এইটা আমার ব্লগ।
সালফার কথন
সালফার ডাই অক্সায়িড এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড কয়লা প্লান্ট এর সব চেয়ে ভয়ঙ্কর দুইটা একটা দূষণ| এদের মধ্যে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হলো সালফার | কারণ, এর পরিমান টাও বেশি | এবং সালফার এর পরিমান এবং নিয়ন্ত্রণ কয়লা ভিত্তিক থার্মাল প্লান্ট এর অত্যনত গুরুত্বপূর্ণ ডিজাইন এবং অপেরাসনাল কন্সিডারেশান| কয়লার মধ্যে যে সালফার টা থাকে, তা অক্সিজেন এর সাথে বিক্রিয়া করে সালফার ডাই অক্সাইড প্রস্তুত করে যা বায়ু মন্ডলে ছড়িয়ে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ফুসফুসে ঢুকে রক্তে ছড়িয়ে পরে| সালফার ডাই অক্সাইড এর আর একটা ভয়ঙ্কর প্রভাব হলো সালফার বায়ু মন্ডলে মিশে এসিড বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে, যার ফলে একটা এলাকার গাছ পালা এবং পরিবেশ এর ভয়ঙ্কর ক্ষতি সাধন হতে পারে|
প্রধান অভিযোগ টা কি ?
সালফার ডাই অক্সায়িড (SO2) ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2) এর গ্যাস EIA রিপোর্ট মতে প্রতিদিন ১৪২ টন সালফার দেয় অক্সাইড ও ৮৫ টন নাইট্রজেন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়ে বছরে ৫২ হাজার টন সালফার দেয় অক্সাইড ও ৩২ হাজার টন নাইট্রজেন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে | এই বিষয়ে প্রধান অভিযোগ টা এসেছে যার মতে, পরিবেশ আইন ১৯৯৭ অনুযায়ী পরিবেশ গত স্পর্শ কাতর এলাকায় সালফার এর ঘনত্ব হওয়ার কথা প্রতি বর্গমিটারে মাক্সিমাম ৩০ মাইক্রোগ্রাম| কিন্তু এই রিপোর্ট এ সুন্দরবন এলাকাকে আবাসিক এবং গ্রামীন এলাকা দেখিয়ে ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ঘনত্ব কে জাস্টিফাই করা হইছে| ফলে পরিবেশ গত স্পর্শ কাতর এলাকার মানদন্ডের বদলে আবাসিক এবং গ্রাম এলাকার মানদন্ড বেচে নেয়ার মাধ্যমে একটা জালিয়াতি করা হইছে |
সরকার পক্ষের কাউন্টার বক্তব্য
উত্তর: কোনো পরিবেশ দূষণ হবেনা |
আবাসিক এলাকার দূরত্বের ব্যপারে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সে ব্যাপারে EIA থেকে নিচের ছবি টা দিয়ে বলা হয়েছে কোনো ক্ষতি হবে না কারণ কল গ্যাসের নির্গমন হার পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের নির্ধারিত মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে ।
এই বক্তব্যে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন হার হবে যথাক্রমে- ৮১৯ g/s এবং ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম/Nm³। যেখানে বিশ্বব্যাঙ্কের মানদন্ড অনুযায়ী ১৫৯৭g/s এবং ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম/Nm³ পর্যন্ত নিরাপদ। বিদ্যুতকেন্দ্র পরিবেষ্টনকারী পরিবেশের বায়ুর ওপর এই গ্যাসের প্রভাব হবে নগণ্য। তাছাড়া আরো বলা হয়েছে, এছাড়া বছরের সাত মাস সময় বাতাসের প্রবাহ থাকে উত্তরমুখী, যেখানে সুন্দরবন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। তাই সুন্দরবনে বায়ু দূষণের সম্ভাবনাও খুবই কম।
আসল কাহিনী কি ?
