আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিক্ষা-১

এই বেশ ভালো আছি
নাম মাত্র বেতনে ছোট একটা চাকরি নিয়ে বাবার বড় ছেলে হিসেবে সংসারের ঘানি যখন কলুর বলদের মত টানছিলাম তখন এক বন্ধু পরামর্শ দিল মার্চেন্ডাইজিং কোর্স করার ,ভালো বেতন, বছর বছর প্রমোশন আরও অনেক সু্যোগ সুবিধার কথা শুনে ভর্তি হয়ে গেলাম। ১বছর মেয়াদি কোর্সে সপ্তা্য় তিন দিন করে ক্লাস হতো সবগুলে ক্লাসে উপস্থিত থাকতাম, প্রচুর পড়াশুনা করলাম ফলাফল পরিক্ষায় প্রথম হলাম আর প্রথম ইন্টারভিউতে চাকরি হয়ে গেল একটা বায়িং হাউজে মার্চেন্ডাইজারের সহকারী হিসেবে। যার সহকারী হলাম উনি ছিলেন খুব হেল্পফুল একজন মানুষ আর আমাকে খুব পছন্দও করতেন, তার ঐকান্তিক চেষ্টায় ১ বছরের ভেতর আমি সহকারী থেকে পূর্নাঙ্গ মার্চেন্ডাইজার হলাম। কোন অর্ডার কনফার্ম হবার পর ফ্যাক্টরি সিলেকশন, তাদের প্রতিনিধিদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া, সময় মত প্রডাক্ট শিপমেন্ট করার জন্য প্রয়জনীয় সবকিছু করা ছিল আমার মূল কাজ। এভাবেই চলছিল, একবার আমরা খুব নামকরা একটা ব্রান্ডের (বিশ্বের এক নম্বার রিটেইল চেইন বর্তমানে) প্রায় ৪ লাখ পিস নাইট গাউনের একটি অর্ডার পেয়েছিলাম, সাপ্তাহিক মিটিংএ বস জানালো এই অর্ডার টা শুরু থেকে ডেভেলপ করার জন্য বায়ারের একজন প্রতিনিধি আসবে কানাডা থাকে পরশুদিন সকাল ১০টায়,আমার উপর দায়িক্ত পড়লো তাকে রিসিভ করার, নির্ধারিত দিনে তার নাম লেখা প্লাকার্ড হাতে দাড়ালাম জিয়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে(তখন ছিল), ১০টা পার হ্য়ে গেছে তবু তাকে পাচ্ছিনা এদিকে বস বারবার ফোন দিয়ে জানতে চাচ্ছে অতিথিকে পেয়েছি কিনা, বিরক্তির শেষ সিমায় পৌছে হাল ছেড়ে চলে আসবো কিনা ভাবছি এমন সময় দেখি আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াচ্ছে এক বিদেশি তরুনী,বুঝলাম যার অপেক্ষায় আছি এই সে।

নাম এনজেলা বয়স ২০ থেকে ২১ হবে,পরে জেনেছিলাম ২৩। ফ্যাশন ডিজাইনে বড় ডিগ্রী নিয়ে চাকরি নিয়েছে এই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানে। প্রথম এ্যসাইনমেন্টেই বাংলাদেশ এসেছে। বুঝলাম নিজেকে প্রুভ করতে জিন্দেগী তামাতামা করে ছাড়বে। সরাসরি Radison হোটেলে নির্ধারিত কক্ষে তাকে পৌছা দিলাম।

পরদিন বস তাকে আফিসে নিয়ে এলো। মিটিং বসলাম আমরা। তার অর্ডার গুলোর বর্তমান অবস্হা নিয়ে আলোচনা হলো। যেহেতু আমি তার অর্ডার গুলো দেখতাম তাই বিভিন্ন ফ্যাকটরি যেখানে তার অর্ডার ডেভেলপ হচ্ছে সেগুলোতে ঘুরানোর দায়িক্ত আমার উপর পড়লো এক কথায় তার সহকারী বা গাইড করা হলো,কাজ টা আমার খুবই অপছন্দের কারন এই সকল বিদেশিরা প্রচণ্ড রকম কৌতুহলী হয়, যা দেখবে তা নিয়েই অসংখ্য প্রশ্ন করতে থাকবে। কি আর করা, চাকরিটা হারাতে চাইনা তাই বিনা বাক্য ব্যায়ে রাজি হয়ে গেলাম।

সবাই কে Thanks advance for your co operation বলে মিটিং শেষ করল। সবাই উঠে যাচ্ছিল এনজেলা আমাকে ইশারা করল বসতে। বসলাম-ভেতরে ভেতরে চরম বিরক্ত লাগসিলো স্বাধিন ভাবে কাজ করতে ভালোবাসতাম যদিও বেসরকারী চাকরিতে সে সুযোগ কম, আমার সেকশনে যথেষ্ট স্বাধিন ভাবে কাজ করতাম যাহোক মুখে বিরক্ত কিংবা খুশি কোন ভাবই না ফুটিয়ে বসে রইলাম। পরের দিনে আমাদের কিকি কাজ তার লিখিত সিডিউল নিয়ে মুক্তি পেলাম সেদিনের মত। আমার লাগছে বিরক্তি অথচ কলিগরা কানাঘুষা আরম্ভ করছে ভাবখানা এমন আমার আর কানাডা যাবার দিন দশেক বাকি।

শালার সারা দুনিয়ার কলিগরা কি একি রকম হয় নাকি কানাঘুষায় পটু। আমার বামদিকের কলিগ সেলিম সাহেব টিপ্পনি কাটেন ভাই কানাডা্য় নাকি ৩টার বেশী বাচ্চা নিলে সরকার ভাতা দেয়। ভাই ১টা ভিসা দিয়েন প্রথম বছর বিয়েটা করতে যা সময় লাগবো ১০ বছর পর খবর নিয়েন সরকারি ভাতার টাকায় বাড়ি গাড়ি সবই হয়ছে। কোন কথা না বলে বাইরে চলে এলাম নির্বোধের কথা শোনার চেয়ে গাড়ীর হর্নের শব্দ শুনা উত্তম মনে হলো। (চলবে)
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।