আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হা ! আমি বাটি চালান দিয়ে খুঁজে ফিরি সমাজের নানা অসঙ্গতি ।

বাটি চালান তখনই দিতে হয়, যখন চোর ধরার বৈজ্ঞানিক সব কৌশল অকেজো হয়ে যায়
চুরি যাওয়া মালামাল সন্ধানে গ্রামাঞ্চলে নানা তদবির-ফিকির হয়। তদবির-ফিকিরে চুরি অথবা খোয়া যাওয়া মালামাল পাওয়া যায় কি না কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও গ্রামীণ জনপদে এসব ফিকির যুগ যুগ ধরে টিকে আছে। শিকড়-বাকরের ঔষধের সাথে সাথে বিভিন্ন রত্ন পাথর, তাবিজ, মাদুলি, পানি পড়া, বাটি চালান, বেগুন চালান দিয়ে চোরাই মাল চোরসহ চোর ধরতে পারেন। বাটি চালান মানে বাটিটিকে বিশেষায়িত করার পর সেইটা আপনা আপনি চলতে চলতে চোর ব্যাটার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াবে আর সবাই মিলে খপ করে চোরকে ধারার কথা আমরা অনেকেই শুনে থাকারই কথা। পণ্য চুরি হইলে উদ্দারে বাটি চালান , পাত্র কি পছন্দ করে নাকি বাটি চালান দিয়া জানা , স্বপ্ন হারাইলে বাটি চালান, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় যে অপরাধীকে ধরা সম্ভব নয়, তাকে পাকড়াও করার অব্যর্থ অস্ত্র বাটি চালান।

বাটি চালান আবহমান বাংলার একটি সামাজিক সংসকার বা কুসংস্কার যাই বলি না কেন এটি দেশের পিছিয়ে থাকা সমাজের একটি অংশ। চুরি বা অন্য কোন উপলক্ষে এই বাটি চালান মানুষের বিশ্বাসে নাড়া দেয়। সত্যি?! কোন রকম যুক্তি তর্ক না বিশ্বাস। তারপরও আমি বিশ্বাস করি বাটি চালানে , কারন বিশ্বাস আছে পুস্তকেও ও প্রথায়ও। বিশ্বাস সামাজিক দেওয়ালে যা কিনা দাঁড়িয়ে আছে সহস্রাব্দ ধরে।

বিশ্বাস মানুষকে সাম্যবাদী করেছে, ভেদাভেদ ভুলিয়েছে স্থান-কালের। তাই বিশ্বাসের জায়গায় অক্ষর জ্ঞানহীন প্রাকৃতজনের সংগে উচ্চ সনদধারী মানুষের কোন ফারাক নেই। এজন্য প্রাচীন গ্রীসের কল্পনাশ্রয়ী মানুষদের সাথে হালের জ্ঞানী এর কোন তফাৎ দেখিনা। বিশ্বাসের তীব্রতা অভ্রভেদী। হ্যাঁ ,আমি বাটি চালক এবং তীব্র বিশ্বাসী ।

বাটি চালান তখনই দিতে হয়, যখন চোর ধরার বৈজ্ঞানিক সব কৌশল অকেজো হয়ে যায় । আমি কবিতা এবং কবিদের বাতি চালান দিয়ে বলতে দেখেছি নজরুলকে‘মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমিদূর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন! আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর আমি বিদ্রোহী ...’ রাবিন্দ্রনাথ কে বলতে দেখেছি আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে--. নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?। তবু তাঁর খুশিতেই চরি,. আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে--. নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?। রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান,. মোদের খাটো ক'রে রাখে নি কেউ কোনো অসত্যে--. নইলে মোদের রাজার সনে মিল আর আমি দেখেছি নারীরা এবার ''পদযাত্রা'' করে জনমানুষের কাতারে যেতে চায়। ব্যানার, পেষ্টুন, প্লেকার্ড, কুশপুত্তলিকা, মুখোশ, পথ নাটক, মিছিল, গান, স্লোগান নিয়ে পথঘাট, দোকানপাট, অফিস-আদলত, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তারা বলছে আমরা বাঁচতে চাই। সবাই কিছু করে দেখাতে চাই। আমার বাটি খুজে ফিরি সমাজের নানা আসঙ্গতি, আর তার নিপত্তে কারণ এবং সমাধান । বারংবার বার বাটি চালান দেই । এবার দেখি আমার বাটিতে আমার সমাজের কি ধরা পরে তার কিছু আংশ ।

