গ্রামের সবুজ কুঞ্জ, আঁকাবাঁকা নদী, মোরগের ডাক, পাল তোলা নৌকা, ভাটিয়ালি গানের সুর পেছনে ফেলে চলে আসি শহরে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হলাম চট্টগ্রাম কলেজে। এ যেন শহরের বুকে অন্য এক সবুজ গাঁও। গ্রামে যেমন গাছগাছালি, পাখপাখালি চোখে পড়ে এখানেও তাই। তবে পার্থক্য এতটুকু যে এখানে পুকুর নেই।
নেই নদীও। নেই বর্ষাকালো মাছ ধরার সুযোগ। তবুও অন্যান্য কলেজ থেকে চট্টগ্রাম কলেজের কথা আলাদা করে বলতে হবেই। কেননা এখানে চারিদিকে কেবলই সবুজের ছড়াছড়ি। কলেজ আঙিনায় রাস্তার ধারে সারিসারি দেবদারু গাছ।
ভবণের পিছনে শতবর্ষী মেহগনি গাছ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। সেখানে নানান জাতের পাখি বাসা বেঁধেছে। কটেজের আম গাছে আম ধরে। কাঁঠাল গাছ ঢেকে যায় কাঁঠালে কাঁঠালে।
ভর্তি হবার পর পরই হোস্টেল আমার সিট হয়নি।
সিট হয়েছে প্রায় এক বছর পর। তাও অনেক চেষ্টা তদবির করে। যাক যেভাবেই উঠিনা কেন সেটা বড় কথা নয় অবশেষে যে হোস্টেলে উঠতে পেরেছি সেটাই বড় কথা। সর্বোপরি আমার আল্লাহ পাকের শুকরিয়া। এখানে এসে আমি এক নতুন জগতের সাথে পরিচিত হলাম।
আমি থাকতাম শেরেবাংলা হোস্টেলে। হোস্টেলের ভিন্ন পরিবেশ আমার ভালই লাগল। ভালই কাটছিল আমার দিনগুলো। আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে প্রায় প্রতি রাতে ভাত খাবার পর আমরা চা খেতে যেতাম চকবাজারের সাইমুম হোটেলে। চা খাওয়ার সঙ্গী হত অনেকেই যেমন মহসিন, রিয়াদ ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই, শরীফ।
মহসিন এখন ইতালিতে থাকে। যাওয়ার পর আর যোগাযোগ হয়নি। রিয়াদ ভাইয়ের দেশের বাড়ি সন্দ্বীপ। এখন কক্সবাজার চাকরি করছেন। তিনি আমার দেখা একজন ভাল মানুষ।
জাহাঙ্গীরের দেশের বাড়ি বান্দরবান। এখন চট্টগ্রামেই থাকে। শরীফের দেশের বাড়ি ফেনী। সে এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়ছে। সে আমার প্রিয় মানুষদের একজন।
আমি তাকে আপন ছোট ভাইয়ের মত জ্ঞান করি। কতদিন যে শরীফের রুমে গিয়ে আড্ডা দিয়েছি। গল্প করেছি তার হিসেব নেই। শরীফ খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারত। সত্যিই সেই দিনগুলো ছিল স্বপ্নালু।
এখন ভাবি যা গেছে তা গেছেই আর বুঝি ফিরে পাবো না। এছাড়া কুতুবদিয়ার ইফতেখার। ফেনীর ওসমান আমার চা খাবার সঙ্গী হত মাঝে মাঝে। ওসমান এখন ঢাকায় থাকে।
সাইফুল ভাইয়ের কথা একটু স্পশালই বলতে হয়।
তিনি আমাকে সত্যিই খুব ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন আমার আপন বড় ভাইয়ের মতন। উনার দেশের বাড়ি ছিল কক্সবাজারের চকরিয়ায়। এখন বান্দরবান সরকারি চাকরি করছেন। বহদ্দারহাট থাকতে আামর চা খাওয়ার সঙ্গী ছিল জাহেদুল ইসলাম।
সে এখন নৌ বাহিনীতে কর্মরত আছে। সে আমার একজন প্রিয় ছোট ভাই। তার দেশের বাড়ি ফটিকছড়ি। যেখানে আমার নানার বাড়ি।
এসব ব্যক্তির সাথে ঘুরে ফিরে একটি জায়গার স্মৃতিই জড়িয়ে আছে তা হল সাইমুম হোটেল।
আমি এখন ঢাকায় থাকি। এখন চা খাওয়ার সঙ্গী পরিবর্তন হয়েছে। এ নিয়ে আরেকদিন লিখব ইনশাআল্লাহ। এখন যখন চা খেতে কোনো হোটেলে কিংবা টি স্টলে ঢুকি তখন বারবার কেবলই সাইমুম হোটেলের ছবি ভেসে উঠে। আমার সুখের মুহূর্তের সোনালি দিনের রঙিণ স্মৃতিমাখা প্রিয় সাইমুম হোটেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।