আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইস! কি বিপাকে ওরা, বিএনপির সাধ আছে তো সাধ্য নেই।


ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েও মূলত ভঙ্গুর সাংগঠনিক অবস্থার কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না বিএনপি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রায় প্রতিটি আসনে একাদিক গ্রুপ তৈরি হওয়ায় শীর্ষ নেতাদের কমান্ড মানতে রাজি হচ্ছে না কেউ। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সব মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আধিপত্য দখলকে কেন্দ্র করে ঘটছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনাও। এছাড়া আন্দোলন সফলের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল, যুবদলসহ বিভিন্ন সংগঠনে দ্বন্দ্ব কখনো কখনো রূপ নিচ্ছে সংঘর্ষে। তাই আন্দোলনে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য না থাকায় অন্য পথ অনুসরণ করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, এক-এগারোর পর থেকে কার্যকর নেতৃত্বের অভাবেই বিএনপির মাঠপর্যায়ের অবস্থা এলোমেলো। এর আগে জোট সরকারের আমলে সারাদেশে সাংগঠনিক অবস্থার পুরো খোঁজখবর নিয়মিত রাখতেন তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। ২০০১ সালের আগে বিএনপি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া এবং তারেক রহমানই সাংগঠনিক দিকগুলো দেখভাল করতেন। এই দুই নেতাকে সহযোগিতা করতেন নজরুল ইসলাম খান, মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও ইমরান সালেহ প্রিন্স। তারেক রহমানই বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলাকে জাগিয়ে তোলার কাজে হাত দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে তিনি 'তৃণমূল ইউনিয়ন প্রতিনিধি' সভা শুরু করেন। পুরো সংগঠন দাঁড়িয়ে যায় মজবুত ভিতের উপর। কিন্তু এক-এগারো বিএনপির সেই মজবুত ভিতকে নড়বড়ে করে দেয়। তখন দলের নেতাকর্মীরা গণহারে জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হন। বিএনপি 'সংস্কারপন্থী ও ত্যাগী'- এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পরে।

আর দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারেক রহমান। দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভরাডুবি হয় বিএনপির। ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০০৯ সালের মাঝামাঝি থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় দলের ৫ম কাউন্সিল।

কাউন্সিলের আগে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তখন আহ্বায়ক কমিটি থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সারাদেশে ব্যাপক কোন্দল দেখা দেয়। কাউন্সিল হলেও প্রায় ২০টির মতো জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিরোধ লেগেই থাকে। কাউন্সিলে খোন্দকার দেলোয়ার মহাসচিব এবং মির্জা ফখরুল সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পেলেও সাংগঠনিক অচলাবস্থা কাটেনি। খোন্দকার দেলোয়ার সে সময় সাংগঠনিক দিকে তেমন একটা মনোযোগ দিতে পারেননি।

মির্জা ফখরুল 'নতুন' হওয়ায় আগে থেকেই সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে সময় লেগেছে অনেক। কাউন্সিলের সাড়ে তিন বছর পর মাস তিনেক আগে গঠন করা হয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি। এখনো ঢাকা মহানগর, ময়মনসিংহ উত্তর, জয়পুরহাটসহ আরো দুতিনটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আবার বহু জেলা কমিটির নেতাদের মধ্যে লেগে আছে অভ্যন্তরীণ বিরোধ। এছাড়া এক-এগারো প্রেক্ষাপটে জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে সংস্কারপন্থীদের দলে প্রাধান্য দেয়ায় শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোন্দল লেগেই আছে।

এর মধ্যে দলের সবচেয়ে ত্যাগী মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পর সংস্কারপন্থীরা দলে চালকের আসনে চলে আসেন। সংস্কারপন্থী নেতা ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা দলের চেয়ারপারসনকে ঘিরে রাখায় ত্যাগী নেতাদের ইতিবাচক কর্মকা-ের খবর তার কাছে পেঁৗছাচ্ছে না বলে অভিযোগ। কিন্তু সংস্কারপন্থী শীর্ষ নেতারা হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়ে নিজেদের অনুসারীদের নেতৃত্বে আনার ব্যবস্থা করছেন। ফলে পদ বঞ্চিত হচ্ছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এদিকে সংস্কারপন্থীরা পদ পেলেও মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।

আর পদধারীদের আন্দোলন-কর্মসূচি সফল করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিলেও তাদের ডাকে কর্মীরা সাড়া না দেয়ায় সব কর্মসূচি ব্যর্থ হচ্ছে। সূত্র মতে, সংস্কারপন্থী ও ত্যাগী নেতাদের পুরনো বিরোধের পাশাপাশি নতুন করে বিরোধের কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা সবাই চাইছেন অঙ্গ সংগঠনগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল আর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব নিয়ে তারা বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন। এর ফলে বাড়ছে গ্রুপিং।

যা মাঝে মাঝে মারামারি থেকে সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। প্রায় ২০০ আসনে মনোনয়ন নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। আর এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। সূত্র মতে, তৃণমূলের আন্দোলন বেগবান না হওয়ার চেয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের মহানগরগুলোতে আন্দোলন সফল না হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে দলের হাইকমান্ডকে। আন্দোলনের মাঠে ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যকম একেবারে জিরো হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপি প্রধান।

খুব শিগগিরই মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও তা নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। থানা, এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি আহ্বায়ক কমিটির সবার মতৈক্যের ভিত্তিতে না হয়ে একতরফাভাবে হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে ব্যাপকভাবে। আহ্বায়ক কমিটির কর্তৃত্ব সংস্কারপন্থী নেতাদের হাতে থাকায় ত্যাগী নেতারা আন্দোলনের মাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। কোন্দলের কারণে ঢাকা মহানগরের আন্দোলন বেগবান না হলেও সাদেক হোসেন খোকা তা মানতে রাজি নন।

তিনি জানান, মহানগরে কোন্দল নেই। আন্দোলনের যে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে তা ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করার শক্তি নগর বিএনপির রয়েছে। তবে নগর রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, একতরফাভাবে কমিটি করার যে অপচেষ্টা হচ্ছে তা সংগঠনের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। তাই আন্দোলন ও সংগঠন শক্তিশালী করার স্বার্থে একতরফা কমিটি নেতাকর্মীরা আর মেনে নেবে না। এজন্য ত্যাগী নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে রেখে কমিটি গঠন করা হবে এমনটাই আশা করছি।

ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল মহানগরেও কোন্দলের কারণে আন্দোলন বেগবান হচ্ছে না। চেয়ারপারসনের জন্মদিনে চট্টগ্রামে বিএনপির দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের এই ঘটনা প্রচার হয়েছে ফলাও করে। ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটলেও প্রকৃতপক্ষে বিএনপির দুই গ্রুপের মতদ্বৈধতাই এই সংঘর্ষের জন্য দায়ী। এদিকে মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল বাদে বিএনপির অন্য প্রায় সব কটি সংগঠনই নিষ্ক্রিয়।

প্রথাগত কিছু কর্মসূচি পালন করা ছাড়া অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত আর ব্যবসায়িক কাজে পার করছেন পুরোটা সময়। বিশেষ করে বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন যুবদল একেবারেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।