ভালো লাগে বই পরতে আর ব্লগ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে
সকালে ফয়সাল ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই পেটের ভিতর গত কালকের অসমাপ্ত খিদেটা টের পেলো । পেটের ভিতর কেমন জানি গুর গুর শব্দ । ঘড়িতে সকাল ১১ টা । আরেকটু ঘুমিয়ে নিবে কিনা ভাবছে সে । পকেটে ১২০ টাকা আজকের দিনের জন্য যথেষ্ট না ।
ভাগ্য ভালো হলে নবনীর বাবা আজকে তার দুই মাসের বেতন একসাথে দিবে । নবনী কালকে ফোন দিয়ে বলেছে একটু তাড়াতাড়ি আসতে । একটু তাড়াতাড়ি আসতে বলা মানে বেতন দিবে । বেতন পাওয়ার কথা ভেবেই ফয়সাল এর অর্ধেক খিদে চলে গেছে । পেপারওয়ালা পাশের রুমে পেপার দিয়ে যাচ্ছে ।
১ মাসের পেপার এর দাম দিতে না পারায় হকার কাসেম তার রুমে পেপার দেওয়া বন্ধ করেছে গত সপ্তাহ থেকে । কাসেম কে ডেকে কত বিল হয়েছে জেনে নিতে হবে । পেপার দেয়া বন্ধ করেছে এবং এইটা একধরনের অভদ্রতা এইটাও বুঝিয়ে দিতে হবে । মেসে মিল এর বিল উঠেছে ১২০০ টাকা । এত মিল এর বিল কিভাবে উঠলো এইটা নিয়ে কালকে রীতিমতো ঝগড়া হয়ে গেছে আবির ভাই এর সাথে ।
ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে হবে । আজকের বেতন দিয়ে এক প্যাকেট বেনসন কিনে নিয়ে আসলে আবির ভাই এর রাগ চলে যাবে । আজকের দিনটাও অনেক ভালো । সূর্যের আলো আছে , বাইরে রোদ্দুর কিন্তু সেই রোদ্দুরে গা পোড়ানি ভাব নেই । আছে শান্তির পরশ ।
ইলেকট্রিসিটি এখনো যায় নি । শুভ লক্ষন সব ।
১২০ টাকা দিয়ে ভাল রকম নাস্তা করা যাবে । রাত্রে বেতনের টাকা দিয়ে তেল বেশি দেওয়া সোলেমানের বিরিয়ানি খাওয়া যেতে পারে । আবির ভাইকে কল দিয়ে বলে দিতে হবে আজকের রাত্রের খানা সোলেমানের বিরিয়ানি ।
বিকালে ৪টায় নবনীর বাসার সামনে বসে আছে ফয়সাল । ২তালা বাড়িটা দেখলেই কেমন হিংসা লাগে ফয়সালের । কেমন পুতুল পুতুল টাইপের বাড়ি । এই বাড়ির পিছনে ছোটো একটা পুকুর আছে নাকি । ফয়সালের কখনো যাওয়া হয়নি ।
নবনী বলেছে একদিন নিয়ে যাবে ফয়সালকে । পুকুরের ঘাটে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে কবিতা শুনাবে নবনী । নবনী অনেক ভাল কবিতা আবৃতি করে ।
সামনের সদর দরজায় রকিং চেয়ারে বসে আছেন মাহতাব সাহেব । অনেক টাকা পয়সার মালিকদের চেহারা তেমন সুবিধার হয় না ।
মাহতাব সাহেবের চেহারা নায়ক রাজ রাজ্জাকের মতো । “ কেমন আছেন ফয়সাল “ মাহতাব সাহেব আপনি করে বলে ফয়সাল কে । ফয়সাল বিব্রত হয় । অনেকবার মানা করার পরেও মাহতাব সাহেব আপনি বলা থামাতে পারেননি । ফয়সাল হাল ছেড়ে দিয়েছে অবশেষে , “ আপনিতেই “ থাকুক মাহতাব সাহেব ।
“ জী ভালো “ ।
----- আপনাকে একটা জরুরী বিষয়ের জন্য ডেকেছি । নবনীর বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে । আপনাদের এলাকার আফসার সাহেবের মেজো ছেলের সাথে । আপনি একটু ছেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে নিবেন আর কি ।
আজকে তারা দেখতে আসবে । আপনি যদি খোঁজ খবর নিয়ে বলেন তাহলে সাহস পাই আর কি কথা বলতে । একটাই মাত্র মেয়ে ।
------অনেক কষ্ট করেই যেন বলে ফয়সাল “ ঠিক আছে আঙ্কেল । আমি খোঁজ জানাবো “
আফসার সাহেবের মেজো ছেলেকে সে চিনে ।
ভালো ছেলে । ভালো চাকরি করে । বাবার ৩ টা ৫ তলা বাড়ি আছে । স্বভাব ভালো । রাস্তায় সব মুরুব্বীদের দেখলেই সালাম দেই ।
ছোটদের চকোলেট কিনে দেয় দোকান থেকে । সিগারেট খাওয়ার বাজে অভ্যাস নেয় । মাথা নিচু করে হাঁটে । শুধু কবিতা লিখতে পারে না । পুকুর ঘাটে বসে নবনীকে কখনো বলবে না কবিতা আবৃত্তি করতে ।
ছোটো ছোটো অক্ষরে লিখা চিঠিগুলু বুক পকেটে জমাবে না । অযথায় হাত ছুঁয়ে দিয়ে কেমেসট্রি বই খোলা রেখে নবনীর হাত ধরে বসে থাকবে না ।
নবনী আজকে পড়বে না । আজকে ফয়সাল এর বুক পকেটে ৮০০০ টাকা দুই মাসের বেতন একসাথে । ২০০০ টাকা বাড়তি ।
সাথে বুক পকেটে একজন কিশোরীর চিঠি । ছোটো চিঠি এখনই ফয়সাল পড়বে না । অনেক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পড়বে । বিকেলের মরা রোদটাও এখন কেমন করে জানি গা পুড়িয়ে দিচ্ছে ফয়সালের । সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে কোন এক টং এর দোকানে চা খেতে খেতে চিঠি পড়া যায়।
নাহ বড্ড স্যাঁতস্যাঁতে গরম ।
** ফয়সালরা সিগারেটের টান দিয়ে বুক পকেটে প্রেমিকার চিরকুট নিয়ে কবিতা লিখে ।
নবনীরা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশের দিকে । মনের মেঘ দিয়ে আকাশকে মেঘলা করার ব্যর্থ চেষ্টা করে । মনের মধ্য পুষে রাখে কবিতা না বলার আক্ষেপ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।