এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম আমার। নারীর টানেই বাবা ধরে রেখেছিলেন কৃষি পেশা। খুব সচ্ছলতা না থাকলেও অনাহারে থাকতে হতনা,আবার বিলাসীতা কি তাও বুঝতাম না। কয়েক টুকরো চাষযোগ্য উর্বর জমিই ছিল বাবার একমাত্র সম্বল। এসব জমির বুক চিরে ফলানো ফসল দিয়েই চলত আমাদের সংসার।
মাঝে মধ্যে অভাবের কষাঘাতে বাবাকে অনিক মলিন হতে দেখেছি। বাবার ওই মলিন চেহারা দেখে ভাবতাম আমি একদিন বড় ব্যবসায়ী হব,অনেক টাকা কামাব তখন আর আমাদের অভাব থাকবে না। পরক্ষনে আবার ভাবতাম আমাদের তো টাকা নাই,ব্যবসায়ী হতে হলে অনেক টাকা থাকতে হয়। এরকম অনেক চিন্তায় মাথায় ঘুরপাক খায় কিন্ত অভাব পিছু ছাড়ে না। অবশেষে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি নেয়।
ভাবলাম এবার অন্তত্ব মাসে দু-চার হাজার টাকা বাবা মা'র হাতে তুলে দিতে পারব। কিন্তু বিধির বাম মালিক যে বেতন দেয তাতে ঢাকা শহরে থেকে খেলে চলা অনেক কষ্টের। এভাবেই চলছে দিন,হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন আসে মা অসুস্থ্য কোন কিছু খেতে পারছে না। যা খায় তাই বমি হয়ে যায়,দেরি না করে বাড়ি ফিরলাম মাকে ডাক্তার দেখালাম পাকস্থলীতে টিউমার ধরা পড়ল। ডাক্তারের আশংঙ্কা ক্যান্সার।
যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে নিতে হবে। তাই খুব দ্রুত ঢাকাতে ডাক্তার দেখালাম,অপারেশন করাতে হবে,অপারেশন করাতে অনেক টাকা লাগবে মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ল। অবশেষে গ্রামে চাষের তিন বিঘা জমি বন্ধক রেখে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে মায়ের সফল অস্ত্রোপচার হয়,কিন্তু ক্যান্সার পিছু ছাড়ল না। হাসপাতালে যেমন মায়ের দেহটাকে কেটে রক্তাক্ত করল তেমনি দূর্নীতির কষাঘাতে আমাকে করল ক্ষতবিক্ষত।
তারপরও মা শংঙ্কামুক্ত নয় আবার থেরাপি দিতে হবে। আরও প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দরকার। টাকার সংকুলান করতে না পেরে ঐশ্বরিক শক্তির ভরসায় মাকে বাড়িতে নেয়। এখন মা মোটামুটি সুস্থ সব খাবার খেতে পারে,পরিবারে কিছুটা সস্তি ফিরে আসে। এর ঠিক দুমাস পরে বাবার গলায় একটা টিউমার দেখা দেয়,ডাক্তার অপারেশন করতে বলে,ডাক্তারের পরামর্শে কম খরচের আশায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই।
অপারেশনের পর পরীক্ষায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। দীর্ঘ ছয়মাস মরনব্যাধি ক্যান্সারের সাথে মরনপন লড়াই করে কোন এক অলস দুপুরে বাবা চলে যান না ফেরার দেশে। তার তিন মাসের মাথায় মা ও চলে যায় সব সম্পর্ক ছিন্ন করে পরপারে। পরিসমাপ্তি ঘটে একটি কৃষক পরিবারের। - See more at: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।