আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি না হয় রহিতে কাছে - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও লতা মুঙ্গেসকারের হিরন্ময় গানগুলো

এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে।

স্কুলজীবনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত দিনে অ্যাথলেটিক্সের পাশাপাশি আর যে জিনিসটা অনেক আকর্ষণীয় ছিল তা হলো মাইকের গান। এ গানের প্রায় পুরোটা জুড়েই থাকতো মন-উতলা-করা ভারতীয় বাংলা গান।

জগন্ময় মিত্রে ‘চিঠি’ সিরিজের ‘তুমি আজ কতদূরে’ গানটি যখন বাজানো হতো, তখন সবাই তন্ময় হয়ে এ গানটি শুনতো। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘চন্দন পালঙ্কে শুয়ে’, ‘আমি তার ছলনায় ভুলবো না’, ‘খোলা আকাশ কি অত ভালো লাগতো’, লতা মুঙ্গেসকারের ‘প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে’, ‘ও শিমুল ও পলাশ’, ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’, ‘নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা’, প্রতিমা মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি’, ‘একটা গান লিখো আমার জন্য’, ইত্যাদি গানগুলো যখন মাইকে বাজানো হতো, আমাদের মন আবেগে উতলা হয়ে উঠতো। পরবর্তী সময়ে যখন ভারতীয় বাংলা ছায়াছবি দেখা শুরু করি, উত্তম-সুচিত্রা যেমন বুকের সবটুকু জুড়ে গেঁথে গেলো, তেমনি এতোকাল মাইকে বাজানো গানগুলো ছায়াছবিতে দেখতে পেয়ে অবাক, বিস্মিত ও মুগ্ধ হতাম। আমার পুরোনো দিনের গানগুলো ব্লগে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে খুব ভালো লাগছে। এ গানগুলো যে আমাদের সবারই অতি ভালো লাগা গান, তা বলাই বাহুল্য।

