আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক অসম্পূর্ণ প্রেমগদ্য...

আবীর... উত্তরার এক সাদামাটা একটা স্কুলের ক্লাস ৯ এ পড়ে । খুবই মেধাবী । ক্লাসের ফার্স্টবয় সে । পড়াশুনা ছাড়া বলতে গেলে যেন কিছুই বুঝে না । বন্ধুরা ওর সাথে দুষ্টামি করে... দোস্ত তোরে ওই মেয়ের সাথে জোস মানাইব ... দোস্ত ও তোর সাথে পারফেক্ট... ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আবীরের মাথায় এইসব কিছুই ঢুকে না । কিন্তু একটা মেয়েকে নিয়ে ফ্রেন্ডরা একটু বেশীই চ্যাতায়... তন্দ্রা । আবীরের অলক্ষেই নামটা কেন জানি ওর মনে থাকে । সব নাম ভুলে কিন্তু ওই নামটা আর ভুলতে পারে না । সময় বয়ে যায়... নদির স্রোতের বাঁয়... ছোট্ট আবীর এসএসসি পাস করে ভালভাবেই ।

এর মধ্যে ওরা বাসা চেঞ্জ করে । সিদ্ধেশ্বরীতে ওরা বাসা নেয় । সৃষ্টিকর্তার করুণায় ভাল একটা কলেজে চান্স পায় আবীর । আবার সেই পড়াশুনা । বাসার পাশেই অনেক স্যার ম্যাডামরা পড়ান ।

আবীর তার বাসার নিচতলার এক স্যারের কাছে ফিজিক্স পড়ার জন্যে ভর্তি হয় । এইটা ছিল কো-এড । ছেলে মেয়ে একসাথে । প্রথম কয়েকদিন আবীর একটু বেকায়দায় পড়ে বৈকি ( ) । আবীরের এক পুরন বন্ধু শিহাবও পড়ে তার সাথে ।

ভালই হল... কথা বলার মত আপাতত কাউকে তো পাওয়া গেল । মজার কথা... শিহাব পড়ানোর মাঝখানে আবিরকে বলল “দোস্ত, এই ব্যাচে তন্দ্রাও পড়ে” । আবীর হঠাৎ যেন একটা ধাক্কা খেলো । “কস কি!!!” শিহাব তখন আবীরকে দেখাল “ঐযে সামনের রো এর কোনায় বসা মেয়েটা । ” আবীর বেশ শিহরিত ।

যার কথা সে এতদিন শুনেছে আজ তাকে সামনাসামনি দেখবে । কিন্তু হায় সেইদিন আর তন্দ্রা একটুও পাস ফিরে না । পিছনের দিকে তাকানো তো দুরের কথা । স্যারের পড়ানো শেষ হয় । ইনট্রভারট আবীর আর অপেক্ষা করে না , ভাবে “Better luck next time… ” ।

সেইদিন আর দেখা পায়না আবীর । এর পরেরদিনের ঘটনা । আবীর এবার তাড়াতাড়ি আসে । একদম সবার আগেই । গিয়ে একদম ফার্স্ট বেঞ্চে বসে ।

আর অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে । একসময় আসে এক সেলওয়ার কামিজ পরা রূপসী ললনা । আবীরের আর চিনতে কষ্ট হয় না যে এই সেই । চেহারা আগে না দেখলেও চুলের কাটটা পিছন থেকে ঠিকমতই দেখেছিল সে । বসার সিটগুলা ছিল ইনডিভিজুয়াল ।

এসে বসে ঠিক আবীরের পাশের সিটটায় । ও মাই গড... আবীরের হৃদপিণ্ড আর কত পাম্প করবে । ভিতরে যেন এক ছোটখাটো সিডর হইতেসে । আবীর একদম রোবটের মত পুরো ক্লাসটা শেষ করে । মাঝখানে হঠাৎ ম্যাডামের ইরেজার পড়ে যায় ।

