আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

:: কবিতা, শিল্পের আশ্চর্য মাধুর্যমণ্ডিত একটি সুউচ্চ মাধ্যম।– মাহমুদ টোকন

have miles to go... সপ্তজিজ্ঞাসে কবি মাহমুদ টোকন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ................................................................................................ (কবিতাসংশ্লিষ্ট সাতটি নির্ধারিত প্রশ্ন নিয়ে ‘সপ্তজিজ্ঞাস নামের এ আয়োজন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের পক্ষ থেকে তানিম কবিরের করা প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েছেন কবি মাহমুদ টোকন) ................................................................................................ প্রশ্ন:: কবিতা কেন লিখেন একজন কবি এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে বাধ্য কি না? যদি বাধ্য নন তো কেন? আর হোন যদি আপনার প্রতিও একই প্রশ্ন; কেন লিখেন কবিতা? কবিতা কেন লিখেন এ প্রশ্নের জবাব দিতে কবি আদৌ বাধ্য নন। এ জবাবের জন্য তিনি এমনকি প্রস্তুতও নন সবসময়। মুক্ত দর্শনে এবং অধিকার সংরক্ষিত সামাজিক অবস্থান থেকে কোনও মা যেমন বাধ্য নন জবাব দিতে যে কেন তিনি সন্তান ধারণ ও জন্মদান করেন। বাণিজ্য-বেশাতিওয়ালারা জবাব দিলেও দিতে পারেন।

কোনও সৃষ্টিশীল মানুষ কারো কাছেই সৃষ্টিকর্মের কারণ ব্যাখ্যা করতে বাধ্য থাকেন না। এটি হবে তার জন্য আত্মঘাতী। যিনি সৃষ্টি করেন বা করবেন সেটি ফরমায়েসি হলে তার জবাব হতে পারে। ফরমায়েসি কাজ আদৌ কোনও সৃষ্টিশীলতা নয়। কবির spontaneous overflow of powerful feelings কবিতার জন্ম দেয়।

সেখানে একজন সৎকবি ঈশ্বর মাত্র। ঈশ্বর বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী হতে পারেন কিন্তু তাকে সে কাজ করার কারণ জানতে চাওয়া স্রেফ বোকামি অথবা ধৃষ্টতা। তবে স্বতঃস্ফূর্ততায় বা স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনও কবি বা স্রষ্টা তার সৃষ্টির কেনটিকে সামনে আনলেও আনতে পারেন। সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে সে ব্যাখ্যা যথাযথ হবে কি-না বা আদৌ মনুষ্যসৃষ্ট যুক্তিবাদের অ্যানালিটিক্যাল দিকে মর্যাদা পাবে কি-না এতে সন্দেহ রয়েছে।

কারণ একজন কবি কিংবা কোনও সৃষ্টিশীল মানুষ যতটা দার্শনিক ততটা মুখর তার্কিক নন(অন্য প্রাণীরা হলেও হতে পারেন); যেমনটি সাম্প্রতিক উন্নয়ন(!) বিশেষজ্ঞরা সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অবিরাম বাক্য-তর্কের অভিনয় করে থাকেন। একটি কথা মনে রাখা দরকার যে কবিতাই বরং কবিকে লিখে। আর এই ফর্ম থেকে আসলে কেন মহাজাগতিক একটি কণিকামাত্র যার অবস্থান রয়েছে বটে, অনিবার্যতা চোখেই পড়ে না। কবিতা কেন লিখি এটি অনেক বড় উত্তর আমার জন্য। আমার কথা যদি বলি সংক্ষেপে বলবে যে একধরনের বোধ ও গভীর আনন্দের জন্য কবিতা লিখি।

কবিতা লিখি গভীর বেদনার জন্য। আর ব্যাখ্যাহীন কিছু অন্তর্গত অসংলগ্নতাকে রূপ দেয়ার জন্য আমি কবিতা লিখি। আর একটি কথা এ বিস্ময়কর মহাজগৎ, সমাজ, প্রকৃতি এবং এই প্রাণিকুলের প্রতি ভালোবাসা ও ভালোবাসাহীনতার জন্য কবিতা লিখি। প্রশ্ন:: সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি এই কেউ কেউ বা কারও কারও কবি হয়ে ওঠায় ঐশীপ্রাপ্তির কোনও ঘটনা থাকে কি? নাকি পুরো ব্যাপারটাই রেওয়াজ নির্ভর? আপনার কী মনে হয়? প্রত্যেক মানুষ তার ভেতরে অনুভূতিসম্পন্ন ইন্দ্রিয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে জন্মান। তার ইমোশন সহজাত।

