"প্রাচীরের ছিদ্রে এক নাম-গোত্রহীন, ফুটিয়াছে ছোট ফুল অতিশয় দীন। ধিক ধিক করে তারে কাননে সবাই, সূর্য উঠি বলে তারে, ভাল আছ ভাই
অনেকের মত আমিও আগে কাস্টিং পছন্দ হলে মুভি দেখতাম। কিন্তু সামুতে আসার পর রিভিউ পড়ে মুভি দেখা শুরু করেছি। কিছুদিন আগে এক মুভিখোর বন্ধুর কাছ থেকে প্রশংসা শুনে ছবিটি সংগ্রহ করে দেখে ফেললাম।
কাঞ্জি লালজি মেহতা (পরেশ রাওয়াল) একজন মূর্তি ব্যবসায়ী এবং নাস্তিক, মুম্বাইয়ের চর বাজারে তার দোকান।
তিনি বিভিন্ন মন্দিরের সামনে থেকে কমদামে মূর্তি কিনে আনেন আর সহজ সরল ধর্মভীরু লোকদের কাছে অতিরিক্ত চতুরতার সাথে তা অত্যধিক দামে বিক্রি করেন।
হঠাৎ একদিন এক ভুমিকম্পে চর বাজারের একমাত্র তার দোকানটিই ধ্বসে পরে। সে নাস্তিক বলেই স্রষ্টা তাকে এমন শাস্তি দিয়েছেন, এটাই ছিল অন্যদের মতামত। কিন্তু এতেও কাঞ্জিলালের স্রষ্টায় বিশ্বাস হয়না। তিনি ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে যান।
কিন্তু ইন্সুরেন্স কোম্পানি বলে যে, ভুমিকম্প, ঝড় বা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা “Act of God” ক্যাটাগরিতে পরে এবং এর জন্য কোম্পানি কোন ক্ষতিপূরণ দেয় না। উত্তেজিত কাঞ্জিলাল ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্টকে মারধোর করে চলে আসেন।
এইবার তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে। দোকানে চল্লিশ লাখ টাকার জিনিস ছিল যা ভুমিকম্পে নষ্ট হয়ে গেছে, বাড়িটাও বন্ধকে দেয়া। দোকানের জমি বিক্রি করে বন্ধকী থেকে বাড়িটা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জমিতে মূর্তি ভেঙ্গে পরায় সেই জমি নাকি অশুভ হয়ে গেছে তাই কেউ আর এই জমি কিনতেও প্রস্তুত নয়।
চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন কাঞ্জিলাল।
এইসময় তার চিন্তায় আসে তিনি স্রষ্টার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে কেস করবেন। কিন্তু কোন এডভোকেট তার কেস নিতে রাজী হয়না। অবশেষে তিনি খোঁজ পান একজন গরিব মুসলিম এডভোকেট হানিফ কোরেশীর (ওম পুরি)। এক নির্দোষ হিন্দু পরিবারের পক্ষে ওকালতি করায় যাকে তার নিজ ধর্মের মানুষরাই পঙ্গু করে দিয়েছিল।
কাঞ্জিলালকে হানিফ ভাই বুদ্ধি দেন, কোন এডভোকেট যদি তার কেস নিতে রাজী না হন তাহলে আইনের মতে তিনি নিজেই তার কেসের ওকালতি করতে পারবেন। কিন্তু লিগ্যাল নোটিশ কোন ঠিকানায় পাঠাবেন, তিনি তো স্রষ্টার ঠিকানা জানেন না, হানিফ ভাই এর এমন প্রশ্নে কাঞ্জিলাল বলেন, “স্রষ্টার ঠিকানা জানিনা কিন্তু স্রষ্টাকে মানুষ কোথায় খোঁজে তা তো জানি। " তিনি নোটিশ পাঠান দেশের তিনজন বড় হিন্দু পণ্ডিতকে , সিদ্ধেশ্বর মহারাজ (গোবিন্দ নামেরু), গোপী মাইয়া (পুনাম ঝাওর) এবং গ্রুপের প্রধান লিলাধর স্বামীকে (মিঠুন চক্রবর্তী)।
শুরু হয় স্রষ্টার বিরুদ্ধে কাঞ্জিলালের যুদ্ধ। কিন্তু প্রিলিমিনারি হিয়ারিং এর দিনেই এমন মনে হচ্ছিল যে কাঞ্জিলালের কেস হয়ত কোর্ট খারিজ করে দেবে, কারন ক্ষতিগ্রস্থ কাঞ্জিলালকে তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? স্রষ্টা তো ক্ষতিপূরণ দিতে আসবেন না।
