নিঃসঙ্গ এক ইলেকট্রনের কথন -মাম্মা,আর যাই কও না কেন,কাইলকার পার্টিটা কিন্তু জব্বর হইছে।
-ওই হারামি, কাইলকার টা কাইলকা গেছে গা। ওই কথা এহন কওয়ার কোন দরকার আছে?নতুন কিছু ক।
-মামা,কিলাশের পরীডারে যা লাগে না মামু!!তয় একখান সমস্যা আছে। মাইয়াটা না তোর মত।
-আমার মত মানে?! ওই আমি কি মাইয়া নাকি?
-না দোস্ত,আমি তা কইতাছি না। তোর মত চশমা পরে,আর তোর মত বিলাই মার্কা ছত্রাক। পুরাই আঁতেল।
(ইয়া ঢিসুম)
-হারামি তুই যদি আমার চশমা নিয়া আর কোনদিন কিছু কইছস তোরে চান্দের দেশে পাঠাইয়া দিমু।
-দোস্ত চেতস কেন?
(ব্যাথায় কাতরিত হইয়া) মামা, একটা কথা বাকি আছিল কইয়া ফালাই?
-ওইডা আর বাকি রাখছস কেন?
-মাইয়াডার লগে তোর সব মিল আছে,মাগার তোর মুখের তিল টা নাই।
নাইলে পুরাই জমজ।
বলেই মুসা দৌড়। দেখলাম এক দৌড়ে কলেজ বিল্ডিং পার হয়ে ক্যান্টিন এ চলে গেছে।
[ওহ হো!! আপনাদের তো আমাদের পরিচয়ই দেওয়া হয় নি। আমি অরিত্র।
বিখ্যাত ঢাকা শহরের এক স্বনামধন্য কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। চেহারা মাশাল্লাহ। পুরাই আঁতেল। চোখে একটা বড় চশমা,আর উর্বর মস্তিস্কের অধিকারি হওয়ায় বন্ধু মহলে আমার নাম আঁতেল হিসেবে পরিচিত। তবে গালে ছোট খাট একটা তিল থাকার কারণে আঁতেল নাম কনভার্ট হয়ে আঁতিলে পরিণত হয়েছে।
কলেজে আমার ভাল বন্ধু ৫ জন। একজন আরেকজনের বেস্টি( বেষ্ট ফ্রেন্ড আর কি!!)। কলেজে আমরা “পঞ্চভুজ” নামে খ্যাত। পঞ্চভুজরা হচ্ছি-আমি,মুসা,সাগর,অনিক,জামাই(আদর কইরা জামাই ডাকি, যদিও আসল নাম জামিল)। ]
আড্ডা দিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকতে যাব দেখি কতক শাঁকচুন্নি দরজার সামনে ফুল নিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুই বুঝলাম না। কোন বিশেষ অতিথি আসতেছে যার জন্য এই ফুলেল শুভেচ্ছার আয়োজন!?
দরজা দিয়া ঢুকতেই শাকচুন্নি গুলান আমার গায়ে ফুল মারা শুরু কইরা দিল। আরে আজব তো!! আমারে ফুল দিতাছে কেন?ক্লাসের সব গুলা আমার দিকে তাকাইয়া হাশি দিতাছে। মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝবার পারতাছি না। আমরা ‘পঞ্চভুজ’ রা যেই খানে বসি ওইদিকে তাকাইতেই দেখি আমার বাকি ৪ জান কা জিকরি দোস্তরা মিটমিটাইয়া হাসতাছে।
আরে এই শালারা হাশে কেন?!
ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়া সিটে যাইয়া বইসাই মুসার কান ধইরা মুচড়ানি দিতে লাগলাম।
-মাম্মা,কান ধরছ কেন? ব্যাথা বোধ করতেছি।
-হারামি এই ফুলেল শুভেচ্ছার রহস্য কি?