তবে প্রকাশ এবং প্রকাশভঙ্গি ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র পরিবেশ এবং পরিবারভেদে ব্যতিক্রমী। একই মাছ তিনজন রান্না করলে তিন রকমের স্বাদ হবে। শুধু সেটুকুই নয় পরিবেশনেও এর পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রান্না সবাই করতে পারেন চাইলে। কিন্তু সেটি কে কতোটা গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ও ভালোবেসে করেন সেটি হচ্ছে বিষয়।

কে সকল অনুষঙ্গের সামঞ্জস্য বুঝে তার ব্যবহার করেন সেটি বিবেচ্য। সবার্থে সামঞ্জস্য থাকলেই যেমন রান্নাটি সুখাদ্য হয়। সে অর্থে কেউ কেউ কবি এজন্য যে ওই কেউ কেউ-ই প্রকৃতঅর্থে শিল্পী। আর শিল্পের জন্য সাধনা করতে হয়, লোভ ছাড়তে হয় এবং অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এজন্যই কেউ কেউ।

তবে একথাও সত্যি যে সবাই কিন্তু সমান মেধা ও সুযোগ নিয়ে জন্মান না। আর মনে রাখা প্রয়োজন এটি শরীরগত এবং পরিবেশগত একটি সমন্বিত বিষয়। কবিতা যিনি ভালো করে আত্মস্থ করে, চিন্তা-জ্ঞানের সমন্বয়ে তার প্রকাশের শৈল্পিক উৎকর্ষতা লাভ করেন তিনিই কবি। কবিতা ভালোবেসে, গভীরভাবে বুঝে অনুশীলন করে, দরদ দিয়ে এবং উপযোগী করে উপস্থাপন করলে তবেই কবিতা। সেজন্যই কেউ কেউ কবি।

নইলে সাম্প্রতিককালে যে মোহের বিস্তার দেখছি তাতে বহু রাজনৈতিক, মিডিয়াকর্মী, এনজিও কর্মী, বই প্রকাশি নাম-যশোপ্রার্থীরা এমনকি বিত্তশালী-ক্ষমতাশালী-ব্যবসায়ী সকলেই কবি হতেন। শুধু শব্দ তৈরি করে মিডিয়া বা বইয়ে প্রকাশ করলেই যেমন কবিতা হয় না, তেমনি কবিতা ভালো বুঝলে এবং কবিতা বিষয়ক ওজনদার কথা বলতে পারলেই কবি হওয়া যায় না। একবার কথা প্রসঙ্গে গোর্কি মহামতি লেনিনকে বললেন যে ভালো গদ্য লেখার চেয়ে পদ্য লেখা বরং সহজ কাজ। এতে সময়ও কম লাগে। লেনিন সেকথা শুনে তো রেগে আগুন।

বললেন, থাক ও কথা আমাকে শুনিও না। কবিতা লেখা নাকি সহজ কাজ। আমি তো ভাবতেই পারি না। জ্যান্ত ছাল চামড়া ছাড়িয়ে নিলেও আমাকে দিয়ে তুমি কবিতার দুটো লাইন বের করতে পারবে না! লেলিন কিন্তু চাইলেই লিখতে পারতেন। সেই মেধা ও দরদভরা হৃদয় তার ছিলো।

কিন্তু সেটি মূখ্য নয়। বিষয়টি হচ্ছে কবিতা ও কবির প্রতি লেনিন এর ধারণা ও সম্ভ্রম। এটি যে সহজ কোনো বিষয় বা ছেলে-খেলা নয় তা লেনিন দৃঢ়ভাবে বোঝাতে চেয়েছেন। তো কথা হচ্ছে, বিষয়টিকে যথাযথভাবে আত্মস্থ করে, শিল্পের কলাকৌশল জেনে এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করে উৎকর্ষতা লাভ করলেই কবি হওয়া যায়। এটি আদৌ কোন ঐশী বিষয় বা আলৌকিক বিষয় নয়।

