বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জেলায় ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকালের চেয়ে আজ এসব ঘটনা বেশি। আহত হয়েছেন দুই ক্যামেরাপারসন।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বগুড়া: সকাল আটটার দিকে বগুড়া রেলস্টেশনের দিকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল নিয়ে যান ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলকারীরা বগুড়া রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা লালমনিরহাটগামী পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালান।
পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্টেশনমাস্টার বেনজুরুল ইসলাম জানান, ট্রেনটি ছাড়ার আগমুহূর্তে হরতাল-সমর্থকেরা দু-তিনটি ককটেল ও ইটপাটকেল ছুড়ে রেললাইনে অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। কিন্তু পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ট্রেনটি ছেড়ে যেতে সমর্থ হয়।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম বলেন, হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৪০টি রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের দুটি শেল ছোড়ে পুলিশ। তারাও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়।
পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল ও ইটপাটকেল ছোড়ে হরতালকারীরা। পরে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম: সকাল পৌনে নয়টার দিকে স্টেশন রোড এলাকায় হরতাল-সমর্থকদের একটি মিছিল যাচ্ছিল। নেতৃত্বে ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। মিছিলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল র্যাব ও পুলিশের গাড়ি।
একপর্যায়ে মিছিল থেকে র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে একটি ককটেল ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত দুই সাংবাদিক আহত হন। তাঁরা হলেন চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপারসন শামসুল আলম ও দেশ টিভির ক্যামেরাপারসন মো. হাসান। শামসুলের পায়ে ও হাসানের হাতে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানাধীন আমবাগান ঝাউতলা এলাকার একটি ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে দুই শিশু আহত হয়েছে। ছেলে শিশুর নাম লাল মিয়া (৯)। মেয়ে শিশুর নাম জানা যায়নি। দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুল ইসলাম ভূইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজগঞ্জ: ভোর ছয়টার দিকে শহরের বাহিরগোলা রোডে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় তাঁরা লাঠি মিছিল করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিলটি। এর কিছুক্ষণ পর সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের এস এস রোডে বিএনপির একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে দুটি এবং শহরের সিরাজী ও এস এস রোডের সংযোগস্থলে দুটিসহ চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সোয়া সাতটার দিকে শহরের নিউ ঢাকা রোডের রেলগেটে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় চামড়াপট্টি থেকে বিএনপির একজন কর্মীক আটক করে পুলিশ।
আটটার দিকে শহরের এস বি ফজলুল হক রোড থেকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন বিএনপির কর্মীরা। মিছিলটি বড়বাজার টুকু ব্রিজ এলাকায় পৌঁছার পর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত দফায় দফায় মিছিল করেছে।
সকালে পৌরসদর এলাকায় মিছিল চলাকালে সীতাকুণ্ড থানার সামনে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এর আগে গতকাল সোমবার গভীররাতে পৌর সদরের দক্ষিণ বাইপাস, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা এলাকায় অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটাররা।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, কয়েকজন যুবক রাতের অন্ধকারে ডাকাতির চেষ্টা করলে পুলিশ দুটি গুলি ছোড়ে।
মেহেরপুর: জেলার রাজনগর, কাথুলী ও বন্দর সড়কে আগুন জ্বেলে, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় অন্তত ১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ভোরে হরতালের সমর্থনে রাজনগর গ্রামে জামায়াত-সমর্থিত নারীরা একটি লাঠি মিছিল বের করেন। তাঁরা মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল জলিল জানান, হরতালকারীরা সীমিত সময়ের জন্য অবরোধ করেছিল। এ সময় কিছু পটকা ফাটায় তারা। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ কোনো ভূমিকায় যায়নি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।