প্রশ্নটি নৈতিকতার, সাংবিধানিক নয়।
অতীতে ১১ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারে, তাহলে এখন সম্ভব নয় কেন।
২৯ সদস্যের বর্তমান মন্ত্রিসভার সঙ্গে আরও ১০ জন উপদেষ্টার প্রয়োজন পড়ল কেন?
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার গেজেট প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে এ প্রশ্ন উঠেছে।
গত বুধবার এই সংসদের সমাপনী অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনায় তিনি রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেয়েছেন। এই নির্বাচনকালীন সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে।
তাহলে রুটিন দায়িত্ব পালনে এত বিপুলসংখ্যক মন্ত্রী ও উপদেষ্টার কী প্রয়োজন? এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টারা কার্যত দেশের শাসন বিভাগের অংশ হিসেবে পরোক্ষভাবে কাজ করছেন। রাষ্ট্রের রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য ২৯ সদস্যের মন্ত্রিসভার পর উপদেষ্টাদের কোনো দরকারই ছিল না। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করছেন। তাই ১০ জন অনির্বাচিত উপদেষ্টা রাখা নৈতিক অবস্থান থেকে ঠিক নয়।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার আকার কমানো হলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়িয়েছেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, গত তিনটি রাজনৈতিক সরকারের আমলে এত বিপুলসংখ্যক উপদেষ্টা ছিল না। আওয়ামী লীগের আগের আমলে (১৯৯৬-২০০১) প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিল তিনজন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে একজন উপদেষ্টা ও দুজন রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ দেন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেন।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের পর তিনি আরও তিনজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেন।
আগে কখনো অনির্বাচিত উপদেষ্টাদের মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাখা হতো না। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টাদের মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে শুরুতে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে এবং সংসদেও প্রশ্ন উঠেছিল।
এ ছাড়া সংবিধানে উপদেষ্টার বিধান না থাকায় এবার সরকারি কার্যবিধি পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসেন এবং সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া আছে। উপদেষ্টারা মন্ত্রীর সমান বেতন-ভাতা, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তাঁরা মন্ত্রীর মতোই পতাকাবাহী গাড়িতে চড়েন।
১০ উপদেষ্টার পেছনে রাষ্ট্রের বিশাল ব্যয় অপচয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এত বড় মন্ত্রিসভা ও উপদেষ্টার দরকার নেই। তা ছাড়া এই মন্ত্রিসভা গঠনে দর-কষাকষি করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়েছে। এটা স্থূল রাজনীতি। এই প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর ১০ উপদেষ্টার মধ্যে সাতজন পাঁচ বছর ধরেই দায়িত্ব পালন করছেন।
তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিতর্কিত হয়েছেন। জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই নানা নেতিবাচক প্রচার আছে। ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে কৃতকার্য না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী তাঁর বাসার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এঁদের পক্ষে তিনি জোরালো তদবির করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
তাঁকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।
সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারির কারণে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তা ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা নিয়োগেও তাঁর হস্তক্ষেপের অভিযোগের কথা শোনা যায়। শিক্ষা উপদেষ্টা আলাউদ্দিন আহমেদ শারীরিকভাবে সুস্থ নন। তাঁর কাজ শুধু অফিসে আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমিত।
গত চার বছরে সরকারের কোনো কার্যক্রমে তাঁর দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মূল হর্তাকর্তা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখানে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি বলে জানা যায়। তা ছাড়া কুইক রেন্টাল নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ শোনা যায়।
নতুন তিন উপদেষ্টা হলেন শফিক আহমেদ, দিলীপ বড়ুয়া ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
পুরোনোদের মধ্যে গওহর রিজভী ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক যথাক্রমে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।