টেলিফোনে ৩৭ মিনিট কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। জনগণের কাছে অনেক প্রত্যাশিত ছিল এই আলাপচারিতা। দুই নেত্রীর মধ্যে কী কথা হয়েছে তা নিয়ে কৌতূহল জনগণের মধ্যে এখনো আছে। পাঠকদের জন্য দুই নেত্রীর সেই কথোপকথন তুলে ধরা হলো
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সন্ধ্যায় ফোন করেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে। দুই নেত্রীর ফোনালাপের বিস্তারিত এরই মধ্যেই বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ নিয়ে সব মহলে চলছে হইচই। ৩৭ মিনিটের এ টেলিসংলাপের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ প্রতিদিনে আজ সেই গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
দুই নেত্রীর টেলিসংলাপের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ও বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মধ্যে কথাবার্তা হয়...
স্লামালাইকুম।
জি, এডিসি সাহেব
শিমুল দা, আপনি তো ফোন দিলেন না।
না, না।
আমরা তো অপেক্ষা করছি আপনার জন্য। ৬টা থেকে ম্যাডাম বসে রয়েছেন।
না, না আপনাদের তো ফোন করার কথা।
না, এ রকম কোনো কথা তো আপনার সঙ্গে আমার হয়নি। আপনি ৬টায় ফোন দেবেন।
ম্যাডামকে আমি আধ ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখেছি। আমি আপনাকে বলিনি যে আমি ফোন দেব। বিকজ আমরা এঙ্পেক্ট করছি আপনারা ফোন দেবেন।
না, আপনি উল্টা কথা বলছেন। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি।
আমি ম্যাডামকে বলেছি..
না, আমিও তো বলিনি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন দেবেন। আমি বলেছি...
আপনি টেলিফোন করে মিলিয়ে দেবেন। এটা আপনার ডিউটি।
এটা তো আপনারও ডিউটি আছে যে আপনি টেলিফোন করিয়ে মিলিয়ে দেবেন।
ম্যাডাম এখন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
আমরা অপেক্ষা করছি আপনার কলের জন্য।
ম্যাডাম এখনো বসে আছেন। আপনি দেন, এখনই দেন। ম্যাডামকে দিচ্ছি আমি।
আছেন ওখানে আপনারা?
জি, জি।
ম্যাডাম এখনো আছেন।
আচ্ছা ওয়েট করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ও বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মধ্যে এই কথাবার্তার পরে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়।
খালেদা জিয়া : হ্যালো, হ্যালো... স্লামালাইকুম, কেমন আছেন?
শেখ হাসিনা : জি, অলাইকুম সালাম। ভালো আছি।
আমি ফোন করেছিলাম আপনাকে দুপুরবেলা, পাইনি।
খালেদা জিয়া : দেখেন, এই কথাটা যে বলছেন, তা সঠিক নয়। শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই...
খালেদা জিয়া : আপনাকে প্রথমে আমার কথা শুনতে হবে। আপনি যে বলছেন দুপুরে ফোন করেছিলেন, দুপুরে কোনো ফোন আসেনি।
শেখ হাসিনা : আমি রেড ফোনে ফোন দিয়েছিলাম।
খালেদা জিয়া : রেড ফোন তো দীর্ঘ দিন ধরে, বছর ধরে ডেড পড়ে আছে। আপনারা গভর্নমেন্ট চালান, কী খবর রাখেন? গভর্নমেন্ট চালাচ্ছেন, এই খবর রাখেন না যে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কি না। আর আপনি যদি ফোন করবেনই, তাহলে গতকালই আপনার লোক এসে ফোন ঠিক করিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। দেখে যাওয়া উচিত ছিল যে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কি না।
শেখ হাসিনা : রেড ফোন সব সময় ঠিক থাকে।
খালেদা জিয়া : আপনারা লোক পাঠান। এখনই লোক পাঠান। দেখে যান ফোন ঠিক আছে কি না।
শেখ হাসিনা : আপনি তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনি জানেন, রেড ফোন সব সময় ভালো থাকে।
খালেদা জিয়া : ভালো থাকে তো, তবে আমারটা তো ভালো নেই।
শেখ হাসিনা : ভালো আছে, আমি যখন ফোন করেছিলাম, সেটা ভালো ছিল।
খালেদা জিয়া : না, সেদিনও চেক করেছি। আপনারা যদি সত্যি কথা না বলেন, তাহলে চলবে না। এ কথা আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই।
শেখ হাসিনা : আমার সত্যি কথা না বলার তো কিছু নেই। আমি কয়েকবার ফোন দিয়েছি।
খালেদা জিয়া : হঠাৎ করে কি মৃত ফোন জেগে উঠবে? আপনার টেলিফোন এত পাওয়ারফুল যে ডেড ফোন জেগে উঠবে!
