আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ মহিমান্বিত ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’। এদিনের পবিত্রতা রক্ষা করা ও যথাযথ মর্যাদার সহিত পালন করা মুসলমানগনের দায়িত্ব

জীবন কখনোই সংগ্রাম বিহীন হতে পারে না সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। পবিত্র হিজরী সনের দ্বিতীয় মাস পবিত্র ছফর শরীফ। পবিত্র হায়াত মুবারক উনার শেষ বছরে অর্থাৎ ১১ হিজরী সালে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মুহররম হারাম শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে অসুস্থতাকে গ্রহণ করেন। অতঃপর আবার সুস্থতাকে গ্রহণ করেন।

এরপর আবার পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে অসুস্থতাকে গ্রহণ করেন। অতঃপর পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ বুধবার সকালে তিনি সুস্থতা গ্রহণ করেন। এ খবর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। উনারা মুহব্বত উনার ফল্গুধারায় উৎফুল্ল হয়ে উঠেন এবং মুক্ত হস্তে হাদিয়া করে শুকরিয়া আদায় করেন। এ ঘটনাই ইতিহাসে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ হিসেবে অভিহিত।

আজ সেই মহিমান্বিত ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’। ‘আখির’ শব্দটি ভাষাগত দিক থেকে আরবী। যদিও তা ফার্সী ও উর্দুতে ব্যবহার হয়। এর অর্থ- শেষ। আর ‘চাহার শোম্বাহ’ হচ্ছে ফার্সী শব্দ।

এর অর্থ- বুধবার। আর ‘আখির’ শব্দের সাথে ‘ইয়া’ নিছবতপ্রাপ্ত বা যুক্ত হওয়ার কারণে ফার্সী ভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ আখিরী শব্দটি ফার্সী। ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ বলতে পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ বুধবার উনাকে বুঝানো হয়ে থাকে। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ খুশির দিন।

মূলত আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ নানাদিক থেকে ফযীলতযুক্ত ও তাৎপর্যমণ্ডিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে যেমন একেক সময় একেক মুবারক হাল প্রকাশ করেন। তদ্রপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও একেক সময় একেক মুবারক হাল প্রকাশ করেছেন এবং করছেন। প্রসঙ্গত অনেকে বলে থাকেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ তায়াল্লুক মুবারক উনার অধিকারী তথা উনার সাথে নিছবত এবং বিশেষত উনার কাছ থেকে প্রাপ্ত ইলমে লাদুন্নী মুবারক উনার ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন অসুখের ক্ষমতা নেই যে তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আক্রান্ত করে।

(নাঊযুবিল্লাহ) বরং এটি মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী মুবারক যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইখতিয়ার যে তিনি অসুখকে গ্রহণ করেছেন, আবার বিদায় দিয়েছেন, আবার গ্রহণ করেছেন। ” সুবহানাল্লাহ! উল্লেখ্য, ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উপলক্ষে বিশেষ যে বিষয়টি প্রতিভাত হয়, তা হলো- উম্মু আবিহা, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কত মুহব্বত মুবারক করতেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদেরকে কত মুহব্বত মুবারক করতেন। ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উনার বর্ণনায় জানা যায়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনাকে খবর দিন, তিনি যেন উনার সুমহান আওলাদগণ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার নিকট চলে আসেন। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনার আওলাদগণ উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে হাজির হলেন।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত মা ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিজের গলা মুবারক উনার সাথে জড়িয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন, নাতিগণ উনাদের কপাল মুবারক উনার মধ্যে চুমু মুবারক খেলেন এবং উনাদেরকে সাথে নিয়ে আহারে বসলেন। কয়েক লোকমা খাবার গ্রহণ করার পর অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারাও খিদমতে এসে হাজির হলেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও বাইরে এসে হাজির হন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থতাকে গ্রহণ করার পর সুস্থতাকে গ্রহণ করে মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে আগমন করেন এবং নামাযের ইমামতি করেন। এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে অনেক কিছু হাদিয়া করেন।

কোনো কোনো বর্ণনায় জানা যায় যে, খুশিতে খুশি হয়ে ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত উসমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দীনার, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হাদিয়া করতঃ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মারিফত-মুহব্বতে দগ্ধিভূত ব্যক্তি তথা মুসলমানগণ উনারা সে দিনটিকে মারিফত-মুহব্বত লাভের উসীলা সাব্যস্ত করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের অনুসরণে যুগ যুগ ধরে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ হিসেবে পালন করে আসছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যাঁরা হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট। ” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০) আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সুন্নত অবশ্য পালনীয়। ” বলাবাহুল্য, কিছু কম ইলম ও কম আমল তথা উলামায়ে ‘সূ’ রয়েছে যারা ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ পালনের বিরুদ্ধে বলে থাকে।

কিন্তু এদের এ সাধারণ সমঝও নেই যে, আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার পালনের দ্বারা মূলত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক তথা নিছবত-তায়াল্লুক মুবারকই অর্জিত হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ! কাজেই যারা আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালনের বিরোধিতা করে তারা মূলত আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত এরই বিরোধিতা করে থাকে। সঙ্গতকারণেই এরা মুসলমান থাকতে পারেনা। এরা বাতিল ৭২ ফিরক্বা তথা উলামায়ে ‘সূ’দের অন্তর্ভুক্ত। এদের ফতওয়া পরিত্যাজ্য।

এরা নিকৃষ্ট ফিতনাবাজ। এদের পরিহার করা আবশ্যিক কর্তব্য। উল্লেখ্য, আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার হক্ব আদায়ে ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশের রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশের সরকারের উচিত যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে দিবসটি পালন করা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।