আবার ক্ষমতা, পারিষদবেষ্টিত হয়ে ও অর্থসম্পদের মাধ্যমে অর্জিত (উদাহরণ: জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) কোনও বস্তুও নয়। অসাধারণ মেধাসম্পন্ন কেউ কেউ হয়তো খুব অল্প আয়াসে কবি হতে পারেন কিন্তু বিষয়টি সে-ই শরীরবৃত্তিয় অঙ্গের সুসক্ষমতা এবং সুযোগ প্রাপ্তির মানদণ্ডে হতে পারে। তবে এর উদাহরণ খুব কম। কবি হয়ে উঠতে হয়। মননে মেধায় চেতনায় এবং অবশ্যই প্রকাশে।

প্রশ্ন:: এখনকার কবিদের ছন্দবিমুখতার কারণ কী বলে মনে হয় আপনার? কবিতার জন্য ছন্দের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু? কবিতার স্বতঃস্ফূর্ত বিস্তারে ছন্দ আপনার কাছে সহায়ক নাকি প্রতিবন্ধক? এখনকার বলতে ধরে নিচ্ছি সাম্প্রতিক সময়। আমি মনে করি না কোনও সচেতন কবি ছন্দবিমুখ। যিনি ছন্দ জানেন তিনি কেন ছন্দবিমুখ হবেন? হতে পারে তিনি ছন্দের ব্যবহার কম করছেন বা ছন্দ ভাঙছেন। গদ্য ও গদ্য কবিতায়ও স্পষ্ট ছন্দের ব্যবহার রয়েছে হয়তো ছন্দ সেখানে প্রকট হয়ে ওঠেনি। কথা হচ্ছে যিনি ছন্দ জানেন তিনি ছন্দকে ভাঙতে জানেন।

অন্যফর্মে তার ব্যবহারও অজানা নয়। ছন্দ যিনি জানেন না তিনি হয়তো বিমুখ হলেও হতে পারেন। আপনি যদি পল এলুয়ার এবং বোদলেয়ারের কবিতা দেখেন এর স্পষ্টতা দেখবেন। দুজনই তীক্ষ্ণ, ক্ষুরধার। ঠিক রবীন্দ্রনাথ এবং জীবনানন্দ একই রকম।

ওনারা সবাই প্রাজ্ঞ কিন্তু ব্যবহারে একেকজন তার নিজস্বতায়। আমি সাম্প্রতিক সময়ের কবিদের মধ্যে ছন্দবিমুখতার কোনও ছাপ দেখছি না। বরং ছন্দকে চমৎকারভাবে মাইল্ডলি ব্যবহার করতে দেখি। আর যারা ছন্দ কী বোঝেন না, তারা বিমুখ হবেন এটি হতে পারে। প্রকৃত এবং ছন্দ জানা কবি ছন্দ বিমুখতায় বিশ্বাস করেন বলে আমার মনে হয় না।

দেখুন, অনেকে ভালো ইংরেজি জানেন কিন্তু এড়িয়ে যান, অনর্গল বলার ক্ষমতা থাকলেও বলেন না। তার মানে এই নয় সে বিমুখ। সে বাংলা বলে, এখানে সে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে কিংবা সে বাংলায়ই বলতে চায়। এটি ব্যক্তির ওপর। তবে বিমুখতা বলতে আমি অপছন্দ করা এবং বিরোধিতাকে মনে করি।

ছন্দ হচ্ছে গানের স্বারগামের মতো। জেনে তবে আপনি গান গাইতে পারবেন। গলার এবং সুরের ও কথার ব্যবহার করেত পারবেন ইচ্ছে মতো। ফর্ম ভাঙাগড়ায় নিজেকে উৎকর্ষতা দিতে পারবেন। কবিতার জন্য ছন্দ কতোটুকু প্রয়োজন এর জন্য কোনও ছন্দমিটার নেই।

