নয় শীত, নয় গরম _নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। তাপদাহের তীব্রতাকে কমিয়ে প্রকৃতিতে মধুর বারতা ছড়িয়ে শীত যেন জানিয়ে দিচ্ছে তার আগমনের পূর্বাভাস। গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্ন উৎসব। নতুন ধানে মৌ মৌ করছে কৃষকের বাড়ি তথা পুরো বাংলাদেশ। উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে দেশের ক্রিকেটেও।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের সুপার লিগ। কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ সফরে আসছে শ্রীলঙ্কা। খেলার মধ্যেই রয়েছেন ক্রিকেটাররা। তাছাড়া গত নিউজিল্যান্ড সিরিজের সফলতা যেন দেশের ক্রিকেটে একটা উৎসব উৎসবভাব নিয়ে এসেছে। এখন জাতীয় দলে পারফর্মারের ছড়াছড়ি।
কিছুদিন আগেও যেখানে নির্দিষ্ট পজিশনের পারফর্মার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো নির্বাচকদের। কিন্তু এখন হয়তো ঘটবে উল্টো ঘটনা! কাকে দলে রাখবেন, আর কাকে বাদ দিবেন _তা নিয়ে হয়তো তৈরি হতে পারে মধুর সমস্যা।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে টাইগাররা খেলেছে একটি 'সংঘবদ্ধ' দল হিসেবে। তারপরেও পারফরম্যান্সের বিচারে এগিয়ে থাকবেন দুই তরুণ ক্রিকেটার সোহাগ গাজী ও মমিনুল হক। ওই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সোহাগ ব্যাট হাতে অপরাজিত সেঞ্চুরির পর বল হাতে হ্যাটট্রিকসহ নিয়েছেন ৬ উইকেট।
যা ছিল টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। টানা দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করে মমিনুল পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পাঁচ টেস্টে তার গড় ঈর্ষণীয়_৮৩.৪২।
নিজের ও দলের পরিকল্পনা, ধারাবাহিকতা রক্ষা, দুর্বলতা ও নানা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন দুই তারকা সোহাগ গাজী ও মমিনুল হক। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ দল এখন অনেক বদলে গেছে।
গত দুই বছর থেকেই পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা রয়েছে। তবে দুর্বলতাও আছে। কিন্তু এখন ক্রিকেটারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলে জায়গা নিশ্চিত করা। সোহাগ গাজী বলেন, 'এখন অনেক পারফর্মার। একটু খারাপ করলেই বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সব সময় চিন্তা থাকবে ভালো করার। ' একই কথা বলেছেন মমিনুল হকও। 'আমি যে জায়গায় ব্যাটিং করি এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। জায়গাটাও অনেক কঠিন। এই জায়গায় অনেক কষ্টও করতে হয়।
প্রত্যেকেই চায় ভালো করতে। আমিও তাই চেষ্টা করছি। ' একজন ভালো ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড়গুণ অহংবোধকে দূরে ঠেলে দেওয়া। আর এর বড় উদাহরণ তো সদ্য অবসর নেওয়া ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ভারতীয় এই মহাতারকা সেঞ্চুরির 'সেঞ্চুরি' করার পরও নিজের রেকর্ড নিয়ে কখনো গর্ব করেননি।
সে কারণেই হয়তো তিনি ক্রিকেটরাজ। ঠিক একই গুণটি পাওয়া যায় সোহাগ গাজীর মধ্যেও। অনন্য এক রেকর্ড গড়ার পরও তা নাকি এই অলরাউন্ডারকে খুব বেশি উদ্বেলিত করতে পারেনি। সব কিছু ভুলেই গেছেন গাজী। 'যখন সিরিজটা চলছিল তখন অনেক ভালো লাগছিল।
সবাই প্রশংসা করছিল আমার। তবে এখন আমি আর এসব মনে রাখতে চাই না। সব কিছু ভুলে নতুনভাবে শুরু করতে চাই। ' টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ও গড় রান সম্পর্কে জানতে চাইলে মমিনুল বলেন, 'না, না, ওসব কথা আমি আর মনে করার চেষ্টাও করি না। আমার কেবল একটাই ভাবনা, ভালো খেলতে হবে।
'
নিজেদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কঠোর অনুশীলনের বিকল্প নেই বলে জানালেন দুই ক্রিকেটার। গাজী বলেন, 'আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার দুর্বলতা কোথায় তা বের করার জন্য। কারণ এখন প্রতিযোগিতার যুগ। তাছাড়া অনেক ক্রিকেটারকে দেখেছি প্রথমে জ্বলে ওঠার পর অনেক দিন আর খোঁজ থাকে না। আমি চেষ্টা করছি তেমনটা যেন না হয়।
আমি নিয়মিত পারফর্ম করতে চাই। ' দৃঢ় প্রত্যয় মমিনুলের কণ্ঠেও, 'আমি শুধু একটা কথাই জানি, আমাকে খাটতে হবে অনেক। বেশি বেশি কাজ করতে হবে। কাজে যত মনোযোগী হতে পারব ততই ভালো। পরিশ্রমের ওপরই নির্ভর করছে আমার ভবিষ্যৎ।
' নিজের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে গাজী বলেন, 'আমি যতদিন বাংলাদেশ দলে হয়ে খেলব ততদিন যেন মাথা উঁচু করে খেলতে পারি। এজন্য আমাকে যা যা করতে হয় তাই করব। সব সময় নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। '
অনেক দিন থেকেই দল হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। তবে ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
সোহাগ ও মমিনুল দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গেই বললেন সে কথা। 'এখন আমাদের টিম স্পিরিট চমৎকার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু ত্রুটি থাকলেও আমরা এখন দল হিসেবে অনেক ভালো। এই ভালোকে আরও ভালোতে রূপান্তরিত করাই আমাদের আসল টার্গেট!'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।