টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে প্রথম হারিয়েছে কিন্তু টি-টোয়েন্টিতেই!
ভাবছেন, সেটা আবার কী করে সম্ভব? তথ্য দুটিই ঠিক। বাংলাদেশ সত্যিই নিউজিল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছিল। তবে সেটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল না। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বাংলাদেশ সিডর আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে।
মূল উদ্দেশ্যটা সফলই হয়েছিল। ম্যাচ থেকে অর্থ ভালোই পাওয়া গিয়েছিল, ম্যাচের আগে আইসিসিও সিডর তহবিলে দিয়েছিল আড়াই লাখ ডলার। সঙ্গে বাড়তি পাওনা, স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের দলকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের দল।
সে-ই প্রথম এবং টি-টোয়েন্টিতে শেষ। এরপর ওয়ানডেতে আটবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট ড্র করেছে তিনটি, জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েছে একবার। প্রীতি ম্যাচ বলেই হয়তো হ্যামিল্টনের ওই ম্যাচটি ছিল ব্যতিক্রম। কিন্তু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছে দুটি, দুবারই স্রেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডকে এখানে প্রতীকী বলা যায় খুব সহজেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পারফরম্যান্সটাই যে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আসল রূপ! এই সিরিজের টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্সে আজও বাংলাদেশের জয়কে সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল ধরে নিচ্ছেন অনেকে।
খেলাধুলায় বহুল ব্যবহূত ‘মোমেন্টাম’ তত্ত্ব মানলে এই ম্যাচেও ফেবারিট বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচটা যে টি-টোয়েন্টি আর টি-টোয়েন্টি এলেই কেমন সব গুলিয়ে ফেলে বাংলাদেশ!
মাঠের পারফরম্যান্স যেমন, রেকর্ডেও সেটার প্রমাণ। এখনো পর্যন্ত ৩০ ম্যাচে জয় মাত্র ৯টি, হার ২১টি। এই সময়ে ১৪০ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ৫৯টি। এই পরিসংখ্যানের চেয়েও বড় কথা, গত দুই বছরে ওয়ানডেতে দারুণ ধারাবাহিক বাংলাদেশ।
কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে বদলানোর লক্ষণই নেই। অথচ টি-টোয়েন্টির যা ধরন আর যে চরিত্র, তাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সফল হওয়ার কথা এই সংস্করণেই। ক্রিকেট বিশ্বের শীর্ষ দলগুলোকে বধ করার সবচেয়ে বড় মৃগয়া তো এটাই! ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা সবচেয়ে প্রবল হয়ে ধরা দেয় এখানেই। বাংলাদেশের শুরুটা আশা-জাগানিয়াই ছিল। ২০০৬ সালে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়, দ্বিতীয় ম্যাচে হারিয়েছিল কেনিয়াকে।
তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল দারুণ লড়াই করে। চতুর্থ ম্যাচে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল দাপটে। কিন্তু এর পরই পথ হারানো। জিম্বাবুয়েকে দুবার হারানো ছাড়া টেস্ট দলের বিপক্ষে জয় এসেছে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। সেটিও দুবার।
সর্বমোট ৯ জয়ের বাকি পাঁচটির তিনটি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, বাকি দুটিতে প্রতিপক্ষ ছিল হল্যান্ড ও কেনিয়া।
কেন পারছে না, কারণ অনুসন্ধান চলে আসছে বাংলাদেশের সব টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগেই। টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট নেই, নেই পেশিবহুল ব্যাটসম্যান কিংবা ব্যাটিং-ঝড় বইয়ে দেওয়ার মতো কেউ, উদ্ভাবনী শট খেলার দক্ষতা কম, স্লগ ওভার বোলিংয়ে সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। সমস্যা জানা আছে, টোটকা দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর সমাধান মেলেনি এখনো।
তবে বরাবরের মতোই আশার ভেলা ভাসিয়েছেন অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টিতে বদলে যাওয়ার মতো রাতারাতি কিছু হয়ে যায়নি। তার পরও আশার কারণটা অনুমান করাই যায়—এই সিরিজে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। মুশফিক তাই বললেন, ‘টি-টোয়েন্টিতেই আমাদের সবচেয়ে ভালো খেলার কথা। কিন্তু অন্যরা মানিয়ে নিলেও আমরা এখনো পারছি না।
তবে এই সিরিজে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। কালকের (আজ) ম্যাচের জন্য যে আত্মবিশ্বাস, স্কিল ও মানসিকতা দরকার, সবই আছে আমাদের। ’
কণ্ঠে সাহসী উচ্চারণ, তবে মাঠের খেলার হিসাব বরাবরই ভিন্ন। টেস্টের আশা-জাগানিয়া আর ওয়ানডের আরেকটি স্মরণীয় পারফরম্যান্সের পরও তাই বাংলাদেশের জন্য আজকের টি-টোয়েন্টির আরেক নাম—পরীক্ষা!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।