আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়ে রঙিন হলো না শেষটা

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে লাল-সবুজ মিছিল। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কেউ শূন্য হাতেই শূন্যে উদ্বাহু। সেই মিছিলে দুজনের হাতে একটু আগে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নেওয়া দুটি ট্রফি। একটি ওয়ানডে সিরিজের, আরেকটি টি-টোয়েন্টি জয়ের। গ্যালারিভর্তি দর্শক দুই হাত ভরে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছে মিছিলটার দিকে।

শেরেবাংলা স্টেডিয়াম মুখরিত ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে।

শেষ পর্যন্ত দৃশ্যটা শুধু কল্পনাই হয়ে থাকল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছেন স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের হাতে ট্রফিও তুলে দিয়েছেন, কিন্তু দুটি নয়, একটি। ওয়ানডে সিরিজের বকেয়া ট্রফিটা কাল মুশফিকের দলের হাতে উঠলেও একমাত্র টি-টোয়েন্টি জিতে আরেকটা পেলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কাইল মিলস।

দুই ট্রফি দূরে থাক, এক ট্রফি নিয়েও তাই আর বিজয় মিছিল করেনি লাল-সবুজ দল। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পুরোনো, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৫ রানে হারের তেতো স্বাদটাই যে বেশি তাজা!

তবে এই ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেও কি জেতেনি! বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দুই শতাধিক রান তাড়া করে জেতার ঘটনাই আছে মাত্র চারটি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুধু টেস্ট সিরিজ ড্র আর ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসে ভর করেই বাংলাদেশ দল ২০৪ রান টপকে যাবে, এটা ভাবা তাই বাড়াবাড়ি। তার চেয়ে ২০৪ রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ যে টি-টোয়েন্টিতে কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান (১৮৯) করে ফেলল, জয়ের সম্ভাবনা ধরে রাখল প্রায় শেষ পর্যন্ত—এসবই বা কম কী! আর এমন তো না যে ক্রিকেটে জেতার জন্য খেলে শুধু বাংলাদেশই। নিউজিল্যান্ড দলও তো একই লক্ষ্য নিয়েই খেলে।

বাংলাদেশ সফর থেকে একটা জয় নিয়ে দেশে ফেরার পূর্ণ অধিকার আছে তাদেরও।

টি-টোয়েন্টিতে রানের পাহাড় টপকানোর চ্যালেঞ্জ নিলে শুরুটা হতে পারে দুই রকম। হয় ওপেনারদের তাণ্ডব শুরুতেই চাপে ফেলে দেবে প্রতিপক্ষকে; অথবা তাণ্ডব চালাতে গিয়ে নিজেদেরই ভেঙে পড়তে হবে। বাংলাদেশের শুরুর পরিণতিটা দ্বিতীয় উদাহরণটা অনুসরণ করল। ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই জয়ের প্রত্যাশা ঢেকে গেল হতাশার চাদরে।

কিন্তু অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এত সহজে হার মানতে চাইলেন না। নাঈম ইসলামের সঙ্গে তাঁর চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩.২ ওভারে এল ৪৩। নাসির হোসেনের সঙ্গে পরের জুটিতে ৬ ওভারে ৫৪ রান জয়ের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখল ভালোভাবেই। সপ্তম উইকেট জুটিতে সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ-সোহাগ গাজীর আরও ৫৭ রান শেষ ওভারগুলোতেও নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে অস্বস্তিতে। শেষ ওভারে ২২ রান করে বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে না পারলেও পরাজয়টা হয়েছে মেনে নেওয়ার মতো।

যদিও মুশফিকুর রহিম তা মেনে নেওয়ার মানুষ নন। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে অলআউট খেলা কঠিন। খেলা ও পাওয়ার হিটিংয়ে আমাদের আরও পরিণত হতে হবে। শেষ দিকে সেট ব্যাটসম্যানদের কেউ থাকলে হয়তো অন্যরকম কিছু হতে পারত। ’


বাংলাদেশ অধিনায়কের অতৃপ্তি আছে বোলিং নিয়েও।

আগের দিন বলেছিলেন, এই উইকেটে ১৫০-১৬০ রান জয়ের জন্য যথেষ্ট। কাল ম্যাচ শেষে সেটাকে আরেকটু বাড়িয়ে বললেন, নিউজিল্যান্ডকে ১৮০-১৮৫ রানে বেঁধে ফেলা উচিত ছিল। সেটা হয়নি অ্যান্টন ডেভচিচ-কলিন মানরোর তাণ্ডুবে ব্যাটিংয়ের কারণে। রাদারফোর্ডের সঙ্গে ৭.১ ওভারেই ৭৩ রানের ওপেনিং জুটিটি বলতে গেলে ডেভচিচের একক নৈপূন্যভাস্বর। আর মানরো তো মাত্র ২৬ বলে ফিফটি করার পর শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংসই খেললেন।

‘যদি’ ‘কিন্তু’ তো থাকবেই। মাশরাফির করা ম্যাচের প্রথম ওভারেই শর্ট ফাইন লেগে ফিল্ডার আল আমিন ডেভচিচের ক্যাচটা নিতে পারলে কী হতো, এই আলোচনা করলে করতেও পারেন।

টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি—তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই কাগজ-কলমে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। এই সিরিজে কাগজ-কলমের হিসাব আগেই ভুল প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। হ্যাঁ, শেষ দৃশ্যটাকে হয়তো বিজয়ের রঙে রাঙানো যায়নি, কিন্তু লড়াই করে হারার পরও তা নিয়ে অধিনায়কের ঘোর অতৃপ্তি জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে সবচেয়ে বড় ‘জয়’-এর গল্পটাও।


সেখানে ‘লড়াই করে হারা’ নিয়ে কাব্য করার দিন শেষ!

 

নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ২০৪/৫
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৯/৯
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৫ রানে জয়ী

 

 

 

 

 

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।