শুরু হয়েছে কুড়িল ফ্লাইওভারের সঙ্গে পূর্বাচলসহ ডেমরার যোগাযোগ রক্ষাকারী '৩০০ ফুট সড়ক' দখলের মহোৎসব। রাজধানীর বাইপাস রোড হিসেবে পরিচিত সড়কটি জুড়ে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। নানা সংগঠনের কার্যালয় বানানোর জন্যও নির্ধারণ করা হচ্ছে জায়গা। চলছে ঝুপড়ি দোকানপাটগুলোকে স্থায়ী ভিত্তি দেওয়ার নানা চেষ্টা। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সাইনবোর্ড।
৩০০ ফুট এ রাস্তা ব্যবহার করে রাজউকের পূর্বাচল স্যাটেলাইট টাউনের লাখো বাসিন্দা ছাড়াও চলাচল করবে শীতলক্ষ্যার তীরঘেঁষা ঢাকা বাইপাসের হাজারো গাড়ি। কিন্তু রাস্তাটি যথাযথ ব্যবহার শুরুর আগেই বিভিন্ন চক্র জবরদখলের মাধ্যমে নেমেছে নিজেদের আখের গোছানোর ধান্ধায়। শুধু যে স্থানীয় লোকজনই সড়কের জায়গা দখলের মহোৎসবে নেমেছে তা নয়, দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখানে খুলে বসেছেন হোটেল-রেস্তোরাঁ পর্যন্ত।
রাস্তার ঠিক ওপরেই প্রতিদিন বসছে চটপটি, ফোচকা, পিঠাসহ ভাসমান কয়েকশ দোকান। সারি সারি দোকান এগিয়ে গেছে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ পর্যন্ত।
সেসব দোকান খোলা থাকছে গভীর রাত অবধি। কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া, বেড়ানোর নামে ৩০০ ফুট সড়কটি রীতিমতো পরিণত হয়েছে স্থায়ী আড্ডাস্থলে। ফ্লাইওভারসহ লিংক রোডের ছিমছাম পরিবেশের এলাকাটি ক্রমেই হয়ে উঠছে হাজারো জঞ্জাল স্পট। আগতদের অনেকেই রাস্তাজুড়ে এলোপাতাড়ি চেয়ার-বেঞ্চ সাজিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাদের গাড়িগুলোও পার্ক করা থাকছে রাস্তার ওপরই, কয়েক সারিতে।
জবরদখল, যত্রতত্র পার্কিং আর সারি সারি চেয়ার-বেঞ্চে এ দীর্ঘ এলাকাটি আড্ডাখানায় পরিণত হওয়ায় প্রশস্ত সড়কটিতে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য যানজট। প্রায়ই ঘটে চলছে নানা বিব্রতকর ঘটনা।
শুরুতে ৩০০ ফুট সড়কের নিচে অদূরে বাঁশ-চাটাইয়ের অস্থায়ী দোকান গড়ে তুললেও ক্রমেই মূল সড়কে বাড়ানো হচ্ছে থাবা। এখন গজারির বলি্ল, বাঁশ-কাঠের খুঁটি পুঁতে সড়কের সঙ্গে তক্তার ঠোঁট লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে টিনঘেরা দোকানপাট। ফ্লাইওভারের পূর্ব লুপ থেকে নেমে ৩০০ ফুট সড়কে ঢুকলেই দেখা যায় বাঁ দিকে মসজিদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে স্থান।
কে বা কারা কয়েকটি বাঁশ ঘিরে আলাদা করে রেখেছেন জায়গাটি। এই নির্মাণাধীন মসজিদকে পাশে রেখে উভয় দিকে গড়ে তোলা হচ্ছে রীতিমতো ২০-৩০টি দোকানের বাজার। স্থানীয়রা জানান, সড়কের জায়গা জবরদখল করতেই খাটানো হচ্ছে মসজিদ-মন্দির বানানোর কৌশল। মসজিদ-সংলগ্ন এ দোকানপাটে যাতায়াতের জন্য মূল সড়ক ধসিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঢালু রাস্তা। বৃষ্টি ঢলে এসব স্থানের মাটি ধসে ৩০০ ফুট সড়কটাই বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অবৈধ জবরদখল বজায় রাখতে মসজিদ-মন্দির যেমন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তেমনি ব্যবহার করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের ব্যানার। 'মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ৩০০ ফুট মহাসড়ক দোকান মালিক সমিতি' নাম দিয়ে ভুঁইফোড় একটি সংগঠনের নামে বিতরণ করা হচ্ছে দোকান বরাদ্দের সদস্য ফরম। ৩০০ ফুট সড়ক দখল করে দোকানপাট তৈরিকে তারা বৈধতার ছাড়পত্র দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বঘোষিত ওই দোকান মালিক সমিতির সাইনবোর্ডে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে লেখা হয়েছে_ '৩০০ ফুট মহাসড়ক, তালেরটেক, ক্ষিলখেত, ঢাকা'।
'মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ৩০০ ফুট মহাসড়ক দোকান মালিক সমিতি'র সভাপতি পরিচয়দানকারী জনৈক আবু সাঈদ বলেন, 'আসলে এগুলান তো অবৈধ দোকানপাট।
এ জন্যই অস্থায়ী সমিতি বানাইছি। আমার বাড়ির সামনে দিয়া সড়কটা গেছে। তাই খালি জায়গাতে কয়ডা দোকান বানাইয়া গরিব-দুস্থ মানুষের কিছুটা উপকার করতে চাই। এতে কারও কোনো ক্ষতির তো কারণ দেখতেছি না। ' এক প্রশ্নের জবাবে কথিত সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, 'সমিতি কইরা জোট বাইন্ধা থাকলে অবৈধ কিছু করলেও তা বৈধ হইয়া যায়।
বুঝলেন না? এগুলান তো আমার একার জন্য করি নাই। ' ওই সমিতির সদস্য হয়ে যে-কেউ সড়ক দখল করে দোকান গড়তে পারছেন। সদস্য ফরম পূরণ করে মাত্র ৫০০ টাকা চাঁদা দিলেই প্রাথমিক সদস্যপদ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে সভাপতি-সেক্রেটারিকে খুশি করতে পারলেই মেলে সড়ক দখলের অনুমতি। ডেমরা, রূপগঞ্জ ছাড়াও ঢাকার পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষার অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি রীতিমতো দখলবাজির কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকানপাট ঘিরে আড্ডার কারণে আশপাশে গড়ে উঠেছে মাদক কেনাবেচার শক্তিশালী চক্র। জমে উঠেছে বখাটেপনা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঝুপড়ি দোকানপাটের ভেতর বসে ইয়াবা সেবনের আড্ডা। অসামাজিক কার্যকলাপেরও নানা অভিযোগ তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন। বিকাল-সন্ধ্যার বখাটেরাই রাত বাড়লে হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী।
এসব বখাটে ছিনতাইকারীর কারণে শুধু ৩০০ ফুট সড়কই নয়, গোটা ফ্লাইওভার হয়ে পড়ে অরক্ষিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।