়। এর কোনো প্রভাব আছে বলেই আমি মনে করি না।
কেক কাটায় দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এটা সহনশীলতার বিষয়। রাজনৈতিক সহনশীলতাই মুখ্য। আমাকে আপনার রাজনৈতিক চিন্তার প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। এখন যেটা হচ্ছে, তা ব্যক্তিগত আক্রোশ।
আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে আমি আবর্জনার ট্রাকে আগুন দিয়েছি। এটা পুরোপুরি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হোক। সেটা গ্রহণযোগ্য।
প্রথম আলো ঠিক এই ধরনের মামলা আপনারাও করেছেন।
ফের ক্ষমতায় গিয়েও করবেন না, সে লক্ষ্যে জনমনে আস্থা সৃষ্টিতে বা কোনো গুণগত পরিবর্তন আনতে বিএনপিকে সৎ মনে হয় না। জনগণ আপনাদের দিকে সম্ভবত সেভাবে তাকাতে পারে না।
মির্জা ফখরুল আপনার ধারণা ভ্রান্তিপ্রসূত। বিএনপির দিকে যদি নাই তাকানো যেত তাহলে বিগত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হতো না। অনেকে বলেন, এটা হচ্ছে নেগেটিভ ভোট।
প্রথম আলো অনেকে নয়, বলুন এটাই বড় সত্য। গত পাঁচ বছরে বিএনপি কী করেছে? সংসদে না গেলে সরকার পড়ে না, তাহলে সংসদে যেতে তাকে কে না করেছে। আর সরকারের প্রতি অনাস্থা মানুষ কীভাবে জানাবে? পথ রেখেছেন কোন? পারলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা করুন। এখানে তো আপনাদের ঐক্য আছে।
মির্জা ফখরুল আমরা যাঁরা শিক্ষিত মানুষ বা এলিট শ্রেণী, তাঁরা মনে হয় বাংলাদেশের জনগণের নাড়ির স্পন্দন ধরতে পারি না।
এর ফলে দুই রকমের চিন্তা আসে। একটা হচ্ছে ভালো কাজ কী হওয়া উচিত। তা হয়তো আমিও মানি। সাধারণ মানুষের ভেতরে আরেকটি চিন্তা কাজ করে। তারই প্রতিফলন ঘটে বিভিন্ন নির্বাচনে।
সাধারণ মানুষ সাধারণভাবে কোনো ভুল করতে পারে না। এখানে মানুষ তুলনা করে। বিএনপির আমলে কেমন ছিলাম, এখন আমরা কেমন আছি। এই তুলনা করেই ভোটটা দেয়। ১০ টাকা চালের কেজি খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৪০ টাকা চলছে।
কুইক রেন্টালে বিরাট খরচা হলো। অথচ লোডশেডিং কমছে না। মানুষ নতুন বাড়িঘর করলে আর বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। পদ্মা সেতুর মতো দুর্নীতি বিএনপি আমলে হয়েছিল কি না, সেটা মানুষ চিন্তা করছে।
প্রথম আলো আপনার হয়তো যুক্তি আছে।
কিন্তু একটি বিষয় এখনো অপ্রমাণিত। নির্দলীয় সরকারের যে বড়াইটা আমরা করি, সেটা কিন্তু কোনো দলকে টানা দুবার জিতিয়ে দেয়নি। বিরোধী দলের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর এর কৃতিত্ব।
মির্জা ফখরুল এটা কিছুটা নেতিবাচক চিন্তাপ্রসূত এবং সরলীকরণ। বিষয়টা ভিন্ন জায়গায়।
সরকারি দলই থাকে চালকের আসনে। তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় গণতন্ত্রকে তারা কোথায় নিয়ে যাবে। সাইবার অ্যাক্টের সংশোধন হলো। এখন আপনি বলুন এটা কীভাবে মুক্তচিন্তাকে সাহায্য করবে?