তবে ভালো গদ্যকবিতা লিখতে হলেও কবির অবশ্যই ছন্দের ধারণা থাকা দরকার এজন্য যে এর ব্যবহার জেনেই ব্যবহার না করার উৎকর্ষতায় যাওয়া সম্ভব। আব্যশকতাটি এখানেই। আগে অনেকেই হয়তো এ বিষয়ে পড়ালেখা করেননি কিন্তু ব্যবহারের মাধ্যমে তারা এটি অর্জন করেছেন। আমি বলবো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যপার-স্যাপার মূখ্য নয়। মূখ্য হলো কবি এটি জানেন, বোঝেন কি-না।

জানলে, কবিতায় আরো ভালো করে এর ব্যবহার বা পরিহার করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আবশ্যক অনাবশ্যক বিষয়গুলো স্রেফ কবির ওপর। আমি মনে করি আমি ছন্দ জানলে, বুঝলে এটি প্রতিবন্ধকতার কোনও বিষয় হতে পারে না। এটি সাপ নয় যে যতই ভালো সাপুরে হোক না কেন, সাপ তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রশ্ন:: দশকওয়ারী কবিতা মূল্যায়নের প্রবণতাটিকে কিভাবে দেখেন? আপনার দশকের অন্যান্য কবিদের কবিতা থেকে নিজের কবিতাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার উপাদানসমূহ কী বলে মনে হয় আপনার? আমি আসলে দশক বিষয়টি আদৌ গ্রহণ করি না।

তবে দেখা গেছে সর্টিং করার ক্ষেত্রে একটি দরকার হয়। বছর দুয়েক আগে কোলকাতার একটি লিটলম্যাগে ভারতীয় (বিশেষকরে পশ্চিমবঙ্গ) বাঙালি ও বাংলাদেশের ৯০ দশকের কবিদের নিয়ে একটি সংখ্যা করে। তো সম্পাদক মহোদয় আমাকে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে বলেন। আমি বললাম যে এটি আমার জন্য নয় কারণ দশক দিয়ে আমি কবিকে ভাগ করতে পারি না। উনি বলেছিলেন যে উনিও সেটি করেন না।

তবে নব্বই এর দশকে যারা কবি হিসেবে প্রকাশিত তাদেরকে সহজে চিহ্নিত করা ও প্রকাশ করার জন্য এটি হতে পারে। কারণ একসঙ্গে সকল বাঙালি কবির কবিতা ওই ছোট পত্রিকাটিতে প্রকাশ করা খুবই কষ্টকর এবং ব্যয়বহুল। ফলে ওই নির্দিষ্ট সময়ে যারা আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তাদের আমরা সহজে গ্রন্থভুক্ত করতে পারি দশকে ফেলে। এটি হলেও হতে পারে। তবে এটিও নির্বাচনের জন্য সহজ নয়।

কারণ বেশিরভাগ কবির আত্মপ্রকাশ অগোচরে হয়ে থাকে। যাহোক, আপনি যদি বাংলা কবিতার উত্তোরণ ও প্রকাশের সময়কাল বলেন তাহলে ঠিক আছে। তবে এভাবেও কিন্তু চিহ্নিত করা কঠিন। অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা কবিতার জন্য প্রাচীনকাল থেকে এখনকার সময়টুকুও গুরুত্ব বহন করে। প্রাচীনকালের লুইপা, কাহ্নপা থেকে এমনকি আজকে প্রকাশিত কবিও এখানে উল্লেখযোগ্য।

বিষয়টি হচ্ছে প্রকাশের এবং উত্তোরণের। আমরা কতটুকু অগ্রগামী হতে পেরেছি। কতটুকু কবিতায় আছি, এর বিস্তার, এর মান, এর চর্চা এবং প্রকাশ কতটা উৎকর্ষতা লাভ করেছে সেটি। দশক থেকে আমার কাছে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সার্থক কবি ও কবিতার প্রকাশ। কবি ও কবিতার উত্তোরণ।

