আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে
"জিন সাম্রাজ্যবাদ” শব্দটা শুনলে অনেকে খটমট বিষয় কিংবা ভুতপ্রেত স্থানীয় কোন বস্তু ভাবতে পারেন। তবে বিষয়টা অত্যন্ত চমকপ্রদ তৎসঙ্গে ভয়াবহ। প্রত্যেকটা প্রাণের গুনাবলী, ধর্ম নির্ধারিত হয় তার জিন দ্বারা। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটার সাথে আমরা কমবেশী পরিচিত, সহজে বললে একই প্রজাতির প্রানের জিনকে অদল বদল করার যে বিজ্ঞান তাই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। ধরা যাক, কোন প্রজাতির ধান খুব ভাল পতঙ্গ নিরোধী এবং আরেক প্রজাতির ধান খরার সময় টিকে থাকার ক্ষমতা ভাল।
তো এখন কি করা সম্ভব? দুই প্রজাতির ধানের জিনের সমন্বয়ে এমন একটা জাত তৈরী করা সম্ভব যা উপরোক্ত দুইটা ক্ষমতাই একসাথে ধারণ করে। শুনতে খুব ভালো লাগছে...
গত শতাব্দীর ৬০ এর দশক থেকে সবুজ বিপ্লবের স্লোগান ওঠে দুনিয়াজুড়ে,উচ্চফলনশীল(High Yielding variety) জাতের তোড়ে হারিয়ে যেতে শুরু করে দেশীয় জাতের ফসল। কৃষকের হাতছাড়া হতে শুরু করে দেশী জাতের বীজ। কিন্তু হাতছাড়া হয়না বহুজাতিকের কাছ থেকে।
৭০ এর দশকে এই বহুজাতিকদের উদ্যোগে গঠিত হয় IBPGR. জিন সম্পদ কে সংরক্ষণ করার কেন্দ্র।
ভারত কিংবা দক্ষিন এশিয়ার হারিয়ে যাওয়া অনেক ফসলের জিন সংরক্ষিত আছে সেখানে,স্বত্ব বহুজাতিকের।
উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি ব্যাবহার করে আমাদের দেশের হারিয়ে যাওয়া ধানগুলোর আশ্চর্য গুণাবলী প্রতিস্থাপিত করে বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে বহুজাতিক বীজ কোম্পানিগুলো।
একটা ফসলের প্রজাতিকে কে প্রত্যেক পদে পদে নিয়ন্ত্রন করার দানবীয় ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। আর এই বিজ্ঞানকে মুনাফা অর্জনের বিপুল হাতিয়ারে পরিনত করেছে বহুজাতিক বীজ কোম্পানি। বহুজাতিক চাইলে আপনার উচ্চফলনশীল ধানে ফুল আসবে কিন্তু দানা আর আসবেনা, আসবে যখন আপনি তাদের প্রস্তাবিত সার দিবেন।
আপনি বীজ সংগ্রহ করবেন কিন্তু বীজ থেকে ধানগাছ হবে না,হবে যদি আপনি তাদের প্রস্তাবিত রাসায়নিক দেন (টার্মিনেটর বীজ) ... পোকার আক্রমনে এবার ফসল শেষ, আপনার হারিয়ে যাওয়া ধানের পোকানিরোধী জিন প্রতিস্থাপন করে পুনরায় নতুন বীজ কিনতে বাধ্য করা হবে... চমকপ্রদ এবং ভয়ংকর।
দেশী জাতগুলো গড়ে উঠেছিল হাজার বছর ধরে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে। আর উচ্চফলনশীলগুলো প্রকৃতির সাথে সেই সখ্যতা না থাকায় প্রায়শই নতুন নতুন কীট আর রোগে আক্রান্ত হয়। এদের পানির চাহিদা মেটাতে গিয়ে অবাধে ডিপ টিউবওয়েল বসাতে হয়েছে যত্রতত্র। যা আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভয়ংকর রকম ঝুকির মধ্যে ফেলছে।
প্রচুর রাসায়নিক সারের ব্যাবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে আর অনুখাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। অনুখাদ্য ও আপনার বহুজাতিকের কাছ থেকে কিনতে হবে। আগে জলমগ্ন ধান ক্ষেতে মাছ পাওয়া যেত সেই মাছেরা রাসায়নিকের চোটে বহু আগেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
ভবিষ্যতের বহু ক্ষতির মাধ্যমে স্বল্পকালীন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি আমাদের জন্য ভয়াবহ ফল ডেকে আনছে এটা সুনিশ্চিত। উৎপাদনশীলতার পশ্চাদমুখী বিকাশ হতে পারে না ,আমাদের দেশীয় জাত নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করলে আমরা বহুগুণে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারতাম প্রাণ প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করেই( সোনি ভাদই জাতের ধান) অল্প কথায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সত্যিই কঠিন।
আগ্রহী মাত্রেই এ বিষয়ে অনেক আটির্কেল খুজে পাবেন।
অতএব এটা আমাদের দাবি হওয়া উচিৎ যে,অবিলম্বে বহুজাতিকের হাতে কব্জা করা জিন সম্পদকে আমাদের দেশের কৃষকের স্বত্তাধিকারে নিয়ে আসতে হবে এবং বহুজাতিক বীজ কোম্পানিগুলোকে বিনা শর্তে দেশ থেকে বহিস্কার করতে হবে। লাতিন আমেরিকাতে বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টোর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা কৃষক বিদ্রোহ আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।