ডেবেলপার কোম্পানির ইলেগাল ইমারত ভিড় করে আকাশটা ডেকে দিয়ে চুরি করে নিয়ে যায়ে বিকেলের সোনা রোদ, ছোট ছোট শিশুদের শিশুকাল চুরি করে গ্রন্থ কীটের দল বানায়ে নিরবদ, প্রতি দিন চুরি করে নিয়ে যায়ে আমাদের স্বপ্ন আমাদের চেতনা ,পড়ালেখা এর কারণে কিছু মূল্য ভাবি সব কিছু পাইলাম কিন্তু বারে আমাদের আপোশকামিতা আমাদের জীবনী শক্তি আজ চুরি হয়ে গেছে , সাথে চুরি হয়ে গেছে আমাদের সব প্রতিরোধ , সংঘাত- প্রতিবাদ আজও কতও ওয়াল ওয়ালে আকা তবু চুরি হয় প্রতিবাদের ভাষা । আজ IMF এবং WB নির্ধারণ করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্যামন হবে , আমাদের কোন কোন খাঁতে ভর্তুকি কি পরিমাণ দিবে , ড্যান ডব্লিউ মজীনার জিএসপি এর মূলা জুলিয়ে রেখে টিকফা ও আকসা চুক্তিসহ নানাবিধ জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর করে নিতে চায় । বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তা সবই নির্ধারণ করতে চায় তারা । আপর দিকে প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্র মহড়া দিছে কে কতো বেশি নির্যাতন আর লাশ উপহার দিতে পারে , তার একটি দেশ যারা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হামলার পর সরাসরি আমাদের হয়ে যুদ্দ করে হানাদারদের সাথে । এমনকি ৪২ বসর পর যখন যুদ্দাপরাদিদের বিচার আরম্ভ হয়েছে এবং কিছু রায় হয়েছে তখনও সাহবাগ এর তরুন প্রজন্ম কে সকল প্রকার সাহায্য করে চলছে ,তাদের আনেক গায়ক যেমন – সুমন, প্রতুল জাগরণী গান তৈরি করেছে ।

কিন্তু তাদের ফারাক্কাঁ বাদ দিয়ে উত্তরবাঙ্গ মরুভুমি করেছে , কাটাতারের সীমান্তে মানুষ হত্যাও অব্যাহত আছে। রামপালে সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের আয়োজন চলছে , বাংলাদেশের প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংস করে টিপাইমুখ বাঁধের নির্মাণ প্রস্তুতি চলছে। একদিকে সীমান্ত ঘেরাও অন্যদিকে বাংলাদেশের বুক চিরে ট্রানজিট নেবার আয়োজন ,ভারত থেকে আবাদে পণ্য , মাদক নগ্ন culture আসছে, নারি , শিশু আপহরন করছে , তাদের নির্যাতন করছে উলঙ্গ করে , ধর্ষণ করছে তারপরও সীমান্তের তিনদিক ঘিরে ভারত ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। তার পরও দেশের কিছু মিডিয়া আর কিছু মানুষের ফফর দালালি ছলছে ,এবার বাংলাদেশের ৬ শিশুকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বাটি চালক গ্রাম্য লিগ্যাল আইনজ্ঞ ও বিচারক , তার রায়ে সবাই সন্তুষ্ট , এই সন্তুষ্ট হওয়ার পিছনে কিছু কারন আছে ,অভিযুক্ত ব্যক্তির কিছু আলামত আগ থেকে সবার নজরে আসে , তেমনি আমাদের সমাজে চোর সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে আবার অনেকের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলেও আইনি সাহায্য গ্রহণ করে না কারণ , আমাদের সমাজে এক ধরণের লিগ্যাল আইনজ্ঞ ও বিচারক যারা ঐ চোরদের লিগ্যাল আইনের মারপ্যাঁচে খালাস করে দেয় ।

