আমি উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলতে চাই ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ রয়েছে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা শহরে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৩০ ভাগ ভবন ভেঙে পড়তে পারে এবং মারা যেতে পারে প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
ভূমিকম্প মোকাবিলায় আবাসন তৈরির নিয়মকানুন জানা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) জোনিং ম্যাপ অনুসারে বাংলাদেশের ৪৩ ভাগ এলাকাই ভূমিকম্পপ্রবণ, ৪১ ভাগ এলাকা মাঝারি ও ১৬ ভাগ এলাকা কম ভূমিকম্পপ্রবণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলাভিত্তিক হিসাব করলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও বান্দরবান। পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামটি খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার কিছু অংশ এই জোনে রয়েছে।
কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ জোনে রয়েছে রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং ঢাকা। আর বরিশাল ও পটুয়াখালীর পানিকবলিত এলাকাগুলো রয়েছে জোন-৩ এ, অর্থাৎ ভূমিকম্প ঝুঁকি তেমন নেই।
ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আবাসন কেমন হবে সে বিষয়ে তারা বলেন, “ভূমিকম্প যেহেতু সম্পূর্ণরূপে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর এর পূর্বাভাসেরও কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, তাই ভূমিকম্পের ব্যাপারটি মাথায় রেখে নিজের বাড়িটি তৈরি করাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
”
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের পুরকৌশল অধ্যাপক ভূমিকম্প বিশেষঞ্জ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, “অতীতে যেসব ভূমিকম্প হয়েছে সেগুলো প্রায় ৮ মাত্রার বা তার বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে যদি রিকটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তবে ঢাকার প্রায় ৩০ শতাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে পুরান ঢাকার অবস্থা হবে ভয়াবহ। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো নতুন করে যেসব বাড়ি হচ্ছে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা। যদিও ভূমিকম্প থেকে পুরোপুরি রক্ষার কোনো উপায় নেই; তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
”
বহুতল ভবন তৈরির ব্যাপারে অধ্যাপক আনসারী বলেন, “পিলার আর কলামের সংযোগস্থলে এক্সট্রা রড যোগ করতে হবে। রিইনফোর্সড কংক্রিটের শুরুতে লোহার যে রড তৈরি করা হয় সেটির টাইরডকে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ বাড়িতে টাইরডকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়। ”
তিনি বলেন, “সাধারণত একতলায় আমরা অনেক সময় কার পার্কিং বা অন্য কোনো কারণে ফাঁকা রাখি। এক্ষেত্রে ভূমিকম্প ঝুঁকি এড়াতে ওপরতলার দেয়ালসহ কলামের দৃঢ়তার সমান নিচতলার কলামের দৃঢ়তা হতে হবে।
এ ছাড়া ভবনের পিলারের ও কলামের বেল্ডিংয়ের রডকে কোড অনুসারে ডিটেইলিং করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। যদিও এক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের ব্যয় ১০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। ”
অন্যদিকে বুয়েটের একই বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহসিন রেজা হোসেন বলেন, “নবনির্মিত ভবন যদি প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে বেশি হয়ে থাকে তবে এর বিভিন্ন অংশ আলাদা করা যেতে পারে। যেমন- লিফটকে মূল ভবন থেকে একটু আলাদা রাখা যেতে পারে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানাই হলো বিল্ডিং কোড।
”
ড. তাহসিন রেজা আরো বলেন, “মাটিভেদেও ভূমিকম্পের মাত্রার কম-বেশি হতে পারে। নরম মাটিতে ভূমিকম্পের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম পুকুর, ডোবা, নদী ভালোভাবে ভরাট করার সময় তা দৃঢ় কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ”
তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় ১০২৪ গুণ তীব্র এবং ধ্বংসাত্মক। তাই ভূমিকম্পে ভীত বা আতঙ্কিত না হয়ে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
”
ড. তাহসিন রেজার হিসেবে, ভূমিকম্পে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো রাজধানী ঢাকা। কেবল এ শহরেই রয়েছে প্রায় ৬ লাখের মতো ভবন, যেগুলোর বেশির ভাগই বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে নির্মাণ করা। এই মুহূর্তে যদি ৭ রিকটার স্কেল মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় হয় তবে প্রায় ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। এ ছাড়াও বিল্ডিং ভেঙে ঢাকা শহরে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তা প্রায় ৬১৬০ মিলিয়ন ডলার যা দেশের বার্ষিক বাজেটের প্রায় অর্ধেক। আর ধ্বংসস্তূপের সৃষ্টি হবে প্রায় কয়েক হাজার টন।
এগুলো সরানোর ব্যবস্থাও মাথায় রাখতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৬০-৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা আছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার কর্মীকে।
স্বেচ্ছাসেবকদের একজন মো. নাসির উল্লাহ তাদের সীমাব্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমরা হয়তো জানি ধ্বংসস্তূপ থেকে কীভাবে উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ ম্যাকানিজম প্রয়োজন তা আমাদের নেই।
তাই বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, তা হবে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ”
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।