আসল কাহিনী টা অনেক জটিল | এইখানে অনেক গুলো বোঝার বিষয় আছে | আসল বিষয় টা হইলো, একটা কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট এর কারণে পরিবেশ এর উপর যে ডাইরেক্ট প্রভাব পরে তার মধ্যে সব চেয়ে ক্ষতিকর জিনিস হইলো সালফার | এই সালফার মানুষ এবং গাছ সকলের জন্যে ক্ষতি করে | এই সালফার থেকেই এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি হয় | তাই, এই সালফারকে নিয়ন্ত্রণ করার মামলা টা পাওয়ার প্লান্ট এর মেজর একটা ডিজাইন কন্সিডারেশান এবং এই সালফার এর উপর পাওয়ার প্লান্ট এর কাচা মাল হতে শুরু করে, ডিজাইন, ইনভেস্টমেন্ট, কস্ট বেনেফিট সহ আরো অনেক বিষয় নির্ভর করে |
ফলে সালফার এর আলোচনা টা অনেক ডিটেলস এ করতে হবে |
EIAতে যত ধরনের অনৈতিক কাজ করা হইছে, তার মধ্যে সব চেয়ে অনৈতিক কাজ টা করা হইছে সালফার এর মাত্রা লুকানোর বিষয়টা নিয়ে | সুন্দরবন পর্যন্ত বায়ুতে ৩০ মায়ক্রগাম সালফার কন্টেন্ট পারমিটেড থাকার মূল যুক্তিটা দূরত্ব কেন্দ্রিক | এই আর্গুমেন্ট এ বলা হচ্ছে, মাত্র ১৪ কিমি দুরে হবার কারণে, বাতাসে সালফার এর যে ঘনত্ব থাকবে তা সুন্দরবন এর জন্যে ক্ষতিকর হবে |
এই আর্গুমেন্ট এর মূল প্রতিপাদ্য হইলো, আরো দুরে হইলে এই নির্গমন হয়ত সুন্দরবন এর ক্ষতি করত না | এই যুক্তিটা মিসগাইডেড | এই পরিবেশ গত সেনসিটিভ এলাকায় ৩০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সালফার পারমিটেড থাকার আইন টা আসছে ১৯৯৭ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ আইন হইতে | বাস্তবতা হইলো, ১৯৯৭ সালে পরিবেশ নিয়ে রিয়ালিজেশান আর ২০১৪ সহলের পরিবেশ সচেতনতা ও বাস্তবতা আয়ুব খান আমল এর শেখ হাসিনার আমলের মত আলাদা জিনিস |
এই একক টার বেশ কিছু সমস্যা আছে বলে এই একক টা এখন আর ব্যবহার করা হয় না | এখন এই সালফার এর পরিমান টা ১ ঘন্টা বা ২৪ ঘন্টায় এভারেজ করা হয় |এইটা হইলো যুক্তি ১, আর দুই নাম্বার যুক্তি হইলো দশ কিলো মিটার দূরত্বের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স একটা পাওয়ার প্লান্ট সে রামপাল এ হোক আর তেতুলিয়া হোক, তার মূল ইসু না ইসু হইলো এই পাওয়ার প্লান্ট আসলে কি পারিমান সালফার বা নাইট্রযেন ছড়াচ্ছে ?
এখন এই প্লান্ট কে যদি সুন্দরবন থেকে আরো ২৫ কিমি দুরে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে কি এই প্লান্ট এর এই বছরে ৫২ হাজার টন সালফার দেয় অক্সাইড ও ৩২ হাজার টন নাইট্রজেন ডাই অক্সাইড হালাল হয়ে যাবে ? সুন্দরবন না হয় ২৫ কিমি দুরে গেল, কিন্তু এই ২৫ কিমি এর মধ্যে যে মানুষ, যে পরিবেশ, যে পশু পক্ষী আছে তাদের কি হবে ?
ফলে আমরা ৩০ মাইক্রোগ্রাম হালাল, এই ডিবেট এ ঢুকবোনা | আমরা দেখব,রামপাল প্লান্ট থেকে আসলে কি পরিমান সালফার এবং নাইট্রযেন নির্গত হচ্ছে এবং তার ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড কি ?
এবং এই আলোচনাতে আমরা দেখতে পাব, সালফার এর মাত্রা লুকানো নিয়ে একটা ভয়ঙ্কর অসততা করা হইছে এবং সুন্দরবন সহ পুরো এলাকার পরিবেশ কে একটা ভয়ঙ্কর দুর্যোগ এর মধ্যে ফেলে দেয়া হইছে বর্তমান ডিজাইনে | এই জন্যে আমরা একটু EIAরিপোর্ট টা খুলে দেখি | নিচের টেবিল টা EIAরিপোর্ট এর ২৭৩ পৃষ্ঠার স্ক্রিন শট |