একদম আবীরের সিটের সামনে । কি আর করার... বেচারা কোনমতে ইরেজারটা তুলে পাশের সিটে রাখে । “থ্যাংক ইউ” । সুন্দর করে বলে তন্দ্রা । আবীর আর কি করবে ।

কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে দেয় “ওয়েলকাম” । এভাবে দিনের পর দিন যায়... ক্লাসের পর ক্লাস যায় । আবীর আর তেমন পাশের সিটটাতে বসতে পারে না । বিকালে প্রাকটিক্যাল থাকে তার । ক্লাস শেষ করে আসতে দেরি হয়ে যায় বেচারার ।

কিন্তু একটু চোরা দৃষ্টি দিয়ে সবার অলক্ষে তন্দ্রাকে দেখে নেয় সে । নিজের অজান্তে সে হয়তো তার প্রেমে পড়ে যায় । কিন্তু লাজুক আবীর বলতে পারে না তার অনুভূতির কথা । “এইটা তার দ্বারা পসিবল না”... সে ভাবে । প্রতিদিন ক্লাসের আগে স্যারের বাসার সামনে ওয়েট করে স্যারের জন্যে ।

এর মাঝে হুটহাঁট একটু চোখাচোখি হয় তাদের মাঝে । কিন্তু এইটুকুই... এর বেশী আর কিছুই হয় না । কোনদিন তাদের মাঝে কোনও কথাও হয় না । একদিন শুধু হালকা কথা হয়... আবীর ক্লাস শেষে বেরোবে । সবাই বেরচ্ছে ।

সে স্যারের বাসার ভিতরের দরজার সামনে দাড়িয়ে বের হবার জন্যে অপেক্ষা করছে । দরজাটা দিয়ে ভিতরের রুমে যাওয়া যায় । তো হঠাৎ তন্দ্রা আসল তার সামনে । সে জায়গা করে দিল যাতে সে বেরিয়ে যেতে পারে । কিন্তু তন্দ্রা দাড়িয়ে ।

কথাও নেই মুখে । একটু পরেই আবীর বুঝতে পারে সে ভিতরে যেতে চাইছে । সাথে সাথে সে দরজা ছেড়ে দাড়ায় । “ও আচ্ছা ভিতরে??” -“হুম ” । তন্দ্রা বলে... তারপরে ভিতরে চলে যায় ।

এইটুকু কথা আবীরের মনের মধ্যে গেথে থাকে অনেকদিন । দেখতে দেখতে আবীরের এইচএসসি পরীক্ষা চলে আসে । স্যারও মডেল টেস্টের পর ব্যাচ ক্লজ করে দেন । শেষ দিনে একটা বিদায় আয়োজন হয় । আবীর জানতো হয়তো আর কোনদিনও দেখা হবে না ।

হয়ও নি আর ... আবীর ভালভাবেই পরীক্ষা দেয় । সৃষ্টিকর্তাও তার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি । ভাল একটা ভার্সিটি থেকে পাস করে আবীর । একটা ভাল ফার্মে চাকরিও পেয়ে যায় । এক পড়ন্ত বিকেলে সে বাসায় ফিরছিল ।

ফুটপাতে দাড়িয়ে আছে রাস্তা পার হবে এই আশায় । হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা রিকশা চলে গেল । পিছনের সিটে একটি মেয়ে আর ছেলে বসে আছে আর কথা বলছে । মেঘলা কাল চুল দেখে আবীরের চিনতে তেমন কষ্ট হয় না । বাসায় ফিরে আবীর ।

ফ্রেশ হয়ে বুকশেলফ থেকে একটা হিমুর বই নেয় সে । বারান্দার ইজি চেয়ারটাতে গিয়ে বসে । বিকালের হালকা রোদ আসছে । আবীর বই পড়ে আর আজকের দিনটার কথা ভাবতে থাকে । ক্লান্তিতে দু’চোখে ঘুম নামে তার ।

আবীর এখন তন্দ্রাছন্ন... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।