এ পোস্টে আমি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও লতা মুঙ্গেসকারের বিখ্যাত গানগুলো বেছে নিয়েছি; সবগুলো গানই ছায়াছবির গান নয়; আধুনিক গানগুলোর কোনো ভালো ভিডিও ইউটিউবে খুঁজে পাওয়া যায় নি, তবে কেবল ‘লিসনিং প্লেজার’-এর জন্য এগুলো এখানে যুক্ত করা হলো। এ পোস্টে বাড়তি আকর্ষণ হিসাবে পাচ্ছেন দুটি রবীন্দ্র সঙ্গীত- সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে ‘আমি বিষ করেছি পান’ এবং লতা মুঙ্গেসকার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘তুমি রবে নীরবে’। সন্ধ্যার কণ্ঠে গীত গানটিতে সামান্য ভেরিয়েশন আছে, যা আমার কাছে অদ্ভুত সুন্দর লেগেছে। অন্যদিকে, রবীন্দ্র সঙ্গীতের যতো গান ছায়াছবিতে গীত হয়েছে, এবং আমি যতোগুলো ছায়াছবির ভিডিও দেখেছি, তার মধ্যে এর চেয়ে সেরা রোমান্টিক ভিডিও আমি আর একটিও দেখি নি। অপরূপা রূপবতী নায়িকা সন্ধ্যা রায় ও বিশ্বজিতের অভিনয় আমি যতোবার দেখি, হারিয়ে যাই।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১ তুমি না হয় রহিতে কাছে কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে আরো কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে এই মধুক্ষণ মধুময় হয়ে না হয় উঠিত ভরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পথে হলো দেরি ১৯৫৭ সুচিত্রা সেন/উত্তম কুমার ২ এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার এ তিথি শুধু গো যেন দখিন হাওয়ার সন্ধ্যা পথে হলো দেরি ১৯৫৭ সুচিত্রা সেন/উত্তম কুমার ৩ আমি তোমারে ভালোবেসেছি চিরসাথি হয়ে এসেছি সন্ধ্যা নতুন জীবন ১৯৬৬ সন্ধ্যা রায় লিরিকঃ পুলক বন্দ্যেপাধ্যায় মিউজিকঃ রাজেন সরকার ৪ এ গানে প্রজাপতি পাখায় পাখায় রং ছড়ায় এ গানে রামধনু তার সাতটি রঙের দোল ঝরায় সন্ধ্যা দেয়া নেয়া ১৯৬৩ তনুজা/উত্তম কুমার ৫ গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু আজ স্বপ্ন ছড়াতে চায় হৃদয় ভরাতে চায় সন্ধ্যা অগ্নি পরীক্ষা ১৯৫৪ সুচিত্রা সেন/উত্তম কুমার ৬ কেন এ হৃদয় চঞ্চল হলো কে যেন ডাকে বারে বারে বলো কেন? সন্ধ্যা নায়িকা সংবাদ ১৯৬৭ অঞ্জনা ভৌমিক/উত্তম কুমার ৭ কে তুমি আমারে ডাকো অলখে লুকায়ে থাকো ফিরে ফিরে যাই দেখিতে না পাই সন্ধ্যা অগ্নি পরীক্ষা ১৯৫৪ সুচিত্রা সেন/উত্তম কুমার ৮ মধু মালতী ডাকে আয় সন্ধ্যা হারজিৎ ১৯৫৭ অনিতা গুহ/উত্তম কুমার ৯ এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হবে তুমি বলো তো সন্ধ্যা/হেমন্ত সপ্তপদী ১৯৬১ সুচিত্রা সেন/উত্তম কুমার ১০ আমি যে জলসাঘরে সন্ধ্যা অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ১৯৬৭ তনুজা/উত্তম কুমার ১১ আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান (রবীন্দ্র সঙ্গীত) সন্ধ্যা নবরাগ ১৯৭১ সুচিত্রা সেন/উত্তম কুমার ১২ চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে জীবনে তোমায় যদি পেলাম না শ্বেত পাথরের রাজপ্রাসাদে থেকে আর কী হবে জীবনে তোমায় যদি পেলাম না নহবত শানাই বাজাক মনিহার কণ্ঠ সাজাক আজ ফুলে-ছাওয়া চতুর্দোলা যাক বা না যাক আগুনের ফুলকিঝরা আতশবাজির উৎসবে কী হবে জীবনে তোমায় যদি পেলাম না চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে জীবনে তোমায় যদি পেলাম না শুনি যেই জয়ধ্বনি চারিধারে কাঁদে এই শূন্য হিয়া হাহাকারে মধুরাত স্বপ্ন ঝরাক আতরের গন্ধ ভরাক আজ আমার বরণডালা হাজার দিকে আলো ছড়াক সোনার এই মুকুট পরে অভিষেকের গৌরবে কী হবে জীবনে তোমায় যদি পেলাম না চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে জীবনে তোমায় যদি পেলাম না সন্ধ্যা গীতিকারঃ শ্যামল গুপ্ত (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী) ১৩ ঐ গানটা গেয়েছেন তানজিলা রোশ্‌দ লাবণ্য নাম্নী এক বাংলাদেশি শিল্পী ভেরিয়েশনটা আমার ভালো লেগেছে। ১৪ আমি তার ছলনায় ভুলবো না কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে সন্ধ্যা ১৫ মধুর মধুর বংশী বাজে কোথা কোন কদমতলীতে আমি পথের মাঝে পথ হারালেম ব্রজে চলিতে কোন মহাজন পারে বলিতে সন্ধ্যা গীতিকারঃ তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় সঙ্গীতঃ সুধীন দাশগুপ্ত রচনাঃ ১৯৫৯ ১৬ ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে বলে তুমি নাও আমাকে আমায় কেন একটিবারও ডাকলে না সন্ধ্যা গীতিকারঃ শ্যামল গুপ্ত ১৭ মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা সন্ধ্যা ১৮ হয়তো কিছুই নাহি পাবো তবুও তোমায় আমি দূর থেকে ভালোবেসে যাবো সন্ধ্যা কথাঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার সুরঃ শ্যামল মিত্র ১৯ আর ডেকো না সেই মধু নামে লতা মুঙ্গেসকার ১ না মন লাগে না এ জীবনে কিছু জ্বালা ভালো লাগে না এ নদীর দুই কিনারে দুই তরণি যতই নামাই নোঙর বাঁধা কাছে ডেকে তাই পারি নি তুমিও ওপার থেকে গান শোনো নি না মন লাগে না না মন লাগে না না মন লাগে না চুপি চুপি চেয়ে থাকা ভালো লাগে না না আমি যে শ্রান্ত আজি শক্তি উধাও কী হবে আর মিছিমিছি বেয়ে বেয়ে এই মিছে নাও তুমিও ওপার থেকে নাও যদি নাও না মন লাগে না এ জীবনে কিছু জ্বালা ভালো লাগে না লতা হিন্দি ছবি ‘আনন্দ্‌’-এ গীত। এ ছবির দৃশ্যে বাংলা ভার্সন ডাবিংকৃত ২ যদিও রজনি পোহালো তবুও দিবস কেন যে এলো না এলো না সজল মেঘের পরাণ ভরিয়া বরিষণ কেন হলো না লোকে মোরে কলঙ্কিনী নাম দিয়ে বোঝে না তো কত জ্বালা মন নিয়ে বলে বলুক লোকে মানি না মানি না কলঙ্ক আমার ভালো লাগে পিরিতি আগুন জীবন সঁপিয়া জ্বলে যাওয়া আজও হলো না হলো না যদিও রজনি পোহালো তবু দিবস কেন এলো না এমন পথ চলা ভালো লাগে না আমার অঙ্গ দোলে তরঙ্গে তরঙ্গে কেউ না বাঁধে যদি পথ হারাবে নদী ভালো লাগে না লাগে না ভালোবেসে মরি যদি সেও ভালো ঘর বেঁধে যদি মরি আরো মরি এসো এসো হে বন্ধু জ্বলিতে জ্বলিতে মরণ আমার ভালো লাগে কপালের লিখা সিঁদুরে ঢাকিয়া পথ চলা আজও হলো না হলো না যদিও রজনি পোহালো তবুও দিবস কেন যে এলো না এলো না লতা বাঘিনী ১৯৬৮ সন্ধ্যা রায়/সৌমিত্র ৩ আর যেন নেই কোনো ভাবনা যদি আজ অকারণ কোথাও হারায় মন জানি আমি খুঁজে তারে আর পাবো না ভ্রমরের বেণুসুর তুলবে সেই সুরে মন আমার ভুলবে কহিবে ফাগুন যেন আমারে আমি তোমার ভুবন ছেড়ে কভু যাবো না জানি না সে তো আমি জানি না ওগো কোন সুদূরে আমার বলাকারা ডাক দিয়ে যায় যে উড়ে কত কথা প্রাণে যেন জাগলো আপনারে কতো ভালো লাগলো আঁখিতে স্বপন আছে জড়ানো আমি এ আবেশ কভু ফেলে যেতে চাবো না লতা দীপ জ্বেলে যাই ১৯৫৯ সুচিত্রা সেন/নমিতা সিনহা/বসন্ত চৌধুরী ৪ নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা বুঝি বা পথ ভুলে যায়। লতা মুঙ্গেসকার মনিহার ৫ নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা বুঝি বা পথ ভুলে যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মনিহার ৬ না যেও না রজনি এখনো বাকি আরো কিছু দিতে বাকি বলে রাতজাগা পাখি লতা হিন্দি ছবিতে গীত (পরখ) ১৯৬০।

