বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সার ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দ্বিতীয় বহুল প্রচলিত ক্যান্সার; যা আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে পরিলক্ষিত। অন্য ক্যান্সারের মতো স্তন ক্যান্সার সম্পর্কেও আমাদের সচেতনতা গত দশকের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। অন্যদিকে আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী, কর্মক্ষেত্রে যাদের সংখ্যা বাড়ছে। উন্নত শিক্ষা, সামাজিক পরিবেশের পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং আত্দবিশ্বাস অর্জনের ফলে বাংলাদেশের করপোরেট ওয়ার্ল্ভ্রে নারীদের উপস্থিতি ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে।
চাকরির চাহিদা, প্রতিযোগিতামূলক চাপ এবং সফল হওয়ার ক্রমাগত আকাঙ্ক্ষা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে আসছে। দুর্ভাগ্যবশত এই পরিবর্তনের অনেকগুলোই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির সঙ্গে জড়িত। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সারের জন্য এই নিম্নলিখিত কারণগুলো জড়িত। কারণগুলো হলো- কোনো সন্তান না নেওয়া, অথবা প্রথম সন্তান নিতে দেরি করা, শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো, অথবা দুধ পান করাতে সক্ষম না হওয়া, হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি (এইচআরটি) ব্যবহার করা। জীবনে সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় কোনো নারী তার পারিবারিক জীবন শুরু করতে বিলম্ব করতে পারেন।
একইভাবে অফিসের সময়সূচি কড়াকড়ি হওয়ায় অনেক মা তাদের শিশুকে স্তন পান করাতে পারেন না, যা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আজকাল কর্মক্ষেত্রে অনেক অফিসেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় এবং আমরা প্রায় সারাদিনই ডেস্কে কাজ করি। সে ক্ষেত্রে শরীর চর্চার জন্য খুব কম সময়ই পাওয়া যায়। একইভাবে বলা যায়, কর্মদিবসে দুপুরের খাবারের জন্য ফাস্ট ফুড গ্রহণ করা বেশ সুবিধাজনক, যা শরীরে অনেক চর্বি জমায়। চাকরিজীবী বা করপোরেট জগতের একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম হলো বিশ্বব্যাপী প্রায় প্রতিনিয়তই সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং মিটিং করতে হয়, এ ক্ষেত্রে ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ প্রায় প্রতিনিয়তই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই কি করা যেতে পারে? সবচেয়ে ভালো উপদেশ হলো সচেতন থাকতে হবে। আমাদের অবশ্যই ধরে নিতে হবে, সব মহিলাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ঝুঁকির আশঙ্কাও বাড়ে। আপনার বয়স যদি ৩০-৪০ এর মধ্যে হয়, তাহলে মাসে অন্তত একবার নিজেই স্তন পরীক্ষা করা উচিত। আর আপনার সার্জন আপনাকে বলে দেবেন কিভাবে এটি করতে হয়। যদি এতে আপনার স্তনে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
আর আপনার বয়স যদি ৪০ বা তার বেশি হয়, তাহলে মাসে একবার নিজে স্তন পরীক্ষা ছাড়াও বার্ষিক ম্যামোগ্রাম করতে হবে। ম্যামোগ্রাম হলো বিশেষ এক ধরনের এঙ্-রে যার মাধ্যমে খুব দ্রুত স্তনের ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। আর এই পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। চর্চার জন্য সময় বের করুন, সপ্তাহে পাঁচ দিন ৪৫ মিনিট হাঁটলে উপকার পাওয়া যায়। অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করতে হবে।
যদি দেখেন, আপনার স্তনে এক ধরনের চাকা রয়েছে তাহলে মনে রাখবেন, ১০% মহিলার ক্ষেত্রে এটা স্তন ক্যান্সার, যাদের বয়স ৩০ বছরের ওপর। বয়স যত বাড়বে এর হার তত বাড়বে। ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জা বা এড়িয়ে যাবেন না; বরং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য নিন।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, জেনারেল এন্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকা। মেইল: anisur.rahman@apollodhaka.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।