এইখানে দেখা যাচ্ছে, রিপোর্ট এর
চতুর্থ কলামে বলা হইছে প্রতিটা ইউনিট থেকে ৮১৯ গ্রাম সালফার নির্গত হবে প্রতি সেকেন্ড এ | তার মানে দুইটা ইউনিট থেকে প্রতি সেকেন্ড এ, ১৬৩৪ গ্রাম সালফার নির্গত হবে|
পঞ্চম কলামে বলা হয়েছে, এই ব্যাপারে বাংলাদেশের কোন মান নেই তাই EIAতে এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স কে রেফারেন্স
হিসেবে নিয়েছে তারা
ষষ্ট কলামে বলা দেয়া হয়েছে বিশ্বব্যান্ক এর মাপ কাঠি, যেই মাপ কাঠিতে আবার চলে গেছে .২ টন পার মেগাওয়াট হিসেবে এবং
সপ্তম কলামে বলা হইছে জিডি .৬% এর বেশি সালফার ব্যাবহার করা হয় তো ফ্লু গ্যাস ডিসাল্ফারায়জেশান ব্যবহার করা হবে অন্যথায় ২৭৫ মিটার লম্বা একটা স্ট্যাক(চিমনি সদৃশ জিনিস) ব্যবহার করে সালফার বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দেয়া হবে |
মূল আর্গুমেন্ট টা হলো, বাংলাদেশের যেহেতু কোনো মানদন্ড নাই তাই শুধু মাত্র এয়ার কোয়ালিটি মাপলে চলবে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ককে যেহেতু আমরা সবাই বস মানছি, তাই ওয়ার্ড ব্যান্ক এর মানদন্ড অনুসারে যদি সালফার এবং নাইট্রযেন নির্গমন কম থাকে তো সব ঠিক আছে এবং এই টেবিল মতে এবং আঞ্জুমান ইসলাম সহ সরকার পক্ষের মতে ওয়ার্ল্ড ব্যান্ক এর মানদন্ডের থেকে রামপাল এর মানদন্ড ভালো, তাই আমাদের কোনো সমস্যা নাই- এই প্লান্ট ভালো | আমরা সবাই এখন খুশি মনে বাড়ি যাইতে পারবো | তাইলে আমরা একটু দেখি, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর যে রেফারেন্স টা দেয়া হয়েছে, সেইটা কি বলে ?
এই খানে হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ব্যান্ক এর মানদন্ডের যে রেফারেন্স টা দেয়া হইছে তার লিংক
http://www.his.com/~mesas/OccupHealth.htm , accessed on 22 Sept. 2011
লিংক এর চেহারাটাই সন্দেহ জনক| ডোমেইন হইলো http://www.his.com যেন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর ট্যাকা নাই যে তাদের স্ট্যান্ডার্ড রেফারেন্স গুলো, তারা তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইটে রাখতে পারেনা | এই লিংক এর ভেতরে গিয়ে আমরা কি দেখি ?
দেখা যাচ্ছে, ,EIAতে রেফার করা ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর মানদন্ড তা একচুয়ালি ১৯৮৮ সালের একটা ড্রাফট !!! এমনকি ১৯৮৮ সালের ফাইনাল রেফারেন্স ও না ?? আজকে , ৩৫ বছর পেরিয়ে গেছে কেও এইটারে যেন ফাইনাল করে নাই এবং আজকের ২০১৩ সালে এসে আমরা সুন্দরবন এর পাশে একটা পাওয়ার প্লান্ট বানাতে গিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যান্ক এর ১৯৮৮ সালের একটা ড্রাফট কে মানদন্ড হিসেবে বেচে নিচ্ছি? এখন সেই ১৯৮৮ সাল এর ড্রাফট বাঙালি রে খাওয়ানো হইতাছে কারেন্ট স্ট্যান্ডার্ড বলে|
তো আমরা একটু দেখি ওয়ার্ল্ড ব্যান্ক এই ৩৫ বছর ঘুমায় ছিল নাকি এই ড্রাফট টা ফাইনাল করছে ? খুজলে দেখা যায়, এই ড্রাফট টা ফাইনাল করা হইছে এবং এই বিষয়ে আপডেটেড রেফারেন্স পাওয়া যাচ্ছে |http://www.ifc.org/wps/wcm/connect/dfb6a60048855a21852cd76a6515bb18/FINAL_Thermal+Power.pdf?MOD=AJPERES&id=1323162579734
সেই খানে কি বলতাছে ?
