আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।
===ফয়সল সাইফ===
ছোটবেলায় খুব বিধি-নিষেধের মধ্যে বড় হয়েছি। কোনোদিন, ইচ্ছে মতো বাইরে বের হতে পারিনি। সমবয়সীরা যখন আশপাশের উপজেলা-থানায় ঘুরে আসতো; এমন কি সিনেমায় পর্যন্ত; তখনো আমি জানালা খুলে সারাটাদিন রুমেই বসে থাকতাম। স্বাভাবিক ভাবেই তাই, অন্যদের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়ি।
ইন্টারমেডিয়েটে যখন ভর্তি হই; তখন দেখি বন্ধুরা দুই-তিনটা করে প্রেম করছে। আর আমি তাঁদের ডেটিং কালীন সময়ের বলি হয়ে, একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছি। একেতো ছিল প্রচন্ড লজ্জা; আর তার ওপর মেয়েদের সাথে কথা বলার সাহসই হতো না। তাহলে কীভাবে কিছু হবে?
কিন্তু বন্ধুদের দেখে, আমার খুব আফসোস হতো। এই আফসোস নিয়েই একদিন অনার্সে ভর্তি হই।
কয়েকটা বছরও কেটে গেল। তবুও কোনো মেয়ের সাথে কথাটুকু পর্যন্ত হলো না।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকে ঢুকেই ইনবক্সে দেখি এক মেয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে।
Hi...
চার বছর ধরে ফেসবুকে আছি। তবে, সেখানের নিয়মিত বাসিন্দা নই।
কেন জানি আমার ওখানে খুব একটা ভাল লাগে না। তাই এতদিনে আমার কপালে কোনো মেয়ের কাছ থেকে এই Hi-টুকুও জুটেনি। কিন্তু হঠাৎ করে এই প্রাপ্তি আমার অবিশ্বাস্য লাগে। আমি ভেতরে ভেতরে কিছুটা উত্তেজনা টের পাই। কিন্তু কী জবাব দেব, আর ভেবেই পাই না।
তাই বোকার মতো মেয়ের লেখাই কপি করে দেই-
Hi...
সেটা সত্যিই কোনো বোকামী কী’না? আমার জানা নেই।
মেয়ে লেখে-
Hello...
আমি এবার কী লিখি? কিছুই ভেবে পাই না। সব পথ হারিয়েছি। আবারতো অনুকরণও করতে পারি না। তাই লিখে বসি-
কেমন আছেন?
অথচ আমি তাঁকে চিনিই না।
সে উত্তর দেয়-
ওম ভাল, আপনি?
আমিও ভাল।
Nw কি করছেন?
তাঁরা আধুনিক সময়ের ছেলেমেয়ে। কিন্তু আমিতো সেকেলে। ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে খুব মাথা ঘামাই। সব পরিসংখ্যান আমার মূখস্ত।
কল্পনায় একটা চরিত্র সাজিয়ে বেধুম কবিতা লিখি। সারাদিন অনলাইনে ঘুরাঘুরি করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই কাজেই সময় শেষ। কয়েক দিন পর পর বাসা থেকে বের হই। তাই, এ সময়ের ছেলেমেয়েদের ভাষা বুঝি না।
আমি লিখি-
Nw মানে কি? বুঝলাম না...
মেয়ে উত্তর দেয়-
এখন কি করছেন?
ফেসবুকেইতো আছি। তাছাড়া ফাঁকে ফাঁকে নুসরাত ফাতেহ আলী খানের গানের লিরিক্সগুলো অনুবাদ করছি।
তাই, আপনি Song Like করেন?
হুম করিতো, কাওয়ালী, রক আর মাঝে মাঝে মেলোডি। আপনি?
Yas মেয়ে ভূল বানানে Yes লিখল। Song খুব Like করি।
আপনার মতই Like করি।
সম্ভবত সে যেটা বোঝাতে চাইছে, সেটা হলো- আমি যে ঘরানার গানগুলো পছন্দ করি সেগুলোই। সে আরো লেখে-
bt শুধু popular song গুলো।
আমি তাঁকে বেরসিকের মতো জানাই-
না, আপনার ব্যাপারটা হয়তো আমার মতো নয়। আমার গানের লিরিক্স অনুবাদ করার অর্থ কী? ঠিক জনপ্রিয় গানগুলো নয়।
যেসব গানের কথা সুন্দর, শুধু সেই সব গানই আমার পছন্দ।
Actually আপনার কথা ঠিক আছে। I trust, bt song-টাতো শ্রুতিমধুর হতে হবে।
এটা সম্পূর্ণই চিন্তা-ভাবনার ওপর নির্ভর করে। আপনি ব্যাপারটা নিয়ে যে রকম করে ভাবতে চান, দেখবেন সেটা অনেকটা সেই রকমই লাগছে।
সবকিছু এমনই আসলে। যাঁর কাছে যেভাবে যাঁ ভাল লাগে আর কি...
তাই? হতে পারে। So what’s your profusion?
হঠাৎ করে মেয়ে কী বলে এটা? মেসেজ দেখে আমার উচিত ছিল এমনই ভাবা। কিন্তু মেয়ে বলেই হয়তো তেমনটা ভাবি নি। আমি নিশ্চিত হতে চাই-
Profession কি?
হুম, তাই।
আমি আসলে এটাই বুঝাতে চেয়েছি। profusion নয়। আমার spelling-টা ভূল ছিল। sorry! profusion মানেতো প্রাচুর্য?
হুম। আমি এখনো কিছু করি না।
আপনি কী কিছু করেন?
আমি একজন ছাত্রী।
কীসে পড়ালেখা করছেন?
সবে অনার্স পাস করেছি। আপনি
বিবিএ।
শেষ না চলছে?
অর্ধেক পেরিয়েছি।
ওহ, good।
হুম।
আপনার নাম খুব শক্ত। উচ্চারণ করতে দাঁত ভেঙে যায়।
কেন? দাঁত ভাঙবে কেন? আশপাশের কাউকেতো আমার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে দাঁত ভাঙতে দেখিনি।
হা হা হা, ওম উচ্চারণ করতে পারি।
কিন্তু আপনার কোনো সহজ নাম আছে? Please don’t mind।
না আসলে আমার আর কোনো নাম নাই।
ওহ।
হুম।
হুম।
প্রথম দিন মেয়ের সাথে আমার চ্যাট ওইটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। হঠাৎ করে আমি ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসি। কারণ ভেতরে ভেতরে একটা মেয়ের সাথে চ্যাটের উত্তেজনার চেয়ে বেশি ভীতু হয়ে পড়েছিলাম। কিছু একটা সম্পর্কে না জড়িয়ে যাই। আমার আর কিছু লিখা হয় নি।
হয়তো এরপর আর কিছু লিখারও ছিল না। মেয়েও আর মেসেজ দেয়নি। পরে যত বারই মেসেজে ঢুকেছি ততবারই ‘হুম’ শব্দটা দেখে বেরিয়ে এসেছি। ভাবি হয়তো নতুন করে আমি কিছু লিখলে, মেয়েটা ভাববে আমার চরিত্র খারাপ। আবার এমনও হতে পারে সে আমার কিছু লেখার অপেক্ষায় ছিল।
আসলে, আমি ঠিক জানি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।