শেখ হাসিনা : ঠিক আছে, কোনো কারণে আপনি ফোনটা ধরতে পারেন নাই।
খালেদা জিয়া : না, ধরতে পারি নাই না। আমি এখানে বসা।
আমি এর মধ্যেই ঘুরি। ছোট্ট জায়গা, ছোট্ট জায়গার মধ্যেই আমি ঘুরি। এ ফোন বাজলে আমি না ধরার কোনো কারণ থাকতে পারে না। ডেড ফোন বাজতে পারে না। বুঝছেন? এটাই হলো সত্যি কথা।
শেখ হাসিনা : দেখুন, ডেড ছিল, না ডেড করে রাখা হয়েছে...
খালেদা জিয়া : ডেড ছিল। বহু কমপ্লেইন আপনাদের কাছে গেছে। কিন্তু আপনারা তো... রেড ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলার লোক নেই। কাজেই আমি কার সঙ্গে কথা বলব?
শেখ হাসিনা : আমি আগামীকাল দেখব, কেন আপনার ফোন ডেড ছিল।
খালেদা জিয়া : সেটা দেখবেন ভালো কথা।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে ফোন করলাম। আগামী ২৮ তারিখে সন্ধ্যায় গণভবনে আপনাকে দাওয়াত করছি। আপনি জানেন যে আমি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করছি আগামী নির্বাচন সম্পর্কে। আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি আমার গণভবনে আসার জন্য। আপনি রাতে আমার সঙ্গে একটু খাবার খাবেন।
খালেদা জিয়া : আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না। ২৯ তারিখ আমাদের হরতাল শেষ হচ্ছে।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করুন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। আমি অনেক দিন আপনাদের আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
কিন্তু আপনারা শুনেননি। আপনার যদি সত্যিকারের আন্তরিকতা থাকে আলোচনা করার জন্য, আমার যেতে কোনো আপত্তি নেই। আমি একা যাব না। আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও কেউ থাকবেন।
শেখ হাসিনা : আপনি যতজন খুশি নিয়ে আসতে পারেন।
সমস্যা নেই।
খালেদা জিয়া : আমি দলবলসুদ্ধ নিয়ে যেতে চাই না। যাদের প্রয়োজন মনে করব, তাদের নিয়ে যাব। সেটা হতে হবে ২৮ তারিখের পরে। ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় আমার হরতাল শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : আমি অনুরোধ করব জাতির স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে নেন।
খালেদা জিয়া : না, আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না।
শেখ হাসিনা : মানুষ খুন করা, আগুন মারা এসব বন্ধ করুন।
খালেদা জিয়া : মানুষ খুন করা আপনাদের কাজ। আমাদের সেসব অভ্যাস নাই।
আপনারা মানুষ জ্বালান, গানপাউডার ব্যবহার করেন। মানুষ মারেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারেন। এসব রেকর্ডেড। আপনার মুখ দিয়েই শব্দ বেরিয়েছে। কাজেই এসব আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না।
আমি বলছি, হরতাল চলবে। ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় শেষ হবে, এরপর আলোচনা।
শেখ হাসিনা : আমি বলছি, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে দয়া করে এই হরতাল প্রত্যাহার করুন।
খালেদা জিয়া : না, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থেই আমি এই হরতাল দিয়েছি। যেহেতু আপনারা কোনো আলোচনায় আসতে রাজি নন।
আপনার মন্ত্রীরা বলছেন, কোনো আলোচনা হবে না। আপনি নিজে বলেছেন, আমাদের প্রস্তাব রিজেক্ট করে দিয়েছেন। কোনো আলোচনার দরকার নেই, এটা আপনারা বলছেন। এখন আবার আলোচনার কথা বলছেন। সেই আলোচনা হতে পারে, আমাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর।
তার আগে হবে না।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে অনুরোধ করছি...
খালেদা জিয়া : না, সেটা সম্ভব না। উদ্যোগটা যদি এক দিন আগে নিতেন, সেটা সম্ভব ছিল।
শেখ হাসিনা : এটা এক দিন আগের বিষয় না। আপনি জানেন, আমি বিভিন্ন দলের সঙ্গে বসছি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি, আপনি ব্যস্ত মানুষ।
আপনার মতো ব্যস্ত না হলেও আমাদেরও ব্যস্ততা আছে। ইচ্ছা করলে উপায় বের করা যায়। কিন্তু আপনারা সেটা করেননি। কালকে যে আমাদের সমাবেশের পারমিশন দিলেন, এত দেরিতে দিলেন কেন? কত দিন আগে পারমিশন চেয়েছি? মাইক পর্যন্ত লাগাতে দেন না। মানুষ এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে পারে না।
এটা কোন দেশের গণতন্ত্রের নমুনা দেখছেন আপনি?