এইখানে তো দেখা যাচ্ছে ৫০০ মেগাওয়াট এর উপরে বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড সালফার এর জন্যে ২০০ থেকে ৮৫০| EIA টে রেফার করা স্ট্যান্ডার্ড থেকে অনেক কম |
এখন আমরা আর একটা কাজ করি| ওয়ার্ড ব্যাঙ্ক কে আমাদের গুরু না মানি |
কারণ ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা লোন প্রদান করি সংস্থা | তারা এনভায়রনমেন্টাল স্ট্যান্ডার্ড সেট করে না | তারা অনেক ক্ষেত্রে লোন দেয়ার ক্ষেত্রে মিনিমাম কি নীতি মানতে হবে এই জন্যে কিছু গাইড লাইন দেয় | ওদের ওই গাইড লাইন গুলো অপেক্ষা বিশ্বের বিভিন্য দেশ যেমন ইউরোপ এবং আমেরিকা যাদের এনভায়রনমেন্টাল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে খুবই সবেদনশীল তাদের স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে রামপাল এর তুলনা করি | নিচের লিংক টাতে আপনি এই ধরনের একটি তুলনা পাবেন |
Click This Link Kills - Power Plants in India - Emissions & Health Impacts.pdf
এই চার্ট অনুসারে আমি সবাইরে এক করে একটা চার্ট বানাইছি সেইটাটে উপরে সব গুলো ডাটা কম্পাইল করা হইছে বোঝার সুবিধার জন্যে |
* রামপাল এর সালফার এর ডাটাটা EIA রিপোর্ট এ , মাইক্রোগ্রাম পার নেচারাল কিউবিক মিটার(μg/m3) এককে দেয়া হয় নাই| EIAঅনুসারে রামপালের নির্গমন হবে ৮১৯ গ্রাম/সেকেন্ড | কিন্তু নাইট্রযেন এর ডাটা দেয়া হয়েছে মাইক্রোগ্রাম পার নেচারাল কিউবিক মিটার এ এবং তার সাথে গ্রাম পার সেকেন্ড টাও দেয়া হয়েছে | সেই হিসেবে সালফার এমিশন টা আমি নাইট্রেট এমিসেন এর হিসেবে ঐকিক নিয়ম করে বের করছি | ৪৯০ g/s, এই হিসাব অনুসারে পার কিউবিক মিটারে ৭৫০ মাইক্রো গ্রাম নাইট্রেট নির্গত হবে |তাইলে , সালফার ডাই অক্সা ইড যদি নির্গত হয় ৮১৯ গ্রাম প্রতি সেকেন্ড এ তো তার প্রতি কিউবিক মিটার এ কন্সেন্ত্রেশান হবে ১২৫৩ μg/m3 একটা প্লান্ট এর জন্যে |
** তাই বিভিন্ন দুরত্বে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স কে হিসেবে করা হইছে যা কোনো স্ট্যান্ডার্ড হইতে পারেনা
শুধুই মাত্র বিশ্ব ব্যান্ক এর ১৯৮৭ সালের ড্রাফট যা একটি ভুয়া স্ট্যান্ডার্ড তাকেই কোয়ালিফাই করে রামপাল এর বর্তমান ডিজাইন | এমনকি বিশ্বব্যান্ক এর বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড টাকেও কোয়ালিফাই করে করে না |
১২৫৩ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটারে যে নির্গমন তা পৃথিবীর কোনো দেশের স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করেনা এবং এইটা যদি হয় তো রামপাল অবশ্যই এসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে এবং সুন্দরবন লং টার্মে গিয়ে ধ্বংশ হবে | যেই খানে চীন এর স্ট্যান্ডার্ড এখন ১০০ , আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড ৪০০ সেই খানে রামপাল এর জন্যে করা হবে ১২৫৩ মাইক্রোগ্রাম | এই খানেই আমার মতে, রামপাল নিয়ে সব চেয়ে বড় ভন্ডামি টা করা হইছে | কারণ, সালফার এমিশন টাই পরিবেশ এর উপর সব চেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে|
একই ভাবে আমরা দেখব, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এর ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রতারনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে |
রামপাল এর এমিশন হবে ৭৫০, ১৯৮৮ সালের রেফারেন্স এ ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক স্ট্যান্ডার্ড দেখানো হয়েছে ৭৫০, কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর প্রকৃত স্ট্যান্ডার্ড তার থেকে অনেক কম এবং বিশ্বের স্ট্যান্ডার্ড কথাও ৫০০ এর উপরে না|
উপরের চার্ট টাতে খুব খেয়াল করে দেখার একটা বিষয় হইলো, আপনে দেখবেন বাংলাদেশের মত ভারতের সালফার এবং নাইট্রোজেন এমিসানের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নাই|
ভারতেও এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড আছে কিন্তু কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর জন্যে এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড কে ওরা বেঞ্চ মার্ক হিসেবে ধরেনা | বরং ধরে নেই ভারতের ইমিশন এর কোনো স্ট্যান্ডার্ড নাই | কারণ, এই ভারতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র গুলো বেশির ভাগ প্রাইভেটাইজড এবং এই সব প্রাইভেট কোম্পানি গুলি ভারত সরকার কে, কোনো ধরনের স্ট্যান্ডার্ড সৃষ্টি করে দেয় নাই, তাদের প্রভাব খাটিয়ে| ভারত নিজেই একটা এনভায়রনমেন্ট এর ব্যাপারে অত্যন্ত দুর্বল মানের দেশ| এই ব্যপারে ভারতের গ্রীনপিস সহ অন্যান্য পরিবেশ অর্গেনাইজেসন অনেক যুদ্ধ করতাছে| গ্রিন পিস এর একটা লিংক দেখুন
Click This Link Kills - Power Plants in India - Emissions & Health Impacts.pdf
মোদ্দা কথা হচ্ছে, ভারতের খুব নিম্ন মান এর পরিবেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে রামপাল এ যে প্লান্ট টা করা হচ্ছে, তা যদি আরো ২০ কিমি দুরে সরিয়ে নেয়া হয়, তাহলেও রামপাল থেকে যে দূষণ হবে তা পরিবেশ কে ক্ষতি করবে, জনবসতির উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে তার পরেও সুন্দরবন এর উপর প্রভাব পরবে | ফলে বিষয় টা দূরত্বের না বিষয় টা টেকনিকাল |
বিষয় টা এমন একটা টেকনোলজির যেই টেকনোলজি ব্যবহার করলে, একটা কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট খুবই কম সালফার এবং অন্যান্য দুষিত পদার্থ ইমিশন করে যাটে পরিবেশ এর ক্ষতি হয় না|
এই টেকনোলজি টা কি ?