-আমি কিছু জানি না,সব জামাই এর কাম।
জামাই এর কান যেই ধরতে যামু ওমতেই ও আঙ্গুল দিয়া কৃষ্ণগহ্বরের দিকে নজর দিতে কইল। কৃষ্ণগহ্বরের দিকে তাকাইতেই আমার চক্ষু বাইর হওয়ার উপক্রম।
চক দিয়া বিশাল অক্ষরে লেখা “আঁতিল+আঁতেল”। আমার মাথা পুরাই নষ্ট। এহন পর্যন্ত একটাও ‘পিরাম ভালবাসা; করতে পারলাম না,না করতেই এই জিনিস। কথিত আঁতিল মেয়েটার দিকে তাকাইলাম। দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকাইয়া আছে।
মনে হয় আমি এসব করছি!!ওইদিক থেইকা চোখ ফিরাইয়া আনলাম।
আমার ভাগ্য আবার খারাপ!!এইবারও জামাই এর কান ধরতে পারলাম না। কারন আর কিছু না। আমাদের সকলের প্রিয় প্রেমিক পুরুষ,শিক্ষাগুরু কালাম স্যার আসিয়া পরছেন(তিনি প্রেম করে বিবাহ করিয়াছেন ত,আর ক্লাসে আসলেই প্রেম সম্পর্কে তার কিছু বক্তৃতা শ্রবণ করিতে হয়,তাই এই বিশেষণ)।
হায়! হায়! কৃষ্ণগহ্বরের লেখাটা তো মুছা হইল না!!কপালে যে কি আছে তা আল্লাহ মালুম!!
স্যার ক্লাসে ঢুইকাই তার বক্তৃতা দিতে লাগল।
বক্তৃতা দিয়া স্যার পিছনে তাকাইলেন। আমার তো বুকে ধুকধুকানি শুরু হইয়া গেছে। আমার মান ইজ্জত পুরা পাংচার হওয়ার পথে। স্যার আমারে কত ভাল জানত, আর আইজকা সব ধূলিসাৎ হওয়ার পথে।
সামনে ফিরতেই দেখলাম স্যার হাসতাছে।
-বাবা আঁতিল। কষ্ট করে একটু দাঁড়াবেন?
আমি রোবট এর মত দাঁড়াইলাম।
-তা আঁতিল,শেষ পর্যন্ত তুমিও প্রেম এর গলায় দড়ি লাগাইলা।
-না মানে স্যার……..
-বুঝছি তো। মা আঁতেল তুমিও দারাও।
তুমি না দাঁড়াইলে তো কাহিনীর পূর্ণতা পায় না।
( এতক্ষন আঁতেল আঁতেল করছি, আপনারা হয়ত বলতেছেন এ কোন পাগল গল্প লেখতে বসছে খালি আঁতেল আঁতেল করতেছে,মাইয়া মানুষের কি কোন দাম নাই?নাম টা লেখলে কি গল্পের শব্দ একটা বাইড়া যাইত? আরে এত খেপতেছেন কেন? কইতাছি তো!! অর নাম মৌমিতা। এবার খুশি হইছেন? খুশি হইলে একটা দিগবাজি খান!)
মৌমিতা দাড়ালো। কিন্তুক এর মাঝে সে একটা মানুষের মন নামক বস্তুকে গলিত করিয়া ফেলিল। তিনি কান্না শুরু করিয়া দিলেন।
আমি নিজেও বেক্কল হইয়া গেছি।
-স্যার,আমি কিছু জানি না এই বেপারে। সব অরিত্রের দোষ।
(আমার দোষ মানে!! আমি তো কিছুই করি নাই। না কইরাও দোষ? এ কোন দুনিয়াতে আসলাম!!)
