আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কদর বেড়েছে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক ছোট দলগুলোর কদর বেড়ে গেছে। এসব দলের নেতাদের নির্বাচনে আনতে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব ও টোপ দেওয়া হচ্ছে। আর, বিরোধী দলও এসব দলকে তাদের পাশে ধরে রাখতে তৎপর রয়েছে। একই সঙ্গে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও জোট গঠন করতে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকে কাছে টানতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গত এক সপ্তাহে ধর্মভিত্তিক অন্তত পাঁচটি দলের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটে থাকা ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকে নির্বাচনে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত—দুই ধরনের দলই আছে।

সংশ্লিষ্ট দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ১৮-দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোট (নেজামী-ফয়জুল্লাহ) ও খেলাফত মজলিসের (ইসহাক-কাদের) সঙ্গে যোগাযোগ করেন সরকারের প্রভাবশালী একটি সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এর মধ্যে প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোটের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে প্রতিমন্ত্রী করাসহ তাঁদের দলকে আগামী নির্বাচনে ১২টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাসীর আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে সরকারি মহলের বিচ্ছিন্নভাবে কিছু যোগাযোগ হয়েছে। তবে সরকারের কারও সঙ্গে এসব আলোচনায় না যেতে তাঁরা দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকার না হলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না—এমনটি ধরে নিয়েই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলবিহীন এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর লক্ষ্যে সরকার অধিকসংখ্যক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে।

এ লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রতিও নজর দিয়েছে সরকার।

এরই মধ্যে ১৮-দলীয় জোটের বাইরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন, মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসানের নেতৃত্বাধীন ফারায়েজী জামায়াতের সঙ্গেও সরকারি পর্যায় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান প্রকারান্তরে তা স্বীকারও করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে উপযুক্ত মেয়ে থাকলে বিয়ের প্রস্তাব তো আসবেই। তবে আমরা প্রস্তাব এখনো বিবেচনায় নেইনি।

’ তিনি এও বলেন, যদি সংবিধান থেকে তুলে দেওয়া ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ আবার পুনর্বহাল করে, আল্লাহ ও নবী-রাসুল (স.) সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করে, নারীনীতির তাঁদের বিবেচনায় ‘আপত্তিকর’ ধারাগুলো দূরীভূত করে, তাহলে প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূছ আহমাদও জানান, সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দিক থেকে লোভনীয় শোভনীয় প্রস্তাব আসতেই পারে। আমরা সতর্ক আছি, যাতে কেউ আমাদের অন্যায়ভাবে ব্যবহার করতে না পারে। ’

এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এ লক্ষ্যে জাপার পক্ষ থেকে ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে এরশাদ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিবকে ফোন করেন বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

অবশ্য, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গত সোমবার তিনটি দলের সমন্বয়ে ‘ন্যাশনাল ইসলামিক অ্যালায়েন্স’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করেছে। নবগঠিত এ জোটের অন্য দুই শরিক দল হচ্ছে গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট ও পিপলস জাস্টিস পার্টি। এই দল দুটির নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই।

এর মধ্যে গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্টের প্রধান নুরুল ইসলাম খান একসময় মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট করতেন। পরে তিনি বর্তমান সরকারের সমর্থক মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটে যোগ দিয়ে মহাসচিব হন। সেখান থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হলে তিনি গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট নামে দল গঠন করেন। তিনি এখনো মহাজোট সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

এরই মধ্যে তিনদলীয় এই জোট গঠন ও শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়ার প্রশ্নে এরই মধ্যে খেলাফত মজলিসের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।

অবশ্য, দলটির নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁদের দলে এ নিয়ে কোনো বিভক্তি বা মতবিরোধ নেই। তিনি বলেন, গত ১৬ নভেম্বর দলের জরুরি নির্বাহী কমিটির বৈঠকে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আল্ল্লাহ ও রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়ন এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করতে সমমনা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে জোট করার সিদ্ধান্ত হয়।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।