কবিতাকে আমি দেখি আমি আমার ভেতরকার ঐশ্বর্য দিয়ে। সেখানে নিজের সামর্থটুকুর উপস্থাপন করতে চাই নিজের মতো করে। তাতে কারো কারো প্রভাব থাকে, তাকে অতিক্রম করার শক্তির ব্যবহারও থাকে। আমি দায়বদ্ধতা ও গভীর আনন্দ-বেদনাকে আশ্রয় করেও কবিতা লিখি। তার ছাপ রয়েছে আমার কবিতায়।

তবে আলাদা করে চিহ্নিত করার বিষয়টি নিয়ে নিজে কখনো ভাবিনি। কোনও কবিতা গভীর বেদনার ভেতর দিয়ে এমনকি কাঁদতে কাঁদতে লিখেছি। চোখের জলের চিহ্ন সেখানে নেই কিন্তু অ্যাগোনিটুকু রয়ে গেছে। কোনো কবিতা লিখেছি অসীম আনন্দের স্নিগ্ধতা নিয়ে কিন্তু প্রকাশটি শব্দের মাধ্যমে। শব্দে যখন অনুভব প্রকাশিত হয় সেটি আর অনুভবের রূপে মেৌলিক থাকে না।

আর নিজের কবিতার উপাদান চিহ্নিত করার দায়িত্ব আমার নয়। এটি পাঠকের, কবিতা সমালোচকদের। আমি এর জবাব দিতে খুবই অসহায় বোধ করছি! প্রশ্ন:: তিরিশের দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রত্যেকটি দশক থেকে যদি তিনজনের নাম করতে বলা হয় আপনাকে কারা আসবেন? উল্লিখিত কালখণ্ডে কোন দশকটিকে আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়? আগেই বলেছি যে দশক বিষয়টি আদৌ আমি বিবেচনা করি না। আর তিনজন কি পাঁচজনের নাম করে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কবিকে আড়ালে ফেলতে চাই না। বাংলা কবিতার জন্য এর শুরুর সময় থেকে এমনকি এই মুহূর্তটুকুও গুরুত্বপূর্ণ।

এখন আত্মপ্রকাশ করা কবির জন্যও। শুধু বাংলা কেন কোনও ভাষার সাহিত্যকেই দশকে ফেলে বিশ্লেষণ করা যায় না আসলে। প্রশ্ন: দেশভাগোত্তর দুই বাংলার কবিতায় মৌলিক কোনও পার্থক্য রচিত হয়েছে কি? এ-বাংলায় ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন। ওপার বাংলায়ও নকশালবাড়ি আন্দোলনসহ উল্লেখযোগ্য কিছু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এসমস্ত কিছুর আলাদা আলাদা প্রভাব কবিতায় কতোটা পড়েছে বলে মনে করেন? দেশভাগ অর্থাৎ ভারতবর্ষ ভাগ হলো ১৯৪৭ এ ভারত ও পাকিস্তান নামে। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হলো পাকিস্তানী উপনিবেশ থেকে।

বলা ভালো জীবন দিয়ে, অত্যাচার সয়ে, ত্যাগ স্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাকিস্তানী শাসক হায়েনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের পরাজিত করেছি। স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আদর্শ। জিন্নাহ, নেহেরু এরা নিজেদের স্বার্থে ভারতবর্ষকে ধর্মের চাতুরিতে ভাগ করেছিলেন। নেতাজি সেটি চাননি।

তিনি ক্ষমতার লোভ এবং দেশভাগ দুটোই পরিহার করতে পেরেছিলেন বলেই ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। নেতাজির মতো ওই দুব্যক্তির একজনও বাঙালি ছিলেন না। সেজন্য তারা বাঙালিদের স্বার্থও দেখেননি বরং বাঙালিদের কৌশলে বিভাজিত করেছেন। সংগে বেনিয়া ফিরিংগি র্যা ডক্লিফের ছুরিটি শানানোই ছিলো বাঙালিদের কেটে ভাগ করার জন্য। কারণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাঙালিরাই অধিংকাশক্ষেত্রে প্রতিরোধ এবং আন্দোলনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে।