প্রথম আলো পরিহাসটা সেখানেই, ২০০৬ সালে এই আইনের ৫৭ ধারায় যে উদ্ভট কালাকানুন আপনারা পাস করেছিলেন, ক্ষমতাসীনেরা তা বাতিল না করে আরও খারাপ করেছে। আপনাদের তো সে কারণেই এক পাল্লায় মাপি।
মির্জা ফখরুল আজ যদি আওয়ামী লীগ সেটা পরিবর্তন করত তাহলে সেটাই হতো ইতিবাচক। কোনো আইনেই আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো ইতিবাচক দিক নিয়ে আসেনি। যেমন বিশেষ ক্ষমতা আইন।
প্রথম আলো একদম ঠিক বলেছেন। আপনারা বাতিল করেননি।
বিচার বিভাগ পৃথক্করণ আপনারা দেননি। বাহাত্তরের রাষ্ট্র গঠন ত্রুটি না শুধরিয়ে আপনারা একসঙ্গে চলছেন—
মির্জা ফখরুল এ বিষয়গুলো শুরু করতে হবে। আমরা বিরোধী দল থেকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছি। তাই বলছি, আমরা সরকার গঠন করতে পারলে সব বিষয়কে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করব।
প্রথম আলো ১৫ আগস্টে কেক কাটা না হয় ব্যক্তিগত, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে কী বলবেন।
এই জঘন্য অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে তদন্ত ও বিচার-প্রক্রিয়া চালু করতে আপনারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুল এর পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাকে বলতে দিন। এবার তিনটি অভিযোগপত্র পরিবর্তন করা হলো। নতুন আইও নিয়োগ করা হলো।
প্রথম আলো আপনি বিএনপির ব্যর্থতা ব্যাখ্যা করুন।
আপনি কিন্তু আওয়ামী লীগের সমালোচনায় গেলেন।
মির্জা ফখরুল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের লোক এসেছিল। তারা তদন্তের চেষ্টা করেছে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী কোনো সহযোগিতা দেননি। সে সময়ে আমরা তাদের সহযোগিতা পেতে বিভিন্ন রকম চেষ্টা চালিয়েছি, সেটা পাইনি।
যাঁরা এর দায়িত্বে ছিলেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা কিছু কিছু ভুল করে থাকতে পারেন। তাঁদের হয়তো বিচ্যুতি ঘটেছে।
প্রথম আলো সে জন্য আপনাদের কোনো অনুশোচনা নেই। আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ক্ষমা প্রার্থনা নেই। যদি নতুন ধারা বলতে শুভ কিছু বোঝাতে চান, তাহলে এটা বাদ দিয়ে হবে না।
সমঝোতার এই পথে আসতে হবে।
মির্জা ফখরুল সেই সমঝোতা বা রিকন্সিলিয়েশন তখনই হবে, যখন আপনি আমাকে দায়ী করবেন না। আপনি আমাদের দলের নেতাকে (তারেক রহমান) সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তৃতীয় দফায় দেওয়া অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করছেন। আমাদের ভুলত্রুটি শুধরানোর সুযোগটা সৃষ্টি করবে সরকার। আমি স্বীকার করছি আমাদের কিছু ভুল ছিল।
সেই ভুলগুলোকে বর্তমান সরকার দূর করা তো দূরে থাক, তাকে পুঁজি করে বিরোধী দলকে কী করে নির্মূল করা যায়, সেই কাজ তারা করছে। এ ব্যাপারে আপনাদের খুব বেশি সমালোচনা আমরা কিন্তু দেখি না।
প্রথম আলো সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো ও জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার সঙ্গে আপনাদের যেসব মন্ত্রী অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে আজও জানা যায় না। তাহলে বিএনপিকে কেন দেশি-বিদেশিরা এই প্রশ্নে ভরসা করবে?
মির্জা ফখরুল অবশ্যই করবে। কারণ, এক হাজারের বেশি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
জঙ্গিবাদকে আমরা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেব না, সেই মনোভাব থেকেই তা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদে আমরা বিশ্বাস করি না। জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে। কিছু লোক বিএনপিকে ভুলভাবে চিত্রিত করেছে, সেটা জামায়াতের সঙ্গে জোট থাকার কারণে করেছে। কিন্তু সেটা ন্যায্য নয়।
বিএনপি সেই দল, যারা গণতন্ত্র ও বহুদলীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।
প্রথম আলো আপনার যুক্তি আংশিক সত্য। কিন্তু এও সত্য যে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক চরম কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার নাগপাশ থেকে আমরা মুক্তি পাইনি। এক ব্যক্তির হাতে দল, মন্ত্রিসভা, সংসদ ও বিচার বিভাগের সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়েছে।
দুই দলের মধ্যে এসব নিয়ে কোনো কাজিয়া নেই।
মির্জা ফখরুল অবশ্যই কাজিয়া আছে। আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে একদম একমত নই।
প্রথম আলো কিন্তু এটাই ধ্রুব সত্য যে চতুর্থ সংশোধনীতে বিচার বিভাগের যে স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল, তা সামরিক ফরমানে ফেরত আসেনি। বরং জিয়ার দুটি ডিক্রি শেখ হাসিনা এবারে নতুন করে পাস করলেন।
বলুন এটা সত্য নয়?
মির্জা ফখরুল আপনি বাকশালের নিন্দা করছেন না। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তনকে প্রশংসা করছেন না। ভালো দিকগুলোর প্রশংসা না করলে অন্যগুলো কাজ করবে না। সামনের দিকে আরও এগোতে পারব না। আপনাকে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ইউরোপ-ইংল্যান্ডে এক দিনে গণতন্ত্র আসেনি। ২৫০-৩০০ বছর লেগেছে। আমাদের একটা ভঙ্গুর ও অনিখুঁত গণতন্ত্র। কিন্তু তা অত্যন্ত প্রাণবন্ত, গতিময় ও ক্রিয়াশীল। সমগ্র বাংলাদেশি সমাজে একটি গণতান্ত্রিক চাহিদা আছে।
একটা আকুতি আছে। তবে সব সময় সরকারি দলকেই সঠিক ভূমিকায় নেতৃত্ব দিতে হবে।
প্রথম আলো তারেক রহমান কেন নির্বাসিত? স্বাস্থ্যগত কারণ যদি বলেন তাহলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী হাল আপনারা করেছেন? বিদেশের মাটিতে রাজনীতি কেন? এত কিছুর পরও তিনি কেন অপরিহার্য?
মির্জা ফখরুল বিশ্বের বহু দেশের নেতারা বিদেশে থেকে-
প্রথম আলো আপনার এই বহু দেশ মানে ভালো উদাহরণের দেশ নয়, যাকে বলে তৃতীয় বিশ্বের—
মির্জা ফখরুল আমাকে বলতে দিন, না দিলে তো হবে না। আপনি তো মুক্তচিন্তার মানুষ, আমাকে সুযোগ দিতে হবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে এটা হয়, কারণ সেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়।
থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিনকে দেশের বাইরে থাকতে হ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।