আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপি-জামায়াতের হুমকি-ধামকি, আগামী নির্বাচন আর কিছু সংশয়!!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের সমাবেশে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “নির্দলীয় সরকার না দিয়ে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে ওই মুহূর্ত থেকে দেশ অচল করে দেয়া হবে। আমাদের রাজপথে নেমে আসতে হবে। ” আর একই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর শাখার সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, “আমরা হুঁশিয়ার করতে চাই, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায় নিয়ে যদি নাড়াচড়া করা হয়, তা হলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আগুন জ্বলবে। ” একই সমাবেশে জামায়াতের কর্ম পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “আমাদের নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে জেলে রেখে, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে পঙ্গু করে এই সরকার একতরফা নির্বাচন করে পার পাবে না। সীতাকুণ্ডের ঘটনা কেবল একটি ‘নমুনা’।

একতরফা নির্বাচন হলে সারাদেশ সীতাকুণ্ড হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের গদিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হবে। ” গতকাল ছিল ২২ নভেম্বর। তার একদিন আগে ২১ নভেম্বর ছিল সশস্ত্র বাহিনী দিবস। সেনাকুঞ্জে সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে মিস্টার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে যান।

তখন তাদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে আমরা সাধারণ মানুষেরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। সেনাকুঞ্জে সেই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীসভার অনেকের সঙ্গেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাস্যোজ্জ্বল ছবি আমাদের আরো উজ্জীবিত করেছিল। হয়তো একটা সমঝোতার দিকে যাচ্ছে প্রধান দুই দল। তারপর প্রধানমন্ত্রী ওমরা করতে সৌদিআরব গেলেন রাতে আর পরদিন বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই হৃঙ্কার!!! অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী বিএনপি'র একটি অযুহাত। জামায়াতের দাবী'র সঙ্গে বিএনপি পুরোপুরি একমত। বিএনপি আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই এই তালবাহানা করছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও নির্বাচন হয়ে যাবে, অন্তত সরকারের মোটিভ তাই আভাস দেয়। সেই নির্বাচন কতেোটুকু গ্রহনযোগ্য হবে তার চেয়ে বড় কথা, সেই নির্বাচনে বিএনপি'র কতোজন দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে যায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সেক্ষেত্রে দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনের পরে আরো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। বিএনপি'র কর্মসূচিতে এখন আর বিএনপি'র তেমন জোড়ালো উপস্থিতি দেখা যায় না। উপস্থিতি দেখা যায় জামায়াত শিবিরের। অর্থ্যাৎ বিএনপি যে ইতোমধ্যে জামায়াতের বি-টিমে পরিনত হয়েছে সেটা সুস্পষ্ট। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে বিএনপি'র সেই অস্তিত্ব সংকট আরো ঘনিভূত হবে।

বিএনপি'র এখন হুমকি-ধামকি আসলে রাজনৈতিক ভাবে টিকে থাকার একটি কৌশল মাত্র। মাঠপর্যায়ে বিএনপি ততোটা সংগঠিত নয় যে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে। যা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে সবই খোলা গরম রাখার কৌশল। মাঝখান থেকে জামায়াত সুবিধা ভোগ করে ভেতরে ভেতরে আরো সংগঠিত হচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় জামায়াতের নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। আদালতের আপিল থেকে রায় পক্ষে না আনা পর্যন্ত জামায়াতের সেই সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচনের আগে সেই সুযোগ তৈরি হবারও লক্ষণ নেই। সে হিসেবে জামায়াতের টার্গেট থাকবে বিএনপিকেও নির্বাচনের বাইরে রাখার কৌশল। যাতে নির্বাচনকে অন্তত অগ্রনযোগ্য করার একটি ছুতা পাওয়া যায়।

কিন্তু নির্বাচনকে অগ্রহনযোগ্য করার জামায়াতের সেই কৌশলে পা দিয়ে বিএনপি আম-ছালা দুটোই হারানোর আশংকা রয়েছে। যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায়, আর নির্বাচনে যদি মোটামুটি পঞ্চাশের বেশি বা ষাট ভাগ ভোটার উপস্থিতি থাকে, তখন নির্বাচন নিয়ে আর কোনো মহল তেমন উদ্ভট দাবী তুলতে পারবে না। তখন বিএনপি' নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে, কিন্তু তখন আর সুযোগ থাকবে না, সেই ভুল কাটিয়ে ওঠার। জামায়াতের ফাঁদে পড়ে বিএনপি এভাবে রাজনৈতিকভাবে একটি অকার্যকর রাজনৈতিক দলে পরিনত হবার লক্ষণ এখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। আমরা দেশের সাধারণ মানুষরা আছি সব চেয়ে বড় সংকটে।

রাজনৈতিক টানাপোড়নে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আমাদের তেমন কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। আমাদের নাম ভাঙিয়ে দেশে এই রাজনৈতিক খেলা নব্বইয়ের পর থেকে হয়ে আসছে। যদি আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে দেশ শাসন করতো, তাহলে বিরোধীদলকে আমরা সব সময় কার্যকর দেখতাম। মূলত ক্ষমতায় যাবার কৌশল হিসেবে এখানে বিরোধীদলের রাজনীতি যতোটা কার্যকর, জনগণের সেবা করার মানসিকতা ততোটা গৌণ সেই কৌশলে।

মাঝখানে আমরা মাইনকা চিপায় পড়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারি না। সেটাই গত ২৩ বছরের বাস্তবতা। আমাদের কোনো মুক্তি নাই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। আমাদের রাজনৈতিক বলির শিকাড় হবার জন্য সামনে আরো কঠিন সময় আসছে, সেটাই অনুমান করা যায়। বিএনপি-জামায়াতের হুমকি-ধামকি যদি রাজনৈতিক না হয়ে সত্যি সত্যি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, সেজন্য বর্তমান সরকার, প্রধান বিরোধীদল সহ সকল রাজনৈতিক দলই সমানভাবে দায়ী থাকবে।

একটি কল্যানমূলক রাষ্ট্রের কোনো লক্ষণ বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেই। যা আছে সবই ক্ষমতা কেন্দ্রীক। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার সেই লড়াই থেকে যতোদিন না জনগণের দাবী'র সঙ্গে একাত্ব হবে, ততোদিন বাংলাদেশের জন্য কোনো সুবার্তা্ নেই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্যই সেই সুবার্তা খুব সহসা রাতারাতি উদয় হবারও আশা নেই। তবু রাজনৈতিক নেতাদের শুভ বিবেকের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।

হয়তো আরেকটি সাধারণ ক্ষমা, আরেকটি শুভ বিবেকের জন্য, আরেকটি সৎ নের্তৃত্বের জন্য বাংলাদেশকে আরো অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। তবুও সেই কঠিন পথের আলোর দিশার জন্য আমাদের আরো কিছু কঠিন বাস্তবতা মোকাবেলা করেই আগাতে হবে। আপাতত বাংলাদেশের জন্য আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ভালো খবর নেই। যা আছে সবই দুর্ভোগের পূর্বাভাষ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।