এই টেকনোলজি টাকে বলা হয়ে, এফজিডি| FGD(Flue Gas Desulfuruijetion) | এইটা এক ধরনের স্ক্রাবিং তাই এইটাকে স্ক্রাবার ও বলা হয় | এই FGD টেকনলজি বা স্ক্রাবার ব্যবহার করে, একটা কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর ৯০% সালফার কে আটকে ফেলা যায় | ইদানিং রামপাল এর পক্ষের কিছু লোক জন এর আলোচনায় দেখি FGD এর কথা বলা হচ্ছে | এইটা একটা প্রতারণা কারণ, FGD রামপালে ব্যবহার করা হয় নাই | বলা হইছে, .৬% সালফার সমৃদ্ধ কয়লা ব্যবহার করা হবে তাই FGD লাগবেনা| এমনকি EIA রিপোর্ট এর রেকমেন্ডেশানে বলা হইছে, শুধু মাত্র .৬% সালফার এর উপরে কয়লা ব্যবহার হইলে, FGD ইনস্টল করা হবে এবং এই জন্যে রামপাল প্লান্ট ডিজাইনে FGD ইনস্টল করার জন্যে জায়গা রাখা হইছে | কিন্তু FGD ইনস্টল করার বাজেট রাখা হয় নাই |
কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর যে সালফার এমিশন হয় তার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ১৫০ বছর ধরে আন্দোলন হচ্ছে | এর জন্যে সেই ১৯৩৫ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে FGD বসানো হইছে | বর্তমানে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনে যে গ্যাস এমিশন স্ট্যান্ডার্ড করা হইছে সেইটা মেন্টেন করতে হলে অবশ্যই FGD বসাতে হবে|
এই খানেই আসে ইন্ডিয়ার এমিশন স্ট্যান্ডার্ড থাকা না থাকার পার্থক্য| ইন্ডিয়াতে সালফার এমিশন এর কোনো আইন নাই | এই জন্যে ইন্ডিয়া তে মাত্র একটা প্লান্ট আছে যেইটায় FGD আছে | সেইটাও করা হইছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এর রায় এর পর | ভারতের যে স্ট্যান্ডার্ড সেই মতে এখন রামপাল ডিজাইন করা হইছে | এবং বর্তমান রামপাল প্লান্ট এর ডিজাইন অনুসারে ২৭৫ মিটার লম্বা একটা স্ট্যাক (চিমনি সদৃশ) বানিয়ে বায়ুমন্ডল এর অনেক উপরে সালফার টা ছড়িয়ে দেয়া হবে, যাতে সালফার টা অনেক দুরে ছড়িয়ে পরে | এইটা ভারতের স্ট্যান্ডার্ড | কিন্তু দুনিয়া এই স্ট্যান্ডার্ড থেকে পার হয়ে গ্যেছে | বিশ্বের বিভিন্য দেশে এই ভাবনা ৫ কোটি বছর আগে বাতিল হয়ে গেছে |
কিন্তু ভারতে বাতিল হয় নাই |কেন বাতিল হয় নাই ?