স্যার নিজেও ওর কান্না দেইখা টাস্কি খাইছে মনে হয়।
-আরে তুমি কাদতেছ কেন?এখানে কাঁদার কি আছে? তোমরা দুই জন দুই জনরে ভালবাস এটা তো খুশির কথা। আমরা একটা পার্টি সেলিব্রেট করব এর জন্য।
(আপনারাট হয়ত ভাবতেছেন এ আবার কোন আঁতেল টিচার? প্রেম রে সাপোর্ট করে?আগেই বলছি স্যার আমাদের প্রেমিক পুরুষ)
স্যার এর কথা শুইনা মৌমিতা কোন কথা না বলেই বসে পরে বেঞ্চে মুখ গুজে কাদতে লাগল। স্যার আর তারে কিছু বলল না। এরই মাঝে ক্লাসের টাইম ও শেষ।
স্যার ও চইলা গেলেন।
আমি এইবার চান্স পাইয়া জামাইরে মারা শুরু করলাম।
-হারামি, তোর লাইগা সব হইছে।
-মামা,আস্তে মারছ না। এমনে মারলে তো হাড্ডি একটাও থাকব না।
আমি কতক্ষন মনের ঝাল মিটাইয়া শেষে থামলাম। সারা ক্লাস ক্লামেটরা আমারে শুভেচ্ছার বাণী দিতে লাগল। মৌমিতার দিকে তাকাইলাম। আমার দিকেই তাকাইয়া আছে। আমি তাকাইতেই একটা মলিন মুচকি হাসি দিল।
কিছুই বুঝলাম না। মাইয়া হাসে কেন?
ক্লাস শেষে বাহির হইতে যামু এমন সময় মৌমিতা আমারে ডাক দিল। আমি একটু অবাক এ হইছি।
-মামা ঘটনা সুবিধার মনে হইতাছে না। মাছ কি সত্যি সত্যি টোপ গিলছে?
-শালা,এত কথা কছ কেন?যা তোরা।
ক্যান্টিনের সামনে যা। আমি আইতাছি।
মৌমিতা সামনে আসল। আমিই কথা শুরু করলাম আগে।
-মৌমিতা,আমি সরি।
আসলে আমার বন্ধুরা ফাজলামি করতে যাইয়া একটু বেশি কইরা ফালাইছে। তুমি কিছু মনে কইর না।
-না আমি কিছু মনে করি নাই।
(মাইয়া কয় কি!!কিছু মনে করে নাই!!তাইলে ক্লাসে যে কাঁদল ওইটার মানে কি?)
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-হুম কর।
-তুমি কি সত্যিই আমাকে পছন্দ কর,মানে ভালবাস?
-দেখ,আমি আগেই বলেছি আমার বন্ধুরা ফাজলামি করছে।
ওইটাকে সত্যি ভাবার কোন কারণ নাই।
-ও আচ্ছা। তাইলে আমি যাই।
বলেই মৌমিতা চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম এই কথা বলার জন্যই কি আমারে ডাকছে? কাহিনি ঘোলা ঘোলা লাগতেছে।
এরপর ক্যান্টিনে গেলাম। দোস্তগো লগে কতক্ষন আড্ডা,ফাজলামি করলাম। এরপর বাসার দিকে রওনা দিলাম।
আজ প্রায় ৫ দিন হল জ্বরের কারণে কলেজে যাই না। আমার যান কা জিগরি দোস্তরা বাসায় আইসা দেইখা গেছে।
একদিন মুসা বলল মৌমিতা নাকি আমার খোঁজ করছে। আমি অসুস্থ শুইনা ও নাকি মুখ রে মলিন কইরা ফালাইছে।
মুসারে দিলাম এক থাবড়া। রাতে ভাবতে লাগলাম মৌমিতা আমার খোঁজ করার কারণ কি?
