আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতাল-অবরোধ-মহাসমাবেশ ঃ তাদেরও কিছু বলার ছিল

হাজারটা স্বপ্ন একটি বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না

৪৮ ঘন্টার অভিনব হরতালের মুখে পরেছে দেশ । বিম্পি মহাসচিব ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে "গণ-অভ্যুথ্‌থানের" মধ্য দিয়ে তাদের দাবী আদায় করবে । কাদের নিয়ে করবে কে জানে । চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি । প্রস্তুত সরকারও ।

চিহ্নিত বিরোধী দলের নেতাদের চলছে গণ-গ্রেফতার । ইতিহাস আমাদের শেখায়। যেই ফখরুদ্দিনের সমালোচনা তারা করে, এখন তার পথই অনুসরণ করছে তারা । তাদেরও কিছু বলার ছিল >>> মিসেস ফাতেমা বেগম তার দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে। কি যে ঝক্কিঝামেলা ছোট বাচ্চা নিয়ে বের হওয়া! অনেক খুজে পেতে একটা সিএনজি পেল, তাও ভাড়া চায় আকাশ্চুম্বি।

অগত্যা তাতেই উঠে পরে। কিন্তু কিছু পথ যেতেই কোথা থেকে কারা এসে গাড়ি থামায়,"গাড়ি যাবে না, আইজ হরতাল জানোস না??" কিছু বলার আগেই একজন হেচকা টানে ড্রাইভারকে বের করে ফেলে। তারপর একটা ইট দিয়ে আঘাত করে সামনের গ্লাসটা চৌচিড় করে ফেলে। ফাতেমা বেগম তার আতংকিত দু বছরের অসুস্থ শিশু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরে। >>> পাড়ার কিছু ছেলে-পিলে খবর দিলে রমিজ মিয়া লুঙ্গি আর সেন্টু গেঞ্জি গায়েই দৌড়ে বেড়িয়ে পরে।

গিয়ে দেখে তার কাপড়ের দোকানের সাটার ভাঙ্গা। নিশ্চই রড দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে। সুযোগ-সন্ধানী কেউ কেউ চোখের সামনেই দোকানের মাল নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তার মাথায় হাত। এটা কেন হল? হরতাল দেখেই তো সে দোকান বন্ধ রেখেছিল, নইলে কে চায় ব্যাবসায় লস দিয়ে বাসায় শুয়ে-বসে থাকতে।

সে জানে এলাকার "রাজনৈতিক" পোলাপানগুলা কেমন। তাই বলে বন্ধ দোকানের উপর চড়াও হবে তা সে ভাবতেই পারেনি। অগত্যা দুটো ছেলেকে ওখানে বসিয়ে রেখে মাল সরানোর ব্যাবস্থা করে আর সাটার ঠিক করাতে লোক খুজতে যায়। কিন্তু যাবে কোথায়? সবখানেই তো পিকেটারের ভয়, দোকান-পাট বন্ধ?? >>> সকালে বাবা জানালো তার ইন্সুলিন শেষ আনতে যেতে হবে। কিন্তু আজ তো হরতাল, আনতে হলে যেতে হবে বড় মার্কেটে, সেটা বেশ দূর।

বাবা গাড়ি নিয়ে যেতে বলল, একটানে যাওয়া-আসা হয়ে যাবে, শুধু একটু দেখে চললেই হল, মেইন রোডে খুব বেশি না গেলেই হল। সজল তাই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। মার্কেটের সামনের পার্কিং-এ গাড়ি রাখে। কিন্তু ফিরে এসে দেখে তার গাড়ি আর গাড়ি নেই, সামনে-পিছে গ্লাস ভেঙ্গে চুরে একাকার!! সে বুঝে পায় না মূহুর্তের ভিতর এটা কি করে হল? কারা করল? পুলিশ কি করল? কিছুই ভেবে পায় না। লোক-মুখে শুধু জানতে পারে দুজন দুস্কৃতিকারী নাকি আটক হয়েছে।

তবু শান্তনা পায় না। >>> কাল হরতাল বলে গাড়ি পেতে দেরী হল খুব। মতিঝিল থেকে মহাখালি চলে আসার পর পিছনের এক চিপায় সামান্য ঠাই হয় জাহিদের। রাত হয়ে গেছে অনেক। ভীড়ের বাসে দুলে দুলে যেতে যেতে জাহিদের চোখে তন্দ্রা নেমে আসে।