কারণ এইটা খুব এক্সপেন্সিভ টেকনোলজি | একটা এফ জিডি ইনস্টল করতে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয় এবং এইটা পরিচালনা করতে গিয়েও খরচ হয়| আর দুই নাম্বার হইলো FGD এর জন্যে পার ইউনিট খরচ টা বাড়ে | পার টন সালফার কে প্রসেস করতে বড় সাইজ এর FGD তে পার টন সালফার প্রসেস করতে মাক্সিমাম ৫০০ ডলার এর মত খরচ হয় | ফলে ৫৫০০০ টন সালফার প্রসেস করতে FGD এর বাত্সরিক খরচ হবে ম্যাক্সিমাম ২৫ মিলিয়ন ডলার | যেইটা আসলে অনেক বেশি না | কিন্তু কাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট টা ভালই |
এখন কথা হচ্ছে আপনি এই খরচ টা করবেন নাকি চিপ চিপ পরিবেশ দূষণ করবেন এই অপশন টা আপনার |
এই খরচের জন্যেই এখনো ইন্ডিয়াতে FGD রাখা টা স্ট্যান্ডার্ড করা হয় নাই |
আজকে তাই যদি, ইন্ডিয়ার মত আর একটা লো টেক দেশ যেই দেশ তার জনবসতিকে সালফার দিয়া কন্টামিনেট করাকে স্ট্যান্ডার্ড মনে করে সেই দেশের টেকনিশিয়ান দিয়ে একটা বড় প্লান্ট বানাই, তো এরা আমাদের বোঝাবে যে, FGD কত ডিফিকাল্ট, কত দামী | কিন্তু আপনি যদি ইউরোপ থেকে টেকনোলজি আনেন, ওরা চিন্তাও করতে পারবেনা আপনে FGD বাদ দিয়া ২০১৩ সালে এসে এত বড় একটা পাওয়ার প্লান্ট করবেন |
এখন প্রশ্ন হইলো, আমরা কি ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড মানব নাকি বাকি বিশ্বের স্ট্যান্ডার্ড মানবো | আর যদি খরচ এর কথা বলেন, তাইলে আপনাকে রিকারদোর্ মডেলে দেখতে হবে, এই সেম পরিমান বিদ্যুত উত্পাদন করতে গেলে অল্টারনেটিভ কি টেকনোলজি আছে এবং তার খরচ কি হবে ? আমার ধারণা, তাতে দেখবেন এই এফজিডি সহ কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর খরচ কম হবে |
কিন্তু এইটা সম্পূর্ণ অন্য আলোচনা| এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কিন্তু এই লেখা টায় শুধু মাত্র এনভায়রনমেন্ট এর ইমপ্যাক্ট টার ভিত্তিতে সব আলোচনা করা হচ্ছে, কস্ট বেনেফিট এই আলোচনায় আসে নাই | তাই ওই দিকে আমরা এখন যাবনা |
এর পরেও একটা কথা থাকে | তা হইলো, FGD ইনস্টল না করেও কয়লা হতে সালফার এর ইমিশন কমানো যায়
এবং সেই ক্ষেত্রে, আপনাকে সাববিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করতে হবে | এই কয়লার দাম অনেক বেশি | মার্কিন
এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট
Click This Link
কিন্তু রামপাল কি ব্যবহার করা হবে ??
যদিও EIAএর বিভিন্য জায়গায় বলা হইছে হয় বিটুমিনাস নয় সাব বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করা হবে কিন্তু এইটা ছলনা বলেই মনে হয় যখন প্লান্টটের বেসিক ডেসক্রিপশানে পরিষ্কার ভাবে বলা হইছে এইটা হবে বিটুমিনাস কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট | পৃষ্ঠা ৯৫ |রামপাল হবে, সুপার ক্রিটিকাল বিটুমিনাস পাল্ভেরাইজড কোল প্লান্ট |
মোদ্দা কথা হইলো, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র রামপাল এ করা না করার প্রধান একটা কন্সিডারেশান হলো সালফার|
ফলে আপনি সুন্দরবন থেকে যত দুরেই যান আপনি যদি বছরে ৫২০০০ টন সালফার পরিবেশে ছাড়েন তবে সেইটাই পরিবেশ কে ক্ষতি করবে, জন মানুষের উপর দুর্যোগ বয়ে আনবে | ফলে আমাদের কে প্রথম বিশ্বের স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে, বিদ্যুত প্লান্ট বানাতে হবে ভারতের স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করে নয় | এবং ভারতের স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করে সুন্দরবন থেকে ৫০ কিমি দুরের প্লান্ট ও সুন্দরবন কে ক্ষতি করবে | সেই ক্ষেত্রে আপনাকে হয় সাব বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করার জন্যে উপযোগী প্লান্ট বানাতে হবে অথবা আপনাকে স্ক্রাবার বসাতে হবে | দুক্ষ জনক ভাবে এর কোনটাই করা হয় নাই |
আমরা আমাদের আলোচনায় দেখব, যদি প্রপার প্রটেকশন নেয়া হয় তো সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দুরত্বে একটা কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট করা যায় | কিন্তু সেই গুলো না করে, এই প্লান্ট টা করা সুন্দরবন কে সত্যিই বিপদগ্রস্ত করবে |