আর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করেনি। স্বাধীনতা তারা অনেকটা দান হিসেবে পেয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সুতরাং এর একটি বিরাট সিগনিফিকেন্স কিন্তু রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের কবিতায় ও সাহিত্যে এর প্রভাব থাকবে।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাঙালীদের অর্থাৎ বিভাজিত বাঙালিদের কবিতায় অবশ্যই মৌলিক পার্থক্য সূচীত হবে। কারণ কবিতা সামাজিক অবস্থানকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত যার মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র এবং অন্যান্য অনুষঙ্গগুলো প্রকাশিত হয়। মনে রাখতে হবে Õ৪৭ এর ভাগাভাগির ফলে যারা ওপারে গিয়েছেন তারমধ্যে বাংলাদেশের অনেক সাংস্কৃতিক পরিবার চলে গিয়েছেন। এদের মধ্যে কবি-সাহিত্যিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। যদি আপনি ওখানকার কবি-সাহিত্যিকদের লক্ষ্য করেন বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

কিন্তু ওপার থেকে যারা বাংলাদেশে এসেছেন সে তুলনায় কবি-সাহিত্যিক অনেক অনেক কম। আর তাদের মধ্যে অনেকে যে মেধাবী ছিলেন না কেবল শূন্যস্থান পূরণ করেছেন তাও কিন্তু এখন স্পষ্ট। যাহোক সে কারণে আমাদের স্বাধীনতার মতো একটি বিশাল অর্জনের পরেও আমাদের এখানে যে পরিমাণ পরিবর্তন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ করে কবিতায় হতে পারতো তা হয়নি। তা থেকেও বড় বিবেচ্য বিষয় আমাদের সংস্কৃতিতে বিরাট কালোছায়া, সুদীর্ঘ সামরিক শাসন এবং স্বৈরশাসন। Õ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে আমাদের বরং প্রগতির ধারাকেই রুদ্ধ করা হয়েছে।

কবিতাও সেখানে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিনেমা, গল্প-উপন্যাস, সঙ্গীতসহ অন্যান্য সামগ্রিক শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলোসহ। তারপর এলা সুদীর্ঘ জলপাই শাসন। দীর্ঘকাল কোনও দেশ সামরিক বা স্বৈরশাসনের কবলে থাকলে সেখানে সর্বস্তরে মূল্যবোধের ধ্বস নামে। প্রগতিশীলতা খুন হয়। যার স্খলন আমরা দেখছি আমাদের শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের লোকজনের মধ্যে।

সে অন্ধকার এখনো কাটেনি। আরেকটি বিষয় এর সাথে জড়িত যেটি ফিলোজফিক্যালি এবং সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি হচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া এবং একরৈখিক বিশ্ব তৈরি হওয়া। সোভিয়েত রাশিয়া সারাবিশ্বে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেছিলো। কিন্তু সেই জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগসমূহ থমকে পড়ে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনে আমেরিকার কনজুমারিজম লকলকেভাবে বিশ্বকে গ্রাস করে।

আর আমাদের মতো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং শিক্ষা-প্রযুক্তিতে পেছনে থাকা দেশগুলো এতে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাংলাদেশের কবিতা, নাটক, সিনেমা, সাংবাদিকতা ইত্যাদিসহ শিল্প-সাহিত্য এবং রাজনীতি প্রবল সম্ভাবনা সত্বেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছতে পারিনি। সত্যি বলতে কি, দেখবেন যারা এখানে শিল্প-সাহিত্যের মডেল হতে পারতেন তারাই বরং ধনীক শ্রেণীর প্রতিভূ হয়ে বসেছেন। সে শ্রেণীটি পুজিঁর বাড়িয়েছেন বটে, পুজিঁর ব্যভহার শেখেননি।

অর্থাৎ সেই সুদীর্ঘ অপশাসন এবং কনজুমারিজম কবি-সাহিত্যিকদের সামগ্রিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার দিকে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে অনেক বেশি। বাংলাদেশ শিক্ষা, যোগাযোগ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসহ অনেকক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু সংস্কৃতি তথা সার্বিক মূল্যবোধ এখানে ক্ষতগ্রস্ত। বিশাল অর্জনও এক্ষেত্রে ম্লান হয়ে পড়েছে বিভিন্নভাবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতীয় বাঙালিদের ক্ষেত্রে তারা যতটুকু পৌঁছবার কথা সেটি না পৌঁছলেও সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতায় তারা নিশ্চয়ই কিছুটা প্রভাব ফেলতে পেরেছেন ওই পবির্তনগুলোর, সময়ের।