অজান্তেই ঘুমিয়ে পরে সে। এটাই ছিল তার শেষ ঘুম। উত্তরার কাছে একটা বাস থেকে জাহিদের আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জাহিদের মা শোকে আজ স্তব্ধ, তার সন্তানের মরা মুখটাও দেখে যেতে পারল না। .......মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতারা, আপ্নারা বলেছেন আপ্নারা গণ-অভ্যুথ্‌থান করবেন, জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করবেন।

আপনাদের কথা আপ্নারা বললেন। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন, যাদের নিয়ে কথা বলছেন, তাদেরও কিছু বলার ছিল? ফাতেমা বেগম, রমিজ মিয়া, সজল, সজলের বাবা, জাহিদ, জাহিদের মা, এদেরও কিছু বলার ছিল। আপনি কি তাদের কথা শুনবেন? শুনবেন কি?? জবাব দিন, আমরা জবাব চাই... একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ দীপা ফোন ধরছে না। শোয়েবের চুল ছিড়তে বাকী। কিন্তু কি-ই বা করতে পারে সে? দীপা ওর বোন আর বাবার সাথে এসেছে বড় ভাইটাকে দেখতে ভার্সিটির হলে।

রাতের ট্রেনে ফিরে যাবে। গত ছয় মাসে এটাই এক সুযোগ শোয়েবের সাথে দেখা করার। ভেবেছে বোন নিপাকে নিয়ে ঘুরতে যাবার অযুহাত দিয়ে চলে আসবে টিএসসি। তারপর খুব করে কথা বলতে পারবে তারা। বিকেলের দিকেই আসার কথা শোয়েবের।

এটাই ছিল প্ল্যান। কত কথা জমিয়ে রেখেছে দুজনে!! কত কিছু করবে? হয়তো বাচ্চা মেয়ের মত বাহানা ধরবে এটা-ওটার জন্য। শোয়েব ভাববে, ছ্বি, বিশ বছরের মেয়ের এরকম ছেলেমী মানায়? কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। রাস্তায় প্রায় দেড় ঘন্টার জ্যাম!! কেন? শুনলো সরকার দলের মহাসমাবেশ আজ সোহ্‌রাওয়ারদী উদ্যানে। একারণে পথে পথে মিছিল নেতা-কর্মীদের, একটা গাড়িও সামনে এগোবার জো নেই।

এদিকে দীপার ফোন আর ফোন। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে হাটা দেয় শোয়েব। কিন্তু যেতে যেতে দীপা নেই। ঝামেলা হবে জেনে ওর বাবা ওকে নিয়ে আগেই চলে গেছে। এখন মেয়েটা ফোন ধরে না, একটু দেরী হয়েছে বলে এভাবে রাগ করতে হয়? যাহ্‌, আমিও ফোন দিব না!! কিন্তু মনের ভিতর একটা জমাট কষ্ট রয়েই যায়।

ইস্‌, ছ'মাস দেখা নেই, আবার কবে দেখা হবে??? কাদতে ইচ্ছে করে ওর। ধূর্‌, এই বয়সে এত লোকের সামনে কান্না করা কি মানায়???? ফ্রান্সের ধর্মঘটের হাল-হকিকত আমার খালা-খালু ফ্রান্স প্রবাসী। সেই হিসেবে ওখানকার কিছু কিছু খবর শুনে থাকি। খালু অফিসে যায় সাধারণত পাতাল-রেলে করে। ওটাই দ্রুতগামী এবং সাশ্রয়ী।

তো একদিন দেখে রেল চলছে না। জানতে পারল সেদিন পরিবহন ধর্মঘট। রাস্তায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ধর্মঘট হলেও কিন্তু বাস চলছিল, তবে অন্যদিনের চেয়ে কম। যাদের পকেটে যথেষ্ট ইউরো আছে তারা টেক্সি ভাড়া করছে।

এরকম বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত চলেছিল। মজার ব্যাপার হল যেদিন ধর্মঘট শেষ হয়। পাতাল-রেল আবার চালু হয়। তো সেদিন রেলের নিয়মিত যাত্রীদের হাতে ধর্মঘটীরা একটা করে কেক ধরিয়ে দিল। সেই সাথে আবার যাত্রীদের "সাময়িক অসুবিধা"র জন্য আন্তরিক ক্ষমা চায় তারা।

এই হল সেখানকার ধর্মঘট-হরতালের অবস্থা। আমাদের দেশের হরতালকারী-ধর্মঘটীদের কাছে কি এরকম আচরণ আশা করেন? ইইইইইইইইইইইইহ্‌ মামা বাড়ির আবদার পাইছো?????!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।