ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় রয়েছে ৬টি জালিয়াত চক্র। কোটি টাকার মিশনে নেমেছে তারা। ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরের এ চক্রগুলো মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভর্তিচ্ছুদের উত্তীর্ণ করে দেয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে বলেও প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। চক্রে জড়িত রয়েছেন ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীরা।
রয়েছে কয়েকটি কোচিং সেন্টারও। আগামীকাল (শুক্রবার) মানবিক শাখার ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, বরাবরের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সক্রিয় রয়েছে অনেকগুলো জালিয়াত চক্র। গত ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাতেও সক্রিয় ছিল চক্রগুলো। কর্তৃপক্ষ ওই চত্রগুলোর দুই একজনকে আটক করতে পারলেও মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার সম্পূর্ণ বাইরে।
ফলে অপরাধ করেও পার যেয়ে যাচ্ছে এ চক্রগুলো। মেধাবীদের বিপরীতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে মেধাশূন্য জালিতাকারীরা। অন্যদিকে চক্রগুলোর শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হওয়ায় তাদের শক্তি সম্পর্কেও আন্দাজ করতে পারছে না প্রশাসন। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী বলয়ের বাইরেও সন্ত্রাসী জগতে রয়েছে এই চক্রের আনাগোনা। ফলে বিভিন্ন সময় তাদেরকে ধরা হলেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে প্রশাসন।
গত বছরও জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আটককৃত সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এজন্য প্রচলিত আইনকে দূষছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আমজাদ আলী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আর এ ভয়ঙ্কর অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করায় অপরাধ ক্রমান্বয়ে অনেক বেশি বাড়ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় ৬টি জালিয়াত চক্রের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাও জড়িত রয়েছেন।
এর বাইরেও রয়েছে এ চক্রগুলোর বিশাল সিন্ডিকেট। রয়েছে রাজধানীর কয়েকটি কোচিং সেন্টার। বিগত সময়েও ওই কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। কয়েকটি সূত্র জানায়, ৬টি জলিয়াত চক্রের মধ্যে ক্যাম্পাসে রয়েছে ৪টি। জগন্নাথ হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল কেন্দ্রিক রয়েছে ২টি চক্র।
এছাড়া জহুরুল হক হল, মুহসীন হল ও স্যার এ এফ রহমান হলসহ অন্য হলগুলো কেন্দ্রিক রয়েছে আরো দুটি চক্র। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের বাইরে কোচিং সেন্টার, ঢাকা কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ইডেন কলেজসহ রাজধানীর আরো কয়েকটি কলেজে রয়েছে আরো দুইটি চক্র। এই চক্রগুলোর সদস্য সংখ্যা কম হলেও এদের শক্তি অনেক বেশি বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী বলয়ে রয়েছে এদের অনেক সদস্য। সন্ত্রাস ও মাফিয়া জগতেও রয়েছে এদের শিকড়।
তাই এদের আটক করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া ভদ্রবেশী এসব অপরাধীদের প্রশাসন অনেক সময় আটক করতে পারে না।
সূত্র জানায়, জালিয়াত সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের নেতা। রয়েছেন একটি হলের সভাপতি ও অন্য হলের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া রয়েছেন কয়েকটি হলের পোস্টধারী ও পোস্ট ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের নেতা।
এর বাইরেও রয়েছে সাধারণ ছাত্রবেশী একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। গোয়েন্দা সূত্রে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা যায়। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশ এ চক্রগুলোকে ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা যায়। সূত্র আরো জানায়, আগামীকালের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রাপ্তি নিশ্চিত করে দেয়া শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয়েছে। পরীক্ষায় পাস করলেই শুধু অর্থ নেয়া হবে এমন নিশ্চয়তাও দেয়া হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের।
এদের অনেকেই ছাত্রলীগের নাম দিয়ে হলে দাপটের সঙ্গে অপরাধ করে যাচ্ছে বলে জানা যায়। জানা যায়, এই চক্রগুলো পরীক্ষার কেন্দ্রে দায়িত্বরত গার্ডের সঙ্গে চুক্তি করে সবগুলো সেটের প্রশ্ন পরীক্ষার হলের বাইরে নিয়ে আসে। পরে তা সমাধান করে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় কাঙ্খিত ভর্তিচ্ছুদের কাছে। সূত্র জানায়, গত ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্ন জালিয়াতির বিনিময়ে নেয়া হয়েছে ৩ লক্ষা টাকা। এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১ লক্ষ টাকা।
উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রগুলো। আগামীকালের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেও এই জালিয়াত চক্রগুলো কোটি টাকা আাদয়ের মিশনে নেমেছে বলে জানা যায়। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্রের পরিমাণ বেশি দেয়াতে এইসব অপরাধের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানা যায়। এছাড়া কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বরতদের ওপর নজরদারী বাড়ানো দরকার বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরাধীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি অবস্থান করে এসব অপরাধমূলক কাজ পরিচালনা করে থাকে।
তাই পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তাদের তৎপরতার ওপরও নজর রাখা জরুরি বলে করছেন তারা। গত শুক্রবারের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত মোট ৫ জনকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে একজন রয়েছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই জনকে বহিষ্কারও করা হয়। এছাড়া অভিযুক্ত জগন্নাথ হলের এক শিক্ষার্থী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদের কাছ থেকে জালিয়াত চক্রের মূল হোতাদের তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আমজাদ আলী বলেন, অপরাধী যেই হোক আমরা তাদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া আগামী পরীক্ষাগুলোতেও এদের ধরতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।