আর ভারতে রাষ্ট্রীয় চরিত্রের কাঠামোতে পড়ে অন্যান্যদের মতো বাঙালিরা সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে উঠে আসতে পারেনি। কবিতা তথা সামগ্রিক সাহিত্যের অর্জনেও সেখানে ছেদ পড়েছে। ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যে সুবিধাবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদের কৌশল ডালপালা মেলেছে। এর প্রভাব কোনও কোনও ক্ষেত্রে কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যেও সংক্রমিত হবে এটিই স্বাভাবিক। প্রশ্ন:: কবিতার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতা ও দুর্বোধ্যতার অভিযোগ বিষয়ে কিছু বলুন।

কবির কি পাঠকের রুচির সাথে আপোষ করে কবিতা লেখা উচিৎ? বর্তমানে বাংলা কবিতার পাঠক কারা? কবিতা নয় বরং শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমগুলোও এ অভিযোগের বাইরে নয়। আর সারা পৃথিবী জুড়েই এই আঙুল উঠেছে। কিন্তু পাঠকেরা কি সেই আগের পাঠক আছেন? তারা কি কবিতার জন্য সময় দিচ্ছেন? কবিতা আত্মস্থ করতে তারা কি গুরত্বের সঙ্গে বিষয়টিকে গ্রহণ করছেন? আগের দিনে বিনোদন ও শিল্পের প্রচার মাধ্যম ছিলো অনেক কম। আর মানুষ কয়টা বই বা ম্যাগজিন হাতের কাছে পেতো? পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থান এবং কর্মপরিধি ছোট থাকায় অখণ্ড অবসরও ছিলো। ফলে একটি বিষয় বা পুস্তকের অধ্যয়ন অধিকবার হওয়া ছিলো অনিবার্য।

আর সে সময়ে কিন্তু বাংলা কবিতায় বিষয়বৈচিত্র কম ছিলো। দূরবর্তী জানালাটিও আজকের মতো খোলা ছিলো না। আপনি যদি দেখেন একশ বছর আগে লেখা বোদলেয়ার, মালার্মে, র্যা বো, জীবনানন্দ আজও কি খুব সহজে আত্মস্থ করা যায়? আজকের কবিরা কিন্তু সে-ই দূরবর্তী পাঠটি বৈদ্যুতিক মাধ্যমে পড়তে পারছেন, উপলব্ধি করতে পারছেন এবং নিজে লিখতে পারছেন। সে সময়ের অনেক কবিই এ সুযোগগুলো পাননি। তাতে তারা কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যেই থেকেছেন।

আজ যদি আপনি নজরুলের কবিতা পড়েন তাহলে তার কটি কবিতাকে আপনি কালোত্তীর্ণ বলবেন? কিন্তু সেগুলো একসময় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলো। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সেল-ফোন, টেলিভিশন, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট বিনোদনের মাধ্যমে পাঠকরা এতোটাই এনগেজ হয়ে পড়েছেন যে কবিতার জন্য তার যথেষ্ট সময় কোথায়? আপনি একটি জিনিসকে ভালোবাসলে তাকে বুঝতে হবে। সময় দিতে হবে, চর্চা করতে হবে এবং বিভিন্ন দিকে থেকে সেটি বিশ্লেষণ করতে হবে। হঠাৎ করে আপনি একটি বই কিনবেন আর দু্একটি পাতায় চোখ রেখে বলবেন- উফ বুঝি না! এ পড়তে গেলে যে দাঁত ভেংগে যাবে এমন কথা বলে অসভ্যের মতো হাসবেন, কবিতা এমন সস্তা এবং নির্বোধের বিষয় নয় আদৌ। কবিতা শিল্পের আশ্চর্য মাধুর্যমণ্ডিত একটি খুব সুউচ্চ মাধ্যম যাতে সবচে কম কথায় সবচে বেশি প্রকাশের ঔদার্য নিহিত।

