আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ আশুলিয়া রণক্ষেত্র

পোশাকশ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে গতকালও অশান্ত হয়ে ওঠে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে কয়েক দফায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ। গাজীপুরের শ্রীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। প্রতিনিধিদের এ-সংক্রান্ত পাঠানো প্রতিবেদন-

আশুলিয়া : গতকাল সকাল থেকেই শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বাইপাইল এলাকায় বার্ড গ্রুপ, ফাহমি ফ্যাশন, শাহারিয়া গার্মেন্ট লি., পাল গার্মেন্ট স্কাইলেন, আনজির জামগড়া এলাকায় দি রোজ, গ্রিন লাইফ, ডেকো, পাইওনিয়ার, পলমল, স্টারলিং, এনবয়, ডিজাইনার, জিন্চ, ইয়াগি সেড ফ্যাশন, এসসোহী, নরসিংহপুরে হা-মীম গ্রুপ, সেতারা গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, মেডলার, নিট এশিয়া, নাসা গ্রুপ, বান্দু ডিজাইন ও ঘোষবাগে অনন্তসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের শিমুলতলায় আনোয়ার সিএনজি স্টেশনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।

এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে মুহূর্তের মধ্যেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে কয়েক দফায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ। সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পথচারিসহ ৭ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন, স্কাইলেন স্টার গার্মেনটের রেজাউল করিম (২২), মিজান (২২), সুজন (৩০), সালমা(৩৫), রূপালী (২৪), রিকসাচালক আইয়ব আলী (৪০) ও শরীফ।

এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ রেজাউল ও সুজনকে সাভার নারী ও শিশু হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেজাউলকে ঢাকা চক্ষু হাসপাতাল এবং সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ ও পথচারীসহ কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ সময় শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। শ্রমিকনেতা ইবরাহিম জানান, মালিক পক্ষ শ্রমিকদের অনুভূতির মূল্য না দিয়ে নিজেদের লাভ-ক্ষতি আর হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের শর্ত হিসেবে সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকায় শ্রমিকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।

শ্রমিকরা জানান, যেখানে আমরা ৮ হাজার টাকা নূ্যনতম বেতন দাবি করেছিলাম সেখানে মজুরি বোর্ড নির্ধারণ করেছে ৫ হাজার ৩০০ টাকা। অথচ সে টাকাটা দিতেও তারা গড়িমসি করে আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন। কিন্তু মালিক পক্ষ ঘোষিত নূ্যনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে শিল্পাঞ্চলজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শিল্পপুলিশ-১-এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

শ্রীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া নতুনবাজার এলাকার এসএম নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ওপর কর্তৃপক্ষ ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে ধাওয়া ও লাঠিপেটা করে। গতকাল সকাল ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে।

গাজীপুর : নূ্যনতম মজুরি মেনে নেওয়ার দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে গাজীপুরের কমপক্ষে ১০টি কারখানা এক দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

জয়দেবপুর থানার চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর, জিরানীর ডিবিএল, মিতালী ও জেএমএস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভ-ভাঙচুর শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই তিনটিসহ কমপক্ষে ১০টি কারখানা শুধু মঙ্গলবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিকরা পাশের কাশিমপুর-কোনাবাড়ি সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নারায়ণগঞ্জ : নূ্যনতম ৮ হাজার টাকা মজুরী ও আবির ফ্যাশনের ছাটাইকৃত শ্রমিকদের পূর্নবহালের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে টানা শ্রমিক অসনত্দোষের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুলস্নার কাঠেরপুল শিল্পাঞ্চল এলাকার ৭টি রফতানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পরে গতকালও প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল।

গতকাল সকালে ওই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে লে অফের নোটিশ দেখে ফিরে গেছে। তবে এসময় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আজ আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা বন্ধ : আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের পর আজ সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। গতকাল দিনভর বিক্ষোভ-ভাঙচুরের পর আশুলিয়ার কারখানার মালিকরা জরুরি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিজিএমইএ'র আশুলিয়া অঞ্চলের আহ্বায়ক ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, আশুলিয়াতে দুই দিন ধরে অস্থিরতার পর গতকালও সারা দিন ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।

ফলে আমরা পোশাক কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে বুধবার কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশুলিয়া অঞ্চলে ২৫০টি পোশাক কারখানা রয়েছে, যাতে কাজ করে ৪ লাখের বেশি শ্রমিক। এসব কারখানায় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা মোট পোশাকের ১৮ থেকে ২০ শতাংশ প্রস্তুত হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, কারখানা বন্ধের বিষয়টি আশুলিয়ায় যাদের কারখানা রয়েছে, এটা সেসব মালিকদের সিদ্ধান্ত। দেশের পোশাক কারখানাগুলোর বেশিরভাগই আশুলিয়ায়।

এর আগে গতকাল সকালে নূ্যনতম মজুরি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল সকালে আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর বাইপাইল থেকে জিরাবো এবং জিরাবো থেকে বিশমাইল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের দেড়শ' কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।