ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিকদের নিয়েই নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান রেখেই ২৫ নভেম্বরের মধ্যে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার চিন্তা রয়েছে। ২০ থেকে ২৫ সদস্যের এই মন্ত্রিসভার অধিকাংশই বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে সরকারি দলের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ফিরবেন ১৮ নভেম্বর।
তাই প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে ফেরার পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। ১১ নভেম্বর বর্তমান মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠক হবে।
এদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করবেন। আর নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে বা চতুর্থ সপ্তাহের শুরুতে সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রীরা সবাই পদত্যাগ করলে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আগ পর্যন্ত দেশ কীভাবে চলবে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, পদত্যাগপত্র জমা দিলেও রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ না করা পর্যন্ত মন্ত্রীরা স্বপদে বহাল থাকবেন এবং তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেদিন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে, সেদিনই মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। এর পরদিনই নতুন নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা হবে। ’ আর নির্বাচন কমিশন নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ভোট গ্রহণ ও আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ডের জন্য নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ৫৫ দিন সময় দরকার। জানুয়ারির ৫ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ ধরে কমিশন কাজ করছে।
এর মধ্যে সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ আরও সপ্তাহ খানেক বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা ও একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ‘সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা’ সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তা অনেকটা বর্তমান মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন করার মতো বিষয়। পুনর্গঠনের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার আকার ছোট করা হবে। এতে নতুন কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত ও পুরোনো অনেকে বাদ যাবেন। প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা বহাল থাকবেন।
বাকি মন্ত্রীদের সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। যাঁরা নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায়ও থাকবেন, তাঁদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, এই নিয়ে কৌতূহল রয়েছে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যেও। নিজে মন্ত্রী থাকছেন কি না, তা জানার জন্য অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তবে একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা অপেক্ষাকৃত ভালো ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে গঠন করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ জন্য রাজনীতিক হিসেবে ভালো পরিচিতি আছে এবং মন্ত্রীদের মধ্যে যাঁদের সুনাম আছে, তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন মহাজোটের দুই শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু থাকছেন—এটা প্রায় নিশ্চিত।
জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের যে রূপরেখা দিয়েছেন সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক থাকবে। ’
আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এমন দুজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভায় রাখতে আগ্রহী শেখ হাসিনা। তবে দুজনই এতে আসতে সম্মত কি না, এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ চাইলে তাঁর ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরের সঙ্গে তাঁর দল থেকে আরও এক-দুজনকে এই মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।