আমরা সবই জানি কিভাবে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তা তাদের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে । আমরা আজ দাসে পরিণত হয়ে পড়ছি । আর এটা বুঝতে বাটি চালান দিতে হয় না , দরকার হয় চিন্তা আর বিবেগ । যা আজ মুমূর্ষু এর কারণ বিবেগবান মানুষ তৈরির কারখানা গুলতে যে ছাত্ররা আছে তারা করপোরেট মূল্যবোধ এবং বাজার অর্থনীতির ভাবাদর্শে মোহাচ্ছন্ন থাকে ফলে ছাত্ররা সূক্ষ্ম চিন্তা এবং বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই ভোগবাদী শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত মানুষের অধিকাংশই স্বাধীন চিন্তা-ভাবনায় অক্ষম, স্বার্থ-চিন্তায় মগ্ন এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।

এই ভোগবাদী মানুষের পক্ষে তাই সাম্রাজ্যবাদীদের এবং পুঁজিবাদীদের একান্ত দাস হয়ে কাজ করা ছাড়া আর কিছুই সম্ভবপর হয় না। মেধাও আজ তাই সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির অধীনস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর নয়া-উপনিবেশবাদী শোষণ-নিপীড়ন, বৈশ্বিক পুঁজির করপোরেট আগ্রাসন এবং দেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদে বহুজাতিক কোম্পানির অবাধ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শিক্ষিত শ্রেণীর যে নিষ্ক্রিয়তা ও প্রতিবাদহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী ভোগবাদী শিক্ষা কেননা এই শিক্ষা মানুষকে স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত না করে তাকে আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে গড়ে তোলে । এদিকে কর্পোরেট গণমাধ্যম ফার্ম সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের সাথে চুক্তি ভিত্তিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে । তথাকতিথ আদুনিক রাষ্ট্রগুলো এভাবে তাদের শোষণ - লুণ্ঠণ কর একটা গ্লোবাল পিলেজ প্রতিষ্টা করছে ।

সমাজতান্ত্রিক দেশ খুঁজতে গেলে আইজকা বাটি চালান দেওন লাগে। আর তারপরো শান্ত সাথেব 'অনুপম' ভঙ্গিতে মার্ক্সরে বিজ্ঞান বইলা পুজ়া কইরাই যাইতাছে, আর চোক্ষা বাঁশের আগায় লাল পতাকা বাইন্ধ্যা আকাশে 'বিপ্লবের' লাল ঝান্ডা উঠায়াই রাখছেন। পুজা করতাছে ,করেন । আপরদিকে বিজ্ঞান নির্ভর মানুষ এর দ্বারা খুব বেশি দিন টিকে থাকা সম্বব নয় । বিজ্ঞান এর সাহায্য মানুষের দরকার , যেটা মানুষ এর natural তাড়নার ফসল ।

ইউরোপে বিপ্লব না হলেও একদিন বিজ্ঞান এর উন্নত হত । এটি কারো নিজস্ব সম্মত্তি নয় বরং সকলের (পূর্ব ) ঐকান্তিক সাধনা আর পরিশ্রমের ফসল । এগুলো বলার কারণে প্রাগ-ঐতিহাসিক এর তকমা গায়ে লাগাতে রাজি আমি তবু বারবার বাটি চালান দেই বের করতে সমাজের নানা আসঙ্গতি ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।