শেখ হাসিনা : আমি যে সবার সঙ্গে আলোচনা করব, তা কিন্তু বহুদিন আগেই সবাইকে...
খালেদা জিয়া : আমরা যে সমাবেশ করলাম, সেখানে মাইকের পারমিশন দেওয়া কেন হলো না?
শেখ হাসিনা : না, মাইক তো দেওয়া হয়েছে। কয়েকটা মাইক ছিল।
খালেদা জিয়া : না, আমরা যতদূর ইচ্ছা মাইক দেব। লোক বেশি, শুনবে। লোক আসবে এ জন্য গাড়ি বন্ধ করে দেন, ১৪৪ ধারা জারি করেন।
দেশে কি ইমার্জেন্সি চলছে নাকি? দেশে কি যুদ্ধাবস্থা চলছে যে এমন শুরু করে দিলেন আপনারা? এটা কী?
শেখ হাসিনা : আমি এ ব্যাপারে এখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি না।
খালেদা জিয়া : কথা বলতে না চাইলে তো আর কথাই নেই।
শেখ হাসিনা : কথাগুলো সত্য না। আপনারা তো মিটিং করছেন।
খালেদা জিয়া : এগুলো সব সত্য।
রেকর্ডেড।
খালেদা জিয়া : আপনারা মিটিং করতে দেবেন মাইক দেবেন না। এমন সময়ে পারমিশন দেবেন, যখন মঞ্চও বানাতে পারব না। আপনারা কি আগে মিটিং করেন নাই?
শেখ হাসিনা : সব মনে আছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা মনে আছে...
খালেদা জিয়া : গ্রেনেড হামলা আমরা করিনি, আপনারাই করেছেন।
শেখ হাসিনা : রাত ১১টায় পারমিশন দিয়েছেন, সেটাও মনে আছে। এসব কথা আপনাদের মুখে মানায় না।
খালেদা জিয়া : মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ ছিল। সেখান থেকে যে ভেন্যু পরিবর্তন করে আপনাদের অফিসে নিয়ে গেছেন, সেটা পর্যন্ত আমাদের জানাননি। এসব পুরনো কথা বাদ দেন।
এখন আপনাকে আমি বলছি, যদি সত্যিকারের আলোচনা করতে আন্তরিক হন, তাহলে আমাদের কর্মসূচির পরে...
শেখ হাসিনা : আমরা নিশ্চয়ই ঝগড়া করতে চাই না।
খালেদা জিয়া : আপনি তো ঝগড়া করছেনই।
শেখ হাসিনা : একরতফা বলে যাচ্ছেন। আমাকে তো কথা বলারই সুযোগ দিচ্ছেন না।
খালেদা জিয়া : আমি একতরফা বলব কেন।
আপনি কথা বলছেন আমি জবাব দিচ্ছি শুধু।
শেখ হাসিনা : আমি তো আপনার সঙ্গে কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছি না।
খালেদা জিয়া : আপনি বার বার বলছেন হরতাল হরতাল। হরতাল এখন প্রত্যাহার হবে না। আমাদের কর্মসূচি শেষ হলে তারপর যদি... আপনি জানেন।
আপনি যদি...
শেখ হাসিনা : হরতালের নামে মানুষ খুন করা অব্যাহত রাখবেন?
খালেদা জিয়া : আমি মানুষ খুন করতে চাই না। আপনারা মানুষ খুন করেছেন। কালকেও নয়জন মানুষ আমার খুন করেছেন আপনারা। ... আপনার ছাত্রলীগ যুবলীগ করে না। অস্ত্রসহ আমরা ছবি দেখাতে পারব আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগ কীভাবে মানুষ খুন করে।
শেখ হাসিনা : বললাম তো খুনের রাজনীতি আমরা করি না; বরং আমি দেখি...
খালেদা জিয়া : ...আপনাদের তো পুরনো অভ্যাস। আপনারা সেই স্বাধীনতার পর থেকে '৭১-এ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখনো এই হত্যা করেছেন। এত মানুষ হত্যা করেছেন। এগুলো ভুলে গেছেন আপনি?
শেখ হাসিনা : একাত্তরে আমরা মানুষ হত্যা করেছি?
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ অবশ্যই। একাত্তরের পরে, সরকার গঠনের সময়।
শেখ হাসিনা : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য...