এখানে মূল হিন্দি ছবিতে গীত ভিডিওটিও আছে। ৭ যারে যারে উড়ে যারে পাখি লতা হিন্দি ছবি ‘মায়া’তে গীত (এটি বাংলা ভার্সন) ১৯৬১ মালা সিনহা/দেবানন্দ ৮ একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি লতা সুভাষ চন্দ্র 1966 ৯ যাবার বেলায় পিছু থেকে ডাক দিয়ে কেন বলো কাঁদালে আমায় আমার এ মন বুঝি মন নয় লতা অদ্বিতীয়া ১০ ও বাঁশি কেন গায় , আমারে কাদায়, কী গেছে হারায়ে, স্মরণেরও বেদনায় কেন মনে এনে দেয় আ আ আ আ বাঁশি কেন গায় ও বাঁশি... কখনো আনন্দ ছিল জীবনের ছন্দে হৃদয় মাতাল হতো ফাগুনের গন্ধে সে গেলো কোথায়, আমি বা কোথায়, যদি না জানা বাঁশি কেন গায় আমারে কাদায় কী গেছে হারায়ে স্মরণেরও বেদনায় কেন মনে এনে দেয় লতা একটি হিন্দি গানের নৃত্যের ভিডিওতে গানটি এডিট করে ঢোকানো হয়েছে (সম্ভবত ছবির নাম ‘পরখ’) ১১ আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব হারিয়ে যাবো আমি তোমার সাথে এই অঙ্গীকার রাখি তোমার কাছে কিছু সময় রেখো তোমার হাতে লতা ছবি ‘শঙ্খবেলা’ ১২ বৃষ্টি বৃষ্টি এই কোন অপরূপ সৃষ্টি এতো মিষ্টি মিষ্টি আমার হারিয়ে গেছে দৃষ্টি লতা সোনার খাঁচা ১৯৭৩ অপর্ণা সেন ১৩ আমি তটিনীসম তোমার এ সাগরে মিশে যাই লতা অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ১৯৬৭ তনুজা/উত্তম কুমার ১৪ আশার শ্রাবণ মানে না তো মন ঝরোঝরো ঝরোঝরো ঝরেছে তোমাকে আমার মনে পড়েছে লতা মনিহার সন্ধ্যা রায় ১৫ কেন কিছু কথা বলো না শুধু চোখে চোখ রেখে যা কিছু চাওয়ার আমার নিলে সবি চেয়ে লতা ১৬ প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে ১৭ রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে লতা ১৮ তুমি রবে নীরবে (রবীন্দ্র সঙ্গীত) লতা/হেমন্ত কুহেলী ১৯৭১ সন্ধ্যা রায়/বিশ্বজিৎ আরো দেখুনঃ ১ স্বর্ণযুগের বাংলাদেশি ছায়াছবির গান; একটি তালিকা যা আপনাকে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে নিয়ে যাবে ২ গান, ভিডিও ও ছবির উপর আমার পোস্টগুলো একত্র করলাম

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৭৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।