স্থানীয়দের অনেকেই আছেন, যারা দিনের একটি সময়ে বোস কেবিন যাবেন। এমন লোকের মধ্যে আছেন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, গায়ক, শিক্ষক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। শুরু হয় ভুলু বাবুর প্রসিদ্ধ চা পান আর চায়ের টেবিলে আলোচনার ঝড়।
শুরুর কথা
নারায়ণগঞ্জ ১ নম্বর ও ২ নম্বর রেলগেইটের মাঝামাঝি, ফলপট্টির কাছাকাছি রেললাইনের পাশেই বোস কেবিন। রেস্তোরাঁ দেখতে মোটেই জাঁকজমকপূর্ণ নয়।
১৯২১ সালে একটি টঙঘরে এই বোস কেবিনের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নৃপেন চন্দ্র বসু। তিনি ভুলুবাবু নামেই বেশি পরিচিত। ২০ বছর বয়সে জীবিকার সন্ধানে বিক্রমপুরের ষোলঘর থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। শুরুতে ছোট টঙঘরে কড়া লিকারের চা, লাঠি ও বাটার বিস্কুট নিয়ে বসেন।
তখনই তার দোকান জনপ্রিয় হতে থাকে। ধীরে ধীরে দোকানের কলেবর বাড়তে থাকে, নাম হয় নিউ বোস কেবিন।
ভুলুবাবুর নাতি তারক চন্দ্র বসু বলেন, “নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নারায়নগঞ্জ এলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে দাদা ভুলুবাবু, কড়া ও হালকা লিকারের দুই কেতলি চা বানিয়ে ছুটলেন নেতাজীর জন্য। সেই চা খেয়ে তখন খুবই খুশি হয়েছিলেন নেতাজী, আশীর্বাদও করেছিলেন।
”
তারক আরও জানান, নেতাজীর চা প্রীতির কথা সবার মতো স্বাধীনতাকামী ভুলুবাবুও জানতেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম দিকে যাদের পা পড়েছিল এই বোস কেবিনে তাদের মধ্যে রয়েছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতারা। সাহিত্যিক শামসুল হকও এসেছিলেন এখানে।
বোস কেবিনের মেন্যু
প্রচণ্ড ভিড়। প্রায়ই এত মানুষ খেতে আসে যে, বসার জায়গার জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
জমকালো না হলেও বেশ পরিপাটি, গোছালো ও রুচিকর পরিবেশ। পেছনের দিকে বসার বিস্তর জায়গা। এক পাশে টিউবওয়েল, আরেক পাশে খাবার তৈরির ঘর। এখানে খাবার পানি হিসেবে টিউবওয়েলের পানিই ব্যবহার করা হয়।
বোস কেবিনে ঢুকে টিউবওয়েলের শীতল পানিতে হাত মুখ ধুয়ে প্রথমে নিজেকে জিরিয়ে নিন।
তারপর খাবারের অর্ডার দিন। সকালের নাস্তায় পাওয়া যায় পরটা দাম ৫ টাকা। ডাল ও হালুয়া ৮ টাকা। ডিমের ৬ রকমের পদ। এছাড়াও খাসি মুরগির মাংসের তরকারি।
দুপুর ১২টা থেকে পাওয়া যায় আলুর চপ ১৫ টাকা। পোলাও ৪০ টাকা। মোরগ পোলাও ৮০ টাকা। কারি ৮০ টাকা। চিকেন কাটলেট ৭০ টাকা।
বোস কেবিনে খেতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, “এখানকার কাটলেট এক কথায় অসাধারণ। ”
বোস কেবিনের চায়ের খুব নামডাক। যে চা নেতাজী খেয়েও প্রশংসা করেছিলেন, সেই কড়া লিকারের চা বড় বড় কাপে পান করতেই পারেন ১০ টাকায়। সারাদিনই এখানে চা পাওয়া যায়।
বোস কেবিন খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
যেভাবে যাবেন
বাসে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ৩০ টাকায় যাওয়া যায়। গুলিস্তান থেকে উৎসব, বন্ধন, বিআরটিসি বা বোরাক বাস সার্ভিসে সরাসরি কালীরবাজার নেমে রিকশায় বা হেঁটে চেম্বার রোডে গেলেই পেয়ে যাবেন বোস কেবিন। চাইলে রেলগাড়ি বা লঞ্চেও নারায়ণগঞ্জ যাওয়া যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।