খালেদা জিয়া : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য নয়...। আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি ঠিকমতো করতেন তাহলে আমরা পূর্ণ সমর্থন দিতাম। কিন্তু আপনারা সেই ট্রাইব্যুনাল করেননি। না করে, একতরফা করেছেন এবং আপনার দলে যে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে, সেগুলো একটাও ধরেননি। সেগুলোকে একটাও কেন ধরেননি? আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন।
আপনি দলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। নিরপেক্ষতার ঊধের্্ব আপনি যেতে পারেননি। তবে...
না হলে, আমার সঙ্গে এই আচরণ তো আপনারা করতেন না, যা করেছেন আপনারা। আমার সঙ্গে যেই আচরণ করেছেন, সেদিন আমার পার্টি অফিসে আপনারা যে আচরণ করলেন, এরপর আর বলতে হবে? বিরোধীদলীয় নেতাকে আপনারা সম্মান দিতে জানেন না।
কীসের গণতন্ত্রের কথা বলেন আপনি।
শেখ হাসিনা : আপনার কথার জবাব দিতে গেলে আমাকে তো সেই ২০০১ থেকে অনেক কথা বলতে হবে।
খালেদা জিয়া : সেটার জবাব আমিও দিতে পারি। আপনি দিবেন আমিও দিতে পারি...
শেখ হাসিনা : ...এরশাদ বা তার দলের সঙ্গে কী কী করেছিলেন। আর ২০০১ সালে...
খালেদা জিয়া : একাত্তর সালে আমরা কিছু করিনি।
এরশাদের সময় যত করেছেন আপনারা। এরশাদ যখন একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিল, তারপর আপনি বললেন আই অ্যাম নট আনহ্যাপি। আপনি যখন বিবিসিকে বললেন। ...ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন কোন সংবিধানের অধীনে ক্ষমতা নিল...
শেখ হাসিনা : ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন আপনার চয়েজ ছিল।
খালেদা জিয়া : ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন আমার চয়েজ ছিল না।
আপনার চয়েজ ছিল। আপনি নিজে বলেছেন আপনার আন্দোলনের ফসল। এগুলো ভুলে যান কেন? মানুষ তো ভুলে না সেগুলো।
শেখ হাসিনা : নয়জন অফিসার ডিঙিয়ে মইন উদ্দিনকে আপনি আর্মি চিফ বানিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়া : আপনি এমন অনেক অফিসারকে বাড়ি পাঠিয়েছেন।
সেটা নয়জন না সাতজন, সেটা কথা নয়। আপনি অনেককে ডিঙিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন। মইন উদ্দিন যেই থাকুক না কেন যখন এটা করল, সেখানে আপনারা... সেই ইয়েতে গেলেন কেন আপনি। সেটা সংবিধানসম্মত হয়নি। সংবিধানসম্মত ছিল না।
সেটাতে কেন গেলেন আপনি? সেদিন তো আপনি মনে করেননি। আমরা দুই দলই তখন ক্ষমতার বাইরে...
তখন তো একবার মনে করলেন না আমরা আলোচনা করি। ফখরুদীন-মইন উদ্দিনের এখানে যাওয়া ঠিক হবে না। এরা সংবিধানসম্মত নয়। আপনি তো সেটা মনে করলেন না।
চলে গেলেন সেখানে হাসিমুখে।
শেখ হাসিনা : ...আমি আগুনে বসেও হাসিখুশি থাকি। আবার বাবা, মা, ভাই...
খালেদা জিয়া : ...অতীত ছেড়ে দিয়ে আমি বলতে চাই এখন সামনের দিকে কী করে আগাবেন... আপনার যদি সত্যি সৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমরা সামনের দিকে কী করে এগুবো... সামনের দিকে এগুতে চাই।
শেখ হাসিনা : আপনি তো অনেক অভিযোগ করলেন। আমি তো এত অভিযোগ করতে চাই না।
ছোট্ট রাসেল..., ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন।
খালেদা জিয়া : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আপনারা করিয়েছেন। আপনাকে হত্যা করতে কেউ চায়নি। ... আপনি যত থাকবেন, তত আমাদের জন্য ভালো। ... আপনি যত অশ্লীল কথা বলবেন তত আমাদের জন্য ভালো।
শেখ হাসিনা : ১৫ আগস্ট আপনি যখন কেক কাটেন...
খালেদা জিয়া : ১৫ আগস্ট আমার জন্মদিন। আমি কেক কাটবই।
শেখ হাসিনা : খুনিদের উৎসাহিত করার জন্য যখন আপনি কেক কাটেন। ...