ছোঁদো প্যানপেনে প্রেমের ক্ষেত্র এটি নয় আদৌ। এটি পড়ে চর্চা করে, আত্মস্থ করতে হবে। শিল্পের আনন্দ এবং উপকার পেতে হলে তাকে ভালোবাসতে হয়, তার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। অনুশীলন করতে হয়। এটি যেমন পরে পাওয়া জিনিস নয়, তেমনি অর্থমূল্যে কেনা কোনও সুলভ বস্তুও নয়।

দুর্বোধ্যতা বলার আগে একে ভালোভাবে গ্রহণ করতে হবে। সময় দিয়ে হবে। পাঠক দূরে সরেছে বলেই কবিতা তার কাছে দুর্বোধ্য। তবে হ্যাঁ, সহজতরভাবে প্রকাশও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মধ্যে দুর্বোধ্যভাবে প্রকাশের মাধ্যমে ভারিক্কি চালের প্রবণতা যে নেই তা নয়।

তবে তার পরিমাণ এবং টিকে থাকা নগন্য। একজন কবি কিন্তু কোন একটি সমাজেরই অঙ্গ। সে মানুষের জন্যই ওই সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং পাঠক রুচির সাথে আপোষ কথাটি আসলে কবির মৃত্যু ঘটায় যদি সে নিজের প্রাণের দাবি থেকে জনরুচির বিষয়টি বিবেচনা করেন। প্রত্যেক শিল্পের জন্যই এটি গুরুত্ব বহন করে।

কারণ এটি চানাচুর নয়। কবি নিজের সঙ্গে বরং আপোষ করতে পারেন অন্যের সঙ্গে নয়। কারণ কবিতা হচ্ছে বিদগ্ধশিল্প, শিল্পের জন্য আপোষ করলে কোনও ভালো, মহৎ শিল্প তৈরি হয় না। উদাহরণসহ দুজনের নাম উচ্চারণ করতে চাই। শ্রদ্ধা রেখেই বলছি হুমায়ুন আহমেদ এবং তসলিমা নাসরিন দুজনেই নিজেদের প্রতিনিয়ত খুন করেছেন।

শিল্পের ক্ষতি করেছেন। বাংলা কবিতার পাঠক কারা? এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো কবিতার পাঠক কারা। সারা পৃথিবীতেই কবিতার পাঠক কমে গেছে। শিল্পের দেশ ফ্রান্সেও এটি প্রকট। পৃথিবীতে ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জয়জয়কার।

কবিতা তাই বলে বিপদগ্রস্তও নয়। বিপদগ্রস্ত তারা যারা কবিতা পড়ে না, যারা শিল্পচর্চা করে না। শিল্পমাধ্যম আপনার আত্মাকে জীবিত রাখে। আত্মাহীন মানুষ কখনো শান্তি লাভ করে না। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কবিরাই কি খুব পড়ছি? নিজের কবিতাটি ছাড়া অন্যের কবিতাটি পড়ার সময়ও যেন আমাদের নেই।

তাহলে এই প্রশ্নটি অবান্তর হয়ে পড়ে। কবিতার পাঠক তারাই যারা কবিতা ভালোবাসেন। যারা নিজের আত্মার প্রশান্তি খোঁজেন এবং বুঝে না বুঝেও শিল্পচর্চা করেন। বাংলা কবিতার উৎকর্ষতা তথাপিও স্পষ্ট এবং পাঠকশ্রেণিরও। ................................................................................................ :: মাহমুদ টোকন:: কবি ও গল্পকার ।

উন্নয়ন গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট। জন্ম : ১১ মার্চ ১৯৭১ জন্মস্থান : গোপালপুর, মাদারীপুর। বর্তমান পেশা : গবেষণা ও উন্নয়নকর্ম । সাংবাদিকতা ও কনসালটেনসি। প্রকাশিত গ্রন্থ : আত্মপ্রকাশ (কাব্যগ্রন্থ), আমার আকাশ আমার নদী (ছোটদের বই), বিমূর্ত ইশতেহার (কাব্যগ্রন্থ/কোলকাতা থেকে প্রকাশিত), Liberalism: A closer watch (একটি একাডেমিক প্রকাশনা) ।

। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।