চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ‘ছাড় দেওয়ার মানসিকতা’ নিয়ে প্রধান দুই দলের সংলাপে বসা দরকার বলে মনে করছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপি যদি সংলাপে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা তুলে ধরে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান আসতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান বলেন, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয় উল্লেখ করে লিখিতভাবে আহ্বান জানালে বিএনপি সংলাপে বসবে।
বিরোধী জোটের সমাবেশ ও হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আগে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান ও বিএনপির অবস্থান নিয়ে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা প্রথম আলো ডটকমকে তাঁদের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেন, ‘সংলাপে বসতে অবশ্যই দুই দলকে গঠনমূলক মানসিকতা দেখাতে হবে। তাদের যদি ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকে, তাহলে সেটা নিছক লোক দেখানো সংলাপ হবে। তাতে চলমান সংকটের অবসান হবে না। ’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিরোধী দলের উচিত সংলাপে বসা। তিনি বলেন, দেশের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে জনগণ রেহাই পাবে, যদি বিরোধীদলীয় নেত্রী সংলাপে বসে বিরোধী দলের নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে চিন্তাভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দলের যে দাবি, আলোচনায় বসে তার রূপরেখা যদি তারা তুলে ধরে, তাহলে দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমাধান আসতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে সংলাপের আহ্বান, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে বিরোধী দলের হরতাল স্থগিত করা—এগুলো ইতিবাচক। তবে যথেষ্ট ইতিবাচক নয়। তিনি বলেন, সংলাপের বিষয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি—উভয় পক্ষেরই আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। সরকারের উচিত সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দিয়ে কোথায়, কোন পর্যায়ে আলোচনা হবে, তা নির্দিষ্ট করে প্রস্তাব দেওয়া; এর পাশাপাশি ‘অগ্রহণযোগ্য’ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতাদের মুক্তি দেওয়া।
বিরোধী দলের উচিত শর্তহীনভাবে আলোচনায় বসা।
আসিফ নজরুল বলেন, হেফাজতে ইসলাম, গণজাগরণ মঞ্চের মতো এমন শক্তির উন্মেষ হচ্ছে, যেখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নেই। হয়তো এ বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তা ছাড়া, সংঘাত অব্যাহত থাকলে আবার একটি এক-এগারোর মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে একটি কার্যকর সংলাপ দরকার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বহুবার তাঁদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু তাঁরা আসেননি। ’
লিখিত প্রস্তাব পেলে সংলাপে যোগ দেবে—প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন জনসমক্ষে বলেছেন, তখন লিখিত প্রস্তাবের দরকার নেই। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই সংলাপ ফলপ্রসূ করা যেতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।