খালেদা জিয়া: ...এটা বলেন না। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোনো মানুষের জন্ম হবে না? কোনো মানুষ পালন করবে না।
এগুলো বাদ দেন। কথায় কথায় আপনারা বলেন। অনেক কথা বলেন জিয়াউর রহমানকে। আরে জিয়াউর রহমান তো আপনাদের নতুন জীবন দান করেছেন। এগুলো কথা ভুলেন না।
বুঝেছেন। আপনারা তো বাকশাল ছিলেন। ... আপনারা জিয়াউর রহমানের বদলৌতে আওয়ামী লীগ হতে পেরেছেন। আদার ওয়াইজ আওয়ামী লীগ হতে পারতেন না।
শেখ হাসিনা: ... রাসেলকে তো এই বাসায় ঘুরতেও দেখেছেন।
...
খালেদা জিয়া : আমরা এগুলো সমর্থন করি না। দুঃখিত এগুলো ভুলে যেতে চাই। আসুন নতুন করে শুরু করি। সেটাতে আপনি রাজি থাকেন, আসেন আমরা সুন্দর আলোচনা করি। আমার আলোচনা করতে আপত্তি নাই।
কিন্তু সেই ডেট হতে হবে আমার হরতাল শেষ হওয়ার পর।
শেখ হাসিনা : আপনার হরতাল প্রত্যাহার করবেন না?
খালেদা জিয়া : না, আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। এটা তো আমার ডিসিশন না। এটা ১৮ দলের ডিসিশন। আমি এটা কী করে একলা করব।
শেখ হাসিনা : আপনি ১৮ দলকে ডেকে নিয়ে বলেন...
খালেদা জিয়া : এখন সময় নাই। আপনি যে তাড়া করতেছেন। এখন তো খুঁজে পাওয়া যাবে না লোকজনকে। আপনি তো সবার পেছনে পুলিশ লাগিয়ে রেখেছেন। কী করে মানুষ পাওয়া যাবে, বলেন?
শেখ হাসিনা : আমরা পুলিশ লাগিয়ে রাখব কেন?
খালেদা জিয়া : আপনি লাগিয়ে রাখবেন না তো কে রাখবে? পুলিশ... কার কথায়... কি আমার কথায় চলে? আপনি তো সবার বাসায় বাসায় রেড করছেন।
বস্তি থেকে পর্যন্ত আপনি লোক ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা : যেখানে বোমা ব্লাস্ট হয়ে যাবে...
খালেদা জিয়া : বোমা ব্লাস্ট হয়ে যাবে। বোমা ব্লাস্ট তো আপনারা করেন আর নাম দেন আমাদের। এগুলো তো আপনাদের পুরাতন ঐতিহ্য।
আমি বলতে চাই, যদি আপনারা ২৯ তারিখের পরে করেন আমি রাজি আছি।
আমি নিশ্চয় কথা বলতে রাজি আছি।
শেখ হাসিনা : আপনি আলটিমেটাম দিলেন দুই দিনের। এখন আমি দুই দিনের মধ্যেই ফোন করলাম। অথচ এখন হরতালও করবেন আবার বলছেন ২৯ তারিখের পরে। আপনি কী বক্তৃতা দিলেন আর আজকে এখন কী বলছেন, আপনি একটু ভেবে দেখেন।
খালেদা জিয়া : আমি বলেছি আলোচনা চলুক, কর্মসূচিও চলবে।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজেই বলছেন দুই দিনের মধ্যে আলোচনা... হরতাল দেবেন না। ...শুনেন আমার কথা...আমার এখানে ক্যামেরা নাই...
খালেদা জিয়া : আমার এখানে ক্যামেরা টেমেরা নাই। আমি নিজেই কথা বলছি। আমি বাসায় বসে কথা বলছি।
অফিসে হলে আমার জন্য সুবিধা হতো। ক্যামেরা টেমেরা থাকত। টেলিভিশনে দেখব আপনারাই ক্যামেরা দেখাচ্ছেন। ...যে বলেছে...টেলিভিশনে স্ক্রল দিয়েছে যে ওনার রেড টেলিফোন ঠিক আছে। আমি এটা দেখতে চাই।
শেখ হাসিনা : আমি খবর নিলাম। ফোন ঠিক আছে। ১০-১২ বার ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : ফোন ঠিক নাই। তাহলে বলতে চান আমরা কেউ কানে শুনছি না।
ফোন বাজে আমরা কেউ শুনি না।
শেখ হাসিনা : আমি কানে শুনব কি করে। গ্রেনেড হামলায় তো আমার এক কান এমনিতেই নষ্ট। ...ফোন আমি নিজে করেছি।
খালেদা জিয়া : আপনি নিজে করলে কী হবে।
আপনি একটা ডেড ফোনকে... আপনি বলেছেন আপনি ফোন করেছেন।
শেখ হাসিনা : ফোন রিং হচ্ছিল
খালেদা জিয়া : রিং হবে কী করে। যে ফোন ডেড, সেটা রিং হবে কী করে। এটাই তো মন-মানসিকতার পরিচয়। আপনি কি সত্যি কথা বলছেন কিনা।
শেখ হাসিনা : আমি সত্যি কথা বলছি। মিথ্যা বলার কিছু নেই...
