বাংলা আমার দেশ
“এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই আমি বনি ইসরাইলের জন্য এই বিধান জারি করলাম যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে হত্যা করল, কোনো হত্যাকান্ড কিংবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির জন্য বিচারে শাস্তি বিধান ছাড়া, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল। অনুরূপভাবে কেউ যদি একজনের প্রাণ রক্ষা করে, তাহলে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই রক্ষা করল। তাদের কাছে আমার রাসুলরা সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল। এর পরও তাদের অধিকাংশই এ পৃথিবীতে সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে উঠেছে। ” (কুরআন ৫:৩২)।
অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করা শুধু বিচ্ছিন্ন একটি পাপই নয়, মৌলনীতিগতভাবে এটা সমগ্র মানবজাতির বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজ। একজন মানুষকে হত্যা করা মানে গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করা। অনুরূপভাবে একজন মানুষকে বাঁচিয়ে দেয়া মানে গোটা মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দেয়া। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তাঁর নবী-রাসুলদের মাধ্যমে এই সত্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্বার্থপর মানুষ কুরআন থেকে শিক্ষা নেয় না।
ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে মোহাচ্ছন্ন হয়ে কিছু মানুষ আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী বা সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে উঠে। আল্লাহ তায়ালা সুরা মায়েদার ৩৩ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে এ ধরনের অপরাধের নির্মম ও নির্দয় শাস্তির বিধান দিয়েছেন। মানুষ হত্যাকারীদের শুধু পরকালের শাস্তির ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাদের জন্য পৃথিবীতেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, এটাই কুরআনের বিধান।
ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে হত্যাকান্ডের ফলেই পূর্ববর্তী জাতিসমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে।
সাময়িক উত্তেজনা বা সস্তা আবেগের বশবর্তী হয়ে মানুষ খুন, গুপ্তহত্যা, যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ, পুড়িয়ে মারার মতো চরমপন্থা গ্রহণের কোন অবকাশ নেই। প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে, তারা মানবজাতির শত্রু। তাদের কোনো ধর্ম নেই। নরহত্যা যে কত বড় মহাপাপ, তা তারা উপলব্ধি করে না। পবিত্র কুরআনে নরহত্যাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বের সকল ধর্ম নরহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নিরীহ মানুষকে বিনা বিচারে মেরে ফেলার চেয়ে ভয়াবহ পাপ আর নেই। মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হলেই কেবল মানুষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে। আর মানুষ যখন মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুতে পরিণত হয় তখনই নেমে আসে আল্লাহর গজব। আমাদের দেশে এখন এমন এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, একজন মানুষ কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়ার পর তিনি জানেন না, কাজ শেষে নিরাপদে বাসায় পৌঁছতে পারবেন কি না।
জনসাধারণের মাঝে একধরনের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। জ্বালাও পোড়াও তো আছেই। সাথে যুক্ত হয়েছে হরতালের নামে মানুষ পোড়ানো আর মানুষ খুন। মানুষকে আগুনে দগ্ধ করে কোন্ গণতন্ত্রের চর্চা করা হচ্ছে, এটাই এখন বাঙালি জাতির বড় প্রশ্ন।
গত ২৩ বছরের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজারের বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ছে। হরতাল জনগনের জন্য করা হয় না। ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য হরতাল নেই, গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিরোধী দলের হরতাল নেই। হরতাল করা হচ্ছে দলীয় স্বার্থে, ক্ষমতার স্বার্থে।
এখন সময় এসেছে হরতালের বিষয়ে কঠোর আইনী সিদ্ধান্ত নেয়ার।
হরতাল আহ্বানকারী দল বা সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে ক্ষয়ক্ষতির। হরতালের প্রাণহানির বদলে হত্যা মামলা করতে হবে হরতাল আহ্বানকারী দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই, সে যেই হোক। মানুষ হত্যা করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার অধিকার কারো নেই। মানুষ হত্যা কোনভাবেই গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারে না। নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।
হরতাল থামান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।