বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। আগামী দিনে কী হবে জানি না। সংলাপ বাদ দিয়ে সংঘাতের পথে সরকার পা বাড়িয়ে দিয়েছে। যখন হরতাল সম্পর্কে মানুষের মনে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছিল তখনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে সরকার প্রকারান্তরে সংঘাতকেই উসকে দেয়নি, বিএনপিকেও সাহায্য করেছে। গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় হরতাল পালিত হয়েছে।
সামনের হরতাল খুবই খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সেখানে কোন বিষকন্যা বসেছে। গণতন্ত্রের মানসকন্যার এভাবে ভূমিকা পালন করার তো কথা নয়। গত শনিবার চ্যানেল আই'র 'তৃতীয় মাত্রা' অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ এ কথা বলেন।
জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় তিনি বলেন, এভাবে কি সরকার সাফল্য লাভ করবে? সরকার যদি একতরফা নির্বাচনের কথা চিন্তা করে থাকে সেটা সম্ভব হবে না।
সংঘাত, রক্তপাত আর অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পাতানো নির্বাচন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ আছে। বিভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের নিজস্ব গতিতে চলে। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এ দেশের প্রতিটা ধূলিকণাও জানে যে, আগামী নির্বাচন সামান্যতম সুষ্ঠু হলেও আওয়ামী লীগের শোচনীয় ভরাডুবি হবে। বিএনপি জিতবে।
এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ তার আগের নির্দেশ অনুযায়ী চলবে সেটা ভুল হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ তাদের অস্তিত্বের সর্বনাশ ডেকে আনবে না। তারাও নির্বাচনের আগে হিসাব-নিকাশ করে কে জিতবে আর কে হারবে।
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান প্রসঙ্গে কাজী জাফর বলেন, সংবাদ সম্মেলনে পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যা বলেছেন এবং আট নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'স্বৈরাচারের কলঙ্কমুক্ত হয়েছি, দালাল হয়ে মরতে চাই না, এবার কথা রাখবই' বলে যে সাক্ষাৎকার তিনি দিয়েছেন তাতে আমার মনে হয় এ বিষয়ে আর সন্দেহ থাকার কথা নয়। সবসময় তার মনে একটা ব্যথা দাউদাউ করে জ্বলছে।
মামলার কারণে জাপা চেয়ারম্যান ইচ্ছা থাকলেও জোট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। সাড়ে সাত হাজার মামলা রাজনৈতিক কারণে তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ, তার একটি মামলাও তুলে নেওয়া হয়নি। তিনি দুঃখ করে বলেছেন, ২৪ বছর পরও আমাকে সেই কোর্টের করিডোরে হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলাগুলো সঠিক নিয়মে চললেও এতদিনে ডিসমিস হয়ে যেত।
এরশাদের অপরাধটা কী? তিনি তো সেদিন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক হওয়া সত্ত্বেও বিরোধী দলের সব দাবি মেনে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
তিনি বলেন, পিলখানায় হত্যাকাণ্ডে যখন ৫৭ জন অফিসার প্রাণ হারালেন তখন জাপা চেয়ারম্যান পিলখানা গেটে গিয়ে বলেছিলেন, সরকার চাইলে এদের বাঁচাতে পারত। তিনি বলেছেন, দেশে পরিস্থিতি হচ্ছে ঘরে থাকলে খুন, বাইরে গেলে গুম। বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি তার মনের অবস্থাটা বোঝাতে চেয়েছেন। তবে অনেক কিছুই এখন ইতিহাসের জন্য রেখে দিতে হবে।
ইতিহাস একদিন সে রহস্য বের করবে।
তিনি বলেন, ২৭ অক্টোবরের পর সংসদ অবৈধ। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়েছে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে ২৭ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী মৌসুম শুরু হয়েছে। এখন যে সংসদ চলছে তার সব কার্যক্রম অবৈধ।
এই সংসদের ওপর ভিত্তি করে যে সরকার আছে সেটাও অবৈধ। সরকারের শরিক এ নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কিছু উন্নয়ন যে হয়নি তা নয়। কিন্তু এ দিয়ে জনপ্রিয়তা হবে না। জনবিচ্ছিন্নতা কেন হচ্ছে? প্রথম কারণ দুর্নীতির সমারোহ। একজন মন্ত্রীর জন্য পদ্মা সেতু হলো না।
তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। শেয়ারবাজারে লুটপাটের জন্য ইব্রাহিম খালেদকে দিয়ে কমিটি করা হলো। তিনি ১১ জনের নামসহ রিপোর্ট দিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হলো না। হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ...।
শেষ পর্যন্ত হয়তো সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে ব্যবহার করে ১৪১ এর 'ক' অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে।
কাজী জাফর আহমদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করুন। তাতে সংলাপের একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। এ ছাড়া আমি আর কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।