খালেদা জিয়া : আমি কাল পর্যন্ত চেক করেছি। আপনি করতে পারেন। ...ফোন চেক করে রিপোর্ট করেছি। আপনারা...লোকজন...কেউ আসেন।
তারা তো আমাদের মানুষ বলে মনে করে না। কাজেই আসেও না, টেলিফোন ঠিক করা গরজও বোধ করে না। রেড টেলিফোন কেন? আজকাল তো মোবাইল ফোন আছে, টিঅ্যান্ডটি আছে...
শেখ হাসিনা : রেড টেলিফোনের দোষ দিয়ে খামাখা মিথ্যা বলার তো দরকার নেই।
খালেদা জিয়া : মিথ্যা বলব কিসের জন্য। যে টেলিফোন ডেড।
তো ডেডকে ডেড বলবই তো। আপনি বললে তো হবে না যে ফোন বিজি ছিল। এটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না...
শেখ হাসিনা : এঙ্চেঞ্জে কালকে খবর নেওয়াই যাবে। এটা কোনো ব্যাপার না।
খালেদা জিয়া : কিন্তু আপনার গুলশান এঙ্চেঞ্জ থেকে যে বলেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারণ সে সত্য কথাটা বলেনি।
শেখ হাসিনা : রেড টেলিফোন কিন্তু আলাদা এঙ্চেঞ্জ। আরও ভালো করে জানবেন।
খালেদা জিয়া : আলাদা এঙ্চেঞ্জই। টেলিভিশন স্ক্রল দিছে।
আপনি নিজে সামনে থাকলে দেখতেন।
শেখ হাসিনা : আমি গণভবনের অফিসে বসে আছি। আমার অফিসে কোনো টেলিভিশন নেই।
খালেদা জিয়া : তাহলে কেন বলা হচ্ছে, টেলিফোন ঠিক আছে। এ কথাটি সত্যি নয়।
শেখ হাসিনা : আপনার শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়েছে...
খালেদা জিয়া : আপনার সঙ্গে কথাই ছিল যে এই টেলিফোনে কথা হবে আমাদের। আমি তো বসে আছি এখানে। আধা ঘণ্টা বসে আছি যে আপনার টেলিফোন আসবে। আমরা তো গোপন কিছু বলব না। এক সময় আমরা অনেক কথা বলেছি।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একসঙ্গে কাজ করেছি। কেন কথা বলব না। এখনো বলতে চাই, কাজ করতে চাই। আসুন দেশের স্বার্থে বসি......
শেখ হাসিনা : আগামী ২৮ তারিখ আসেন। আমরা আলোচনা করি।
খালেদা জিয়া : না, আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না। আপনি যদি সত্যি আন্তরিক হন, ২৯ তারিখের পর ডেট দেন। আমি আসব।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকে বললেন...
খালেদা জিয়া : না, আমি কর্মসূচি দিয়ে ফেলেছি। এখন সম্ভব না।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজেই বলেছেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনার জন্য না ডাকলে হরতাল দেবেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল দিয়ে ফেলেছি। তার আগে বলা উচিত ছিল।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার বক্তব্যটা নিজে শুনেন।
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, এখন আমি নিজে শুনলেও কর্মসূচি দিয়ে ফেলেছি।
সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি, কর্মসূচিও চলবে, আলোচনাও চলবে।
শেখ হাসিনা : আপনি যেহেতু বললেন দুই দিনের মধ্যে...
খালেদা জিয়া : আমি বলেছি। কর্মসূচি-সংলাপ একসঙ্গে চলবে।
শেখ হাসিনা : এর আগেই আমি ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, হরতাল চলবে।
ঘোষণা হয়ে গেছে এখন করার কিছু নেই। কর্মসূচি ঠিক হয়ে গেছে। ১৮ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ দল পাব কোথায় এখন? এখন কেউ নেই।
শেখ হাসিনা : ১৮ দল আপনি পাবেন, ডাকলেই পাবেন।
আপনি ডাকলে হবে না, এটা কোনো কথা হলো নাকি। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
খালেদা জিয়া : বিশ্বাস করবে না ঠিক আছে। আমি ডাকলে হতো। কিন্তু এখন হবে না, এই কারণে...