পরেরদিন মোটামুটি সুস্থ হইয়া কলেজে গেলাম। মৌমিতিরে দেখলাম আমার দিকে তাকাইয়া হাসতেছে।
যেন আমি আসাতে ও খুব খুশি হইছে।
টিফিন টাইমে মৌমিতা ডাক দিল।
-তুমি যে আমাকে সত্যিই ভালবাস তার প্রমান আরেকবার পেলাম। এই লকেট টা তুমি দিলে খুশি হতাম।
-আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতেছি না।
আমি তোমাকে কোন লকেট দি নাই।
-দেও নাই মানে!!মুসা তো বলল তুমি দিছ।
মাথার মধ্যে রাগ উইঠা গেল। হালার মুসারে যদি সামনে পাইতাম! হটাৎ তাকাইয়া দেখি আমার ৪ দোস্ত আমার দিকে তাকাইয়া হাসতছে। খাড়া আইয়া লই,তোগো হাড্ডি একটাও রাখুম না।
মৌমিতার কথায় ধ্যান ভাঙল।
-তবে যাই বল লকেট টা কিন্তু সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর এই লেখাটা।
কি লেখা তা দেখার জন্য লকেটের দিকে চোখ দিলাম। সেইখানে লেখা “অরিত্র+মৌমিতা”।
আমি আরেকদফা টাস্কি খাইলাম।
টিফিন টাইম শেষ হওয়ায় মৌমিতার সাথে আর কথা হল না। ক্লাসে ঢুকে গেলাম। ছুটির পর মুসারে কয়েক ঘা দিলাম।
পড়তে বসেছি।
কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। লকেট টার কথা মনে পরছে। ও যেভাবে কথা বলল তাতে তো মনে হল ও আমাকে ভালবাসতে শুরু করছে। আমি কি ওর অফার গ্রহন করব?
কি আবোল তাবোল ভাবছি!! আমি প্রেম করতে যাব কেন?আমার একটা মানিজ্জত আছে না!!
এরপর থেকে মৌমিতার সাথে আমার কথা বাড়তে লাগল। ফোনেও কথা হতে লাগল।
ওর কথার মাঝে কেমন যেন একটা প্রেমের ট্যাবলেট খাওয়ানোর গন্ধ পেতাম। এভাবে চলতে চলতে একসময় আমি নিজেই খেয়াল করলাম মৌমিতার প্রতি আমি কেমন যেন একটা টান অনুভব করছি। আমি কি ওকে ভালবাসতে শুরু করেছি?
ধীরে ধীরে আমার মৌমিতার প্রতি দুর্বলতা বাড়তে লাগল। শেষে থাকতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে প্রপোজ করব।
আমার ৪ দোস্তকে জানালাম।
তারাতো মহাখুশি। ৫ জন মিলে ঠিক করলাম মৌমিতাকে কিভাবে প্রপোজ করব।
(আপনারা আবার ভাইবেন না আমারা ৫ জনে প্রপোজ করুম। )
রাতে মৌমিতকে ফোন দিয়ে বললাম কালকে ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে দেখা করতে।
ক্লাসের সময় কি আজকে বাইড়া গেল নাকি!!সময় যাইতাছেই না!! কোনরকমে ক্লাস শেষ কইরা ক্যান্টিনে দৌড়।
মৌমিতারে দেখলাম আসতেছে। আমি পুরা রেডি। মাগার বুকটা এহনও কাপতাছে।
মৌমিতা সামনে আসতেই ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে একটা গোলাপ ফুল আগিয়ে দিলাম।
-মৌমিতা I LOVE U. WiLL U BE MINE?
মৌমিতা আমার কাণ্ডে দেখে মুখে হাত দিয়া হাসতে লাগল।
আমি এরই মাঝে দাঁড়াইয়া গেছি।
( শো তো এখনও বাকি!!)
আমার দোস্তরা একটা বড় প্ল্যাকার্ডে রঙ দিয়া যা লিখছে দেখে মৌমিতা আমার বন্ধুদের সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে I LOVE U TOO,TOO,VERY MUCH.
(আপনার এত অধৈর্য কেন? কি লেখা আছিল তা কইতাছি তো!)
সেখানে লেখা ছিল
“মৌমিতা+অরিত্র
আঁতিল+আঁতেল”
মৌমিতা যে আমারে জড়াইয়া রাখছে তো রাখছেই আর ছাড়ে না। তাকাইয়া দেখি আমার দোস্তরা ভ্যাবলার মত তাকাইয়া আছে।
-ওই তোরা গেলি!! ব্যক্তিগত বইলা কিছু নাই নাকি?
( আপনারা আবার অন্য কিছু ভাইবেন না)
আমার দোস্তরা আমার এই কথা শুইনা পালাল। মৌমিতা আমার বন্ধুদের কাণ্ড দেখে হাসতে লাগল।
-LOVE U আঁতেল।
-LOVE U TOO আঁতিল।
সমাপ্ত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।