রফিকের সাথে তপাকে দেখতে পেয়ে আমরা সবাই একেবারে বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম।
এমন হবার যথেষ্ট কারণ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে আমাদের কেউ রফিককে কখনো দেখেনি। তথাকথিত ছাত্রনেতারা যেমন হয় ছাত্রনেতা রফিককে সেরকম বললেও কম বলা হবে। ক্যাম্পাসে গুন্ডামি করে বেড়ানো তার একমাত্র কাজ ছিল।
আমরা যারা তার বন্ধুস্থানীয় ছিলাম তারা সবাই জানতাম তার সাথে সবসময় অস্ত্র থাকতো। তাই আমরা তাকে এককথায় এড়িয়েই চলতাম।
রফিককে যেভাবে আমরা এক নামে চিনতাম, তপাকেও চিনতাম। সে আমাদের এক সেমিস্টার জুনিয়র ছিল। মুখে তপার নাম শুনতে শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম:
তপার মতো মেধাবী স্টুডেন্ট কখনো দেখিনি।
তপার মতো এতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন্ বিতার্কিক কখনো এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর হবে না।
ছাত্রী হিসেবে তপার কোন তুলনাই হয় না। ইত্যাদি ইত্যাদি...
সেই অনন্য সাধারন ছাত্রী তপা রফিকের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রফিকের সাথে প্রেম করছে- এটা কারু বিশ্বাস হবার কথাও না।
একদিন কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে রফিককে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে, তপাকে পটালি কিভাবে?
পটবে না? এই রফিকের জন্য কাউরে পটানো কোন ব্যাপার নাকি? হাসালি আমারে... হাহাহা...
কী এমন করলি যে সে তোর প্রেমে পড়ে গেল? রফিকের হাসি শেষ হবার আগেই আবার প্রশ্ন করলাম।
কি করলাম? হাছাই জানবার চাস? তোরা তো সবাই দেখছিস তপা ভাসিটিতে আসার দিন থাইকা তার পিছে লাইগ্যা আছি।
কোন কিছুতেই যখন কিছু হইতেসিল না, তখন তারে হুমকি দিলাম, আমার সাথে প্রেম না করলে তোমার ছোট ভাইকে আর জীবনেও দেখোন লাগবো না। ঐ ডোজেই কাম হইলো। হাহাহাহা...
কি বলছিস তুই? আমার অবাক প্রশ্ন।
হ, ঠিকই তো কইছি। রফিক একটা কিছু চাইসে আর সেইটা সে পায় নাই এমন হয় নাই কোন দিন।
কিন্তু এটাকে তো প্রেম বলেনা। তুই তো তার সাথে ব্ল্যাকমেইল করছিস।
এইটারে ব্ল্যাকমেইল ক্যামনে কয়। যা হাছা তাই কইসি। ও আমার সাথে না আইলে, হাছাই তো ওর ভাইটারে শেষ কইরা ফালাইতাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে। কিন্তু এইভাবে কয়দিন তাকে তোর সাথে প্রেম করতে বাধ্য করবি?
কয়দিন প্রেম করুন মানে? আমি ওরে বিয়া করুম। আমি ওরে হাছাই ভালা পাই।
প্রেমে রাজী হয়েছে কিন্তু সে কি বিয়েতেও রাজী হবে। এটা তোর আকাশ কুসুম কল্পনা।
আমারে বিয়া করবো না মানে? ওর মলম তো আমি জানি। ওর ভাইটারে ও খুব ভালবাসে। কোলেপিঠে কইরা মানুষ করসে তো। বিয়া না করলে তার ভাইটারে তুইলা নিয়ে গেলেই হইবো। বাপ বাপ কইরা বিয়া করবো।
বুঝলাম রফিক প্রেম ভালবাসার মানেটাই জানে না। জোরজবরদস্তি করে সাময়িক লাভ হয়তোবা হয়, কিন্তু পরিনামে ভাল কিছু যে হয়না, এটা সে বুঝে না। এ প্রসঙ্গে তার সাথে কথা বলা অবান্তর।
ভার্সিটি থেকে বেরুবার কয়েক মাসের মাথায় রফিক-তপার বিয়ের খবর পেলাম। তারপর কাজে কর্মে ব্যস্ততার কারনে তাদের কথা একসময় বেমালুম ভুলে গেলাম।
এক বছর পর হঠাৎ একদিন রফিকের সাথে দেখা। ভুত দেখার মতো অবাক হলাম। আমাকে পেছন থেকে ডেকে রফিক যদি নিজের পরিচয় না দিতো তবে হয়তো তাকে চিনতেই পারতাম না। মুখে দাড়ি-গোঁফ গজিয়েছে, স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে, পোশাকের দারিদ্র চোখে পড়ার মতো, মুখের ভাষাও দেখি বদলে গেছে!
কুশল বিনিময়ের পর তপার কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলে উঠল,
নারে দোস্ত, তপাকে ধরে রাখতে পারলাম না। তুইই ঠিক বলেছিলি।
্র জোর করে কোন কিছু ধরে রাখা যায় না। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তপা মারা যায়।
জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছিল? জটিল কোন রোগ?
না, সে সুইসাইড করেছিল। ভয় দেখিয়ে তাকে বিয়ে করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমাকে ভালবাসাতে পারিনি। তোর কথা যদি আগে বুঝতাম!
রফিকের পরিবর্তন ও কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগলো।
তাই কথা না বাড়িয়ে তার থেকে বিদায় নিলাম।
কিছু কথা:
বিরোধী দলকে বলছি, হরতালে মানুষ-জন বাড়ির বাইরে বের হয় না । রাস্তা-ঘাট খালি থাকে। আপনারা আপনাদের বাড়িতে বসে টিভিতে খালি রাস্তা-ঘাট দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। বলেন, জনগন হরতাল স্বতষ্ফুর্তভাবে পালন করছে।
কিন্তু আমরা সবাই জানি, আমরা কোন কাজে বের হই না, স্বপ্রণোদিত হয়ে নয়। আমরা বের হই না ভয় থেকে। নিজের জান বাঁচানোর জন্য হাজারো কাজ থাকলেও কেউ ঘরের বাইরে হই না। আপনারা ককটেল,বোমা, পিকেটিং করে আমাদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করে বাধ্য করেন ঘরে বসে থাকতে। তাই এ হরতাল দ্বারা আপনারা যা কিছু অর্জন করবেন তা দ্বারা হয়তো সাময়িকভাবে লাভবান হবেন।
দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিটা কিন্তু আপনাদেরই হবে। ঠিক রফিকের মতো।
সরকারী দলের নেতানেত্রীদের বলছি। আপনারা এককভাবে নির্বাচন করলে অবশ্যই নির্বাচনে জিতবেন, ক্ষমতা পাবেন। সাময়িকভাবে হয়তোবা লাভবান হবেন।
কিন্তু পরিণামে ক্ষতিটা কিন্তু আপনাদেরই হবে। জনগন আপনাদের ছেড়ে যাবে। ঠিক তপা যেভাবে চিরতরে রফিককে ছেড়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।