শেখ হাসিনা : আপনি বললেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনা না করলে আপনি হরতাল দেবেন।
সে কারণে আমি এর মধ্যেই আপনাকে ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : আগামীতে কর্মসূচিতে যাতে না যেতে পারি, নতুন কর্মসূচি যাতে না দিতে পারি সে জন্য আমরা বলেছি আসুন আলোচনা করি। আপনি যদি কাল রাতেও ফোন করতেন, তাহলে কর্মসূচি বিবেচনা করা যেত। পুরো রাত চলে গেছে। সকালে অফিসে চলে গেছি।
আপনি যদি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করতেন।
শেখ হাসিনা : রাতে ফোন না দিলে তো আপনার হয় না। আমি রাত জাগি না।
খালেদা জিয়া : আপনি কি সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে পড়েন?
শেখ হাসিনা : আমি নামাজ পড়ি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি। আপনি নামাজ পড়েন, কোরআন পড়েন... করেন।
নামাজিদের গুলি করেন, হত্যা করেন ...আবার ছবিও দেন... সবই জানি। ... আমি ২৯ তারিখের আগে আলোচনায় বসতে পারব না। হরতাল প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ নেই।
শেখ হাসিনা : আপনি যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন আমি ঠিক সেই সময়ের মধ্যেই আপনাকে ফোন করেছি আলোচনার জন্য।
খালেদা জিয়া : এখন আমার দলের কোনো নেতাকে পাব না, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের পাব না, ১৮ দলের নেতাদের পাব না, কার সঙ্গে কথা বলে আমি এটা প্রত্যাহার করব, আপনি বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনি কাউকে পাবেন না এটা একটা কথা হলো? আপনি হুকুম দিলেই তো সব হবে।
খালেদা জিয়া : আরে আপনার ডিবি, এসবি তো আমার বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। আমার নেতারা কি করে আসবে বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনারা ছুরি-কাঁচি-দা-কুড়াল নিয়ে মানুষকে আক্রমণ করার কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া : ছুরি-কাঁচি-দা-কুড়াল নিয়ে তো আপনারা করেন। বিশ্বজিৎকে আপনার লোকজন দা দিয়ে হত্যা করল না?
শেখ হাসিনা : আমার লোকজন না। যারা করেছে তারা অনেক আগে থেকেই বহিষ্কৃত।
আমরা তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেছি।
খালেদা জিয়া : আপনি নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার করেছেন।
শেখ হাসিনা : না তারা কেউ নিরীহ নয়। কেউ জামায়াত করে তো কেউ বিএনপি করে।
খালেদা জিয়া : না তারা আওয়ামী লীগ করে।
আমি আপনাকে আবার রিকোয়েস্ট করছি, ২৯ তারিখের পর আপনি সময় দেন, আমি আলোচনায় রাজি আছি। এখন এই কর্মসূচি থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই। আপনি ৩০ তারিখে ডাকেন, আমি যাব।
শেখ হাসিনা : আপনি জনগণের সামনে, জাতির সামনে যে বক্তব্যটা দিয়েছেন, সেটা অনুসরণ করেন। হরতাল প্রত্যাহার করেন।
খালেদা জিয়া : না আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। আমাকে যাতে আর কোনো নতুন কর্মসূচিতে যেতে না হয়...তার জন্য আলোচনায় বসুন। হরতাল প্রত্যাহার করার পথ আর খোলা নেই এখন।
শেখ হাসিনা : আপনি জাতির সামনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনুসরণ করেন।
খালেদা জিয়া : টাইম ওভার হয়ে গেছে।
আপনি ৩০ তারিখ করেন। আপনি যদি কাল রাতেও ফোন করতেন, আমি রাতেই মিটিং ডাকতাম। আমি ৭টা পর্যন্ত অফিসে বসে ছিলাম...তখন ফোন করতে পারতেন। আমরাও আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। আমি ১৮ দলকে ডেকে বলব প্রাইম মিনিস্টার আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান.....
শেখ হাসিনা : আপনি দুই দিন সময় দিয়েছিলেন।
আমি দুই দিনের মধ্যেই আপনাকে ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : আপনি কি মনে করছেন এই হরতালেই আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়ে যাবে!
শেখ হাসিনা : না, না। আপনি তো আরও হরতাল দেবেন।
খালেদা জিয়া : আপনারা ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি।
একসঙ্গে কাজ করতাম। কিন্তু আপনি প্রথম দিনেই সংসদে বললেন, একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবেন না
আপনি যদি ৩০ তারিখে বসতে চান তাহলে আমি রাজি আছি...এর বাইরে সম্ভব নয়...