আমাদের কার্বন গিল্ট
কার্বন ডাই অক্সাইড এর এমিশন নিয়ে ক্যেচাল অভিযোগ কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর সব চেয়ে বড় দূষণ টা হয় কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে CO 2 | রামপাল এর প্লান্ট এ বছরে ৭৯ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড উত্পন্য হবে যা পরিবেশ কে দূষণ করবে | যদিও জাতীয় কমিটির কোনো বুকলেটে এইটা দাবি করা হয় নাই এবং জেনে বুঝে কেও এই দাবি করছেনা কিন্তু বিভিন্য জনের সাহ্থে আলোচনায় আমার মনে হইছে একটা পারসেপশন আছে এই ৭৯ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড যেইটা একটা ব্যাপক পরিমান এইটার ফলে এলাকার তাপমাত্র বাড়বে এবং সুন্দরবন এর ডাইরেক্ট ক্ষতি হবে|
সরকার পক্ষের বক্তব্য বলা হয়েছে, এই দূষণ রোধে সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে | যা আবার কাউন্টার করা হয়েছে এই বলে যে, সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তিতে কার্বন দূষণের মাত্র মাত্র ১০% কমবে কিন্তু আলটিমেটলি সুন্দরবন এর ক্ষতি হবেই এবং সুন্দরবন এর তাপ মাত্র বাড়বেই | জাতীয় কমিটির বই এ অভিযোগ টা ছিল, এই কার্বন সুন্দর বন এর উপর কি সম্ভাব্য প্রভাব পারবে তা EIA তে আসে নাই|
আসল কাহিনী
আসল কাহিনীটা বুঝতে হইলে আমাদের বুঝতে হবে, যে কার্বন ডাই অক্সাইড ইটসেলফ কোনো এলাকার তাপ মাত্রা বাড়ায় না | কার্বন ডাই অক্সাইড এর ক্ষতিকর প্রভাব টা পুরো বিশ্বের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের সাথে জড়িত প্রশ্ন | এইটা লোকাল ইসু না | এইটার প্রভাব গ্লোবালি হয় পুরো বায়ু মন্ডল এর উপর প্রভাবের কারণে | লোকাল এলাকাতে কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট হতে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড এর ক্ষতির কোনো প্রশ্ন নেই | গাছ পালার উপর কার্বন ডাই অক্সাইড এর কোনো ক্ষতি কর প্রভাব নাই কারণ কার্বন ডাই অক্সাইড গাছ এর সালোক সংশ্লেষণ এর খাদ্য |
প্রশ্ন টা গ্রিন হাউস গ্যাস এর| কার্বন ডাই অক্সাইড একটা গ্রিন হাউস গ্যাস | এর বিশিষ্ট্য হলো এটা তাপ কে রেফ্লেক্ট করে | এর ফলে সুর্যের যেই তাপ মাটি থেকে রিফ্লেক হয়ে বায়ু মন্ডলে যায় টা মহাবিশ্বে ফিরে যেতে পারেনা কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস এর সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে ফিরে আসে ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় গ্লোবাল ওয়ামিং হয় লোকাল ওয়ার্মিং না | তবুও এই পৃথিবীর নাগরিক হিসেবে, অবশ্যই আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, কার্বন ইমিশন কমাতে হবে|
কিন্তু প্লিজ এই চিন্তাটাকে একটা পারস্পেকটিভে আনা জরুরি |
আমরা এই প্রথম একটা বড় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র করছি | পুরো পৃথিবীতে যে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ বছরে ৪৬ লক্ষ টন কার্বন নির্গমন করে যা পৃথিবীর মাত্র .১৬% |
(২০০৮ এর হিসেব)
Click This Link
এখন যদি এই প্লান্ট টা হয় তো বাড়বে আরো ৭.৯ লক্ষ টন মানে বর্তমান নির্গমন মানে বর্তমানের এর আরো ১৭% বাড়বে|আর একই সময় ভারত ভারত ১৭ কোটি টন কার্বন পরিবেশে ছাড়তে থাকবে |(পূর্বের লিংক )
তাই,আমাদের অনেক বেশি কার্বন গিল্ট ফিল করার আগে, একটু নিজেদের অবস্থানকে গ্লোবাল পারস্পেকটিভে যাচাই করা উচিত | এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এর কারণে সুন্দরবন এর তাপমাত্রা বাড়বে এই ধরনের হাস্যকর পারসেপশান থেকে বেরিয়ে আশা উচিত|
এখানে আবার বলা উচিত, রামপাল এর সমালোচনার প্রাথমিক সোর্স যেমন জাতীয় কমিটি বা অন্যান্য আলোচনা থেকে এই ভুল ধারণা গুলো আসেনি| মূল কিছু আইডিয়াকে ডাল পালা ছড়াতে ছড়াতে এই পর্যায়ে পৌছাইছে এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছে | আমি মনে করে এই ধরনের ভুল পারসেপশন ছড়ানোর থেকে সকলের সতর্ক থাকা উচিত | কারণ, কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্র সম্পর্কে মানুষের মনে এই ধরনের বেসিক ভুল ধারণা আমাদের ফিউচার কে বিপর্যস্ত করবে |
