নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল আজ সোমবার ভোর ছয়টা থেকে শুরু হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে টানা এই হরতাল পালন করবে বিরোধীদলীয় এই জোট।
এদিকে হরতালের আগের দিন গতকাল রোববার রাজধানীতে গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১০টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীতে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যদের নামানো হয়।
তাঁরা বিভিন্ন সড়কে টহল দেন।
পুলিশের মতিঝিল থানার টহল পরিদর্শক শেখ আবুল বাশার বলেন, বেলা সোয়া দুইটার দিকে রাজউক ভবনের বিপরীত পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে কে বা কারা আগুন দেয়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে মতিঝিলের টিঅ্যান্ডটি কলোনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে আগুন ধরিয়ে দেন কয়েকজন যুবক। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। পুলিশের ওই কর্মকর্তার ধারণা, আজকের হরতালের সমর্থকেরা বাসে আগুন দিয়েছে।
পল্টন থানার পরিদর্শক মো. আলমগীর জানান, বেলা একটার দিকে নয়াপল্টনে হোটেল অরচার্ড প্লাজার সামনে কয়েকজন যুবক একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সায়েদাবাদের ধলপুর এলাকায় হরতালের সমর্থনে ছাত্রশিবির একটি মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা এ সময় বিআরটিসির বাসসহ কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বেলা তিনটার দিকে গুলিস্তানে মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের নিচে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ জানায়, বাসটি মাওয়া থেকে গুলিস্তানে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা যখন নামছিলেন, তখন যাত্রীবেশে কেউ বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশপাশের লোকজন বাসটির আগুন নেভান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই কার্যালয়ের সামনে একটি স্টাফ বাসে ও দুইটায় মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের সামনে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তিতুমীর কলেজের সামনে ওই সময় পরপর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে।
বেলা তিনটার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, বায়তুল মোকাররমের সামনে একটি স্টাফ বাসে ও বিকেলে কাঁটাবন এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে আসা কর্মীবাহী একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
টঙ্গীতে সংঘর্ষ: প্রথম আলোর টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেল চারটায় টঙ্গী থানা বিএনপির সভাপতি ও গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শাহানশাহ আলমের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে ও তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে।
পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে ও শটগানের গুলি ছুড়ে বিএনপির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে।
এতে শাহানশাহ আলম ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আজিজসহ বিএনপির ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন।
প্রায় একই সময়ে টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় জামায়াত-শিবির হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। তারা মিছিল থেকে ইটের টুকরা ছুড়ে কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা চলে যায়।
হরতালের আওতামুক্ত: গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্বিতীয় দফায় দেশব্যাপী ৬০ ঘণ্টার এই হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, গণমাধ্যমের জন্য ব্যবহূত যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেডসহ জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত গাড়ি ও দেশে ফেরা হাজিদের বহনকারী গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
এর আগে গত ২৭, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিরোধী দল ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আগামী সপ্তাহে আবারও হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।