শেখ হাসিনা : আমার পার্টি স্ট্রং। আমাদের ভোট আছে। আমরা সংগ্রাম করেই এটা অর্জন করেছি।
খালেদা জিয়া : আমার দলও অনেক সংগ্রাম করে ক্ষমতায় এসেছিল।
শেখ হাসিনা : দুঃখিত।
খালেদা জিয়া : আপনি সময় মতো আমাকে টেলিফোন করেননি সে জন্য আমি দুঃখিত। আপনি যদি তা করতেন তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। আপনি যদি রাত ৯টায় ফোন দিতেন তাহলে সে সময় নেতা-কর্মীরা সবাই উপস্থিত থাকত। কিন্তু আপনি ৬টা, ৬টা বললেন,....
শেখ হাসিনা : আমার এডিসি দেড়টা থেকে চেষ্টা করেছে।
খালেদা জিয়া : ফোন না বাজলে ধরার উপায় নেই।
শেখ হাসিনা : শিমুল বিশ্বাসের ফোনেও অনেক চেষ্টা করেছে।
খালেদা জিয়া : আপনি বলেছিলেন ৬টার জন্য।
শেখ হাসিনা : আপনি জানেন আমাদের মিটিং ছিল। আমি মিটিংয়ে দেরি করতে পছন্দ করি না।
খালেদা জিয়া : মিটিং জরুরি না এটা জরুরি ছিল।
শেখ হাসিনা : সিদ্ধান্ত নেন।
খালেদা জিয়া : কীভাবে নেব।
শেখ হাসিনা : জাতির কাছে বলেন।
খালেদা জিয়া : আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নিন।
আমি হরতাল প্রত্যাহার করব।
শেখ হাসিনা : আমাদের ৯০ ভাগ আসন থাকার পরও...
খালেদা জিয়া : আপনি বলেন, নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, আমি হরতাল তুলে নেব।
শেখ হাসিনা : যারা মাইনাস-টু করতে চেয়েছিল আপনি তাদের আনতে চাইছেন।
খালেদা জিয়া : আমি না, আপনি। আপনি যে ভাষায় কথা বলেন...
শেখ হাসিনা : আপনি তো মধুর ভাষায় কথা বলেন।
আমরা সংসদে আছি। একসঙ্গে কাজ করব... আপনি দলের নেতাদের নিয়ে মিটিং করেন।
খালেদা জিয়া : পুলিশকে বলে দেন। তত্ত্বাবধায়ক মানেন। সবাইকে ডাকি।
শেখ হাসিনা : হরতাল তুলে নেন।
খালেদা জিয়া : নির্দলীয় সরকার মানার ঘোষণা দেন।
শেখ হাসিনা : আপনার দলের লোকের উপর ভরসা নেই?
খালেদা জিয়া : আমার দলের লোকের উপর ভরসা আছে।
শেখ হাসিনা : তাদের ডাকেন।
খালেদা জিয়া : আপনি দাবি মানেন, হরতাল...
শেখ হাসিনা : আপনি সর্বদলীয় মানেন।
খালেদা জিয়া : সবর্দলীয় মানা যায় না।
শেখ হাসিনা : আবার কাকে আনবেন, মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের মতো।
খালেদা জিয়া : আপনিই আনেন।
শেখ হাসিনা : ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সৃষ্টি করবেন না।
খালেদা জিয়া : আপনার মিটিংয়ের সময় হয়েছে....আপনার দেরি বা ক্ষতি করতে চাই না....আর টেলিফোনে সব কথা হয় না....আমি চাই আমার সব নেতাদের ডাকব....নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে...তাহলে আমি হরতাল প্রত্যাহার করে নেব।
আপনার না আমার ফর্মুলায় নির্বাচন হবে তা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে...
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে অনুরোধ করব...
খালেদা জিয়া : না...আপনি যদি বলেন নিরপেক্ষ নির্বাচনে রাজি আছেন তাহলে আমরা রাতের মধ্যেই ঘোষণা দেব হরতাল প্রত্যাহার করব, ...আমরা কালকেই আপনার সঙ্গে আলোচনায় বসব...কোনো অসুবিধা নেই....
শেখ হাসিনা : আপনরা সর্বদলীয় মেনে নেন...
খালেদা জিয়া : না...সর্বদলীয় মানা যায় না...
শেখ হাসিনা : ২৮ তারিখে আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি...আপনি আসবেন..
খালেদা জিয়া : না...২৯ তারিখের পর যে দিন বলবেন আসব...২৮ তারিখে হরতাল...আমি হরতালের মধ্যে কোথাও যাই না....
শেখ হাসিনা : ধন্যবাদ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।