কারণ, আমরা পরে যখন এনার্জি মিক্স নিয়ে ডিসকাস করবো তখন দেখব, আমাদের এনার্জি ফিউচার এর জন্যে কয়লা ইজ মাস্ট |
ক্রিটিকাল সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তির ইস্যু
এইটাও আবার কার্বন এর সাথে জড়িত | ক্রিটিকাল সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তির মূল ইস্যুএ হইলো কার্বন এর এমিশন কমানো |
কথা হইলো কার্বন এর ইমেশন কমাতে হবে | পুরান কথাই বলতে হয় যে আমরা বায়ুমন্ডলের এমন কিছু কার্বন ছরাচ্ছি না যে এই ক্রিটিকাল সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের এত মাথা ব্যথা করতে হবে এই মুহুর্তে | আমি মনে করি, একটা ১২০০ মেগা প্লান্ট এর ক্ষেত্রে এত বেশি কার্বন গিল্ট ফিল করার দরকার এখনো আসে নাই |
আরো একটা ইম্পর্টান্ট পলিউটেন্ট হলো মার্কারী
অভিযোগে বলে হয়েছে | এই প্লান্ট থেকে বছরে ৪৪০ পাউনড মার্কারী বায়ু মন্ডলে ছাড়া হবে | এবং ২৫ একর এর আয়তন এর একটা পুকুরে যদি এক চামুচের ৭০ ভাগ এর এক ভাগ মার্কারী বা পারদ ছাড়া হয় তো সেই পুকুর এর মাছ খাবার অযোগ্য হয়ে পরে | ফলে, সারা বছর ধরে এই ৪৪০ পাউনড মার্কারী ছড়িয়ে দেয়ার যে পরিকল্পনা সেইটা সুন্দরবন এবং আসে পাশের পরিবেশ অবশ্যই ক্ষতি করবে |
EIAতে কি বলা আছে ?
কিছু বলা নাই
আসল ঘটনা কি ?
আসল ঘটনা হইলো, এইটা একটা ভয়ঙ্কর অভিযোগ |
এবং EIAতে দেখা যায় মার্কারী কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয় নাই| এবং স্টেট অফ দা আর্ট এর গান গেয়ে, অত্যন্ত মান্ধাত্তার আমলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুন্দরবন কে বিপর্যস্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার তার ভারতীয় বন্ধুদের সাথে নিয়ে| কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর মার্কারীকে কেপচার করার জন্যে ACI বা অ্যাডভান্সড কার্বন ইনজেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বিশ্বের বিভিন্য দেশে | এই গুলো এখন স্ট্যান্ডার্ড| Click This Link
এই ACI ইনস্টল করা টা খুব এক্সপেন্সিভ না এবং বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটা প্লান্ট এ এই ACI ইনস্টল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে
Click This Link The Government Accountability Office has determined that “activated carbon injections” have the potential to cut mercury emissions by 90 percent — at an average price of $3.6 million per plant.
কিন্তু রামপাল এ সেইটা ইনস্টল করা হচ্ছেনা এবং ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রযুক্তি এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে অত্যন্ত দুর্বল পরিবেশ মান এর একটা পাওয়ার প্লান্ট করা হচ্ছে যার ফলে সুন্দরবন এর অবশ্যি ক্ষতি হবে |
কয়লা ভিত্তিক প্লান্ট এর প্রধান পলিউটেন্ট এই গুলোই |
এর বাহিরে বিভিন্য ধরনের পদার্থ নির্গমন হয় যার সব গুলোর প্রটেকশন মেকানিজম আছে , আমি ওই গুলো নিয়ে আলোচনাএই খানে করলাম না, তার কারণ, ওই পার্টিকল গুলোর বাত্সরিক যে নির্গমন হবে, তার ইমপ্যাক্ট অত বেশি নয় |
এবং রামপাল প্লান্ট এ ইলেক্ট্রো স্টাটিক পার্সিপেটর স্হাপন করা হচ্ছে, যার ফলে এই ভারী মেটেরিয়াল এবং সাসপেন্ডেড পার্টিকল গুলোর বড় অংশ কেই কেপচার করা হবে | এই খানে বলা ভালো রামপাল এর কিছু সমালচনায় বলা হয়েছে যে ইলেক্ট্রো স্টাটিক পার্সিপিটার হচ্ছেনা কারণ এইটা অনেক দামী | কিইন্তু রামপাল এর EIAএর ৪০৫ নাম্বার পেজ এ দেখা যায়, ইলেক্ট্রো স্টাটিক পার্সিপিটার এর জন্যে ২৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে | তাই এই ধারণাটা ভুল বলে ধরে নেয়া যায় |
এই গেল বায়ুমন্ডলে নির্গত দূষণ গুলোর আলোচনা |
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।