এই পয়েন্ট ধরেই প্রতিপক্ষ উকিল সারদেশাই (মহেশ মাঞ্জরেকার) জুরিকে অনুরোধ করেন কেস ডিসমিস করে দিতে। কিন্তু কাঞ্জিলাল যুক্তি দেন, এইসব হিন্দু পণ্ডিতেরা যেহেতু স্রষ্টার কথা সবাইকে বলেন সেহেতু স্রষ্টা কর্তৃক সংঘটিত ক্ষতির জন্যও তারা জবাবদিহি করতে বাধ্য। জুরি কাঞ্জিলালের যুক্তি মেনে নিয়ে কেসটি গ্রহন করেন।
কোর্ট থেকে বের হয়েই তিনি ঐসব পণ্ডিতদের চ্যালাদের খপ্পরে পরেন। এহেন পরিস্থিতিতে তাকে মোটরসাইকেলে এসে উদ্ধার করেন কৃষ্ণ বাসুদেব ইয়াদাভ (অক্ষয় কুমার)।
যিনি পরে স্রষ্টার দূত হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন।
ধর্মভীরু সাধারন মানুষের মত কাঞ্জিলালের স্ত্রীও তাকে ঘৃণা করতে থাকেন এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান।
একাকীত্বের বোঝা নিয়ে কাঞ্জিলাল যখন আরও ভেঙ্গে পরেছেন এমন সময় হাজির হন কৃষ্ণ বাসুদেব ইয়াদাভ। কাঞ্জিলাল যার কাছে বাড়ি বন্ধক রেখেছিল, তার কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নিয়েছেন তিনি। কাঞ্জিলালকে তিনি থাকতে দিতে রাজী হন কাঞ্জিলালেরই বাড়িতে।
এদিকে হানিফ ভাই ও কাঞ্জিলালের দারস্থ হয় “Act of God” এর শিকার আরও ৩০ টি পরিবার। কাঞ্জিলাল এবার সব ধর্মের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠান লিগ্যাল নোটিশ। এবার মামলা সাড়ে চারশ কোটি টাকার।
অন্যদিকে হিন্দু পণ্ডিতেরা কাঞ্জিলালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। তা দেখে কৃষ্ণ কাঞ্জিলালকে বুদ্ধি দেন তাকেও জনগনের কাছে যেতে হবে।
এইসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুখোশ খুলে দিতে হবে জনগনের সামনে। কাঞ্জিলাল একটি টিভি অনুষ্ঠানে যান এবং চমৎকার সব যুক্তির মাধ্যমে জনগনকে বুঝিয়ে দেন এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের ভণ্ডামি। একধাক্কায় বেড়ে যায় কাঞ্জিলালের জনসমর্থন।
কিন্তু জনসমর্থন দিয়ে নেতা হওয়া যায়, কেস জেতা যায় না। কেস জিততে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত প্রমাণ।
বিপক্ষের উকিল স্রষ্টাই যে ভূমিকম্পের জন্য দায়ী, যার ফলে কাঞ্জিলালের দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার লিখিত প্রমাণ কোর্টে পেশ করতে বলেন। জুরিও একই মত প্রকাশ করেন এবং কাঞ্জিলালকে একমাস সময় দেন লিখিত প্রমাণ পেশ করার জন্য............................
কাঞ্জিলাল কি পারবে স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য স্রষ্টার দায়ভারের প্রমাণ লিখিত আকারে পেশ করতে? পারবে কি ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধর্ম নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে? নাকি পরাজয় ঘটবে কাঞ্জিলাল সহ ৩০ টি পরিবারের যারা “Act of God” এর শিকার।
উত্তরগুলো পেতে হলে দেরী করবেন না। এই নিন ডাউনলোড লিঙ্ক।
ছবিটিতে চমৎকার সব হাস্যকর দৃশ্য রয়েছে যা লেখার ভাষায় প্রকাশ করার মত লেখনিশক্তি আমার নেই ।
ছবিটির IMDB রেটিং 8.1, আর আমার রেটিং 9।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।